শুভ বিবাহবার্ষিকী
ঋতম পাল
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। শ্রীপর্ণা আর সৃজন এর এক বছরের বিবাহবার্ষিকী তার মধ্যে আবার ভ্যালেন্টাইনস ডে তাই প্রতি বছর আজকের দিনটা মনে থাকলেও ব্যস্ত সৃজন অফিসের কাজের চাপে একেবারে ভুলে যায়। তাই এই বছর পর্ণার অভিমান হয়েছে তার প্রেমিক তথা স্বামী সৃজনের ওপর।
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা বাজে, হঠাৎ করেই পর্ণার ফোনটা বেজে উঠলো...... এই নিয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়বারের মাথায় পর্ণা ফোনটা রিসিভ করলো।
পর্ণা:- হ্যালো,
সৃজন:- (ফোনের ওপার থেকে) কীরে শ্রী ফোনটা এতো দেরি করে রিসিভ করলি, কী ব্যাপার?? কিছু হয়েছে ?? শরীর ঠিক আছে তো??
পর্ণা:- হুম্ ( খুব গম্ভীর স্বরে)
সৃজন:- এতো গম্ভীরভাবে কথা বলছিস, কী ব্যাপার বল তো শ্রী??
পর্ণা:- না কোনো ব্যাপার না, সব ঠিক আছে। আচ্ছা আজকের দিনে প্রায় একবছর আগে কিছু একটা শুভ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল সেটা কী তোর মনে আছে সৃজন??
সৃজন:- কী আছেরে আজকের দিনে??? তোর জন্মদিন নাকি?? না সেটাতো জুলাইতে, তাহলে কী আছে??
পর্ণা:- না না, কিছুনা থাক.... কী বলবি বলে ফোন করেছিস সেটা বল।
সৃজন:- আচ্ছা শোন তবে, আমি আজকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি করে বেরোবো, তুই সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ির সামনে পার্কের কাছে এসে অপেক্ষা করিস, একটা সারপ্রাইজ আছে আর হ্যাঁ ভালোভাবে সেজেগুজে আসবি কিন্তু।
পর্ণা:- আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু কী হবে?? কোনো অনুষ্ঠান বা বিয়েবাড়ি আছে নাকি??
সৃজন:- হু হু, না না ম্যাডাম, সারপ্রাইজ বলে দিলে আর কীসের সারপ্রাইজ রইলো, তুই আগে আয়তো, তারপর দেখতেই পাবি।
এরপর পর্ণা কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলেও ভেবে উঠতে পারেনা। সে ঠিক ওইসময় বাড়ির কাছে পার্কের সামনে পৌঁছে যায়, গিয়ে দেখে সৃজন বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য, তবে একটা বিষয়ে হলো সৃজনের বাইকে অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট দেখায় পর্ণা একটু অবাকই হয়ে যায়। এরপর সে সৃজনের কাছে গিয়ে বলে-
" বল, বাড়িতে না গিয়ে এখানে কী জন্য ডাকলি?"
সৃজন:- ওহ্, তুই এসে গেছিস, বাহ্, খুব সুন্দর লাগছে তোকে আজকে, বিশেষ করে জ্যোৎস্না ভরা আকাশের চাঁদের এই মিষ্টি আলোয়।
পর্ণা:- ওহ্, অন্যদিন ভালো লাগেনা বুঝি?
সৃজন বুঝতে পারছে শ্রী র অনেকটা অভিমান হয়েছে... তবু সে স্বাভাবিকভাবেই বলে -
" অতশত জানিনা, তুই এখন বাইকে উঠে বস।"
প্রায় কিছু সময় পর পর্ণা যেখানে গিয়ে পৌছালো সেটা দেখে সত্যি তার মন ভালো হয়ে গেলো। একটা এনজিও সংস্থা প্রকৃতপক্ষে বলা যেতে পারে একটা অনাথ আশ্রম। ভেতরে ঢুকে সৃজন সব ছোটো ছোটো দুস্থ শিশুদের হাতে রাতের খাবার তুলে দেয়, সঙ্গে করে তাদের পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় খাতা,বই, কিছু চকোলেট এবং সোয়েটার দেয়। এতোগুলো উপহার পেয়ে ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোর মুখ যেনো আরো বেশি উজ্জ্বল আর দীপ্তিময় হয়ে ওঠে এবং সৃজন লক্ষ্য করে বাচ্চাদের খুশি দেখে পর্ণার মুখেও বেশ আনন্দ ফুটে উঠেছে।
এরপর বাইরে বেরিয়ে পর্ণা বলে-
"থ্যাঙ্কস রে সৃজন.... তোর কাছে চাওয়া আমার এই ছোট্ট ইচ্ছাটা যে তুই মনে রেখে পূরণ করলি এর জন্য আমি খুব খুব খুব খুশি রে।"
সৃজন মুচকি হেসে বলে-
" বিয়ের প্রথম বছর বিবাহবার্ষিকী আবার উপরি ভ্যালেন্টাইনস ডে তে আমার বউয়ের চাওয়া একটা ছোট্ট আবদার যদি পূরণ করতে না পারি, তাহলে তো স্বামী তথা প্রেমিক হিসেবে আমি একদমই ব্যর্থ, সেটা আমি কী করে হতে দিতে পারি।"
তখন পর্ণা একটু অবাক হয়ে গিয়ে বলে -" মানে?তোর মনে আছে আজকে কী?"
সৃজন:- ইয়েস ম্যাডাম, বিলকুল মনে আছে।
এরপর সৃজন ব্যাগ থেকে হলুদ গোলাপের তোড়াটা বের করে পর্ণাকে দিয়ে বলে- " লাভ ইউ শ্রী।আর এরম ভাবেই যেনো বছরের পর বছর আমরা একসাথে থেকে এরম ভাবেই আনন্দ করে কাটাতে পারি।"
পর্ণার একরাশ ভালোলাগা এখন তার চোখের জল হয়ে ঝরে পড়ছে। তখন সৃজন হাসতে হাসতে বলছে-
" আরে, ধুর পাগলি আজকের দিনে কাঁদছিস কেনো? তুই কী ভেবেছিলি আমি ভুলে গেছি আজকের দিনটা?"
পর্ণা:- হ্যাঁ, ফোনে যে ভাবভঙ্গিতে কথা বললি সেরকমই তো মনে হচ্ছিলো।
সৃজন:- আরে ধুর, ওটাতো তোর সাথে মজা করছিলাম।
পর্ণা:- আর কখনো কিন্তু এরম মজা করবে না তুমি, বলে দিলাম, তাহলে কিন্তু রেগে যাবো তোমার ওপর।
সৃজন:- এই তুই একটা বিষয় দেখলি??
পর্ণা:- কী বিষয়?
সৃজন:- এই যে কথায় কথায় তুই কিন্তু আমাকে তুমি বলে ফেললি।
পর্ণা:- হ্যাঁ, আমি ইচ্ছে করেই বললাম। কারণ বিয়ের তো একটা বছর কেটে গেলো, এবার তো তুই বলা ছেড়ে তুমি বলাটা প্র্যাকটিস করি চলো।
সৃজন:- (হেসে হেসে) ওহ্ এই ব্যাপার, আচ্ছা চলো আজকে থেকে আমি আমার শ্রী কে তুই থুরি তুমি বলেই ডাকবো।
এরপর পর্ণা তার ব্যাগ থেকে একটা নতুন হাতঘড়ি বের করে সৃজন এর হাতে পরিয়ে দেয়। আর হলুদ গোলাপের তোড়ার মধ্যে থেকে কিটক্যাট টা বের করে খেতে খেতে মিষ্টিমুখে দুজন দুজনকে উইশ করে বলে -----"শুভ বিবাহবার্ষিকী। "
==================
নাম:- ঋতম পাল
ঠিকানা:- ৫/২/H/১, কাশীপুর প্রাণনাথ চৌধুরী লেন।
কলকাতা:- ৭০০০০২
হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর/ কনট্যাক্ট নম্বর:- 6290576316