গল্প ।। ঘটনার ঘনত্ব ।। সোমনাথ মুখার্জী
ঘটনার ঘনত্ব
সোমনাথ মুখার্জী
আমি আজ শুধু শুয়ে ছিলাম। কেন ছিলাম জানেন ভাই। লোকটি প্ল্যাটফর্মে শুয়ে আছে। বজবজ লোকাল ছাড়বে। বিড়ি টানছি। ট্রেনে উঠব। বেকার। কাজের সন্ধানে দৌড়। শব্দের ঝালমুড়ি চারিদিকে। তাও শুনতে পেলাম কানে। তাকালাম। আমি অন্যরকম খুঁজি। পেয়ে যাই। আজ পেলাম। প্রশ্ন ঠোঁটে লেপ্টে।
তাকালেন। বললেন, এমনি শুয়ে নেই। তোমার বয়স দেখছি কম। ওই বয়স আমার ছিল। চনমনে। ঝক্কাস্। কিন্তু আজ। লোকটি থেমে গেল।
যাত্রীরা আমাকে মাপছে। ভাবছে বোকা। কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। সত্য থেকে পালাতে চাইছে। লোকটির বয়স বোঝা যাচ্ছে না। আমার তেমন ইচ্ছেও নেই, আবার আছেও। ট্রেন ছাড়তে কিছুটা দেরী হবে। মাইকে বলল। লোকটির কাছে মানে মানুষটির কাছে এলাম। কেমন যেন মনে হল। আমার মনের ভেতর প্রবল কৌতূহলের জন্ম হচ্ছে। খুবই যেন আপন। নিজের সংকোচ ভেঙে কাছে চলে এলাম। নিজেকে সামলাতে পারলাম না। বললাম, এভাবে কেন? আপনার কী!! কেউ নেই!! আত্মীয় পরিজন?
আমার সবই আছে। আবার নেই। মানুষটি হাসল। রহস্যের হাসি।
মানে। বুঝলাম না। আমার চোখে বিস্ময়।
ঘরের কথা কী বাইরে বলতে আছে। বলতে নেই। মানুযটি আশেপাশে তাকাল।
কিন্তু তাই বলে এভাবে। প্ল্যাটফর্মে।
ভাগ্য ভাগ্য। হয়তো কর্তব্যে গাফিলতি আছে।
একটু আগে আপনাকে অনেক প্রাণবন্ত দেখলাম। তাই আর কী।
বুঝেছি। তোমার নাম কি।
আমার নাম বললাম। কিন্তু আপনাকে ঠিক বুঝলাম না। আপনার নাম পরিচয় জানতে চাই না। হয়তো আপনাকে ছোট করা হবে।
তোমার অনেক বুদ্ধি। দেখছ তো সমাজ কিভাবে আমাদের দেখছে। ওরা শুধু মজাটুকু শুষে নেয়।
কিন্তু,আপনি বললেন আপনি শুয়ে আছেন। আমার গোলমাল ঠেকছে।
তুমি সব বুঝবে না। বোঝার চেষ্টা কোরো না। আচমকা উঠে দাঁড়ালেন। চকিতে সবকিছু বদলে গেল। গুলির আওয়াজ হল। চোখের সামনে ঝাপসা কুয়াশা।
দুই দিন আচ্ছন্ন থাকার পর খবরের কাগজে পড়লাম, শিয়ালদা সাউথ সেকসনে একজন আততায়ী ধরা পড়েছে।
আমার চেতনায় অবচেতনায় আজও ঘটনার রেশ ছড়িয়ে আছে।
শ্রী সোমনাথ মুখার্জী
৫৬১/সি,লেক ভিউ পার্ক রোড,বনহুগলী, সোলারিস ফেজ-১, টাওয়ার-১, ফ্ল্যাট নম্বর -১০০৫, কলকাতা-৭০০১০৮