গল্প ।। সম্পর্ক ।। ইয়াসমিন বানু
0
জানুয়ারী ০১, ২০২৫
সম্পর্ক
ইয়াসমিন বানু
শীতের শেষবেলার ওমটুকু গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছি ছাদে একা। আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে।মন কিন্তু ভরে আছে সকালের সোনা ঝরা রোদ্দুরে। গুনগুন করে গাইছি ' আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে... ময়ূরপঙ্খী ভিড়িয়ে দিয়ে সেথা ..' না ,না তবে আমায় কিন্তু যেতে হয়নি, সাত সাগর আর তেরো নদী পেরিয়ে আমাদের কাছে আজ আসছে আমাদের একমাত্র পুত্রবধূ। সোনালী চুল আর নীল চোখের মেরিডিথ। আমি ওর মাসিশাশুড়ি।
ছোটবেলা থেকেই সোনালী চুল আর নীল চোখের মেমসাহেবদের প্রতি আমার এক অজানা বিস্ময় ছিল। কলকাতার পুরোনো নিউমার্কেটে মাঝে মাঝে যখন যেতাম তখন দেখতে পেতাম ওদেরকে । নীল চোখ, দীর্ঘ চেহারা আমার কেমন ভয়ও করত।তবে ওদের অনাবিল হাসি, হাত নাড়া, কখনো বা টফি দেওয়া আমার শিশুমনে ওদের একটা জায়গাও করে নিয়েছিল।
আমাদের ছেলে পড়ার সুবাদে পাড়ি দিল সুদূর আমেরিকা। আমরা পেলাম নিউইয়র্কবাসী মেরিডিথকে।
বিয়ের পর এই প্রথম মাত্র দু সপ্তাহের জন্য ও আসছে কলকাতাতে। তাই গত চার সপ্তাহ ধরে আমাদের শহর আর শহরতলির বাড়িতে যেন সাজো সাজো রব। কী করে ভিন মহাদেশীয় মেয়েটিকে ওর কমফোর্ট জোন দিয়ে নিজের করে নেব তার এক নিরন্তর প্রচেষ্টা।
ছেলে, বৌমা ঘরে এলো। ঘর যেন এক অন্য মাত্রা পেল। কী অবলীলায় পরিবারের সকলের সাথে মিশে গেল আমাদের বউ। ভাষাও কোনো অন্তরায় হলো না।আমাদের খাওয়াদাওয়া, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কোনো কিছুতেই ওকে না বলতে দেখিনি। মশারি টাঙানো খাট, আকাশে ওড়া ঘুড়ি, গৃহ সহায়িকার সাথে সেলফি,,, আরো কত মজা, কত ঘোরাঘুরি।
কলকাতার এক রেস্তোরাঁয় আমাদের বড় পরিবারের সাথে পরিচয় পর্বের অনুষ্ঠান হল। সেখানেও অত্যন্ত হাসিমুখে সকলের সাথে কুশল বিনিময়। হ্যাঁ, তবে লাল বেনারসি ,চেলি ,গা-ভরা গহনা অথবা হোয়াইট গাউন , মাথায় ক্রাউন কোনোটাতেই আমরা ওকে সাজাতে পারিনি। অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত আমাদের মেরিডিথ। চাকরিও করে অনেক উঁচু পদে। তবে সাজগোজের কিচ্ছুটি নেই ওর মধ্যে। ক্যাজুয়াল ,শোভন পোশাকে হাসিখুশি তন্বী।
এ যেন এক ভিন্ন বউ বরণ ও গ্রহণ।আমরা কিন্তু ভীষণ খুশি। আমাদের অশীতিপর মায়ের হাত ধরে সেদিন রেস্তোরাঁ থেকে বেরোলো ও সবশেষে। ফুটপাতের টি স্টলের জমাটি চা আর বিস্কুট খেলাম আমরা ,আমাদের নিজস্ব ছোট্ট পরিবারের সবাই মিলে।
১৪ দিনে চারটে বাংলা শব্দ শিখল ও। মিষ্টি দই, ছানার জিলাপি, ঠিক আছে আর বিরক্তিকর।
পবিত্র মদিনার খেজুর রেখেছিলাম ওদের জন্য । খুবই সুন্দর স্বাদের, বড় মাপের খেজুর । কীভাবে খেতে হবে জেনে নিল আমার কাছে। খুশি হয়ে খেলো।
মেরি ক্রিসমাস আসছে। ফিরে গেল ওরা ।
আদান-প্রদান হল শিক্ষার, চিন্তার , ভালোবাসার, ভালো লাগার। প্রায় বছর পঁচিশ ,ত্রিশ আগে আমরা যখন প্রথম বউ হলাম আর আজ যখন বউমা পেলাম কোনো হিসাব মেলালাম না। শুধু হৃদয়ের কোরা কাগজে জ্বলজ্বল করছে কয়েকটা শব্দবন্ধ " বেঁচে থাক ভালোবাসা, বেঁচে থাক সম্পর্ক"।
এখন রাতের আকাশে এক মনে তাকিয়ে আছি। মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল প্লেন। চোখ রাখলাম সেই নীল দুটি চোখে।
=====================
আমাদের ছেলে পড়ার সুবাদে পাড়ি দিল সুদূর আমেরিকা। আমরা পেলাম নিউইয়র্কবাসী মেরিডিথকে।
বিয়ের পর এই প্রথম মাত্র দু সপ্তাহের জন্য ও আসছে কলকাতাতে। তাই গত চার সপ্তাহ ধরে আমাদের শহর আর শহরতলির বাড়িতে যেন সাজো সাজো রব। কী করে ভিন মহাদেশীয় মেয়েটিকে ওর কমফোর্ট জোন দিয়ে নিজের করে নেব তার এক নিরন্তর প্রচেষ্টা।
ছেলে, বৌমা ঘরে এলো। ঘর যেন এক অন্য মাত্রা পেল। কী অবলীলায় পরিবারের সকলের সাথে মিশে গেল আমাদের বউ। ভাষাও কোনো অন্তরায় হলো না।আমাদের খাওয়াদাওয়া, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কোনো কিছুতেই ওকে না বলতে দেখিনি। মশারি টাঙানো খাট, আকাশে ওড়া ঘুড়ি, গৃহ সহায়িকার সাথে সেলফি,,, আরো কত মজা, কত ঘোরাঘুরি।
কলকাতার এক রেস্তোরাঁয় আমাদের বড় পরিবারের সাথে পরিচয় পর্বের অনুষ্ঠান হল। সেখানেও অত্যন্ত হাসিমুখে সকলের সাথে কুশল বিনিময়। হ্যাঁ, তবে লাল বেনারসি ,চেলি ,গা-ভরা গহনা অথবা হোয়াইট গাউন , মাথায় ক্রাউন কোনোটাতেই আমরা ওকে সাজাতে পারিনি। অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত আমাদের মেরিডিথ। চাকরিও করে অনেক উঁচু পদে। তবে সাজগোজের কিচ্ছুটি নেই ওর মধ্যে। ক্যাজুয়াল ,শোভন পোশাকে হাসিখুশি তন্বী।
এ যেন এক ভিন্ন বউ বরণ ও গ্রহণ।আমরা কিন্তু ভীষণ খুশি। আমাদের অশীতিপর মায়ের হাত ধরে সেদিন রেস্তোরাঁ থেকে বেরোলো ও সবশেষে। ফুটপাতের টি স্টলের জমাটি চা আর বিস্কুট খেলাম আমরা ,আমাদের নিজস্ব ছোট্ট পরিবারের সবাই মিলে।
১৪ দিনে চারটে বাংলা শব্দ শিখল ও। মিষ্টি দই, ছানার জিলাপি, ঠিক আছে আর বিরক্তিকর।
পবিত্র মদিনার খেজুর রেখেছিলাম ওদের জন্য । খুবই সুন্দর স্বাদের, বড় মাপের খেজুর । কীভাবে খেতে হবে জেনে নিল আমার কাছে। খুশি হয়ে খেলো।
মেরি ক্রিসমাস আসছে। ফিরে গেল ওরা ।
আদান-প্রদান হল শিক্ষার, চিন্তার , ভালোবাসার, ভালো লাগার। প্রায় বছর পঁচিশ ,ত্রিশ আগে আমরা যখন প্রথম বউ হলাম আর আজ যখন বউমা পেলাম কোনো হিসাব মেলালাম না। শুধু হৃদয়ের কোরা কাগজে জ্বলজ্বল করছে কয়েকটা শব্দবন্ধ " বেঁচে থাক ভালোবাসা, বেঁচে থাক সম্পর্ক"।
এখন রাতের আকাশে এক মনে তাকিয়ে আছি। মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল প্লেন। চোখ রাখলাম সেই নীল দুটি চোখে।
=====================
বেকবাগান
কোলকাতা