
ছোটগল্প ।। রাজা থেকে ভিখিরি ।। শংকর ব্রহ্ম
রাজা থেকে ভিখিরি
শংকর ব্রহ্ম
মাত্র বছর কয়েক আগে মৃ'ত্যু হয় এক রাজার। রাজার নাম ব্রজরাজ ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিং মহাপাত্র।
যাঁর প্রথম জীবন কেটেছিল অতুল আমোদ প্রমোদ ও বিলাস-ব্যসনে। একসময় তাঁর সেবায় অপেক্ষা করত ত্রিশ জন দাস-দাসী। তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে থাকত পঁচিশটি বিলাসবহুল গাড়ি। তিনি তখন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি তাঁর শেষ জীবনের এই করুণ পরিণতির কথা।
১১৯১ সালে তারাইনের প্রথম যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরি, পৃথ্বীরাজ চৌহানকে আক্রমণ করেছিলেন। পৃথ্বীরাজ চৌহান সেই আক্রমণ প্রতিহত করে, মুহাম্মদ ঘোরিকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু ১১৯২ সালে আবার তারাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরি দ্বিতীয় বার পৃথ্বীরাজ চৌহানকে আক্রমণ করে পরাজিত করেছিলেন। ১৯৯২ সালে পৃথ্বীরাজ চৌহানের পরাজয়ের পরে রাজস্থানের কিছুটা অংশ মুসলিম শাসকদের অধীনে চলে যায়।
রাজপুতরা ভারতে মুসলমানদের আক্রমণকে প্রতিহত করেছিল ঠিকই,তবুও বেশ কিছু রাজপুত রাজ্য শেষ পর্যন্ত দিল্লি সুলতানের অধীন চলে গিয়েছিল।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে, রাজস্থানের সর্বাধিক বিশিষ্ট এবং শক্তিশালী রাজ্য ছিল মেওয়ার। সেটা ছিল মুসলিম শাসকদের অধীনে।
তার কিছুদিন পূর্বে ১২৪৫ সালে রাজস্থানের সোম বংশীয় শাসকদের একটি শাখা এসেছিল রাজস্থান ছেড়ে ওড়িশায় বাস করার জন্য।
শোনা যায় ওড়িশায় এসে প্রথমে তারা পুরীর রাজার মন্ত্রীত্ব করা শুরু করেন।পরে ধীরে ধীরে তিগিরিয়া স্টেটের শাসক হয়ে ওঠেন তাঁরা। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন টুং রাজবংশ।
তিগরিয়া রাজ্য (যা তিগিরিয়া নিজিগড় নামেও পরিচিত) ছিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ ওড়িশার কটক জেলার তিগরিয়া ব্লক মোটামুটি ভাবে এই রাজ্যটির সীমা নির্দেশ করে৷ এই রাজ্য ওড়িশার দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন আয়তনবিশিষ্ট ও সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল। ১৯৪৮ সালে তিগরিয়া রাজ্যের শেষ রাজা ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন৷
তিগরিয়া রাজ্য (ତିଗିରିଆ) ব্রিটিশ ভারত দেশীয় রাজ্য খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দী–১৯৪৮ সাল।
ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া বিবরণ অনুযায়ী তিগরিয়া রাজ্যের আয়তন ছিল ১৯৩১ সালে - ১১৯ বর্গকিলোমিটার (৪৬ বর্গমাইল),জনসংখ্যা ছিল ১৯৩১ সালে ২৪,৮৫২ জন। রাজ্যের ধরন ছিল -রাজতন্ত্র। ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশ ঐতিহাসিক যুগ প্রতিষ্ঠিত হয় -ষোড়শ শতাব্দীতে (১৬০০ সালে)। ১৯৪৮ সালে ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদান করে।
এই রাজ্যটির উত্তর দিকে ছিল ঢেঙ্কানাল রাজ্য,পূর্বদিকে ছিল আটগড় রাজ্য, দক্ষিণ দিকে ছিল প্রবাহমানা মহানদী নদী এবং পশ্চিম দিকে ছিলো বড়ম্বা রাজ্য৷
রাজা নিত্যনন্দ তুঙ্গ ষোড়শ শতাব্দীতে (১৬০০ সালে) এই তিগরিয়া রাজ্যের পত্তন করেন বলে অনেকের ধারনা, তবে এর সঠিক সালটি কত তা জানা যায়নি এখনও৷
জনশ্রুতি অনুসারে তিনি পুরীতে তীর্থ করতে যাওয়ার সময়ে, স্বপ্নে এই অঞ্চল দেখতে পান এবং পুরীর পশ্চিমে গিয়ে তাঁর খোঁজ পান৷
তিগরিয়া রাজ্যের শাসকরা মূলত শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন এবং রাজ্যে বহু বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ ১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারি তারিখে তিগরিয়া রাজ্যের শেষ রাজা একীভূতকরণের দলিলে (In the deed of merger) স্বাক্ষর করে ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন৷
তিগরিয়া বা তিগিরিয়া নামটি খুব সম্ভবত সংস্কৃত শব্দ "ত্রিগিরি" থেকে এসেছে যার অর্থ তিনটি পাহাড়ের অবস্থান৷ রাজ্যের অধিকাংশ বাসিন্দাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও চাষী সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিলেন৷ রাজ্যটিতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্দিরও ছিল৷
তিগরিয়া রাজ্যের শাসকরা রাজা উপাধিতে ভূষিত হতেন৷
১৬৮২ সাল থেকে – ১৭৪২সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা শঙ্করেশ্বর মান্ধাতা।
১৭৪৩ সাল থেকে– ১৭.. সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা গোপীনাথ চমুপতি সিংহ।
১৭..সাল থেকে – ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা যদুমণি রায় সিংহ।
১৭৯৭ সাল থেকে – ১৮৪৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা চমুপতি সিংহ।
১৮৪৪ সাল থেকে – ৮ এপ্রিল ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা হরিহর ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিংহ।
৮ এপ্রিল ১৮৮৬ সাল থেকে – ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা বনমালী ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিংহ।
১৯৩৩ সাল থেকে – ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা সুদর্শন ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিংহ
১৯৪৩ – ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজা ব্রজরাজ ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিংহ মহাপাত্র।
কলিঙ্গ থেকে ওড়িশায় পরিবর্তিত পর্বে টিকে ছিল ২৬ টি রাজকীয় রাজ্য (Princely State),তার মধ্যে সবথেকে ছোট ছিল তিগিরিয়া। ভারতবর্ষে রাজতন্ত্র লোপ পাওয়ার আগে পর্যন্ত তিগিরিয়ার শেষ নৃপতি ছিলেন চমুপতি সিং মহাপাত্র। সেই চমুপতি সিংহ মহাপাত্রের কাহিনি এটি।
১৯২১ সালের ১৫ই অক্টোবর তিগিরিয়ার রাজা সুদর্শন ক্ষত্রিয় বীরবর চামুপতি সিং মহাপাত্রের পুত্র জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ ভারতের ওড়িশার রাজন্য স্টেট তিগরিয়ায়।
শিশুটি দেখতে সুদর্শন গৌড় বর্ণ। চোখ দু'টি উজ্জ্বল, নক্ষত্রের মতো। নাকটি তীক্ষ্ণ ও ধারাল। মাথার কেশরাশি কুচকুচে কালো। পৃথিবীতে তার আগমনে,রাজ পরিবারে আনন্দের ঢেউ উঠল। পুরোহিত শঙ্খ বাজালেন। জয়ধ্বনি উঠল রাজ প্রসাদে।
মেয়েরা অন্দরমহল থেকে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল।পুরোহিত তাদের জানালেন, রাজার পুত্র সন্তান হয়েছে। সংবাদ শুনে মেয়েদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গেল। আনন্দের গুঞ্জন উঠল, ঊলুধ্বনির সঙ্গে বেজে উঠল শঙ্খ।
বাল্যকাল চমুপতির আনন্দের সঙ্গে কাটল স্কুলের বন্ধু-বান্ধবের নিয়ে। সে এত মিষ্টি স্বভাবের ছিল, প্রজারা সকলে তাকে খুব ভালবাসত।
কখনও কখনও চমুপতি তার প্রিয় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে মৃগয়ায় যেতেন। স্কুল কলেজে পড়ার সময়ই চমুপতি চারটি বাঘ ও সাতটি লেপার্ড মেরেছিলেন। তখন ওই দিকটায় খুব বন-জঙ্গল ছিল। ঘন অরণ্যে পরিপূর্ণ বন ছিল।
তারপর দেখতে দেখতে তার বয়স বাড়তে লাগল। এইভাবে সতেরো পেরিয়ে আঠরোয় পড়ল সে। এই বছর তার কলেজের ডিপ্লোমার ফাইন্যাল পরীক্ষা। ফলে, মৃগয়া-টৃগয়া ছেড়ে পড়াশুনায় মনযোগ দিতে হল চমুপতিকে।
ফাইন্যাল পরীক্ষার ফল বেরোবার পর দেখা গেল চমুপতি ভাল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে সেই পরীক্ষায়। রাজপ্রাসাদে আনন্দের ঢেউ উঠল।
১৯৪০ সালে রায়পুরের রাজকুমার কলেজ থেকে ডিপ্লোমা নেওয়ার পর, তাঁর পিতার আদেশে ঊনিশ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শোনপুরের ষোড়শী রাজকন্যা রসমঞ্জরী দেবীর।
১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তাদের খুব সুখে আনন্দে কেটেছিল,রসমঞ্জরীর সান্নিধ্যে অন্দরে কাটত চমুপতির, বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে মৃগয়ায় বেরিয়ে স্ফূতিতে মেতে থাকতেন। বাঘ লেপার্ড মেরে উল্লাস করে বাড়ি ফিরতেন আনন্দ। তারপর সোমরস পান তো ছিলই, আনুষঙ্গিক অনুপান হিসাবে।
নানা রকম গাড়িতে চড়ে কতবার কত সব জায়গায় বেড়াতে গেছে রসমঞ্জরীকে নিয়ে,তার কোন হিসেব নেই। সেইসময় রসমঞ্জরী খুশিতে ডগমগে হয়ে থাকত সবসময়। পাইন গাছে একবার একটা লেপার্ড দেখতে পেয়ে, চমুপতিকে সেটা দেখিয়ে রসমঞ্জরী বলেছিল, মার তো দেখি লেপার্ডটাকে, দেখি তোমার নিশানা কেমন? বলেই খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়েছিল বালিকার মতো। তখন কতই বা বয়স রসমঞ্জরীর? ষোল-সতেরো। সে সব সব দিন গেছে আজ হারিয়ে গেছে কোথায় !
চমুপতি গাড়ি থেকে সাতনলা বন্দুকটা বের করে, তখনই পরপর তিনটি গুলি করে লেপার্ডটাকে মেরেছিল। সেসব দিনগুলি গেছে কেমন একটা মোহ ঘোরের মধ্যে।
ইয়ার দোস্তদের নিয়েও চমুপতি মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে দূরে শিকারে যেত কিংবা ঘুরতে বের হত। সঙ্গে যে সোমরস থাকত, তা বলাই বাহুল্য। তখন তার গাড়ির সংখ্যা পঁচিশটি। এক একদিন এক একটা গাড়ি নিয়ে বের হত সে। বন্ধুরা তা দেখে বাহবা দিত। তারও খুব আনন্দ হত বন্ধুদের বাহবা পেয়ে।আনন্দ ও গর্ব হত কত সেসব দিনে, নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে।
আজ মনেহয় সেসব দিনগুল কত স্বপ্নময় ছিল। মাত্র চল্রিশ বছরে তাঁর সেসব স্বপ্নগুলি এমনভাবে বিলীন হয়ে যাবে চমুপতি আগে কখনও ভাবতেও পারেনি ।
মনে পড়ে, একবার রসমঞ্জরীকে নিয়ে একটা মেলায় ঘুরতে গেছে নতুন সৌখিন গাড়িটা নিয়ে। মেলার একপাশে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে রেখে, তারা যখন মেলা দেখতে ভিতরে ঢুকতে যাবে, এমন সময় পিলিপিল করে একদল প্রজা বেরিয়ে এসে, 'রাজা এসেছে,রাজা এসেছে আমাদের মেলায়, কী আনন্দ, কী আনন্দ!' বলে তারা তাদের গাড়িটাকে বারবার প্রণাম করছিল। রসমঞ্জরী দেখে খুশি হয়েছিল। খুশি হয়ে তাদের সবাইকে সেবার জিলিপি আর পাপড় ভাজা খায়িয়ে ছিল মেলা থেকে কিনে। তারাও খুব খুশি হয়ে,'জয় রানী মা' ধ্বনি দিয়ে ফিরে গিয়েছিল। সেসব স্মৃতি যেন এখন ধূলি মলিন নেগেটিপ কপি। ঝাঁপসা। আরও কত স্মৃতি, ঝাঁপি খুলে যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে পিল পিল করে একটার আগে আর একটা একটা।
সেইসময় ত্রিশ জন দাস-দাসী তাদের সেবায় সব সময় ব্যস্ত থাকত। তারা এই এই রাজ-প্রাসাতেই থাকত। ভাত কাপড়, আমোদ-প্রমোদ,উৎসব-আনন্দের খরচ এখান থেকেই তাদের দেওয়া হত।
সেইসময় তাদের এই রকম শৌখিন বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে বহুল অর্থ ব্যয় হলেও সেদিকে কারও কোন খেয়াল ছিল না। না চমুপতি সিং, না রসমঞ্জরীর। ততদিনে তাদের সন্তান হয়ে গেছে কয়েকটি। তাদের জন্যও রাজকীয় খরচ ছিল।
তারপর ১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারি তারিখে তিগরিয়া রাজ্যের শেষ রাজা একীভূতকরণের দলিলে (In the deed of merger) স্বাক্ষর করে ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আর্থিক অবস্থা আরও খারপ হয়ে পড়ে।
তবুও রসমঞ্জরীর মনের বাসনা যাতে অপূর্ণ না থাকে, সেকারণে আগের মতোই বিলাস বহুল জীবন যাপন, রাজকীয় জাঁকজমকপূর্ণ আদব কায়দা সম্মানের সাথে বজায় রাখতে গিয়ে, অমিত পরিমাণ ব্যয়-বাহুল্যের কারণে তাঁর অর্থভান্ডার একেবারে শূন্য হয়ে পড়ে। তখন তিনি অভাবে একেবারে জেরবার হয়ে পড়েছিলেন । তখন তাদের ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ১৯৬০ সালে তাকে বেচে দিতে হয়েছিল তাঁর রাজপ্রাসাদ।
তাঁর এই ঘোরতর অভাব অনটন ও দুঃসময়ে মধ্যে, তাঁর স্ত্রী রসমঞ্জরী দেবী তাকে ডিভোর্স দিয়ে ছয় সন্তানকে নিয়ে তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন অন্যত্র।
বিয়ে ভাঙার পরে রসমঞ্জরী রাজনীতিতে এসে যোগ দিলেন। হয়ে উঠলেন একজন বিধায়ক। আর ব্রজরাজ ক্রমশঃ ডুবে যেতে লাগলেন নিদারুণ দারিদ্রে। তারপর ভেঙে পড়েন মানসিক অবসাদে। ফলে, তাঁর শরীর ও মন দুই-ই ভেঙে পড়তে লাগল দ্রুত। বাঁচার ইচ্ছেটুকুও রইল না তাঁর মনে ।
স্বাধীনতার পরে ভরসা ছিল সামান্য বার্ষিক ভাতা। যিনি একসময় অনায়াসে মেরেছেন তেরোটা বাঘ ও আঠাশটা লেপার্ড‚ সেই বীরের হাত পাততে হতো সরকারি দপ্তরে, মাসে মাত্র এক হাজারেরও কম টাকা পাওয়ার জন্য। ১৯৭৫ সালে অকস্মাৎ সেই টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে গেল,কি কারণে ! তা তিনি জানেন না। সেই ভাতা নিয়ে আর কোন রকম খোঁজ-খবর নিতে তার মন সায় দেয়নি, আত্মসম্মানে বেঁধেছে।
এরপর তিনি থাকতেন মাটির বাড়িতে উপরে অ্যাসবেস্টাসের ছাদ। বেঁচে ছিলেন গ্রামবাসীদের দয়া-দাক্ষিণ্যে। তাদের দেওয়া ডাল-ভাতে ভিখিরির মতো মিটত তাঁর ক্ষুণ্ণিবৃত্তি। এক নৃপতির কী করুণ নিদারুণ পরিণতি। ভাবলে অবাক লাগে নাকি?
এই জন্যই বোধহয় কথায় বলে, -
" চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়
আজিকে যে রাজাধিরাজ কা'ল সে ভিক্ষা চায়।।
অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি
তারও হলো বনবাস রাবণ করে দুর্গতি।
আগুনেও পুড়িল না ললাটের লেখা হায়।।
স্বামী পঞ্চ পাণ্ডব, সখা কৃষ্ণ ভগবান
দুঃশাসন করে তবু দ্রৌপদীর অপমান
পুত্র তার হলো হত যদুপতি যার সহায়।।
মহারাজ হরিশচন্দ্র, রাজ্য দান ক'রে শেষ
শ্মশান-রক্ষী হয়ে লভিল চণ্ডাল-বেশ
বিষ্ণু-বুকে চরণ-চিহ্ন, ললাট-লেখা কে খণ্ডায়।।
চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায় ……
----------------------------------------------------------------
SANKAR BRAHMA. 8/1, ASHUTOSH PALLY, P.O. - GARIA, Kolkata - 700 084.