ছোটোদের গল্প ।। রুনের বন্ধুরা ।। পূর্বিতা পুরকায়স্থ
রুনের বন্ধুরা
পূর্বিতা পুরকায়স্থ
আমাকে কি তোমরা খেলায় নেবে? আমি তোমাদেরই মত। ইচ্ছে মত চলাফেরা করতে পারি না। এই জন্যই কেউ আমাকে খেলায় নেয় না। ওরা সবাই খেলে। আমাকে কক্ষণো নেয় না। বলে,তুই কি করে খেলবি ? তুই কি দৌঁড়ুতে পারিস ? চুপ করে বসে থাক্। কিন্তু আমার যে এক জায়গায় বসে থাকতে ইচ্ছে করে না। ওরা সবাই খুব দুষ্টু। আড়ি। আড়ি। আড়ি। ওদের সবার সাথে আড়ি। তোমরা কি আমায় খেলার নেবে ? তোমরা কি খেল ?
রুন মনে মনে কথাগুলো উচ্চারণ করে ফুল গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। রুনের মনে হয় ওর কথা শুনে ফুল গুলো মাথা নাড়ে। তাই ও আবার বলতে শুরু করে আমি তো গেম পিরিয়ডে ও ক্লাসে একা একা বসে থাকি। ফুলেরা ওকে জিজ্ঞেস করে, কেউ কি তোমায় মাঠে নিয়ে যায় না খেলা দেখার জন্য ? রুন বলে, না, কেউ নিয়ে যায় না । আমার যে কি ইচ্ছে করে সবার খেলা দেখি ! তাই আমি পা টেনে টেনে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারি না তো। তাই ক্লাসে ফিরে এসে গল্প বই পড়ি।
কথা বলতে বলতে রুন বাড়ির সামনের মাঠের দিকে তাকায় । পাড়ার যত ছেলে মেয়েরা আছে সবাই খেলছে। কেউ একবারের জন্যে ও ওর দিকে তাকাচ্ছে না। ও শুধু মনে মনে ভাবে কবে যে ওর পা ঠিক হবে আর ও সবার মত খেলতে পারবে ! এভাবে ভাবতে ভাবতে আর গাছপালা ও ফুলেদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন সন্ধ্যে হয়ে আসে রুন তা খেয়াল করে না।
ওদের বাড়িটাকে ঘিরে একটা সুন্দর বাগান আছে। বারান্দায় বসলে বাগানের অনেকটাই দেখা যায়। মা হুইল চেয়ারে ওকে রোজ বিকেলে এখানে বসিয়ে দিয়ে যান আবার সন্ধ্যে নামলেই ওকে ভেতরেং নিয়ে যান। এভাবেই রুনের দিন কাটে। চলাফেরা করতে না পারার কষ্ট টা
ফুলেরা বোধহয় রুনের এই কষ্ট বুঝতে পারত। তাই এরকমই এক বিকেলে ওরা ওকে বলল, তুমি একদম দুঃখ করবে না। তুমি যদি অন্য বাচ্চাদের মত চলাফেরা করতে পারতে তাহলে তোমার মত বন্ধু আমরা পেতাম না। তুমি ও হয়ত ওদের মত আমাদেরকে টেনে টেনে ছিঁড়তে ! একদম ভালবাসতে না।
রুন বলল, না না আমি কক্ষনো তোমাদের ছিঁড়তাম না। মা বলেছেন ফুল না ছিঁড়তে। বলেছেন গাছেদের প্রাণ আছে। ওরা ব্যাথা পায়। তবে আমার তো ইচ্ছে করে যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাই।
ফুলেরা বলল, তুমি তো ওষুধ খাচ্ছ! আজ না হয় কাল পা ঠিক হয়ে যাবে। মনে পড়ে তুমি আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলে, আমরা কি খেলি ?
রুন বলল, কি ?
শুধু দেখি । চুপ করে শুধু দেখে যাই।
রুন অবাক হয়ে বলে, কি দেখ?
এই আকাশ, মাটী ,গাছ, পশু, পাখী। চারদিকে যা আছে। এমনকি মানুষ ও। এভাবে যদি তুমিও দেখ, একদিন দেখবে তুমি ওদের সবাইকে চিনে গেছ। জেনে গেছ। তারপর ওদেরকে নিয়ে যখন ভাবতে শুরু করবে তখন সব্বাইকে মনে হবে তোমার বন্ধু।
কি ভাবব ?
এই যেমন, কখন কোন ঋতু আসে। তার সাথে কোন ফুল, ফল সব্জি আসে। কোন পাখী কখন ডাকে । এই যে এত বড় আকাশ দেখছ, তার রং কখন এবং কেন পাল্টায় তুমি দেখতে দেখতে সব জেনে যাবে। এইভাবে একদিন আকাশের তারাদের চিনে যাবে। কি দারুন মজা। তাই না ?
ফুলেদের কথা শুনে রুনের সত্যি ভীষন ভাল লাগল। ভাবছে দেখে দেখে এত কিছু জানা যায় ! ও তো জানত শুধু বই পড়লেই জানা যায়।
রুনের আজ সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে ও আর একা নয়। ওর অনেক বন্ধু। সবার ওপর এত্ত বড় আকাশ আর তার নীচে এত কিছু !
--------
পূর্বিতা পুরকায়স্থ
B 39/1 Narkelbagan Road
Garia, Kolkata-700084