দীপাবলি
অঙ্কিতা পাল
সেদিন ছিলো দীপাবলি, সন্ধ্যেবেলায় সকলের বাড়িতে যখন দীপের আলোয় আলোকিত; ঠিক তখনই খবর এলো তপন ও দিপালীর কোল আলো করে ভূমিষ্ঠ হল এক কন্যা সন্তান।।
তপনের বাবা তরুণ বাবু ও মা মন্দাকিনী দেবী ভারী অসন্তুষ্ট হলেন, তারা মেয়ের মুখ দর্শন করলেন না।
মেয়ে জন্মানোর অপরাধে তাদের ছেলে ও ছেলের বউকে ঘর থেকে বিতাড়িত হতে হলো............................................
এই মেয়ের গায়ের রং ছিল গৌর বর্ণ, অপরূপ সুন্দরী এবং মেঘ বরন চুল।
কিন্তু তাতেও তাদের মনে ধরল না।.............................
এরপর কেটে গেছে কয়েকটি বছর.....
.......
তপনের বাবা ও মা তাদের সেই বসত বাড়ি বিক্রয় করে তাদের কনিষ্ঠ পুত্র তমালের বাড়িতে আশ্রয় নেয়; বেশ ভালই চলছিল দিনগুলো। তরুণ বাবু সরকারি কর্মচারী ছিলেন এইজন্য তাদের প্রথম প্রথম তমালের বাড়িতে থাকতে অসুবিধা হয়নি।
কিছুদিন পর তমালের বউ শ্রাবণী পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। তরুণ বাবু ও মন্দাকিনী দেবী নাতির প্রতি মায়া মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আনন্দে মত্ত হয়ে ওঠেন;;;;
একপ্রকার বড় ছেলে বৌমা এবং তাদের নাতনীকে ভুলেই যান।।।।
তমাল এবং শ্রাবণী প্রচন্ড স্বার্থপর এবং অত্যাচারী ; তারা এতটাই স্বার্থপর ছিলো যে বাবা মাকে দিয়ে প্রচন্ড খাটাতো এবং তাদের টাকা-পয়সা সবকিছু আত্মসাৎ করেছিল।।।।।
তরুণ বাবু এই সব সহ্য করতে না পেরে প্রচন্ড চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মন্দাকিনী দেবীর যখন কর্ম ক্ষমতায় ভাঁটা পরে, ঠিক তখনই তাকে চোর বদনাম দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়।।।।।।
তিনি ক্ষুধার জ্বালায় কলঙ্কের কালি মাথায় নিয়ে পাগলের মতো শহরের রাজপথে ছুটতে শুরু করেন...........
এক সময়, এক গাড়ির ধাক্কায় কিছুক্ষণের জন্য অচৈতন্য হয়ে যান তিনি;;;;;;;
আজও দীপাবলির আলোয় চারিদিক আলোকিত ................
হঠাৎই তিনি চোখ মেলে দেখেন সেই পুরনো বাড়ির সেই ঘর সেই বিছানা যেখানে তিনি আর তার স্বামীর সুখের কাটানো মুহূর্ত গুলি।
পাশে দাঁড়িয়ে আছে তপন, তপনের বউ ও তাদের একমাত্র কন্যা শিবপ্রিয়া।
নাতনি বড় ছেলে বৌমাকে কাছে পেয়ে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে; দুচোখে জল নেমে আসে মনে অনুশোচনার জন্ম নেয়।।
অশ্রু ভেজা নয়নে শিবপ্রিয়া কে জড়িয়ে ধরে তিনি আনন্দের সাথে বলে ওঠেন - লক্ষ্মী এসেছে আমার ঘরে।।
দিপালী আজ দীপাবলীর আলোয় সমস্ত অন্ধকার দূর করে সুন্দর সংসার সাজিয়েছে।
========================
ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা