অনুবাদ গল্প ।। পাপী ( চিনা লোককথা) ।। বাংলা রূপান্তর : চন্দন মিত্র
পাপী
( চিনা লোককথা)
বাংলা রূপান্তর : চন্দন মিত্র
এই কাহিনি এইসময়ের নয়, মান্ধাতা আমলের। একদিন দুপুরে জনা দশেক কৃষক একটি বিশাল মাঠের উপর দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। দাঁড়ানোর মতো উপযুক্ত কোনো জায়গা না-পেয়ে তারা একটি পরিত্যক্ত মন্দিরে আশ্রয় নেয়। কিন্তু মন্দিরের চারপাশে বিরামহীন বজ্রপাতের দাপাদাপিতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাঁদের মনে ক্রমশ এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, নিশ্চয়ই তাঁদের মধ্যে কেউ পাপী আছে, তাকে নিধন করার জন্য বজ্রেরা ছুটে আসছে। তাদের মধ্যে একজন ডাকাবুকো পাপীকে খুঁজে বের করার একটা পদ্ধতি বের করে ফ্যালে। সে বলে আমাদের খড়ের টুপিগুলি মন্দিরের দরজায় ঝুলিয়ে দেওয়া হোক। যার টুপি ঝড়ে উড়ে যাবে, সেইই পাপী। তাকে আমাদের মধ্যে থাকতে দেওয়া হবে না। কারণ একজনের জন্য তো সবাই প্রাণ দিতে পারি না। যেমন কথা তেমন কাজ, দশটি টুপি খড়ের দড়ি দিয়ে মন্দিরের দরজায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। দমকা হাওয়ায় একটি টুপি উড়িয়ে নিয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে নয়জন সেই টুপির মালিককে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে মন্দিরের বাইরে বের করে দিল। নয়জন কৃষক আশ্চর্য হয়ে দেখল মন্দিরের চারপাশের বজ্রপাত থেমে গেছে। তারা মনের আনন্দে গান ধরল। হতভাগ্য সঙ্গীটির জন্য তাদের মনে বিন্দুমাত্র সমবেদনা জাগল না। মন্দির থেকে বেরিয়ে খড়ো টুপিটি মাথায় দিয়ে একলা কৃষক ঝড়বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে শুরু করল। বেশিদূর যেতে হল না। চোখধাঁধানো আলোতে তার মাথা ঘুরে গেল। পরক্ষণেই কানফাটানো শব্দে সে মাটিতে আছড়ে পড়ল। সংবিৎ ফিরতে সে পিছন ফিরে দ্যাখে তার ছেড়ে আসা মন্দিরটি দাউদাউ করে জ্বলছে।
=====================
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা