কয়লা
সুশান্ত সেন
"সেকালের কলকাতা কত গল্প কত কথা" - হরিপদ ভৌমিক রচিত বইটি পড়ে জানলাম ১৮৭৫/৭৬ সালে প্রথম কলকাতায় পাথুরে কয়লার প্রচলন হয়।
প্রথম প্রথম সেই কয়লা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হত। লোকেরা তখন রান্নার কাজে কয়লা ব্যবহার করার কৌশল জানত না। উনানে কি করে কয়লা ব্যবহার করতে হবে, ক্রমে লোহার শিক প্রায়োগে লোকেরা বুঝতে পারল।
উনান এর তলায় একটা ফাঁক রাখার প্রচলন হলো আর সেই ফাঁকের ঠিক ওপরে পাশাপাশি পরপর লোহার শিক গেঁথে তার ওপরে কয়লা রেখে উনান তৈরি হতে থাকলো।
সাধারণ লোকের ব্যবহারিক কল্পনা ক্রমে দৈনন্দিন পাকশালায় জায়গা করে নিল।
প্রথম দিকে কয়লার দাম ছিল মন প্রতি এক আনা।
ভারতে বর্তমানে প্রচলিত মেট্রিক পদ্ধতিতে টাকার লেনদেন ও ওজন মাপার প্রক্রিয়া ১৯৫৮ সালে শুরু হয়। তার আগে পর্যন্ত মুদ্রা ব্যবস্থায় টাকা আনা পাই ও ওজন মাপক এর জন্য মন সের ছটাক এর প্রচলন ছিল।
মনে আছে ১৯৫০ সালে আমাদের বাড়িতে কয়লার উনানেই রান্না হত। আমাদের আলাদা রান্নাঘর ছিল। সেখানে ছিল দেয়াল ঘেষা পরপর দুটো রান্না করার চৌকা আকারের উনান। বামুন ঠাকুর সেইখানেই রান্না করতেন।
পাশেই দোতলায় ওঠার সিড়ি। সেই সিড়ির নিচে কয়লা রাখার জন্য একটা একটু নিচু জায়গা ছিল। পাড়ার কয়লাওলার একটি লোক , গিরিধারী প্রত্যেক মাসের প্রথমে সেই নিচু জায়গায় চার মন করে কয়লা ঢেলে দিয়ে যেত।
গিরিধারী ঠেলাগাড়ি করে কয়লা নিয়ে এসে, শেষে পিঠে সেই বস্তা তুলে বাড়ির ভেতর আসত। ছোট বেলায় এই কয়লা ঢালা দেখে খুব মজা পেতাম।
ঠিক মনে নেই মনে হয় ১৯৭৫/৭৬ নাগাদ আমাদের বাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রথম প্রচলন হল।
প্রথম প্রথম দু রকম জ্বালানিতেই রান্নাবান্না হত।
ক্রমে যুগের অমোঘ গতিতে একমাত্র গ্যাসে রান্না করাই প্রচলিত হল।
=================
চিত্র ঋণ - ইন্টারনেট
সুশান্ত সেন
৩২বি, শরৎ বোস রোড কলিকাতা,৭০০০২০