মুক্তগদ্য ।। একটি ধর্ষণ ও কিছু প্রশ্ন ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
0
জানুয়ারী ০১, ২০২৫
চিত্রঋণ - ইন্টারনেট
একটি ধর্ষণ ও কিছু প্রশ্ন
জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
ধর্ষণ কি কারণে হচ্ছে ,কে দায়ী ? নারী না পুরুষ ?কোন মানসিকতা দায়ী এসব তর্ক বিতর্ক লেগেই থাকবে তবে আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যেটুকু দেখেছি নারী পুরুষ উভয়েরই খারাপ মানসিকতাই এর জন্য দায়ী এবং এই কিছু খারাপ নারী পুরুষ দের জন্য ধর্ষনের শিকার হতে হয় ভালো শালীন মেয়েদের আর ধর্ষকের তকমা পেতে হয় প্রায় সমগ্র পুরুষ জাতিকে ।
তবে এখন সেটা নিয়ে বলার চেয়ে বলতে চাই একটা মেয়ে মূল ধর্ষনের শিকার হবার পরেও খুন হবার পরেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার পরেও এই পৃথিবীতে যতদিন আদালতে তার বিচার চলে সে ধর্ষিতা হতেই থাকে... হতেই থাকে ! মর্গে যায় মৃতদেহ ! তদন্তের স্বার্থে মা বাবা কে বাধ্য হতে হয় রাজি হতে, সে তখন লাশ! সেখানেও এমন ঘটনা উঠে আসছে মৃতার সাথে সঙ্গম ,আর না হয় ,কে বলতে পারে সেখানে থাকে না কোনো অশ্লীল ছোঁয়া ? যে শরীর আর কিছু পরেই এক মুঠো ছাই হয়ে জ্বলে ভেসে যাবে কিংবা মাটির তলায় চিরকাল চাপা পড়ে যাবে সেখানেও চলে আরেক দফা ধর্ষণ তা সে চোখ দিয়েই হোক,বা ছোঁয়া দিয়েই হোক !তার পর পুলিশ/ সিবিআই তদন্ত করে । সেখানে রিপোর্ট আসে ।
অনেক পুরুষের হাতে হাতে যাবার পর
তার পর সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা চলে যায় সাংবাদিকের কাছে । বিভিন্ন কাগজ , পত্রিকা চ্যানেলে চর্চা চলে , ধর্ষিতার কোন কোন জায়গায় আঁচড়, কামড় , কত পার্সেন্ট নগ্নতা ছিল ইত্যাদি নিয়ে সেসবের চুল চেরা বিশ্লেষণ হয় ! ধর্ষক বা ধর্ষক দের সিমেনের পরিমাণ কতটা ,....চলেই যায় চলেই যায় আলোচনা আর লেখালিখি ।
যে কাগজ বেশি লিখবে বা যে চ্যানেল বেশি দেখাবে পাবলিক যত খাবে, তার ততো জনপ্রিয়তা বাড়বে ! এগুলো কি ধর্ষনের আরেক পদ্ধতি না? মৃতার কি কোনো সম্মান থাকবে না ? সে চলে যাবার পর ও তার শরীরের কোন অংশ কতটা ধর্ষিতা হলো খোলাখুলি চলেই যাবে আলোচনা ?এর মধ্যে কি এক ধরনের নিষিদ্ধ আনন্দ পাওয়া নেই ? তদন্তের স্বার্থে যেটুকু দরকার সেই টুকু জানানো হোক । যেমন কতটা এগোলো ,অপরাধী মুখ খুললো কতটা, বা চক্রের কার্যকলাপ কতটা গভীর! সেগুলো জানানো ঠিক আছে কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি চর্চা হয় ধর্ষণ টা ঠিক কিভাবে হয়েছিল !তার স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনার কি খুব দরকার ! যাঁরা লিক করছেন খবর ,লিখছেন যাঁরা,আলোচনা করছেন যাঁরা চ্যানেলের টেবিলে তাঁরা কি একবারও ভাবেন এগুলো শুনে ধর্ষিতার মেয়েটির মা বাবা অন্য আত্মীয় বা স্বামী কি প্রেমিক তাদের কেমন লাগে !
তার পরে আদালতে গড়ালে সেখানেও চলে পর্যায় ক্রমে ধর্ষণ ..! কথার আঘাত ! ক্লান্তি ।শক্তি যেনো নিঃশেষ হয়ে যায় । ঝড় কতটা সাংঘাতিক তা সেই মেয়েটি আর তার পরিবারেই লোকেরাই টের পান বাকি দের কিছু না ।সবাই সব কিছু ভুলে যায় । থিতিয়ে পড়ে সব কিছু ।ধূসর স্মৃতি ফ্রেমে ধূলো জমে ওঠে ।
কি ভাবেন তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া তে বেশিরভাগ মেয়ে খোলাখুলি ভাবে নিজেকে মেলে ধরছে বলে সব মেয়েই কি এক! বর্তমান অসভ্যতামির যুগেও আজও কিছু মেয়ে আছে এই সমাজে যাঁরা শালীন সভ্য , সংসারের কাজ কি বাইরের ভালো কাজের সাথে যুক্ত বা কেউ কেউ প্রকৃত নারীবাদী হয়ে নারী কল্যাণ মূলক কাজে ছুটে বেড়ান । অন্যায়ের প্রতিবাদী হয়ে ঝড় তোলেন।দুঃখের বিষয় এই মেয়েগুলোই শিকার হন ৯৯ % ক্ষেত্রে ! তাদের প্রতি একটু সম্মান থাক অন্তত নিষিদ্ধ আনন্দ না পেয়ে তাকে আর বেআব্রু না করে ! কতটা কষ্ট হয় তার মায়ের / বাবার ...
বিশেষ করে একজন মায়ের ! একজন সত্যিকারের মা ই বোঝে মেয়ে বড়ো হয়ে উঠলে মায়ের কতটা ভয় হয়,তাকে কতটা আগলানো দরকার হয় পড়ে।সেই ধর্ষিতার মা যখন তাঁর মেয়ের ব্যপারে লেখা পড়েন বা শোনেন তখন কি হয় তাঁর মনের অবস্থা ...! না ভাবে না কেউ , নাহলে এমন নির্লজ্জের মত ধর্ষনের বর্ণনা দিয়ে লেখালেখি বা চর্চা চলতো না । ভাবেন না ফেক নারী বাদি রাও ! তাঁরা এটাকে ইস্যু করে আরো অশ্লীল ভাবে শারীরিক বর্ণনায় এক ধরনের আনন্দ পান বা নিজেদের আরো বেশি করে অশ্লীল করে প্রকাশের সুযোগ পান কারণ তখন ভদ্রতার কথা বললেই তাঁরা নারীবাদের নামে অশালীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে অর্থহীন বক্তব্য রাখতে আসেন ।ওটাই তাঁদের কাছে ঠিক তখন ।
একটু ভাবা উচিৎ পুলিশের ,সাংবাদিক দের আর পাবলিকের ও!
সে শুধু একটি লাশ না সে একটি নারী, কারো মেয়ে কারো বোন কারো মা কিংবা কোনো এক পুরুষের স্ত্রী প্রেমিকা কি প্রিয় বন্ধু । আর এই সব কারণেই হয়তো অনেক ধর্ষিতা মেয়ে আদালত অব্দি যেতে পারেনা । সে জানে মরে গিয়েও তার মুক্তি নেই !ন্যায়বিচারের পথে নেমে তাকে আরো কয়েকবার ধর্ষিতা হতে হবে ! এই বারংবার ধর্ষণে ভয় পেয়ে যান অনেক নারীই। যাঁরা চলে যান পৃথিবী ছেড়ে তারা তো চলে যান, জীবনে বেঁচে যান যাঁরা তাঁদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। অনেকেই তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন । দীর্ঘ দিন বিচার চলে ।কত জন নিঃস্ব হয়ে যায় ।কত ক্ষেত্রে সঠিক বিচার মেলে না । তার ওপরে বারবার শারীরিক প্রশ্নে বিধ্বস্ত হয়ে যায় মন ।
অথচ স্বেচ্ছায় রোজ ইন্সটাগ্রামে, ফেসবুকে , ইউটিউবে শরীর দেখিয়ে বেড়ানো , বহু পুরুষের সাথে বিছানায় যাওয়া নায়িকারা, মডেলরা আর বাইরে বেশ কিছু অন্য প্রফেসনের মেয়েরা কি কিছু ঝিঙ্কু মামণি দের দল বা ছাপড়ি ফ্যাশনের মেয়েরা সমাজে দিব্যি ঘোরাফেরা করে এবং তাদের পিছনে মাছির মত কি মৌমাছির মতো পুরুষও ঘুরছে । তারা আবার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে সেমিনারে যাচ্ছে , পুজোয় ফিতে কেটে আসছে ভোট ও পেয়ে যাচ্ছে সাংসদ বিধায়কও হয়ে যাচ্ছে । প্রজ্ঞা নেই যাদের, ট্যালেন্ট বলতে মেকাপ সাজ পোশাক, ন্যাকা রিল্স বানানো, নগ্নতা প্রদর্শন আর পুরুষ শিকার । এরাও সম্মান পায় ! কিন্তু সম্মান নেই একজন ধর্ষিতার! ধর্ষনের বিরুদ্ধে অতি অবশ্যই প্রতিবাদ হোক । সব রকম সহযোগিতার সাথে তদন্ত চলুক ন্যায় বিচার হোক , কিন্তু সেই সাথে সেই মেয়েটিকে যথাযথ সম্মান দিতেও সবাই শিখুক । মারা যাবার পরও তার সাথে আর ধর্ষণ না হোক ।সে একটি লাশ না সে একটি নারী ,বা নারী পুরুষ যায় হোক ,মানুষ তো ! প্রাইভেসি থাকুক সেখানে ।
ব্যক্তিগত সব কিছু প্রকাশিত করে দেবার দরকার নেই সকলের কাছে ।খুব প্রয়োজন না সেটা । দরকার আগে অপরাধী কে ধরা ।সেটা তে ফোকাস বেশি হোক ।
======================
পাল্লারোড, পূর্ব বর্ধমান।