ভালোবাসা রয়ে যায়
সঞ্জয় বৈরাগ্য
মাত্র একসপ্তাহ হল সৃজন ও ঋতু-র বিয়ে হয়েছে। গোলাপের সুবাস, প্রথম স্পর্শ, উষ্ণ আদর, আগামীতে একসাথে চলার শপথ, ভালবাসার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি এসব কিছুর গন্ধ এখনও যেন টাটকা। সুখেই কাটছিল দিনগুলো। কিভাবে, কোথা দিয়ে যেন কেটে গেল সাতটা দিন! এরই মাঝে, একদিন মোবাইলে একটি ম্যাসেজ ! নববধূকে একা রেখে দেশমাতৃকার রক্ষার্থে, চলে যেতে হল সৃজন-কে। যাওয়ার সময়, ঋতুকে কথা দিয়ে গেল, ফিরবে সে দোলের দিনে আর বসন্তের পলাশ রঙে রাঙিয়ে দেবে ঋতুকে। কিন্তু কথা রাখল না সৃজন। চিরজীবনের জন্য ঋতুকে বিবর্ণ করে সিয়াচেন সীমান্ত থেকে লাল রঙ মেখে ফিরল সে। বুক-পকেটে রাখা চিরকুটে লেখা ছিল "ছেলেকে বোলো, ওর বাবার বাকি যুদ্ধটা ওকেই জিততে হবে।" ঋতুর মনে পড়ে গেল, সৃজনের খুব ইচ্ছা ছিল, ওদের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান হবে।
কান্নায় ভেঙে পড়া ঋতু আছড়ে পড়ল জাতীয় পতাকা-মোড়া কফিনটার ওপর। দমকা হাওয়ায় উড়ে এল কিছু ঝরা পাতা। হঠাৎই চোখ মুছে ফেলল ঋতু, হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে মনে মনে কি যেন শপথ নিল। বিবর্ণ বসন্তকে সাক্ষী রেখে, ক্ষণিকেই নিজেকে বুঝিয়ে, ভাঙা অক্ষরে ঋতু লিখলো, তার মনের ক্যানভাসে : "আমাদের সবকিছুকে যা পরাজিত করে দেয় তা হল, ভালোবাসা। ভালোবাসা ছেড়ে যায় না কখনোই, শুধু সময়ের সাথে পরিবর্তন করে নিজেকে, আর আমরা বলি, 'ছেড়ে যাওয়া।' আসলে ভালোবাসা নিজেই একটা শক্তি যা আগলে রাখে, আগলে রাখতে জানে ....! আর তাই, ভালোবাসা রয়ে যায়।
========================
সঞ্জয় বৈরাগ্য
কৃষ্ণনগর, নদীয়া