
পত্রিকা রিভিউ।। লিটল্ ম্যাগাজিন: বিশ্বশান্তি সাহিত্য পত্রিকা ।। গোবিন্দ মোদক
লিটল্ ম্যাগাজিন: বিশ্বশান্তি সাহিত্য পত্রিকা (জানুয়ারি- ২০২৫)
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গোবিন্দ মোদক
মফঃস্বল বাংলা সাহিত্য আকাদেমীর প্রকাশন বিভাগ থেকে বিভিন্ন বইপত্র ছাড়া নিয়মিত যে আটটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্বশান্তি সাহিত্য পত্রিকা। সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক এই পত্রিকাটি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রকাশিত প্রকাশিত হয় কবি-লেখক শ্রী হরিসাধন জোয়ারদার এবং শ্রীমতি হৈমন্তী জোয়ারদারের সুযোগ্য সম্পাদনায়। ঝকঝকে ছাপা দু-ফর্মার এই পত্রিকাটির জানুয়ারী-২০২৫ (Vol-34, Issue-81) সংখ্যাটি হাতে পেয়ে এবং পড়ে কয়েকটি কথা বলবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
পত্রিকা সম্পাদক তাঁর পত্রিকায় ঘোষণা রেখেছেন – পশ্চিমবাংলার মফঃস্বল অঞ্চলের কবি ও সাহিত্যিকদের উত্তরণের একটি অনবদ্য প্ল্যাটফর্ম হলো বিশ্বশান্তি পত্রিকা যেখানে কবিতা, পদ্য এবং ছড়া ছাড়াও পুস্তক পর্যালোচনার জন্য পৃথক বিভাগ রয়েছে। বস্তুতপক্ষে মফঃস্বলের একটি পত্রিকায় পুস্তক সমালোচনার জন্য পৃথক বিভাগ থাকা অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয়। আর তিন-তিনটি কাব্যগ্রন্থের (কবিতা মালঞ্চ- কবি পরেশচন্দ্র রায়, পর্যালোচক- গোবিন্দ মোদক; বিষণ্ণ তাপ- কবি হরিসাধন জোয়ারদার, মৌন শব্দ জাগো- কবি হরিসাধন জোয়ারদার; পর্যালোচক- আনোয়ার হুসেন) আলোচনা পত্রিকাটিতে স্থান দিয়ে সম্পাদকদ্বয় সাহিত্যের প্রতি তাঁদের নিবিড় মমত্ববোধ, আনুগত্য ও দায়বদ্ধতা পালন করেছেন।
পত্রিকার কবিতা বিভাগটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ যেখানে নামী, স্বল্পনামী, অনামী নবীন ও প্রবীণ কবিরা উপহার দিয়েছেন তাঁদের কাব্যিক লেখনীর ফসল। কবি পার্থসারথি সরকারের ১৬ পঙক্তির 'মৃত্যু' কবিতাটি বর্তমান সংখ্যার অন্যতম সেরা কবিতা। কবিতার শেষ চার লাইন ভীষণভাবেই প্রণিধানযোগ্য —
একটা মৃত্যু মিলিয়ে দিল
পুরুষ এবং নারী,
একটা মৃত্যু বুঝিয়ে দিল
মৃত্যু কতো ভারী!
কবি সুপ্রতীম ভৌমিক আবার তাঁর 'কবিত্বের প্রকাশ ঘটুক' কবিতায় চমৎকার দার্শনিকতা দেখিয়েছেন – "জীবন এক অসমাপ্ত কবিতার মতো"। কবি সুপ্রিয়া সিং ঘোষ তাঁর কবিতায় রবিকবিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। শ্রী দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্যের 'পাখি' কবিতায় আবার ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন সুর। সুরজিৎ ভট্টাচার্য্যের 'জোয়ার ভাটা' কবিতা রচিত হয়েছে সাম্প্রতিককালের নদী বাঁচাও আন্দোলনের কথা মনে রেখে। মাসুদুর রহমান তাঁর সহজ-সরল দু'টি কবিতায় আঁকতে চেয়েছেন অন্য এক জীবনদর্শন। তপন কুমার দত্ত (পাল্টে যাচ্ছে), তাপস ঘোষ (ভারত জিন্দাবাদ), দুলাল ব্যানার্জী (স্থবিরতা), গৌতম দত্ত (সোনার ছেলে), মুকলেসুর রহমান (শেষ ঘুম), অচ্যুৎ প্রামাণিক (মরুর কোলে), তপন কুমার দাস (একটা ছড়া), মফিজুল ইসলাম (হাওয়ায় ফুল দুলছিল), পীর মহম্মদ (হে জ্ঞানার্য), অনুপ মণ্ডল (স্বামীজি), অজিতকুমার সাহা (লোভী মন), কমলেশ কর (খুঁজে নাও শান্তির মার্গ), বিকাশ বিশ্বাস (তোমাদের দানে), সুকুমার বিশ্বাস (কাহিনীর আলপনা আঁকি), অরণ্য সরকার (রেলগাড়ি) প্রমুখ কবি উপহার দিয়েছেন ফিরে পড়বার মতো কবিতা, পদ্য এবং ছড়া। কালীপ্রসাদ ঘোষ তাঁর কবিতায় (সুরের আকাশে) সলিল চৌধুরীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। কবি রীতা সাহার কবিতা জুড়ে শারদ উৎসবের আনন্দ।
এছাড়া নানা আকার ও আয়তনের বেশ কিছু কবিতা পত্রিকাটিকে ঋদ্ধ করেছে। তবে কয়েকটি কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে- মনে যে সুর বা যে ভাব নিয়ে কবি শুরু করেছেন তাঁর কবিতা, শেষপর্যন্ত তা বজায় রাখতে পারেননি, কাজেই খেই হারিয়ে কবিতাটি এমন দিকে বাঁক নিয়েছে যে তা আর সুখপাঠ্য থাকেনি। আবার কোনও কবিতায় মনে হয়েছে- কবি কি বলতে চেয়েছেন তা হয়তো নিজেই সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেননি, কাজেই লেখাটি আর যাই হোক, কবিতা পদবাচ্য হয়ে ওঠেনি। সেই দিক থেকে বলা যায়- কবিতা নির্বাচনে সম্পাদকদ্বয়কে আরও কঠোর এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন; সেই সঙ্গে মাননীয় কবিদেরও এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত। তাহলে বিশ্বশান্তি পত্রিকার সৌরভ আরও ছড়িয়ে পড়বে দিকে দিকে।
-----------------------------------------সম্পাদক: হরিসাধন জোয়ারদার এবং হৈমন্তী জোয়ারদার
প্রকাশ স্থান: রাণাঘাট, নদীয়া।
প্রচ্ছদ: নন্দিতা সরকার।
মূল্য: ৭০ টাকা
পাঠ-প্রতিক্রিয়া (৪৬০ শব্দ): গোবিন্দ মোদক
___________________________
স্বরচিত মৌলিক অপ্রকাশিত রচনা।
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক।
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা।
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।
পশ্চিমবঙ্গ, ডাকসূচক - 741103