Click the image to explore all Offers

গল্প ।। পোড়ো বাড়ির অন্দরে ।। অঞ্জনা মজুমদার

 

 পোড়ো বাড়ির অন্দরে

 অঞ্জনা মজুমদার 


পাপু আর চিনি পিসিমনির বাড়িতে এসেছে ভাই ফোঁটার উৎসবে। পিসিমনির বাড়িতে ওদের পিসতুতো দাদা বাবুয়াদা হোস্টেল থেকে বাড়িতে এসেছে পুজোর ছুটিতে। বাবুয়াদা মানেই অ্যাডভেঞ্চার। আর নানান রকমের নতুন নতুন খেলা। তিন ভাই বোনে বেশ মজায় আছে। রকমারি খাওয়া দাওয়া, হাসি গল্প এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি ভালোই চলছে। পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ভালোই চলছে। 
পাড়ার বিল্টুদা আড্ডার ফাঁকে বলল, হ্যাঁ বাবুয়া আমরা একটা পিকনিক তো করতে পারি। 
সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো, ঠিক ঠিক আমরা কালকেই পিকনিক করবো।
যেমন ভাবা তেমনই কাজ। ঠিক হল, বারোজনের দল। বড় চারজন সতেরো বছরের কাছাকাছি বয়স। আর আটজন পাঁচ থেকে আট বছরের। বড়রা চারজন মাংস আর মিষ্টির জোগাড় করবে, আর ছোটরা বাড়ি থেকে চাল,ডাল আর ডিমের জোগাড় করবে।
আজ পিকনিক। সবাই খেলার মাঠের শেষে বটগাছের তলায়। বিল্টুদা জগন্নাথ ক্যাটারারের থেকে একটা গ্যাসের ওভেন, সিলিন্ডার আর রাধুনি কেষ্টদাকে জোগাড় করেছে। চিনি আর সুমি কেষ্টদাকে হেল্প করছে। 
কচুরি আর জিলিপি দিয়ে ব্রেকফাস্ট হল। পেটুক বাদল একটা কচুরি আর দুটো জিলিপি বেশি খেল।
কেষ্টদা রান্না করছে। সবাই খেলায় ব্যস্ত। কেউ ব্যাডমিন্টন কেউ বল নিয়ে খেলছে। বাচ্চাগুলো বল নিয়ে খেলতে খেলতে কখন যেন পোড়ো বাড়ির পাঁচিলের ধারে চলে এসেছে। সমু বলটা জোরে পা দিয়ে মারতেই পাঁচিলের ওপারে। রামু বলল, কি হবে? বলটা হারিয়ে গেল! 
সমু বলল, কক্ষনো না। বল হারাবে না। আমি নিয়ে আসছি। বলেই পাঁচিলের গায়ের ছোট্ট গর্ত দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। 
বাকি সাতজন হতভম্ব হয়ে চুপ করে খানিকক্ষণ থেকে সমু সমু বলে ডাকাডাকি করতে লাগলো। কিন্তু তার কোনও সাড়াশব্দ নেই।  
বাচ্চাগুলো কাঁদতে কাঁদতে এলো। বাবুয়াদা আঁতকে উঠল। পোড়ো বাড়িতে ঢুকল আর তোরা আটকাতে পারলি না?  রামু আর মিনি কাঁদতে কাঁদতে বলল, বাবুয়াদা ওখানে রাক্ষস আছে। সমুকে খেয়ে ফেলবে। আমরা আর সমুকে কোনও দিন দেখতে পাবো না। আমরা বাড়িও ফিরতে পারবো না। 
বিল্টু, বাবুয়া,পাপু আর মিনি পরামর্শ করতে বসল। বিল্টু বলল, গ্রামের মানুষ কেউ ওই পোড়ো বাড়িতে ঢোকে না। কেউ কেউ ওখানে একজন রাক্ষসের মত কাউকে আবছায়া দেখেছে। পাপু চরটে বাঁশের লাঠি জোগাড় করেছে। আর দেরি নয়, চল সবাই আমরা তিনজন ওই বাড়িতে ঢুকবো। চিনি আর মিনি বাইরে পাহারায় থাকবি। ঘড়ি ধরে আধঘন্টার পরে আমরা না ফিরলে একজন থানায় আর একজন বাড়িতে খবর দিবি। সবাই একটা করে লাঠি হাতে ধরে রাখিস।
সবাই চুপ। চোখ মুছে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে রইল। 
ওরা তিনজন পাঁচিলের ফোকর গলে ভেতরে ঢুকলো। জঙ্গলে ঢাকা বাগান। একটা ভাঙা  বাড়ি সামনে। 
ঝোপঝাড় সরিয়ে ওরা এগিয়ে চলল। সমুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কিছু দূরে লাল বলটা পড়ে আছে। সমু সমু বলে ওরা চিৎকার করে ডাকল। কোনও সাড়া নেই। 
পা টিপে টিপে ভাঙা বাড়ির দিকে এগিয়ে ওরা ভাঙা দরজার সামনে এসে ভেতরে উঁকি দিয়ে আঁতকে উঠল। কি দেখছে ওরা? 
সমু মেঝেতে শুয়ে। ওর মুখের ওপর ঝুঁকে আছে কে ওটা? 
ওদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে চাইলে সে। চুল দাড়ি নখ নিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে ওদের গা শিউরে ওঠল। একি?  ভালুক, নাকি,গোরিলা? 
পেছনে দাঁড়িয়ে কে?  ভবা পাগলা ? বাবুয়া চিন্তিত। ভবা পাগলা একমনে কি যেন একটা কাগজে লিখে চলেছে। 
গোরিলা নাকি ভালুক ওদের দিকে দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে এলো। আওয়াজ শুনে ভবা পাগলা ফিরে তাকাল। তারপর গলা দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ করতেই গোরিলা নাকি ভালুক থমকে দাঁড়াল। দৌড়ে ফিরে গেল ভবা পাগলার কাছে।
সমু মেঝেতে শুয়ে। পাপু দৌড়ে সমুকে কোলে নিতেই সে পাপুর গলা জড়িয়ে ধরল।
বাবুয়া বলল, ভবাকাকা  সমু এখানে এলো কি করে? আর তোমার সাথে ও কে?  ও কি তোমার কথা বোঝে?  কেমন করে? 
ভবা পাগলা কাগজে লিখতে লিখতেই বলল, দাঁড়াও অঙ্কের উত্তরটা মিলেছে। এবার শোনো।
বাড়িতে আমাকে বিরক্ত করে বলে আমি এই ভাঙা বাড়িতে আঁক কষতে আসি। একদিন দেখি এই বাচ্চা ভালুকটা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওকে তাপ দিয়ে দুধ খাইয়ে চাঙ্গা করে তুলি।তারপর থেকে রোজ ওকে খাবার দিই। এখন ও আমার বন্ধু। সমু পাঁচিলের ফোকর গলে ভেতরে ঢুকতেই এই ভালুকটাকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে যায়। ভালু তো ওকে সুস্থ করতে চেষ্টা করছিল। 
বাবুয়া বলল,  তোমাকে তো সবাই ভয় পায়।
হা হা করে হেসে উঠল ভবা পাগলা। ভয় পাক।ওটাই আমার ছদ্মবেশ। 
আধ ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। 
পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছে বাচ্চা ছেলেমেয়ে গুলো। সঙ্গে পুলিশ অফিসার আর দুজন ভদ্রলোক। 
ভদ্রলোক দুজন এগিয়ে এলেন। ভবা পাগলার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বললেন, মিস্টার মজুমদার, আশা করি আপনার অঙ্কটা মিলে গেছে। এবার চলুন। আপনার ল্যাবরেটরি ইজ ওয়েটিং ফর ইউ।
বাবুয়া আর পাপুর অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে এক ভদ্রলোক বললেন,  তোমরা অবাক হয়ো না। তোমাদের ভবা কাকা একজন নামকরা বিজ্ঞানী। ডঃ ভবেশ মজুমদার।  বিশেষ কাজে গ্রামে এসে গবেষণা করছিলেন। আমরা ওঁকে ওঁর ইন্সটিটিউটে ফিরিয়ে নিতে এসেছি।
সমু বলল, খুব খিদে পেয়েছে বাবুয়াদা। ভবা কাকা বললেন, আমাদের সবারই খিদে পেয়েছে। কেষ্টদা পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছে। সবার খাবার রেডি।
খেলার মাঠে আজ গোটা গ্রাম পিকনিকের ভোজ খেতে বসেছে। মাংস ভাত খেয়ে রসগোল্লা খেয়ে সবাই মিলে আনন্দ করতে করতে বলছে থ্রি চিয়ার্স ফর ভবা কাকা, থ্রি চিয়ার্স ফর সমু।সমস্বরে গর্জন উঠল, হিপ হিপ হুররে!
======================


অঞ্জনা মজুমদার 
এলোমেলো বাড়ি
চাঁদপুর পল্লি বাগান 
পোঃ  রাজবাড়ি কলোনি
কলকাতা     ৭০০০৮১

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.