Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।। কেউ জ্বালায় কেউ নেভায় আলো ।। পিয়ালী দাস

 

 

কেউ জ্বালায় কেউ নেভায় আলো

    পিয়ালী দাস

 

না এসব আমার কিছুই না! এই পার্থিবসম্পদ কেবলই আমার একার নয়!সর্বদা এমনই কথাই বলেন জ্ঞানদ্বীপ্তবাবু।ইনি বরাবরই কর্মপ্রিয় নির্লোভ ভদ্র মানুষ।তাঁর জীবনে সম্পদের লোভ নেই, আছে কেবল অসহায় মানুষের উপকার করার লোভ।শুধু তাই নয় জ্ঞানদ্বীপ্ত বাবু প্রান্তিক,দুঃস্থ,হতাশ ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুব ভাবতেন, তিনি কাউকে অঙ্ক ,কাউকে ভৌত বিজ্ঞান কাউকে বা ইতিহাস, কম্পিউটার, বাংলা সাহিত্যে ইত্যাদি বিষয়ক সমস্যার সমাধান করে দিতেন এক তুরি তেই।তিনি সঙ্গীত এবং সমস্ত রকম বাদ্যযন্ত্র বিষয়ে বেশ পারদর্শী ছিলেন।আগ্রহী এবং পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের মনে আশা জাগ্রত করতেন! তাঁদের আগ্রহ এবং সম্ভাবনার বিষয় গুলি খুঁজে বের করে দিতেন এবং এগিয়ে  যাওয়ার পথও দেখিয়ে দিতেন, তবে একটি শর্তে! সেটি হল সৎ, পূর্বপুরুষ ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাকারী,  নির্লোভী,পরিশ্রমী ছাত্রছাত্রীদেরই সংস্পর্শে তিনি থাকতে পছন্দ করতেন, নচেৎ তিনি অযথা সময় অপচয় করতেন না।বাদলা পাড়ার বছর বাইশের মেয়ে সর্বা সে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া পরিবারের কন্যা সন্তান!তার সাথে জ্ঞানদীপ্ত বাবুর পরিচয় হয় জ্ঞানদীপ্ত বাবুর পলিথিন ব্যাগে অলুচাষের সূত্রে।সর্বা গাছপালা লাগাতে পছন্দ করতো,তার মাটি মেখেই বেড়ে ওটা।সর্বা কোনো রকমে স্নাতক পাঠক্রম শেষ করেছে।সে কিছুদিন ধরে চিন্তা ভাবনা করছিল এইবার সে কিছু একটা করবে; তাই জ্ঞানদীপ্ত বাবুর পলিথিন ব্যাগে অলুচাষের কথাটা তাকে বেশ ভাবিয়েছিল।সে জ্ঞানদীপ্ত বাবুর থেকে পরামর্শ নিয়ে ঘরের আনাজ কানাচে পড়ে  থাকা সমস্ত পলিথিন একত্রিত করে এবং স্বল্পমূল্য কিছু মূলসহ  আলু সংগ্রহ করে; আর যেই ভাবা সেই কাজ, গাছ লাগায়।তারপর জ্ঞানদীপ্ত বাবুর কাছে তার সুবিধা-অসুবিধায় যাতায়াত চলতে থাকে।সর্বা আলুর ফলন আশানুরূপ হয়নি তাই তার মনটা বেশ খারাপ হয়ে যায়।জ্ঞানদীপ্ত বাবু একদিন তিনি ইচ্ছাকৃত সর্বা কে ডাকে তাঁর সঙ্গীতের ক্লাসে; সর্বা ও উপস্থিত হয় নির্ধারিত সময়ে।সে বাকি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এককোনে বসলো।যথারীতি গান বাজনা শুরু হল সর্বার ও খুব ভালো লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ ঘটলো এক বিপদ জ্ঞানদীপ্ত বাবু ভরা ক্লাসে সর্বা কে বলল, সর্বা উঠে আয় আমার কাছে! বল সা'আআআআআ ; সর্বা বিস্মিত হতবাক হয়ে ভয় ভয় চোখে বিকট ভাবে বলল সা'আআআআআ ; জ্ঞানদীপ্ত বাবু বললেন না আর একটু উঁচু তে "সা" কর সে ফের চেষ্টা করল।জ্ঞানদীপ্ত বাবু বললেন; তোর হবে! তুই গান শিখবি?সর্বা মাখা নাড়ে; হ্যাঁ! কিন্তু সর্বা সে তার কন্ঠস্বর সম্পর্কে কোনো ধারনা ছিলনা। এর আগে তার কন্ঠস্বর সম্পর্ক কেউ খারাপ বৈ ভালো বলেনি তাকে।সে রীতিমত শব্দ করে গান গায়তে ভয় পেত।কিন্তু জ্ঞানদীপ্ত বাবুর এমন মন্তব্যে সর্বা বেশ মনে মনে আনন্দিত অনুভব করেছিল।সে জ্ঞানদীপ্ত বাবুর থেকে একটু একটু করে তালিম নিতে থাকে। সবে সবে তার গান গাওয়ারও একটু সাহস হয়।প্রায় সে বছর খানেক বেশ মনোযোগ দিয়ে গানের রেওয়াজ চালিয়ে যায়। খুব ভালো সুর তাল না বুঝলেও খারাপ গায়তো না কারণ তার কন্ঠস্বরটি ছিল বেশ মিষ্টি।বেশ ভালোই চলছিল সর্বার জীবন। কিন্তু অন্যদিকে সর্বার বাবা-মা তার বিবাহের ব্যবস্থা করে ফেলে! সর্বার বিবাহের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিবাহ হয়ে যায়। বিবাহের পর স্বামী গৃহে সে একবার যখন গান গায়ে তার গানের দুই কলি শুনেই স্বামীর বলে উঠলেন;"যা যা এটা গান নাকি কুকুরের ঘেউ ঘেউ? ভুলেও আর কখনও চেষ্টা করো না"! ব্যাস আর কখনও সে গান গাওয়ার চেষ্টাও করেনি।
==============================

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.