বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

অণুগল্প।। দুর্ঘটনা ।। অশোক দাশ


 

দুর্ঘটনা

অশোক দাশ 


হাইরোডে দুর্ঘটনার ফলে রাস্তা জ্যাম। বাস লরি প্রাইভেট কার ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থমকে গেছে চলার গতি। কালো পিচ রাস্তার বুক জুড়ে অ্যাম্বুলেন্সের হর্ণের আওয়াজ তোলপাড় করে দিচ্ছে। মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে পরিবারের লোকজন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছে । এমন জায়গায় আটকে পড়েছে আগাতেও পারছেনা পিছুতেও পারছে না। 
      অমিত নিরুপায় হয়ে পড়েছে। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎই আজ সকালে তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে, স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল তার বাবার সুচিকিৎসার আশায়। কিন্তু হাইরোডে দুর্ঘটনায় পড়বে এটা তার কল্পনার মধ্যেও ছিল না। যত বেলা গড়াচ্ছে তার বাবার অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ছে।  হঠাৎই সে আশার আলো দেখতে পেল।
     বুঝতে পারল আস্তে আস্তে গাড়ি আগাচ্ছে পথ খুলে গেছে। অমিতের মনে হচ্ছে কত দ্রুত তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবে। তার বাবা বাঁচবে তো!
এইভাবে আরও দু'ঘণ্টা কাটার পর হসপিটালে গিয়ে পৌঁছালো। তাড়াতাড়ি জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তার বাবুরা, নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আই সি ইউ তে ভর্তি করে নিল। কিন্তু বাহাত্তর ঘন্টা না কাটলে কিছু বলা যাবে না। রোগীকে আরও আগে ভর্তি করতে পারলে ভালো হতো। 
   অমিত তার আত্মীয়-স্বজনদের তার নিজের বাড়িতে ফোন মারফত খবরটা পৌঁছে দেয়। আর ভাবতে থাকে তার ছেলেবেলার কথা, সংসারের জন্য বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা। স্নেহ ভালোবাসার কথা। তাদের বড় করে তোলার জন্য নিজে না খেয়ে ছেঁড়া চটি পায়ে দিয়ে, দিনের পর দিন অমানুষিক‌ কষ্ট করে আপনজনদের খুশি করেছেন। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরে পড়ে। 
     ওয়েটিং রুমে মাইক্রোফোনে ভেসে আসা আওয়াজে অমিতের সম্বিত ফেরে, সে শুনতে পায় ৭২ নম্বর বেডের রোগীর বাড়ির লোককে অফিসে ডাকা হচ্ছে।  পড়ি মরি করে অমিত ছুটে যায় অফিসের কাছে এবং জানতে পারে তার বাবা আর নেই। কান্নায় ভেঙে পড়ে অমিত। হাই রোডের একটা দুর্ঘটনা তার বাবাকে ছিনিয়ে নিল তাদের কাছ থেকে। আরও একটু আগে যদি হাইরোডের জ্যামটা ছেড়ে যেত তাহলে তার বাবাকে অকালে হারাতে হতো না। একটা দুর্ঘটনা যে অনেক দুর্ঘটনাকে ডেকে আনতে পারে, অনেক সাজানো বাগান মুহূর্তের মধ্যে নষ্ট হয়ে যেতে পারে আজ অমিত নতুন করে তা উপলব্ধি করলো। তার মাথার উপর থেকে সরে গেল রবি গোধূলি অস্তরাগে।
==========================
অশোক দাশ 
ভোজান,  রসপুর,  হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.