Click the image to explore all Offers

গল্প ।। পাগল মন ।। শেখ সজীব আহমেদ

 

পাগল মন

শেখ সজীব আহমেদ


নবম শ্রেণির একছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম।তার নাম সাবিনা আক্তার মৌ।
প্রথমে আমার ইচ্ছে ছিল না তাকে প্রাইভেট পড়ানো। তার মায়ের অনুরোধেই পড়ানো শুরু করি।
তাকে রাতে পড়াতে হয়,বিকেলবেলায় পড়ানোর আমার সময় নেই।কারণ আমি সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্যে আমাদের সুবচনি বাজারের সামনেই সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং দিচ্ছি ওয়াটারপ্রোফিং'র কাজে।

মৌকে পড়াতে পড়াতে একমাস হয়েগেল। হঠাৎ একসময় ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম।হয়তো আজ পড়বে না।আমি তার নাম ধরে ডাক দিলাম,ঘরের কেউ সাড়া দিলো না।কিছু হলো কী না চিন্তায় পড়ে গেলাম।অবশ্যই কিছু একটা হয়েছে আমার মন বলছে।

সকালদিকে তার মায় আমাকে দেখেই আজে-বাজে কথা বলতে থাকে।আমি নাকি মৌকে বিয়ে করতে চাই।প্রস্তাব পাঠিয়েছি,তার দাদি আর ফুফুর কাছে।কথা শুনে আমার মাথাটা গরম হয়েগেল।আমি চুপ হয়ে রইলাম।মৌ'র মা আরো বললেন,'আমার মাইয়ারে পড়াতে লাগব না।ঘরের ভিতর কাউকে ঢুকতে দিমু না।আমার মাইয়া কষ্টে পালি।যতন হউক,মতিন হউক,যেই হউক আমি য্যান-ত্যান পোলাগো কাছে আমার মাইয়া বিয়া দিমু না।' আমি নিরবে শুধু শুনেই যাচ্ছি।

কথার কোনো জবাব না দিয়ে,আমি মনটি খারাপ করে তার মায়ের কাছ থেকে চলে যাই মৌ'র দাদি ও ফুফুর কাছে।তারা সত্যি কি এসব কথা বলছে?তা জানতে। হ্যাঁ,তারা বলেছে।স্বীকার করলেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম,'আপনারা এসব কী বলছেন?ভুলেও আর এসব বলবেন না।
আমি অরে ছোটবোনের মতো জানি।'

তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি ট্রেনিং সেন্টারে চলে আসি।আজকেই আমার সেমিফাইনাল পরীক্ষা দিতে হবে।ভালো করতে পারলেই ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারব।আমার প্রতিদ্বন্দী মাত্র একজন।ফাইনাল পরীক্ষার কোডাও এবার একটি। যে ভালো করবে,সেই ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে।আমার প্রায় দেড় বছর চলছে।পরীক্ষার দেওয়ার কোনো সুযোগই পাইনি,আজ পেয়েছি।সবার আশা,আমি ভালো করব।এবার ফাইনাল পরীক্ষাটা আমিই দিতে পারব।

সকালবেলায় থিওরি পরীক্ষা দিলাম।তারপর
দুপুর দু'টায় ওয়াটারপ্রোফিং প্রজেক্টের কাজ শুরু করলাম।আমার শুধু মৌ'র মায়ের কথাগুলো মনে পড়ছে।কাজের শুরুতেই ভুল করে ফেললাম। কোনো মতো প্রজেক্টের কাজ শেষ করলাম।
তবে প্রজেক্টা ভালোভাবে করতে পারিনি বলে, আমি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারব না।আমার মনটি খারপ হয়েগেল।কিন্তু মা-বাবার কাছে কী জবাব দেবো?নিজেই নিজের হাতের আঙুল কেটে বাড়িতে চলে আসতে থাকি।মা-বাবাকে বলে দেবো,আঙুল কেটে গেছে বলে পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছি।

ঘরের ভিতর ঢুকে দেখি,মা মাগরিবের নামাজ পড়ে দোয়া করছেন আমার জন্য।যাতে আমার পরিক্ষাটা ভালো হয়।মা'র দোয়ার শেষে আমার হাতের দিকে তাকালেন।[গায়ের জামা ছিঁড়ে হাত বেঁধে রেখেছি।]মা দেখে অবাক! আমি মাকে মিথ্যা কথা বললাম,'মা,আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আঙুলটা একটুখানি কেটে গেছে বলে ফাইনাল পরীক্ষা এবারও দিতে পারব না।' মা তেমন কিছু আমাকে বললেন না।'


মতিন হচ্ছে পাশের এলাকার ছেলে।মৌকে সে পছন্দ করে,ভালোবাসে।মৌকে দেখলেই তার দিকে শুধু চেয়ে থাকে।মৌ একদিন আমার কাছে মতিনের নামে বিচার দিলো।আমি আর যতন মিলে মতিন যাতে মৌকে ডিস্টার্ব না করে,মানা করে দিলাম।কঠোভাবে শাসনও করে দিলাম।

একসময়ে মতিন তার চাচাত ভাইকে দিয়ে আমাকে মারবে বলে পদক্ষেপ নেয়। আমিও মতিন এবং তার বন্ধুকে মারার পদক্ষেপ নেই।কেননা,ওরা আমাকে আর মৌকে নিয়ে আজে-বাজে কথা বলছে।অবশেষে যতন তা সমাধান করে দেয়।

একদিন শুনতে পেলাম যতনও নাকি মৌকে ভালোবাসে।কিন্তু মৌ যতনকে ভালোবাসে না।মৌ ভালোবাসে আমাদের গ্রামে বেড়াতে আসা স্বপনকে।স্বপনের সঙ্গে প্রেম-পিরিতি ভালোই চলছে।তাদেন মা-বাবা কেউ জানেন না।ধীরে ধীরে আমার মনটি কেমন জানি হয়ে গেল।মৌ'র প্রতি হয়তো দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।স্বপনের সঙ্গে কথা বলা আমার ভালো লাগছে না।

রাতের দিকে আমার একচাচির ঘরের ভিতর দেখতে পেলাম তাদের দু'জনকে।বাতিটাও নিভে দিলো।আমার মনে বাজে চিন্তা এসে পড়ে।
আমার দু'চোখ দিয়ে জল ঝরতে থাকে।বুক ফেঁটে কান্নাও আসছে।আমার কান্নার শব্দ হয়তো কেউ শুনতে পারে,তাই আমি অন্য কোথাও চলে গেলাম।চোখের জলে আমার মুখটি ধৌত করে ফেললাম।এতো জল ঝরছিল তা বলার মতো না।
জানি না,আমার কেন কান্না পাচ্ছে?
নিজেকে আমি নেজেই সান্ত্বনা দিলাম।আমি তো মৌকে ভালোবাসি না।আমার কেন কান্না আসবে?মনটি কেন ছটপট করবে?আসলে আমি বুঝলেও,কিন্তু পাগল মন তো বুঝছে না।

একপর্যায় মৌ'র আর স্বপনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়; স্বপনের দুলাভাই জেনে গেছে তাই।
স্বপন চলেগেল তার নিজের বাড়ি।এখন মৌ'র সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই,হয় না কোনো কথাবার্তা।

অবশেষে যতনের সঙ্গেই মৌ'র মিল হওয়ার সম্ভবনা।যতনের সঙ্গে মৌ'র প্রেম-পিরিতি ভালোই চলছে।
আমার এখন কোনো খারাপ লাগে না। নিজের মনটাকে সামলিয়ে নিয়েছি।
যতন যেহেতু আমার বন্ধু।যতনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে এতেই আমি খুশি।কিন্তু যতন আমাকে বলে,আমি নাকি মৌকে ভালোবাসি।আমি যতনকে বুকে হাত দিয়ে বললাম,'যা শোনছস সব মিছা।আমি মৌকে ভালোবাসি না।তুই মৌকে বিয়ে করে ফেল।আমারে ভুল বুঝিস না।'

অবশেষে তারা বিয়ে করে ফেলল। কিন্তু আমার পাগল মন এখন আবার নীরবে কেঁদেই যাচ্ছে।

========================
 
 
নাম:শেখ সজীব আহমেদ
পিতা:মুহাম্মদ সুলতান শেখ
মাতা: মনোয়ারা বেগম
গ্রাম+পোস্ট:আউটশাহী 
পড়াশোনা:ইন্টারমিডিয়েড
পেশা:মালদ্বীপ প্রবাসী
উপজেলা:টঙ্গীবাড়ি
জেলা:মুন্সীগঞ্জ
বিভাগ:ঢাকা


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.