Click the image to explore all Offers

গল্প ।। বিড়ালের চোখ ।। অঞ্জনা মজুমদার

 বিড়ালের চোখ 

অঞ্জনা মজুমদার 


চাঁদনির কাছে মোতিলাল চৌধুরীর অ্যান্টিক জিনিসপত্র বিক্রির দোকান। মোতিলালবাবুর বয়স হয়েছে। এখন আর দেশ বিদেশে ঘুরে জিনিস সংগ্রহ করতে পারেন না। চেনা কিছু লোকজন আছে যারা জিনিস সংগ্রহ করে মোতিলালবাবুর কাছে আনে। তারা যে সবসময় সাধু পথে সংগ্রহ করে না, সেটা তিনি জানেন। ছোটখাটো হাতসাফাই করেই থাকে তারা। তবে কখনও পুলিশের ঝামেলা হয়নি। 
এবার বিধু যে জিনিসটা এনেছে সেটা দেখে মোতিলালবাবুর চোখে বিস্ময়। একটা গনেশের মূর্তি। কিন্তু তার বাহন ইঁদুর নয়, বিড়াল। গনেশের পায়ের কাছে বসে বিড়াল। সবচেয়ে আশ্চর্য বেড়ালের চোখ দুটো। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি যেদিকে ঘোরে, বেড়ালের চোখ দুটোও সেই দিকে ঘুরছে। আর সেই চোখের দৃষ্টিতে অদ্ভুত একটা আকর্ষণ। চোখ সরানো যায় না।
সুজন আর কমল দোকানে ঢুকল। 
কি নতুন জিনিস এসেছে মোতিকাকা? 
বলতে বলতেই কমলের নজর গনেশের মূর্তির দিকে। বাঃ! কি অপূর্ব। কবে এলো এটা ? 
মোতিবাবু বললেন,  একটু আগে, তোমরা আসার ঠিক আগেই। 
সুজন বলল, আমাদের বেচবেন? কত দাম? 
তোমাদের কাছে আর কত দাম নেবো?  আমি তিন হাজারে কিনেছি। তোমরা চারই দিও।
অনলাইনে পেমেন্ট করে মূর্তিটা নিয়ে ওরা বাড়ি ফিরল। একটা ফ্ল্যাটে দুই বন্ধু থাকে। আর থাকে দুলালদা, সুজনের গ্রামের বাড়ি থেকে মা সঙ্গে দিয়েছেন। সুজনের রান্না আর দেখভাল করার জন্য। মূর্তিটা দেখে দুলালদা ভক্তি ভরে আলমারির মাথায় রেখে দিল।
খাওয়া দাওয়া করে সবাই বিছানায় গেল। 
ঘরের আলো নেভাতেই অন্ধকারে গণেশের বেড়ালের চোখ জ্বলজ্বল করছে দেখা গেল। অন্ধকারে একটু ভয়ই লাগে যেন।
খুট করে একটা শব্দে সুজনের ঘুম ভেঙে গেল। বাইরের ঘরে কেউ চলাফেরা করছে। পা টিপে টিপে দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে অবাক হল সুজন। গণেশ মূর্তির দিকে একটি লোক হাত বাড়িয়েই আর্তনাদ করে হাত ধরে বসে পড়ল। 
লোকটির চিৎকার শুনে কমল আর দুলাল ছুটে এল। ঘরের আলো জ্বালাতেই লোকটি কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি আর কখনো চুরি করবো না। ওই গণেশ ঠাকুরের বিড়াল আমাকে কামড়ে দিয়েছে।
কমল বলল, বোকার মত কথা বল না তো। মূর্তির বিড়াল কামড়াবে কি করে? লোকটি জোরে কেঁদে উঠলো। 
না ওই বিড়ালই কামড়েছে। 
সুজন লোকটির হাতটা ধরে দেখে স্পষ্ট দুটো দাঁতের দাগ। আর বেশ রক্ত বেরোচ্ছে। 
দুলালদা, ওষুধের বক্সটা দাও তো। বক্সটা এগিয়ে দিয়ে দুলাল বলল, তুমি এখানে ঢুকেছ কেন?  ওই গণেশ ঠাকুরের মূর্তি চুরি করতে এসেছ?  বেশ হয়েছে তোমার হাত কামড়ে দিয়েছে।
সুজন বলল, আঃ! দুলালদা থামো। লোকটির হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে সুজন বলল, তুমি কি করে ঢুকলে?  আর মূর্তি চুরি করতে এসেছ কেন?  আমরা যদি পুলিশ ডাকি?  
লোকটি হাত জোড় করে বলল, এবারের মতো ছেড়ে দিন বাবু। ওই বেড়াল কেমন রেগে আমার দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমি চলে যাই।
কমল আর সুজন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হেসে ছেড়ে দিল লোকটিকে। আর আমাদের বাড়িতে এসোনা কোনওদিন।
ছাড়া পেয়ে লোকটি দৌড়ে পালিয়ে গেল। দুলাল গজগজ করতে লাগল, চোরকে আদর করে হাতে ওষুধ লাগিয়ে কেউ দেয় জানিনা। ভোর হয়ে এসেছে। সুজন আর কমল মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে পড়ল।
পার্কে হাঁটতে গিয়ে দেখে এক জায়গায় জটলা করছে কয়েকজন। গাছের পাশ থেকে উঁকি দিয়ে দেখে সেই চোর আরও দুজন লোক। 
একজন বলছে, গজাদা,তুমি সামান্য একটা ছোট্ট গণেশ মূর্তি চুরি করে আনতে পারলে না। ওস্তাদ তোমাকে কি বলে দেখ।
চোর অর্থ গজাদা বলল, তুই পারবি?  পারলে আমি চুরি করা ছেড়ে দেব। ওই বিড়ালের সঙ্গে তুই পারবি না রামু। ঠিক আছে।  আজকে রাতেই নিয়ে আসব সেই মূর্তি। চল্ চল্ এখন ডেরায় যাই।
ওরা চলে গেলে সুজন বলল,  আজ রাতে সজাগ থাকতে হবে। 
কমল বলল,  বেশ, আজ ইন্সপেক্টর বল্লভবাবুকেও থাকতে বলব।
রাত হল। ইন্সপেক্টর সাধারণ পোশাকে সন্ধ্যে থেকেই আছেন। রাতে খাওয়ার পর সবাই শুয়ে পড়ল। কিন্তু কারও চোখে ঘুম নেই। 
রাত বারোটার ঘন্টা বাজল। তারপরই খুট করে শব্দ। দরজার পেছন থেকে ওরা দেখল, আজ একজন নয়, তিনজন ঘরে ঢুকল।
একজন বলছে, বাঃ! সুন্দর মূর্তি। এটা অনেক দামে বিক্রি হবে। নে তুলে নিয়ে চল্। 
রামু হাত বাড়িয়েই উঃ! বলে হাত সরিয়ে নিল। গজা বলল, কামড়ে দিয়েছে তো?  জানতাম, দেখেছ ওস্তাদ? 
ওস্তাদ বলল, কি যে বলিস, কি কামড়াবে ?  বলেই নিজেই মূর্তির দিকে হাত বাড়াল। বাবাগো!  বেড়ালটা জ্যান্ত নাকি?  সত্যি সত্যিই কামড়ে দিল। রামু আর ওস্তাদ মাটিতে হাত চেপে বসে পড়েছে।
ইন্সপেক্টর ঘরের আলো জ্বালালেন। 
একি কামাল হোসেন তুমি?  এখনো চোরাচালান ছাড়নি? 
ওস্তাদ কামাল হোসেন কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, সাব,ওই বেড়াল কামড়ে দেয়। আর ওর চোখে আগুন। দেখুন আমার হাত জ্বালা করছে। গজা বলল, আমারও হাতে ফোস্কা পড়েছে। সত্যিই ওই চোখে আগুন আছে। 
যাক্, চুরি করতে এসে হাতে নাতে ধরা পড়েছিস। এবার থানায় চল্। ইন্সপেক্টরের ডাকে কনস্টেবলরা এসে ওদের থানায় নিয়ে গেল। 
সুজন বলল, কিন্তু ইন্সপেক্টর,  ওদের হাতে কি কামড়াল?  আর হাতটা ও পুড়ল কিভাবে ? 
ইন্সপেক্টর মূর্তিটা হাতে নিয়ে বললেন, কই?  আমার তো হাত কাটল না। তবে চোখদুটো সত্যিই আশ্চর্য। 
কমল বলল, আমাদের পাড়ায় ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম এর ডিরেক্টর ডঃ পাকড়াশি থাকেন। একবার ওনাকে দেখিয়ে নিই।
তিনজনে সকাল সকাল ডঃ পাকড়াশির ড্রইংরুমে। সব শুনে উনি মৃদু হেসে বললেন, সুজন-কমল, তোমরা একটা রেয়ার মূর্তি এনেছ। এটা তোমাদের ঝামেলা বাড়াচ্ছে তাই তো? একটা কাজ করতে পারো, আপত্তি না থাকলে এটা মিউজিয়ামে ডোনেট করতে পারো।
দুজনেই একসাথে বলে উঠল, তাই ভাল কাকাবাবু। এটা মিউজিয়মে রাখাই ভাল। 
মূর্তিটি ডঃ পাকড়াশির হাতে সঁপে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দুই বন্ধু বাড়ির দিকে পা বাড়াল। দুলালদা বলল, ভালোই হয়েছে। ওই চোখদুটো আমার সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে। ভারি অদ্ভুত চোখের নড়াচড়া। 
ইন্সপেক্টর সহ সবাই হেসে উঠল।
================================
 


অঞ্জনা মজুমদার 
এলোমেলো বাড়ি 
চাঁদপুর পল্লী বাগান 
পোঃ    রাজবাড়ি কলোনী 
কলকাতা    ৭০০০৮১
ফোন নং      9475873503

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.