ভাইরাল
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
এই যে তোমাকে বলছি,আমি একটা নতুন ভিডিও বানিয়েছি।তুমি যদি একটু লাইক, কমেন্ট আর সেয়ার করো।চিন্তা নেই, আমিও তোমার সব ছবি,ভিডিও যা যা পোস্ট করবে,সবগুলোতে লাইক দেব। দেবে গো আমার চ্যানেলটাকে সাবক্রাইব করে?
মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। ঠিক চেনা মনে হচ্ছে না তো। তবে মনে হয় ফেসবুকে দেখেছি।
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনাকে কোথায় দেখেছি? ফেসবুকে?
ও হরি,আমাকে চেন না? আমার ভিডিও তো এখন ভাইরাল হচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়ায়। আর কিছু ভিউয়ারস হলেই লাভজনক জনপ্রিয় পাওয়া যাবে। তাই আর কি যাকে সামনে পারচ্ছি একটু বলে রাখছি। তোমাকেও দেখেছি ফেসবুকে। কত কত অনুষ্ঠানের ছবি,স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে কত ছবি পোস্ট করো।তাই বললাম। এবার থেকে আমি তোমার পোস্ট লাইক করে দেব।তুমিও সাবক্রাইব করে দিলে দুজনেরই উপকৃত হবো।
কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, আমি ছবি,ভিডিও পোস্ট করি ঠিকই, তবে কেউ লাইক /কমেন্ট না দিলেও আমার তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। আমি পোস্ট করি, শুধু ভালো লাগে তাই।কিছু পাওয়ার আশায় নয়।
তা আপনি কী জাতীয় ভিডিও করেন?
একমুখ হেসে বললেন, সে আমি একটা লিঙ্ক পাঠিয়ে দেব,দেখলেই বুঝতে পারবেন,কেমন ভিডিও? ওসব মুখে বলা যায় নাকি?
তারমানে?
মানে! আজকাল ছেলেরা যা দেখতে চায়? যুগ যেমন এগিয়েছে,তেমন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে না পারলে, লোক ভিডিও দেখবে কেন?
ওই একটু স্লিপলেস ব্লাউজ কিংবা স্লিপ নাইট্রি পরে বিছানায় শুয়ে একটু আকর্ষণীয় করে নিজেকে সাজাতে পারলেই রাতারাতি তুমি ভাইরাল। ওসব লজ্জাটজ্জা করে লাভ কী? মানে একটু শরীর দেখাতে পারলেই ভাইরাল হয়ে যাবে বুঝলে!
কয়েকমাস পর হঠাৎ দেখা।
কী ব্যাপার আর ভিডিও করছ না? মুখটা এত ফ্যাকাসে লাগছে কেন?
একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,ওসব আর করি না গো। ভাইরাল হতে গিয়ে নিজের সংসার,সন্তান স্বামী সব হারিয়ে ফেলেছি। যার সাথে নতুন ঘর বাধতে ঘর ছাড়লাম। সেও আমাকে সব লুট করে পালিয়েছে।এখন ভীষণ একা।
সংসারে ঠাঁই নেই।ছেলেটাও ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন বড়ো একা। একটা কাজ খুঁজে দেবে বন্ধু?
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তথাকথিত মধ্যবিত্ত সমাজের উন্নত আধুনিক নারীর দিকে।
========================
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
গ্রাম- ভগবান পুর
পোস্ট - দিঘির পাড় বাজার
জেলা- দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা
থানা- ফলতা