Click the image to explore all Offers

গল্প ।। নববর্ষে নবপ্রেম ।। ঋতম পাল


 

 নববর্ষে নবপ্রেম

ঋতম পাল

 
 
আজ পয়লা বৈশাখ। বাংলা বছরের নতুন এবং প্রথম দিন, বাঙালির বাংলা বছরের হালখাতার দিন....... 
            
             আজ সকাল থেকেই সূর্য খুব অন্য মেজাজে উঠেছে, নেই কোনো প্রখর, উওপ্ত তাপ, নীল আকাশে ছোটো ছোটো মেঘেরা একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে আর তার সাথে সাথে চারিধারের গাছপালা থেকে মিষ্টি মিষ্টি হাওয়া বয়ে চলেছে, সবকিছু মিলিয়ে যেন মনোরম পরিবেশ বৈশাখকে তথা নববর্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে............।
         
           একটা সময় এমন ছিল যে বৈশাখীর পরিবার আর ব্রতর পরিবারের সদস্যরা মিলে প্রতি বছর ব্রতর বাড়িতে বর্ষবরণ এর আয়োজন করতো, বর্ষবরণ এর দিন ব্রতর বাড়িতে যেন আনন্দের মেলা বসে যেত, এককথায় বলতে গেলে হাসি, মজা, আনন্দ, একরাশ খুশি নিয়ে চাঁদের হাট বসার জোগাড় হতো।

            এই দুই পরিবারের প্রধান দুই কর্তা অর্থাৎ বৈশাখীর বাবা অমিতাভ বাবু আর ব্রত র বাবা রজতাভ বাবু্ একে অপরের ছোটোবেলার বন্ধু ছিলো, দেখে মনে হতো যেন একেবারে হরিহর আত্মা। 
        
            নববর্ষের এই দিনটি নাচ, গান, আবৃত্তি, ছোটো নাটক এইসব অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে খুব সুন্দর করে কাটতো। এরপরে ভুড়িভোজ খাবারের আয়োজন করে সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে এই দিনটির সমাপ্তি হতো। 

                কিন্তু হঠাৎই অমিতাভ বাবুর কাজের সূত্রে বাইরে পোস্টিং হয়, তাই অমিতাভ বাবু তার স্ত্রী, মেয়ে বৈশাখীকে নিয়ে শিলিগুড়িতে চলে যেতে হয়........ 
              
               অমিতাভ বাবুর এই দিন কাজের সুবাদে বাইরে চলে আসার জন্য খুবই আফসোস হয়, কারণ সে যখন চলে আসে তার বন্ধুর কাছ থেকে তখন তার বন্ধুর ব্যবসার কাজে একটু একটু মন্দা দিতে থাকে এবং অল্প বিস্তর আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে, তাই সে তার বন্ধুকে কোনো সাহায্য করতে না পারায় অমিতাভ বাবু নিজে মনের দিক থেকে ছোটো হয়ে যায়, এরপর সে অনেকবার চিঠি লিখতে গেলে মনে মনে তার সঙ্কোচ হয়, ফলে সে আর চিঠি পাঠাতে পারেনা...........। 

                 এইসব কারণে এতকিছু ভেবে এই দুই পরিবারের মধ্যে কোনোরকম যোগাযোগ করা আর হয়ে ওঠেনা, এইভাবে পার হয়ে যায় অনেক গুলো মাস,তবে এই দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব কোনো এক প্রান্তে হারিয়ে গেলেও তাদের ছেলে মেয়ে অর্থাৎ বৈশাখী-ব্রতর মধ্যে সেই পুরোনো বন্ধুত্ব, পুরোনো ভালোবাসা সেই আগের মতোই থেকে যায়, তাদের মধ্যে আগের মতোই কথা হতে থাকে এবং তারা পরিকল্পনা করে যে তারা এই বছর বর্ষবরণের দিন তাদের দুটো পরিবারকে আবার এক করবে, মিল করিয়ে দেবে দুটো পরিবারের মধ্যে আর বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে নিজেদের এই ভালোবাসাকেও পূর্ণতা দেবে।।। 

 আজ ৫ বছর পর.............. 

                   বৈশাখী তার বাবা ও মাকে নিয়ে ফিরে আসে কলকাতায়, কলকাতায় এলে অমিতাভ বাবুর মনে পড়ে যায় অতীতে আজকের দিনের মুহুর্ত গুলো। বৈশাখী তার বাবার মনের সব কষ্ট বুঝতে পেরে একটা ট্যাক্সি ডাকে...............
ট্যাক্সি থেকে নেমে অমিতাভ বাবু অবাক হয়ে ওঠে সেই ২নং, গোকুল বড়াল স্ট্রিটে তার বন্ধু রজতাভ বাবুর বাড়িটাকে দেখে........!! 
এরপর সে তার মেয়েকে কোনো কারণ জানতে চাইলে বৈশাখী তাকে ভিতরে নিয়ে যায় এরপরে ভিতরে গিয়েও সে দ্বিগুণ অবাক হয়ে যায় এবং দ্বিগুণ আনন্দে আপ্লুত হয়ে ওঠে..........!!! 

                    অমিতাভ বাবু দেখে যে তাদেরকে স্বাগতম জানানোর জন্য তার বন্ধু রজতাভ সমেত পুরো পরিবার ঠিক আগের মতোই দাঁড়িয়ে রয়েছে। 
এছাড়াও সেই বাড়ি, সেই লোকজন, সেই চিলেকোঠার ঘর, সেই আড্ডা, সেই পুরোনো স্মৃতি কিছুই বদলায়নি, সবই নতুন হয়ে যেন আজও তার কাছে ধরা দিচ্ছে। 
এরপরে অমিতাভ বাবু যখন দেখল যে তার বন্ধু রজতাভ বাবু তাকে আলিঙ্গন করার জন্য দুহাত বাড়িয়ে রেখেছে, এটা দেখে অমিতাভ বাবু নিজেকে সামলাতে পারেনা, ছুটে গিয়ে বন্ধুকে আলিঙ্গন করে এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে........ ;
                    
                   এরপর অমিতাভ বাবু নিজের সব অসুবিধার কথা, তার বন্ধুকে সাহায্য করতে না পারার কারণ সব একে একে বলতে গেলে, রজতাভ বাবু তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে যে-"আমি জানি তোর কোনো অসুবিধা হয়েছে বলেই তুই সাহায্য করতে পারিসনি,আর বন্ধুত্বের সম্পর্কে ভালোবাসা, বিশ্বাসটাই আসল, এর থেকে বড়ো আর কিছুই হয়না"। 
বন্ধু রজতাভ র শেষ কথাটা শুনে অমিতাভ বুঝতে পারে যে সে এতগুলো বছর যোগাযোগ না রেখে অনেক ভুল করেছে, এই ভেবে সে লজ্জিত হয়ে পড়ে এবং বন্ধুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। 

                    এরপরে ঠিক পুরোনো দিনের মতোই নাচ, গানের মধ্যে দিয়ে এই দুই পরিবার নববর্ষ পালন করে খুব আনন্দের সাথে,দুপুরে খাবার খাওয়া শেষ হলে অমিতাভ বাবুর মনে একটা প্রশ্ন জেগে ওঠে, সে রজতাভ বাবুকে বলে যে-"আচ্ছা তুই জানলি কী করে যে আজকে আমরা কলকাতায় ফিরছি?"
 
                     তখন মুচকি হেসে রজতাভ বাবু ব্রত আর বৈশাখী এই দুজনের কান দুটো ধরে নিয়ে আসে, আর বলে যে তাদের মধ্যে সম্পর্ক না থাকলেও তাদের ছেলে মেয়েদের সম্পর্কে বন্ধুত্ব, ভালোবাসার কোনো চিড় ধরেনি, বড়দের এই মান অভিমান এর প্রভাব তাদের ছেলে মেয়েদের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারেনি। 
এই কথা শুনে অমিতাভ বাবু বলে যে-"কতদিন আমরা আর শুধু বন্ধু হয়ে থাকবো, এবারে আমাদের বন্ধুত্বটাকে নবরূপে শুরু করি চল নতুন এক আত্মীয়তার সম্পর্কে বেধে"............। 

                 রজতাভ বাবু বলে যে তার কথা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা সে, তখন অমিতাভ বাবু মুচকি হেসে পরিস্কার করে বলে যে -"আমার মেয়েকে তোর মেয়ে করে নিজের কাছে রাখবি??
তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে নতুন করে বেয়াইয়ের সম্পর্ক শুরু করতে আমি রাজি, তুই রাজি আছিস??"

                     এই কথা শুনে রজতাভ বাবু এই প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায় এবং তাদের আশীর্বাদ এর দিন ঠিক করে নেয়.............. 
 
                     এরপর বৈশাখী ও ব্রত সবার আশীর্বাদ নেয় এবং মিষ্টি মুখ করে এবং সবশেষে দুজনে একটি কবিতা বলে-

        "সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে শামিল হয়েছি, এসেছি আবার ফিরে;  " নববর্ষের নবপ্রেমে " ফিরে এসেছে আনন্দ আমাদের এই দুই পরিবারে"।

=======================
নাম: ঋতম পাল
ঠিকানা:- ৫/২/H/১, কাশীপুর প্রাণনাথ চৌধুরী লেন 
কলকাতা- ৭০০০০২


  

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.