
পত্রিকা আলোচনা ।। অরুণাঞ্জলি (শারদীয়া- ১৪৩১) ।। গোবিন্দ মোদক
লিটল্ ম্যাগাজিন: অরুণাঞ্জলি (শারদীয়া- ১৪৩১)
সম্পাদক: শ্রী নিরঞ্জন কুণ্ডু
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গোবিন্দ মোদক
অরুণাঞ্জলি। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত একটি বলিষ্ঠ পত্রিকার নাম। সাহিত্য নিবেদিতপ্রাণ শ্রী নিরঞ্জন কুণ্ডু মহাশয়ের সুযোগ্য সম্পাদনায় এবং তাঁরই কষ্টার্জিত অর্থে ষান্মাসিক পত্রিকাটি দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একাদিক্রমে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
৪৩ টি নানা স্বাদের কবিতা, ৯ টি গল্প, ৪ টি প্রবন্ধ, একটি নিবন্ধ, দু'টি শ্রদ্ধাঞ্জলিজ্ঞাপক রচনা তথা স্মরণালেখ্য, দু'টি ব্যক্তিগত গদ্য, একটি ভৌতিক-রহস্য গল্প এবং বলিষ্ঠ একটি সম্পাদকীয় কলম নিয়ে সেজে উঠেছে অরুণাঞ্জলি শারদীয়া-১৪৩১ সংখ্যার বড়সড় অবয়ব। শরৎকাল বিষয়ক এবং শারদীয়া কবিতা উপহার দিয়েছেন কবি বিশ্বনাথ বেরা (শরৎ), ডাঃ রাম ভট্টাচার্য (মহামায়ার বোধন / চিত্তের চাই শোধন), মৌমিতা মল্লিক (শরৎ), বনমালী ঘোষ (বাসন্তীর দুর্গাপুজো), সঞ্জয় কুমার নন্দী (শরৎ আহবানে) প্রমুখ কবি। বহুদর্শী কবি অনিমেষ চট্টোপাধ্যায় উপহার দিয়েছেন একটি অনবদ্য কবিতা – ভালোবাসা বেগরে জীবন। কবি বানীপ্রভা মালবিয়া দু'দুটি কবিতা উপহার দিয়েছেন — শ্যামা মা এবং কপাল লিখন — অন্ত্যমিলযুক্ত কবিতা দু'টি ফিরে পড়বার মতো সুন্দর। অমিয় কুমার সেনগুপ্তের কবিতা "বরাতদোষে ঘামি" কবিতাটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কবি চিত্তরঞ্জন পাত্র তাঁর কবিতায় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন (সমাজব্যথী শরৎচন্দ্র)। কবি চন্দনা ঘাঁটীর কবিতা (আমরা মানুষ হয়েও) একটি সমাজসচেতনামূলক প্রাসঙ্গিক লেখা। শেখ গোলাম মাবুদ (স্বপ্ন), অরুণকুমার মান্না (নক্ষত্র), ডাঃ অরুণকুমার মান্না (বাজার গরম), অতুল চন্দ্র সামন্ত (শাবক হারা পাখি), প্রবীর জানা (হারাধনের হারজিৎ), যতীন্দ্রনাথ মাইতি (আগামী), তীর্থ কুমার পৈতণ্ডী (প্রতিবাদী), স্বপন দত্ত (ছোট বলে), সতীরঞ্জন আদক (শব্দ সাজাই), শ্রীজীব (বৃত্তি), সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (শীতঘুম), বিষ্ণুপদ আচার্য (উৎসবের শেষে), অজিত কুমার মন্ডল (মানুষ) প্রমুখ কবি উপহার দিয়েছেন ফিরে পড়বার মতো সুন্দর সব কবিতা, পদ্য, ছড়া এবং ছন্দ-কবিতা।
পত্রিকার গদ্য বিভাগটিও অত্যন্ত বলিষ্ঠ। সুশান্ত কুমার দে রচিত "আস্তিক রবীন্দ্রনাথ" নামক গবেষণাধর্মী ধারাবাহিক প্রবন্ধটি অত্যন্ত মূল্যবান। অলকানন্দ দাস রচিত "উত্তরবঙ্গের ভ্রামরী দেবী ও ভবানী পাঠকের মন্দির" শীর্ষক প্রবন্ধটি পত্রিকার অন্যতম সম্পদ। সিদ্ধজ্যোতিষী অচিন্ত্যরতন দেবতীর্থ রচিত "বিজ্ঞানসম্মত একাদশীর ব্রতঃ স্বাস্থ্যবিধির আরাধনা ও রোগব্যাধির মুক্তি" নামক রচনাটি পড়ে বহু পাঠক উপকৃত হবেন। সদ্যপ্রয়াতা শ্রদ্ধেয়া সাহিত্যপ্রেমী রমা দাশগুপ্ত মহাশয়ার স্মৃতির উদ্দেশে কলম ধরেছেন স্বপন মোহান্তি এবং শ্রীমতি মনীষা দাসগুপ্তা — তাঁদের বলিষ্ঠ কলমে সদ্যপ্রয়াতা রমা দাশগুপ্ত আলোচিত এবং আলোকিত হয়েছেন। লেখক নিরঞ্জন কুন্ডু উপহার দিয়েছেন একটি বলিষ্ঠ রচনা – "একাকী"। সহজ সরল প্রাণবন্ত বর্ণনায় এবং উপস্থাপনার নৈপুণ্যে রচনাটি প্রকৃত অর্থেই স্বাদু এবং মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে। বস্তুতপক্ষে রচনশৈলীর গুণে রচনাটি যে পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠবে এ কথা বলাই বাহুল্য। রাজীব কুমার জানা রচিত "হে ভোট নারদের মানসপুত্র" তথ্যবহুল রচনাটি পাঠকের ভাবাবে — প্রকৃত অর্থে লেখাটি একটি সমাজচেতনা উদ্রেককারী, সচেতনতামূলক বলিষ্ঠ সৃজন। লেখক পল্টন কুমার রচিত "রাত্রির প্রেক্ষাপটে" নামক ভৌতিক-রহস্য গল্পটি এককথায় অনবদ্য। একের পর এক চমকের অবতারণা আর রহস্য-জাল বর্ণনার ক্ষমতা ব্যবহার করে পল্টন কুমারের লেখনী যেন রীতিমত অনবদ্য হয়ে উঠেছে "রাত্রির প্রেক্ষাপটে"। চিত্তরঞ্জন পাত্র রচিত "কিছু কথার কথা" গদ্য রচনাটি পাঠককে দেবে ভিন্নতর স্বাদ। বিকাশ চক্রবর্তী (ভাইঝি হলো বৌ), বিধান সাহা (অসাধ্য সাধন), বিদ্যাসাগর রায় (ক্ষমা), বনমালী ঘোষ (মা এক মন্দির), সুবলচন্দ্র পাল (স্নেহ) প্রমুখ গল্পকারের গল্পগুলি স্বমহিমায় ভাস্বর। ভালো লাগে মিলি ত্রিপাঠির "বিসর্জন"।
পত্রিকাটি পড়তে পড়তে এই ভেবে চমৎকৃত হতে হয় যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের লেখক-লেখিকা, কবি-সাহিত্যিকরা এতে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের লেখনীর ফসল দিয়ে। শুধু বীরভূম বাঁকুড়া মেদিনীপুর কলকাতা বর্ধমান নদিয়া ইত্যাদি জেলা থেকেই নয়, সুদূর বারাণসী, উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, এমনকি বাংলাদেশের খুলনা থেকেও কবি-সাহিত্যিকরা এতে অংশগ্রহণ করেছেন যার কৃতিত্ব অবশ্যই সম্পাদকের প্রাপ্য। এছাড়াও পত্রিকাটিতে রয়েছে বেশ কিছু নিয়মিত বিভাগ; যেমন – পত্র-পত্রিকার প্রাপ্তি স্বীকার, শ্রদ্ধাঞ্জলি, বিচিত্র চৌপদী ইত্যাদি যা পত্রিকাটিকে ঋদ্ধ করেছে। ৬০টি পৃষ্ঠায় সজ্জিত পত্রিকাটির দুই-একটি জায়গায় মুদ্রণ প্রমাদ চোখে পড়ে। তা ব্যতীত দেবীর আগমনকে কেন্দ্র করে শারদ আনন্দের আলিঙ্গনে, শারদীয় গন্ধে, পুজোর উচ্ছ্বাসে নিবেদিত চমৎকার একটি শারদীয়া সংখ্যা এই অরুণাঞ্জলি। পত্রিকার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।
======================================
লিটল্ ম্যাগাজিন: অরুণাঞ্জলি (শারদীয়া- ১৪৩১)
সম্পাদক: শ্রী নিরঞ্জন কুণ্ডু
প্রকাশ স্থান: বরগোদা গোদার, নন্দকুমার, জেলা- পূর্ব মেদিনীপুর
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: শরদিন্দু জানা
মূল্য: ২০ টাকা
___________________________
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক।
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা।
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।
পশ্চিমবঙ্গ, ডাকসূচক - 741103