প্রেমের মরসুম
সুমিতা চৌধুরী
হঠাৎই ঝড়-বৃষ্টির দাপটে মোহনা খুঁজে ফিরছিল কাছে-পিঠের কোনো আশ্রয়। ঠিক তখনই একটা বলিষ্ঠ হাত তাকে টেনে নিল এক দোকানঘরের ভিতরের নিরাপদ আশ্রয়ে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বোঝার আগেই বিদ্যুৎ ঝলকের মাঝে মোহনা দেখল, কবেকার সেই হারিয়ে ফেরা চির চেনা মুখকে। আর সঙ্গে সঙ্গেই তার মনেও যেন উঠল স্মৃতির তুফান।
"ফিরলি কবে?"
"অনেকদিন।"
"এই রেস্টুরেন্টটা...?"
"আমার। তুই কোথায় ...?"
"ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম।"
"কনগ্র্যাচুলেশন"
"থ্যাংকস। বিয়ে...?"
"না। তুই ...?"
"না।"
অনেকগুলো বছরের কাঙ্খিত চাতক মনে যেন বৃষ্টি নামল রিম-ঝিম ধারায়। ঠিক তখনই প্রকৃতিও বৃষ্টির ঝাঁপি উপুড় করে দিল কাঙ্খিত ধরার বুকে।
বয়স কালের সীমা ভুলে মোহনা বলে উঠল, "আয় না আবার বৃষ্টি ভিজি আজ..."
"জ্বর হলে ক্লাস কামাই হবে প্রফেসর সাহেবা। কিছু খেয়ে, বৃষ্টি ধরলে বাড়ি যা।"
"কিছু হলে তুই আবারও আগলাবি এভাবেই। অনেক চলেছি, এবার নোঙর করতে চাই। মোহনায় এসে সাগরেই তো মেশে নদী... সাগর কি ফিরিয়ে দেবে আমায় রিক্ত হাতে?"
মোহনার হাতের ব্যাগ, ছাতা সব গচ্ছিত রেখে, সাগর আবার বলিষ্ঠ হাতে টান দিল আগলছাড়া বৃষ্টিতে ভাসতে মোহনাকে।
জীবনের আনন্দ যেন কিছুক্ষণের ধারাবর্ষণের সাথেই বর্ষিত হলো বহুদিন বাদে তাদের জীবন আঙিনায়, মনের কাঙ্খিত ভালোবাসার মোহনায় এসে।
"ভালোবাসি" কথাটা উহ্য রয়ে গিয়েও কি ভীষণভাবে প্রতিষ্ঠা পেলো "ভালোবাসা" ওদের মনের উৎযাপনে। আকাশ বাতাস প্রকৃতির মাঝে ধ্বনিত হলো নীরবে, প্রেমের নির্দিষ্ট কোনো দিন থাকে না, মনের উৎযাপনে বারো মাসই প্রেমের মরসুম।
================
Sumita Choudhury
Liluah, Howrah