দানা
অশোক দাশ
আবহাওয়ার খবর শোনার পর থেকেই আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়ে সোমনাথ। সে একজন দরিদ্র কৃষক। অনেক কষ্টে ধার দেনা করে জমিতে আবাদ করেছে। গতকাল বিকেলে সে দেখে এসেছে তার রক্ত ঘামে তৈরি ফসল। ফলবতী ধান গাছ ভারে নুয়ে পড়েছে। আর সপ্তাহ দুই পরেই মা লক্ষী তার ঘর আলোয় ভরিয়ে দেবে।
সরকারের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতা বারবার ঘোষণা হচ্ছে।নিচু এলাকার মানুষ জন কে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গালে হাত দিয়ে সোমনাথ ভেবে চলেছে। আবার যদি ঘর ভাসে,চাল উড়ে যায়, ফসল নষ্ট হয়ে যায় কি করে বাঁচাবে তার সংসার ?
সারা রাত জেগে থাকে বিপদের আশঙ্কায় । এবার আর ঘর ভাঙেনি, নদী বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢোকেনি। কিন্তু অবিরাম প্রবল বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে মাঠভরা সোনার ধান জলে হাবুডুবু খাচ্ছে।
পরের দিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ধান গাছকে গোছা বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিতে থাকে। যদি অন্তত কিছুটা ধান ঘরে তুলতে পারে। আর ভাবতে থাকে কি করে দেনা মেটাবে? কি করে চলবে আগামী দিন? কেন প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনা? কাদের দোষের ভাগিদার হতে হচ্ছে আমাদের মতো গরীব মানুষজন দের? সদুত্তর নেই।রোধ করার উপায় জানা, কিন্তু করার লোকের সদিচ্ছার অভাব প্রকট। কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ।
বছর বছর আসবে ঝড় সাইক্লোন ভিন্ন নামে, কখনও আয়লা, কখনও ফনি,তেজ বা দানা নামে। তছনছ হয়ে যাবে আমাদের মত গরিব খেটে খাওয়া মানুষের জীবন। চিরকাল আমাদের কান্না দীর্ঘশ্বাস ই সম্বল।জানি না এর শেষ হবে কবে! কবে উঠবে নতুন সূর্য!!
================================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।