প্রবাদে আছে আশায় বাঁচে চাষী। হতাশা নিরাশা দগ্ধতা যাতনা লড়াই সংগ্রাম-ঘাত প্রতিঘাত লড়াই সংগ্রাম প্রতিনিয়ত সাঙ্গ করে চাষীদের দিন যাপন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিংড়ানো পরিশ্রম রোদে পুড়ে জলে ভেজে তারা চাষ কাজ করে চলেছে। খুব বেশি লাভের মুখ তারা দেখেনা। তবুও বেঁচে থাকার তাড়নায় মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা চাষ কাজ করে চলেছে। সেরকমই বাংলার চাষী মালেক। অন্যান্য চাষিরা যখন সবজি আবাদ করতে ব্যস্ত ঠিক তার বিপত্তি পেয়ে বরাবর ধান গম শস্য চাষ করতে সে বেশি স্বাচ্ছন্দ। বেশ কয়েক বছর থেকেই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাতে মাঠের চাষ কাজ দারুন ভাব ব্যাহত হচ্ছে। যতই সেচ দেওয়া হোক না কেন বর্ষার বৃষ্টি ছাড়া মাঠের চাষ কাজ সম্পন্ন হয় না। বিগত বছর সে ভেবে নিয়েছিল আমন ধান আর লাগাবে না মাঠে। তার কারণ ধান লাগানোর পর থেকেই একনাগাড়ে ভরা বর্ষাতে বৃষ্টি না হওয়াতে ধান চাষে সে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধান গাছ বেঁচে থাকলেও ফলন সেরকম ভাবে হয়নি। যত টাকা খরচ করেছিল তার সঙ্গে গায়ে-গতরে পরিশ্রম যোগ করলে ধান বিক্রি করে তার অর্ধেকেও ঘরে আসেনি। এ বছর সে ভেবে নিয়েছিল আর ধান লাগাবে না অন্য চাষ করবে। কিন্তু দোনোমোনায় পড়ার পর সে আবারও বিঘা দুই এক জমিতে ধান লাগায়। কিন্তু আবারো বর্ষাকাল চলে গেলেও সে
চাতো খোর ন্যায় প্রতীক্ষা করতে থাকে কবে বর্ষাকালের কালো মেঘে অবিরাম বর্ষণে মাঠঘাট পুকুর খাল বিল জলে ভরে উঠবে। ক্যালেন্ডারে আসার পেরিয়ে শ্রাবণ শুরু হয়ে গেলেও মাঝামাঝি পর্যায়ে এখনো সেরকম ভাবে বর্ষা শুরু হয়নি।
এদিকে দিনকে দিন সেচ দিতে গিয়ে তার ধান চাষের খরচ বেড়েই চলেছে উপরন্ত বৃষ্টির দেখা নেই। মালেক দিশেহারা এভাবে চলতে থাকলে চাষ কাছ থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে বেছে নিতে হবে অন্য কোন পেশা জীবন জীবিকার জন্য। মাঝেমধ্যেই আকাশে ঘন কালো মেঘের আনাগোনাতে এই বুঝি বৃষ্টি হয় বৃষ্টি হয় কিন্তু পরক্ষণেই শরতের মতো আকাশ থেকে সরে যাচ্ছে মেঘের আস্তরণ দেখা যাচ্ছি তীব্র রোদের ঝলকানি। বৃষ্টি যেন আকাশ ও মেঘের সঙ্গে চোর পুলিশ খেলা খেলছে।
বর্ষাকালটা যেন প্রতিনিয়ত ঋতু থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে একপ্রকার বিষন্ন মনে সে শুধুই ভাবতে থাকে এইভাবে চলতে থাকলে তার মতো চাষীদের অবস্থা একেবারে শোচনীয় হয়ে উঠবে। যতই কৃষি ঋণ দেওয়া হোক না কেন মাঠের চাষাবাদ ভালো না হলে ফসলের দাম না পেলে চাষিরা ভালো থাকবে না।
প্রতিবছর ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতারা চাষীদের ন্যায্য ফসলের দাম বৃদ্ধির আশ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত চাষ চাষিদের সাহায্য প্রদানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষবাস করার নানা রকম আশ্বাস বাণী শুনিয়ে থাকেন। কিন্তু সেগুলি শুধুই কথার কথা। যার বাস্তবায়ন সিকিভাগও ঘটেনা।
এদিকে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়াতে মাঠের ধান শুকিয়ে যেতে লাগলো। প্রতিনিয়ত শেষ দিয়েও সেই জল খুব বেশি জমিতে দাঁড়ালো না। পাল্লা দিয়ে বাড়তি আছে চাষের খরচের বহর। তবুও মালেক ভাবতে থাকে এই বুঝি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টির জলে মাঠের ফসল আবারো প্রাণ ফিরে পাবে। প্রকৃতি আবারও প্রসন্ন চিত্তে উজাড় করে বৃষ্টিপাত ঘটাবে।
কিন্তু দিনকে দিন মাঠ ঘাট নদী নালা জলাশয় সব যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। মাটির জলের স্তর অবিরাম নিচে নামতে থাকায় পাম্প সেটির মধ্যে দিয়ে জল উঠছে না। জল যেন মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিও যেন অতীতকালে পরিণত হয়েছে। তবুও মালিক বুক ভরা প্রত্যাশায় হার না মানা মানসিকতায় মনোবলকে সাঙ্গ করেই স্বপ্ন দেখে আবারও স্বাভাবিক ছন্দে বর্ষার আগমনে ঝমঝমিয়ে শুরু হবে বৃষ্টিপাত। খাল বিল নদী নালা পুকুর জলে টইটম্বুর। রাত্রিবেলায় শোনা যাবে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক। আবহাওয়ার অনুকূলে ষড়ঋতুর আবর্তনে ছন্দময় তায় বর্ষা তার অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ধারা নিয়ে ছড়াবে বৃষ্টিপাত। প্রকৃতি আরো সতেজ সবুজ স্নিগ্ধ মনোরম হয়ে উঠবে। বাংলার চাষীরা আবারও ভালোবেসে মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বোপরি মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাষ কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেদের চাষী বলে গর্ববোধ করবে। মালেকের মত আরো অনেক চাষীরা বাংলার ঘরে ঘরে চাষি রূপে নিজেদের আত্মপরিচয়ে সম্মানিত হবে।
========================
রচনা -পাভেল আমান- হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ