Click the image to explore all Offers

ধারাবাহিক গল্প ।। প্রেম ও সংকল্প (পর্ব- ২) ।। দীপক কুমার পাল


 প্রেম সংকল্প

( দ্বিতীয় পর্ব )

 দীপক কুমার পাল 


পরের দিন বুধবার। চান্দ্রেয়ী আসলো আর যথারীতি সুমন্ত ওর সাথে গল্প করতে করতে পরের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যতক্ষণ না সে বাসে উঠলো গল্প চালিয়ে গেলো। শর্ট হ্যান্ড শেখার কথাটা আর তাকে বলা লো না। সুযোগ বুঝে বলবে খনে। ফিরে এসে দেখে কান্তির মিষ্টির দোকানের বেঞ্চে মণীশ বসে আছে। কাছে যেতেই মণীশ ওকে দেখে বললো,

- ' কিরে সুমন্ত তোকে দেখলাম বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিস। কান্তি বলছে তুই নাকি চুপি চুপি প্রেম করছিস? ভাল ভাল,  এতে করে মন আর শারীর স্বাস্থ্য সব  কিছু ভালো থাকে। তুই প্রেম টা চালিয়ে যা বুঝলি।'

- ' চল একটু ঘুরে আসি আর নাহয় আমাদের বাড়ি চল, চা খাওয়াবো।'

- ' না এখন কান্তির দোকানে একটু বসি, যদি তুই একটু মিষ্টি-টিষ্টি খাওয়াস। অবশ্য তুই যা কঞ্জুস কিছু খাওয়াবি না জানি। কিন্তু কান্তি যদি ইচ্ছে করে তবে সে খাওয়াতে পারে কি বলিস কান্তি পারিস না?'

- ' নিশ্চয়ই পারি যদি উপযুক্ত দাম পাই। নচেৎ বড়ো সীমিত আমার ক্ষমতা।'

- ' তুই তো দেখছি রাজ্য সরকারের মতো কথাটা বললি। সীমিত আমার ক্ষমতা। তবে রাজ্য সরকার যেটা করছে অর্থাৎ টাকার জন্য কেন্দ্রের কাছে গিয়ে দরবার করছে তেমনি তুইও আরও বেশি ক্ষমতার জন্য তোর এন্টালি মার্কেটের হেড অফিসের দোকানে গিয়ে একবার দরবার কর।'

সুমন্ত খুব করে নজর করে দেখছিল যে কাঁচের ভিতরে কি কি মিষ্টি নেই। দেখে নিয়ে বললো,

- ' অত ক্ষমতার দরকার কি? আমিই অর্ডার দিচ্ছি মিষ্টির।  আচ্ছা কান্তি, একশো গ্রাম করে রাবড়ি দে আমাদের। খেয়ে একটু জোর করি শরীরের। মণীশটা আবার ক্লাবে ব্যায়াম করে ওর রাবড়ি টা খুব কাজ দেবে কি বল?'

- ' রাবড়ি নেই।' হাসতে হাসতে বললো কান্তি।

- ' আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে মৌচাক, দরবেশ, দানাদার, লবঙ্গলতিকা বা আবার খাবোর মধ্যে যদি কিছু থাকে তবে দে চারটে করে।'

কান্তি চুপচাপ বসে মুচকি মুচকি হাসছে খালি আর মনীশের দিকে তাকাচ্ছে। মণীশ বলে,

- ' তোর মতো কঞ্জুসের চোখে তো পান্তুয়া সন্দেশ রসগোল্লা কাঁচাগোল্লা কিছুই পড়বে না। চল ওঠ।'

- ' কোথায় যাবি?'

- ' মৌলালী যাবো ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে।'

- ' চল তবে, মৌলালির মোড়ের দোকানে তোকে হিং এর কচুরি খাওয়াবো। দেখবি, তার কি টেস্ট।'

- ' তুই আমাকে শেখাচ্ছিস? তবে কান্তি তুই শুনে রাখ সুমন্তের কথাটা।' কান্তি মুচকি মুচকি হেসে বললো, - ' দেখো, খাওয়াতেও তো পারে সুমন্ত।'

     সুমন্ত আর মণীশ হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতে করতে মৌলালির ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন অফিসে পৌঁছে গেলো। তেমন কিছু ভীড় ছিল না। মণীশ ইলেকট্রিক বিল জমা দিতেই সুমন্ত বললো,


- ' চল এবার কচুরির দোকানে। দেখেছিস, এখানে পর্যন্ত হিংয়ের কচুরীর গন্ধ ভেসে আসছে। চল, রাস্তাটা পেরিয়ে ওপারে যাই।'


- ' তুই সত্যি সত্যি খাওয়াবি নাকি রে সুমন্ত। আমিতো তোর সাথে ঠাট্টা করছিলাম তখন। তুই একেবারে যে সিরিয়াসলি নিয়েছিস।'


- ' শোন আমি প্রায়ই এখানে কচুরি খেতে ঢুকি। তুই যখন মৌলালি আসার কথা বললি, তখনই আমার এই দোকানের কচুরি খাবার লোভটা জেগে উঠল। নে চল চল, আমার তর আর সইছে না।'


             খুব ব্যস্ত রাস্তা। কোনোমতে ওপারে গিয়ে কচুরির দোকানে ঢুকলো। তিনটে করে দু জায়গায় কচুরির অর্ডার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো সুমন্ত। মণীশ একটা বেঞ্চে বসে রুমাল দিয়ে সুমন্তর জন্য জায়গা রাখলো। সুমন্ত দুহাতে দুটো শালপাতার ঠোঙায় ধোঁয়া ওঠা গরম গরম তিনটে করে কচুরি আর গরম আলুর তরকারি এনে মনীশের পাশে বসলো। তৃপ্তির সাথে  কচুরি খেতে খেতে মণীশ বললো,


- ' সত্যি রে সুমন্ত, এদের কচুরির স্বাদ অনবদ্য। সঙ্গে আলুর তরকারি ও কি টেস্ট হয় বল?'


- ' ঠিক বলেছিস। এবার চল বাড়ী।' উঠে পড়ল ওরা। আবার রাস্তা পেরিয়ে গল্প করতে করতে ঘরে ফিরে এলো।


           পরের দিন সুমন্ত অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো চান্দ্রেয়ীর। কিন্তু চান্দ্রেয়ী সেদিন আসলো না। সুমন্ত ভাবলো হয়তো শরীর খারাপ। কিন্তু পরের দু দিনও সে আসলো না। সুমন্ত মনে মনে খুব চিন্তিত হয় পড়লো। ভাবতে লাগলো কি ব্যাপার। বুধবারও তো ওর সাথে কথা হলো তখন তো হেসে হেসে অনেক কথা হয়েছিল কিন্তু কিছুতো বোঝা যায়নি তখন। কান্তির দোকানে বসে বসে ওর সাথেই কিছুক্ষণ কথা বলে বাড়ী ফিরে গিয়েছিল। অবশ্য আজ একবার মনোজ দা কান্তির দোকানে এসে বললো,


- ' কিরে তোর গার্ল ফ্রেন্ডের কি হলো? কলেজ ছেড়ে দিল নাকি? খোঁজ নিয়েছিস কিছু? সামনা সামনিই তো থাকে।'


- ' আমিও তো বলছি খোঁজ করতে কতবার. কিন্তু শুনছে কই?' মনোজদা কে বললো কান্তি।


- ' দেখো প্রথমত আমি ওর বাড়ি চিনিনা। তারপর আমার সাথে ওর কথা বার্তা থাকলেও এমন কিছু আমার ক্ষমতা গজায়নি যে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর খোঁজ খবর নেবো। ওর বাবা মা আছে, আরও কে আছে, আমি জানিনা তারপর নিজে আছে, সে ক্ষেত্রে ফলা ফল অন্য কিছু হতে পারে। সন্মান আমার তখন যদি নষ্ট হয় তার তখন কি হবে।'


- ' তবে যা আমার কিছু আর বলার নেই।' কথা বলে মনোজ দা তার দোকানে চলে গেল। সুমন্তও কান্তিকে বলে বাড়ি ফিরে গেলো। চান্দ্রেয়ীর মুখ বারে বারে ভেসে উঠলেও সোমবার সকাল পর্যন্ত সে পড়াশোনায় মন দিল। যেন মনে হয় যেন পরীক্ষার পড়া পড়ছে। অবশ্য রবিবার বন্ধুদের সাথে আড্ডাও মেরেছে।


             সোমবার সকাল দশটায় রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পরে চান্দ্রেয়ীকে আসতে দেখলো। কাঁধে কিন্তু তার শান্তিনিকেতনি ব্যাগটা নেই। একটা সাধারণ শাড়ি পরে বেরিয়েছে। সোজা সুমন্তর কাছে এসে দাঁড়ালো।


- 'সুমন্ত, আমাদের বাড়ীতে একটু আসবেন?'


- ' হ্যাঁ নিশ্চয়ই যাবো। কিন্তু তুমি কি কদিন কলেজে যাও নি?'


- ' না কদিন যেতে পারি নি। আমার বাবা হঠাৎ ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।'


- ' সেকি কি হয়েছিল তোমার বাবার?'


- ' গত বুধবার যেদিন আপনার সাথে শেষবার কথা হয়েছিল সেদিন বিকেলে কলেজ থেকে বাড়ীতে ফিরে দেখি বাবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। শরীর খারাপ লাগায় অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। এমনিতে বাবা খুব হাই প্রেসারের রুগী। এন্টালী মার্কেটের দিকে যেতে ডক্টর চন্দ্র নামে একজন কার্ডিওলজিস্ট বসেন, বাবা তারই পেশেন্ট। বাবা তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলেন। মোটামুটি ভালো থাকেন। তবে ব্লাড প্রেসার সব সময় একটু হাইএর দিকে থাকে। একেবারে নর্মাল হয়না। আমি বাবাকে বললাম ডাক্তারকে কল্ করবো কিনা। বাবা বললেন একটা প্রেসারের ট্যাবলেট খেয়েছি আর একটা খাবো রাতে। ঠিক হয়ে যাবে তবে কাল আর অফিসে যাবনা। এখন একটু ভালো আছি। আমি আর কিছু বললাম না। রাতের ওষুধটা খাবার আগে মা বাবাকে জোর করে একটু ভাত খাইয়ে দিলেন। কিন্তু ভোর রাতে মা আমায় ডেকে বললেন তোর বাবা একদম কেমন নেতিয়ে পড়েছে আর গায়ে বেশ জ্বর, তুই এখনি ডাক্তার চন্দ্রকে টেলিফোন কর।  আমি গিয়ে দেখি সত্যি তাই। গায়ে জ্বর নিয়ে বাবা একেবারে নেতিয়ে পরেছে। তখনও ভোর হয়নি। ডাক্তারকে ফোন করতে ইতস্তত করছিলাম কিন্তু মায়ে পীড়াপীড়িতে ফোন করলাম ডাক্তার চন্দ্রকে। কাঁদো কাঁদো গলায় ডাক্তার চন্দ্রকে ফোন করতে  তিনি বললেন কেঁদোনা মা তুমি, আমি এখুনি আসছি। তুমি একটু বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িও যেন আমি তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারি। আমি সেইমতো বাইরে গেট খুলে দাঁড়ালাম। তিনি মিনিট কুড়ি পরে গাড়ি নিয়ে এসে হাজির। আমার পেছন পেছন সোজা গিয়ে বাবার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। বাবার হাতটা তুলে পালস দেখলেন তারপর এটাচি কেস খুলে প্রেসার যন্ত্র বার করে প্রেসার চেক করতে করতে তার মুখে একটা যেন গভীর চিন্তার ছাপ দেখতে পেলাম।'

 ----------------------------------------

                                                 (চলবে)

 

 

DTC Southern Heights,

Block-8, Flat-1B,

Daimond Harbour Road,

Kolkata-700104

 

 

 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.