খোঁজ
শ্যামল হুদাতী
প্রেমের বীজ কেউ বোনে না, তা নিজেই হঠাৎ হৃদয়ের ভেজা মাটিতে অঙ্কুরিত হয়। সঙ্গীতা
প্রেমে পড়ে, তরতাজা হয়ে ওঠে আবার সেই সতেরো -- আঠারো বছরের তরুণী। উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে মন, প্রেমিক রূপমকে এক ঝলক দেখার জন্য। দেহের বাসনাকে ছাপিয়ে, তাদের প্রেম খুঁজে পায় আত্মার সুখ। একটি আলিঙ্গনে তারা ডুবে যায় এক অপার্থিব আনন্দে। ভুলে যায় নিজেদের সকল দুঃখ, প্রেমিকের চোখের গভীরে ডুব দিয়ে। তার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি হাসি, তাদের করে তোলে এক অপার্থিব আনন্দে। মনের তারে বেজে ওঠে এক অন্য সুরে। তারা ফুটে ওঠে পলাশ ফুলের মতো, আবিরের লাল রঙে। তাদের আনন্দ খেলা করে বসন্তের হলুদ সরষে ফুলের মতো।
তবু, রূপম সঙ্গীতা সমাজের কোনো কলঙ্ক তারা চায় না। সঙ্গীতা চায় সেরা মা হতে, চায় আদর্শ স্ত্রী হয়ে থাকতে। তারা গৃহস্থ জীবনের দায়িত্বে কখনো পা বাড়ায় না, পিছু হাঁটার ভয়ে।
হঠাৎ একদিন সঙ্গীতা নিজের বয়ফ্রেন্ড রূপমের সাথে বাড়ি থেকে পালায়। হোটেলে সারারাত কাটানোর পরে সকাল থেকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না রূপমকে। অথচ রূপম সঙ্গীতা দুজনের বিয়ে করার কথা ছিল পরের দিন।স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি রূপম এইভাবে ফেলে পালিয়ে যাবে। এ যেন এক অজানা রূপম.... অন্যান্য বন্ধুরা সবাই হাজির কিন্তু রূপমকে তারা অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পেল না।
বাড়িতে ফোন করে মাকে কাঁদতে কাঁদতে সবটা বলল সঙ্গীতা। বাবা লোক পাঠিয়ে হোটেল থেকে নিয়ে গেল।
বাড়িতে গিয়ে সঙ্গীতা অবাক চোখে দেখল, তাকে দেখার জন্য পাত্রপক্ষ উপস্থিত। পাত্রের পছন্দ হল। ভাবনা চিন্তার অবকাশ না দিয়ে সঙ্গীতা আর বিয়েতে অমত করল না। যাকে মন দিয়ে ভালোবেসেছিলাম সে আমায় ভালোবেসেছিলো শুধুমাত্র দেহের চাহিদা মেটানোর জন্য। রূপমের মতো অমানুষের জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করার কোনো তাৎপর্য খুঁজে পেল না সংগীতা।
বিয়ের তিন বছর পরে। আজ সঙ্গীতা এক সন্তানের মা। স্বামী আর বাচ্চাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।হঠাৎ সঙ্গীতা শুনতে পায় বাবা তাদের ঘরে বসে মায়ের সাথে ফিসফিস করে বলছে -
---"ভাগ্যিস সেদিন সকালবেলা লোক দিয়ে রূপমকে হোটেল থেকে তুলে এনে, ....।
না হলে, আমাদের মান সম্মান জলাঞ্জলি যেত। "
সঙ্গীতা মনে মনে বলে, "এ কোন বাবার কথা শুনলাম...এতো পাষান বাবা। এই বাড়িতে আর একদম থাকা যাবে না। বেরিয়ে পড়ল রূপমের খোঁজে.... মন ডুকরে ডুকরে কাঁদে..চলে অনন্ত খোঁজ......
সঙ্গীতা সব বন্ধু-বান্ধবের কাছে রূপমের খোঁজ নিল। কেউ কোন খোঁজ দিতে পারল না। রূপম সঙ্গীতার প্রিয় বন্ধু অনিকের কাছে খোঁজ নিল। সেও কোন খবর বলতে পারল না। সঙ্গীতা অনিককে নিয়ে একদিন সে রূপমের বাড়ি গেল। রূপমের মা বাড়ির সামনে বসে আছে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে....। অপেক্ষা করে আছে কখন রূপম বাড়ি ফিরবে? এ এক করুণ দৃশ্য!
- "তোমরা কি রূপমের বন্ধু?"
- "হ্যাঁ, আমরা রূপমের বন্ধু।"
- "আমার ছেলেটা কোথায় গেল? তোমরা কি বলতে পারবে? দাও না ওর খবরটা জোগাড় করে।"
- "আমরাও চেষ্টা করছি ওর খবর জানার।"
- "আমার ছেলেটা কোথায় গেল বলতো? শুধু আগের দিন বলে গেল রাতে ফিরবে না। "
যাওয়ার সময় বলে গেল, "সকালে তোমার জন্য একটা ভালো জিনিস আনব। "
কতবার জিজ্ঞেস করলাম, ভালো জিনিসটা কি একটু বলে যা রে। শুধু বলল, "সারপ্রাইজ আনলেই দেখতে পাবে।"
- "সেই দিন থেকে আমি অপেক্ষা করে বসে আছি...... আমার বিশ্বাস ও একদিন নিশ্চয়ই আসবে।"
সঙ্গীতা অঝরে কাঁদছে। সে কিছু বলতে পারছে না। কাকেই বা বলবে তার বাবার কীর্তি! মনে মনে ভাবল, এর একটা প্রায়শ্চিত্ত হওয়া দরকার। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো সেটা কিভাবে সম্ভব?
রূপমের ব্যাপারে সঙ্গীতা তার বাবার কাছে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল - "রূপম কোথায়?
ওকে ফিরিয়ে দাও।"
- "আমি কিছুই জানিনা," সঙ্গীতার বাবা সরাসরি অস্বীকার করল।
নিজের বাবা, মা, স্বামী, নিজের বাচ্চা সবাইকে ছেড়ে সঙ্গীতা রূপমের মার কাছে চলে আসল। সে ভাবল,এটাই হবে তার চিত্তের বিশুদ্ধতা, প্রকৃত পাপস্খলন......
--------------------------------------------------------------
শ্যামল হুদাতী
357/1/13/1, Prince Anwar Shah Road,
P.O. Jodhpur Park,
Kolkata - 700 068