রুদ্রপলাশ আর বাতিল হওয়া সেই মেয়েটি
জয়শ্রী ব্যানার্জি
তাহলে কি বলছিস ঠিক করে বল ! বারণ করে দেবো তো অনন্যার মাকে? সেজো মাসী মুখটা একটু দুঃখী দুঃখী করে বললো, হাতে খুন্তি আর ডিশে আলু ঝোল চারপিস মটন নিয়ে বললো দ্যাখ তো রুদ্র তুই আর রাজীব, ঠিক আছে নাকি নুন ঝাল মিষ্টি ! আর তোর দাদা কে বোঝা তো ! এই আমাদের দুটো বাড়ি পরেই অণু বলে একটি মেয়ে আছে ওর ভাই অভি এই রোজের বন্ধু তো ওদের মামাতো মেয়ে আছে ওর সাথে রাজীব এর একটা সম্বন্ধ করছিলাম তা তিনি এখন বিয়ে করবেনা , কি ভালো রে মেয়েটা ! রং শ্যামলা তা হোক আমার ওসব নিয়ে নাক উঁচু ভাব নেই । মেয়েটি ভালো হলেই হচ্ছে । মিষ্টি মুখ খানি । খুব গুনী । পানাগড়ে একটা কলেজে পার্ট টাইম করছে । ভূগোলের । ভালো রবীন্দ্র সংগীত গায় আবার ক্যারাটে ও শিখেছে । ওতেও পুরস্কার পেয়েছে । ওর বাবা মা এরও রাজীবকে নিয়ে আপত্তি নেই । পরিচয় আছে আমাদের ।
দাঁড়া রোজ ফিরুক ।ওর ফোনে ছবি আছে দেখাবো।
গাধাটাকে বোঝা রুদ্র । রাজীব রুদ্রর দিকে চোখ টিপলো । ভাবটা এমন প্লিজ মায়ের হাত থেকে বাঁচা । রুদ্র বলল আচ্ছা ঠিক আছে তুমি রান্না সামলাও আমি কথা বলব রাজীবদার সাথে । রোজটা ফিরবে কখন কোচিং থেকে ? দুই ঘণ্টা হতে চলল ওনার পাত্তা নেই ! কোথায় রোববার একটু আড্ডা দেবো ! বলতে বলতেই রাজীবের শিব তাণ্ডব রিং টোনে ফোন বেজে উঠল ,রাজীব ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো রজনী দি ।
রজনী দি অর্থাৎ রজনীগন্ধা ওদের বড়ো মাসীর মেয়ে ।
ফোন রিসিভ করে বলল হ্যাঁ দিদি কেমন আছো ? হ্যাঁ আমরা ভালো আছি ।আজ রুদ্র এসেছে । রোজি এখনও ফেরেনি । হ্যাঁ আমারও ছুটি হ্যাঁ নাও রুদ্রর সাথে কথা বলো , রুদ্র জানে রজনী ফোন করলে ঝাড়া এক ঘণ্টা । সে একটু কথা বলেই মাসীর কাছে ফোন ট্রান্সফার করে দিলো । বললো দিদি মাসী কি কি রান্না করছে শোনো আর রাজীব দার বিয়ে ঠিক করছে মাসী ,শোনো কোথায় কি ব্যাপার বলে হাসি মুখে তাকালো রুদ্র রাজীবের দিকে । রাজীব হাতে খবরের কাগজ টা পাকিয়ে রুদ্র কে আলতো করে আঘাত করলো । সেজো মাসী ফোন নিয়ে চলে গেল । রুদ্র খাজা খেতে খেতে বললো, করে ফ্যাল রাজীব দা ,আমরা একটা ভোজ খাই ।আমাদের ফুলের টিম আবার একসাথে হবো। রাজীব খবরের কাগজে চোখ রেখে বসেছিল আড়মোড়া ভেঙে বললো আর বিয়ে! তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লাগলো বলে ! রাশিয়া ইউক্রেন দ্বন্দ্বে বিশ্ব ভাগ । ইউরোপে এক বড়ো আকারের শরণার্থী সংকট শুরু হবে দ্যাখ ।
রুদ্র কাগজটা নিলো । হ্যাঁ সবাই এত অস্ত্র জমিয়েছে হাত নিশপিশ করছে। যুদ্ধের ব্যবসা টা ভালই জানে আমেরিকা ।
আমেরিকা কাকে সামলায় রাশিয়া না চীনকে ! এদিকে ইউক্রেনকেও নাচাতে থাকবে ।
বিশ্বের চোখ ভারতের দিকে ।কোন দিকে তার অবস্থান জানায় ।
রাজীব জিজ্ঞাসা করে তোর কি মনে হয় ভারত কোন দিকে থাকবে?
রুদ্র চিৎ হয়ে শুলো। নিরপেক্ষ থাকবে দেখ, কিন্তু রাশিয়া কে কখনো হারাতে চায়বে না ভারত। কারণ জানে বিপদে আর কেউ না থাকুক রাশিয়া কে পাবে । ভারত জানে পাকিস্তানের পিছনে জঙ্গি মদতে অস্ত্র বেচাতে কার মাথা ছিল ! আমেরিকার চোখ এখন এশিয়ার দিকে । যেহেতু এখনও বিশ্বের এক নম্বর শক্তিশালী দেশ আমেরিকা তাই সরাসরি রাশিয়ার হয়ে যোগ দিয়ে চটাবে না কিন্তু বুঝিয়ে দেবে আমেরিকা কে এটাও, সেই চোখ রাঙানোর দিন শেষ এখন ভারত আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানে । তুই নোটিশ কর পদক্ষেপ গুলো । আর ওই যে তেল নিয়ে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা দূর! থোড়াই কেয়ার করবে ভারত ! ইউরোপের অধিকাংশ দেশই রাশিয়ান জ্বালানি সংগ্রহ করে ।
রাশিয়ার সাথ যারা দেবে তাদের বিচার হবে আমেরিকার ওই প্রচ্ছন্ন হুমকি নিয়ে ভারত চিন্তিত না । কৌশলী ব্যাটিং করবে দিল্লি ।
বস্তুত ভারতের বৃহত্তম তেল বিপণনকারী সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল রাশিয়ার কাছ থেকে মোট ৩০ লক্ষ ব্যারেল অশোধিত তেল কিনেছে, আর একটি সংস্থা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কিনেছে আরও ২০ লক্ষ ব্যারেল।
উভয় সংস্থার সূত্রেই আভাস মিলেছে, রাশিয়া থেকে পাওয়া এই 'উরাল ক্রুডে'র দাম পড়েছে ওই তারিখে আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে ব্যারেলে বিশ থেকে পঁচিশ ডলার কম।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তেলের দাম আকাশ ছোঁয়ায় ভারত যে তীব্র সঙ্কটে পড়েছিল - তাতে এই সস্তার তেল কিছুটা হলেও তাদের অর্থনীতিকে স্বস্তি দেবে।
হ্যাঁ । রাজীব নিজের চুলে হাত বোলালো
তবে এই যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনীতি মন্দায় প্রবেশ করবে। জিডিপি ক্ষতির মুখে পড়বে ,
বাণিজ্য বিঘ্নিত হবে , রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে কৃষি আমদানির উপর নির্ভরশীল দেশগুলিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে ।
জ্বালানী তেলের বাজার অস্থির হবার সাথে সাথে
খাদ্য-পণ্য ও সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
ইউক্রেনের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়তো হবে না , তবে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যর কবলে পড়বে ।
আরেকটা জিনিস কি বলতো রুদ্র ছোট হাই তুললো,
ইউক্রেনে সামরিক দিক থেকে কিছুটা অগ্রসর হবে, কিন্তু যুদ্ধে শেষ করার মতো পরিস্থিতিতে যেতে পারবে না। অথবা, ইউক্রেনের মিত্রদের সমর্থন ফুরিয়ে আসবে এবং তারা একটা সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে।আর বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কী হয় এবং একই সাথে অন্যান্য যুদ্ধ বিশেষত ইসরায়েল-হামাস সংঘাত কোনদিকে গড়ায় এবং সেটা ইউক্রেন ও রাশিয়ার মিত্রদের কীভাবে প্রভাবিত করে, সেসবের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
আর মার্কিন সাম্রাজ্য বাদ রুখতে পাকাপাকি ভাবে নিজের ছেলে মেয়েদের আমেরিকা পাঠিয়ে দেবার ব্যাপার টা তে সিদ্ধ হস্ত সেই ইন্ডিয়ান কমিউনিস্ট রা কাকে সমর্থন করবে? রাশিয়া না আমেরিকা রাজীব চোখ নাচালো?
রুদ্র হেসে উঠলো ।
কথার মাঝে রোজ ঢুকলো , বাবারে ! মনে হচ্ছে আসানসোলে ই এই যুদ্ধটা চলছে আর এই ঘরে যুদ্ধ নিয়ে দুই বিখ্যাত কর্মকর্তার মধ্যে গোপন কথা বার্তা চলছে ।
রুদ্র উঠে বসলো ,আসুন আসুন মিস রোজালিয়া চট্টরাজ ,খবর কি আপনার ? সব ওকে?
রোজ ধপ করে বিছানার এক পাশে বসলো , হেসে বললো বিন্দাস ! আমি সব সময় দারুন থাকি ।
কি খবর গো রুদ্র দা ? ট্রাভেল এজেন্সি তে ভালো জব পেয়ে খুব ঘুরছো বলো?
রুদ্র বলল তা তো হয় ! ঘোরা টা একটা আমার হবি বা প্যাশন জানিস তোরা । সেই জন্যই তো হিস্ট্রি অনার্স এর পরই ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম নিয়ে পড়ে পেয়ে গেলাম । যেকোনো জায়গার ইতিহাস কি ভূগোল টানে সেই জায়গা নিয়ে পড়াশোনা করে নিয়ে যখন ট্যুরিস্ট দের নিয়ে যায় সেইসাথে বলতে পারিস তাদের গাইড ও হয়ে যাই। রুদ্র হাসলো । হাসলে রুদ্র কে অদ্ভুত সুন্দর দেখায় ,রাজীব দেখলো ওকে । রুদ্র ওর চেয়ে দু বছরের ছোট । সাতাশ চলছে এখন রুদ্রর। বিজয়া করতে এসেছে । স্মার্ট আর জলি। ফ্রেন্ডলি হেল্পফুল নেচার । একটা অতীত কষ্ট দেয় ওকে । অনার্সে ওর ৫৯% ছিল কিন্তু সরকারি চাকরির পরীক্ষা না দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি তে চলে যায় । ঘোরার নেশার সাথে রোজগার ও হচ্ছে ।কলকাতায় একটা ট্রাভেল এজেন্সি তে জব করে । আগে ,ব্যাঙ্গালোরে ,আমেদাবাদে ছিল । হিন্দির সাথে স্পোকেন ইংলিশ টা ভালই রপ্ত আছে । গুজরাতি জানে একটু ।ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় তো অবশ্যই সাথে ইন্ডিয়ার বাইরেও মালয়েশিয়া , সিঙ্গাপুর ,মালদ্বীপ , তিব্বত , নেপাল ,ভুটান ,ঘুরে এসেছে । পিঠোপিঠি হওয়াতে ছোট থেকেই ওরা দুজন ভালো বন্ধু । একসময় দারুন ক্রিকেট খেলত । শরীর চর্চা বজায় রাখায় সুঠাম চেহারা । ওদের কোনো মামা নেই । মায়েরা চার বোন ।রুদ্র তার ছোট মাসির ছেলে ।সে একাই সন্তান । বর্ধমানে থাকে ওরা । বড়ো মাসি দুর্গাপুরে। বড়ো মাসির মেয়ে রজনী দিও দুর্গাপুরে ই থাকে ।মেজো মাসি থাকে কালনা তে । মাসি দের পারিবারিক বড়ো পোশাক ব্যবসা । মাসির ছেলে রঙ্গন দা ব্যবসাতেই আছে । মেজো মাসির মেয়ে রঞ্জনা দি কাটোয়া তে থাকে । সবাই বর্ধমান জেলাতেই আছে এবং সবার সাথে ভালো যোগাযোগ আছে । মামার বাড়ি তে বাড়ির কালী পুজোয় ওরা এখনও যায়। মায়েদের খুড়তুতো ভাই দের সাথে এখনও পুজো তে অংশ নেয়। যোগাযোগ রাখে।
রুদ্র কে বললো ক্রিকেট মিস করিস ? হ্যাঁ খুব! এখন তো পারিনা সব জায়গায় যেতে ,ম্যাচ খেলতে তাও ওর মধ্যেও চেষ্টা করি দু একটা তে অংশ নিতে ।
রাজীব চোখ বুজলো ! মা সেই ফোনটা নিয়ে গেছে কি এত বকছে রজনী দির সাথে ! যা না রোজ ফোন টা নিয়ে এনে দে না ।একটা ফোন করার ছিল ।বাকি কথা মায়ের ফোনে বল করতে ।
নিজে একটু ওঠ না রে । রোজ বলে রাজীব কে ।
যা না প্লিজ । রাজীব মিনতি করে।
আনছি দাঁড়া কোল্ড ড্রিঙ্কস কি ফল কিছু খাবে রুদ্র দা?
না রে ভাত খেয়ে কোন্ড ড্রিঙ্কস খাবো। চা নিয়ে আয় একটু ।
বলার সাথে সাথেই সেজো মাসি হাজির হলো রোজ তোর ফোন থেকে অণুর দিদির ছবিটা রজনী কে পাঠাস তো! রুদ্র কে দ্যাখা। ফোন ব্যাগে আছে মা ,আমি ভাত খেয়ে পাঠাবো ।এখন স্নান সেরে আসি । ওদের চা দাও । রুদ্র দা এসে কথা বলছি ।
রোজ উঠে চলে গেলো ।
দুপুরে বিছানায় বসে রুদ্র আর রাজীব কথা বলছিল , দরজাটা ভিতর থেকে আটকানো । জলখাবারে লুচি ঘুঙ্গনির পর দুপুরের খাওয়া ভালই হয়েছে । আলুভাজা,পটল ভাজা, পোস্তর বড়া, উচ্ছে বেগুন আলু ডাঁটা দিয়ে চচ্চড়ি , মটন,চাটনি পাঁপড় । মেসোমশাই আজ বাড়িতে নেই । গ্রামের বাড়ীতে গেছেন একটু দরকারে ।
সিগারেটে একটা যুতসই টান দিয়ে রুদ্র বলল ব্যাপার কি রাজীব দা তোর ? রেলে সরকারি চাকরি করছিস। মাসি চায়ছে বিয়ে করছিস না কেনো ? কোথাও কিছু ব্যাপার খুলে বল রে !
রাজীব বললো জানিনা কি হবে !আসল কেই তো মানানো বিরাট ব্যাপার তার ওপরে মা আবার ,বাড়িতে!
কি কেস?
সেই আমাদের একটা জায়গা নিয়ে ঝামেলা চলছিল কোর্ট কেস চলছিল জানিস ,সেই তখন পরিচয় । বন্ধুত্ব হয় ।সে ও উকিল । আমার থেকে বছর দুই এর বড়ো। বছর সাড়ে তিন হয়ে গেলো বিধবা। স্বামী একটা কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান । ৫ / ৬ বছরের একটা মেয়ে আছে । স্বাগতা সিনহা । কিন্তু তাকেও ঠিক বলতে পারছিনা । স্বামীর স্মৃতি! আর যদি বন্ধুত্ব হারিয়ে ফেলি । যদি সে বিয়েতে রাজি মেয়ে তার মেয়েকে নিজের মেয়ে বলেই গ্রহণ করবো।
ওহ্ বিশাল ব্যাপার! যদি ম্যাডাম রাজী থাকেন তাহলে এদিক টা ম্যানেজ হয়ে যাবে ঠিক । মাসির ভিতর টা নরম জানি ।
কিন্তু মা ওই অণুর কোন মামাতো দিদি কে নিয়ে দিনরাত পড়েছে সে খারাপ না কিন্তু তাকে বাতিল করার কারণ অন্য , প্লিজ দ্যাখ না কিভাবে বাতিল করা যায় ওই সম্বন্ধ আর না হয় তুই কর ।
আমি! রুদ্র বিষম খেলো । আরে ! বিয়ের দিকে যাচ্ছিনা আমি ! দেখছ না কি চলছে আজকাল বিয়ের নামে ! ৬ মাস বিয়ে ,৮০ লাখ টাকা অ্যালিমানি + সব গয়না নিয়ে কাট, মিথ্যা কত কেস ,জীবন একদম নরক করে দেয় কত স্ত্রী আর তাদের পরিবার। আবার মিথ্যা কত রেপ , মলেস্টেশন। আমি বলছিনা হয়না । অব্যশই হয় ।আর সেগুলো বেশিরভাগ শালীন মেয়েগুলোর সাথেই হয় । এদিকে ধর্ষণ নিয়ে প্রতিবাদ কিন্তু তার সাথেই চলছে মেয়েদের অশ্লীলতা, এই কি নারী স্বাধীনতা! সভ্যতা এখন অসভ্যতা !
বিয়ের খরচ + মোটা টাকা রেখে দাও ডিভোর্স কেসের । কি দরকার ওসব ঝামেলার ! আইন তো শুধুই এক তরফা মহিলাদের ।হাজার হাজার পুরুষ ও যে অত্যাচারের শিকার হয় সংসারে সমাজে কত মিথ্যা কেসে, সেই নিয়ে কই কিছু পদক্ষেপ ? আইন?
হ্যাঁ এটা একটা বিশাল সমস্যা রাজীব বলে ,আসলে একটা সময় সমাজে পণ সংক্রান্ত ব্যাপার গুলো নিয়ে মহিলাদের ওপরে শ্বশুরবাড়িতে এত অত্যাচার হতো সেটা তে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে এখন কার আইন
গুলো হয়ে গেছে এক তরফা ।শুধুই মহিলা কেন্দ্রিক ।
আর তার মিস ইউজ করছে বহু মহিলা । দু তরফেই এই সমতা থাক। কিন্তু ..
রাজীবের ফোন বাজলো।সে কথা বলতে লাগলো ।
রুদ্র ফেসবুক খুললো ,এতে সে কম অ্যাক্টিভ থাকে । আসলে সময় হয়না বেশি । ওই কাজের ফাঁকে টুকটাক ।ইনস্টা সে করে না । কি মনে হতে রোজের প্রোফাইলে ঢুকলো । এটা ওটা দেখতে দেখতে একটা ছবিতে থামলো । রোজের সাথে দুজন অচেনা মেয়ে আর একটা ছেলে । নন্দনে তোলা । লেখা নন্দনে এক নন্দন তিন নন্দিনী । ছবিটা বেশ ভালো হয়েছে । রুদ্র লাইক দিলো । একবার মনে এলো এই কি সেই তারা যাদের কথা সেজো মাসী বলছিল ,
রোজের প্রোফাইল পিক টা দেখলো রিসেন্ট চেঞ্জ করেছে । ভালো লাগছে । অভিমন্যু ভট্টশালী বলে কেউ একজন লিখেছে আসানসোলের গোলাপ রানী।পাশে লাভ । রুদ্র হাসলো ।তার কমেন্ট টাতে লাইক দিলো ।
রোজ সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে ইংলিশ নিয়ে । তার ইচ্ছা এয়ার হোস্টেস হওয়া ! হাসি খুশি স্বভাবের ।
! অভিমন্যুর প্রোফাইল পিক দেখলো 'এনসিসি'র পোশাকে । মনে হচ্ছে এই অভি। রোজ এর বন্ধু ।
দরজায় ঠক ঠক ! সিগারেট খাওয়া শেষ। প্যাকেট পকেটে ভরে নিলো রুদ্র । রাজীব লাগোয়া ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ফোনে। সেও সিগারেট নিভিয়ে দিল ।দরজা খুলে দিলো রুদ্র । রোজ কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছে । মাসীও এসে যোগ দিলো। ওদের সাথে কথা বলতে বলতে দুপুর গড়িয়ে অবেলা। রুদ্রর দু চোখ বুজে এলো।রোজ কি ছবি দেখাচ্ছে সে কিছু বুঝলো না । প্রবল ঘুম তাকে অতলে নিয়ে যেতে চায়ছে ।ঘুম জড়ানো স্বরে সে বললো হোয়াটস অ্যাপে দিয়ে রাখিস । পরে দেখবো ।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ । রঙের আগুন ঝরাচ্ছে পুরুলিয়া । রুদ্র একটা পলাশ গাছের ছায়ায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
ফাগুনের হাওয়ায়-হাওয়ায় লাল পলাশের দাবানল দেখতে এই বসন্তে নয়া ডেস্টিনেশন জঙ্গলমহল। বলা ভাল পাহাড় আর জঙ্গলে লাল পলাশে ঢাকা লালমাটির দেশ পুরুলিয়া আসলে এই বসন্তে যেন এক কল্পলোকের জগৎ!
আর সেই স্বপ্নমাখা অরন্যসুন্দরী যেন হারিয়েই গিয়েছিল বাংলার পর্যটন মানচিত্র থেকে। লাল পলাশে আগুন ঝরলেও রাঙামাটির পথ যে ভিজেছে লাল রক্তে। ধারাবাহিক নাশকতা, হিংসায় এই পুরুলিয়ার ল্যান্ডস্কেপ যেন মুখ লুকিয়ে ছিল। কিন্তু আজ হাওয়া বদলে এই লাল পাহাড়ের দেশ ডাকছে।
ফাগুনের নীল আকাশ আর আগুনের লাল শিখার সমারোহ বড়ন্তির এইখানে ।
এখন পলাশ পরব চলছে । মহুয়া মাদলে মন উচাটন । চিত্তাকর্ষক আদিবাসী সংস্কৃতি, মন মাতানো সবুজ, বিস্ময়কর পাহাড় এবং পলাশের সাথে সাথে শিমূল, শাল, তমাল,মহুয়া, কুসুমের কচি পল্লবের স্বাদ নিতে ট্যুরিস্ট দের ভিড়। হোক ।অনেক গরীব মানুষ এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । রোজগার হয় ।
প্রান্তিক মানুষ দের সাথে রুদ্র এক টান অনুভব করে ।
অদূরে সে কালকের আনা পার্টির দিকে তাকালো । বিকালে এসেছে তারা । দুদিন থাকবে তার পরদিন লাঞ্চ করে ফিরবে । বড়ন্তি তেই ছিমছাম সুন্দর একটা রিসর্টে উঠেছে ওরা ।
কলকাতা থেকে দুই দম্পতি তাদের দুই বাচ্ছা ছেলে মেয়ে যাদের মধ্যে এক দম্পতি অস্ট্রেলিয়া তে থাকে অন্য দম্পতি কোলকাতার ।বন্ধু ।তাদের সাথে এসেছে তাদের আরো দুই আত্মীয় কি বন্ধু হবে দুজন মহিলা যাঁরা কাল দুর্গাপুর থেকে উঠেছিল আর রুদ্রর দুই বন্ধু সুজন আর দেবরাজ ।যাবো যাবো করছিল তারা সুযোগ এসে গেলো রুদ্র বলাতে তারাও সাথ নিলো ।কলকাতা থেকে একটা বড়ো গাড়ি আরেকটা ছোট গাড়িতে এসেছে ওরা সব ।দুর্গাপুর থেকে যে দুটি মেয়ে উঠলো তাদের একজন কে দেখে রুদ্র চমকে গেছিলো । চেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছেনা । মন টা একটু সেই দিকেই ছিল, কে হতে পারে ইনি ! জিজ্ঞাসা ও করতে পারছে না । খেতে বসার সময় রুদ্র বেশ কবার দ্যাখাতে সুজন বলে কি ব্যাপার ব্রো? হঠাৎ দলের কচি কলাপাতা চুড়িদার পড়া চশমা চোখের মেয়েটির দিকে এমন দৃষ্টিতে কেনো ?প্যাহেলি নজর মে পেয়ার হো গয়া কেয়া ? আরে না ! চেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছিনা ।
দেবরাজ মৃদু স্বরে গান ধরে খুব চেনা চেনা মুখখানি তোমার ... ওহে সবুজকলি
রুদ্র হাসে সবুজকলি , পেঁয়াজকলি , আনারকলি, ফুলকলি, ফুলকপি কলি কি নাম জানিনা কিন্তু কোথাও দেখেছি । সুজন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বলে বৌদি মণি।
দূর! হাসি ঠাট্টায় খাবার সারে তারা রুটি,স্যালাড ,আলুভাজা ,চিকেন দিয়ে ।
তারা তিন জন এক টা রুম নিয়েছে । খেয়ে এসে সবার সব কিছু ঠিক আছে কিনা দেখে বিছানায় গা এলালো রুদ্র । নেট ওন করতেই কিছু এসএমএস নিউজ ঢুকলো । হোয়াটস অ্যাপ খুলতেই রোজের পাঠানো একটা ভিডিও পেলো । হঠাৎ কিছু মনে পড়াতে সে রোজের সাথে পুরোনো চ্যাট গুলো খুঁজতে লাগলো।থামলো । বিজয়ার পর আর মাসির বাড়ি যাওয়া হয়নি ।এসএমএস ,ফোনে যা কথা হয় !পুরোনো একটা ছবি ডাউনলোড করলো।এতদিন দেখেনি সেই ছবিটি । রোজের পাঠানো রাজীব দার জন্য মেয়েটির ছবি । এই একা ছবিটা সে দ্যাখেনি । ভুলেই গেছিলো, তবে রোজের সাথে গ্রুপ পিক এ দেখেছে একে। নিচে লেখা বনি দি । রুদ্র দেখলো হ্যাঁ সেই। আজকের কচি কলাপাতা চুড়িদার পড়া মেয়েটি।
রুদ্রর চোখে দুটোয় মুগ্ধতা র ছায়া নেমে এলো কি! না ঘুমের ছায়া ! সে জানে রুদ্র আর ঈশ্বর! পাশে বন্ধুরা ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে । রুদ্র হোয়াটস অ্যাপ থেকে বেরিয়ে এলো । একটা সিগারেট ধরিয়ে ব্যালকনিতে এলো । অদূরে বড়ন্তী হিল ,লেক তখন ঘুমের দেশে । সবুজ গাছপালা আঁধারের কালো চাদর জড়িয়ে চুপ করে আছে।একটা হাওয়া বয়ছে । বসন্তের নক্ষত্র খচিত আকাশ দেখলো রুদ্র।
আকাশের কত বয়স কে জানে ! আকাশ কত মুক্ত! অথচ তার নীচে সবাই কত বন্ধিত।
সবাই পলাশে মগ্ন । রুদ্র তাকালো ।কালকের কচি কলাপাতা আজ বসন্তলতা। বয়স ২৫/ ২৬ আন্দাজ। একটা পলাশ গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে।
অজস্র ফুল চারদিকে ছড়িয়ে ।কিছু ঝরে পড়ছে তার চুল শরীর ছুঁয়ে। তার সঙ্গিনী বান্ধবী কিছুটা বড়ো হবে মাঝারি ফর্সা চেহারা । সে তার ছবি তুলে দিচ্ছে ফোনে। অপূর্ব সে দৃশ্য । রুদ্র কে দেখেই সঙ্গিনী দিদি ডাক দিলো ।ভাই এদিকে আসুন । আমাদের দুজনের কয়েকটা একসাথে ছবি তুলে দিন ভালো করে । রুদ্র বলল সিওর। আপনারা এইদিকে দাঁড়ান এখানে ভিউ টা বেশি সুন্দর উঠবে । ছবি তোলা হয়ে গেলে সঙ্গিনী দিদি বললো থ্যাঙ্ক ইউ ভাই ।কাল থেকে কথা বলছি অথচ নামটা জানা হয়নি ।আমি মিতালী দত্ত। মিতু নামে পরিচিত বেশি । পানাগড়ে একটি কলেজ আমরা দুজনেই পার্ট টাইম করি । আমি পল সায়েন্স ও ভূগোল। রুদ্র বললো আচ্ছা তাহলে অনিন্দ্য বাবু বা দীপন বাবু আপনাদের কারো আত্মীয়? হ্যাঁ অনিন্দ্য দা আমার পিসতুতো দাদা আর ওর বন্ধু দীপন দা। যিনি অস্ট্রেলিয়া তে থাকেন । দীপন দার ইচ্ছাতে ই বেশি আশা ।এই সময়ে দেশে এসেছেন ফিরে যাবার আগে পলাশ পরবের নেশা টেনে আনলো ।আমরাও জুটে গেলাম ওদের সাথে ।
রুদ্র হাসলো । আমি রুদ্রপলাশ। রুদ্র পলাশ রায়।
পাশের জন পাশেই ছিল মিতালী দির ।চোখ তুলে তাকালো রুদ্রর দিকে এক মুহুর্ত নামটা শুনে । চোখ নামিয়ে বললো আমি বনন্যা ব্যানার্জি ।
মিতালী দি একটু এগিয়ে গেলেন ওদের সাথে আসা অন্য দুজন মহিলার দিকে । বাচ্চারা কিছু একটা জেদ করছে ।
আসানসোলে আপনার মামার বাড়ি? রুদ্র একটা পলাশ কুড়োয়। না পিসির বাড়ি। কেনো? বনন্যা চুল সরায় চোখ হতে ।
রোজ কে চেনেন ? রুদ্র আড়চোখে তাকায় বনন্যার দিকে ।
হ্যাঁ আমার পিসতুতো ভাই অভির ক্লাস মেট ।
এখন যদিও কলেজে সাবজেক্ট আলাদা । অভির অঙ্ক।পাড়াতে ই বাড়ি তো তাই ওদের সাথে আসা যাওয়া আছে পিসিদের । অভির খুব ইচ্ছা ইন্ডিয়ান আর্মি জয়েন করার । রোজের সাথে কথা হয় মাঝে মাঝে।একসাথে বেড়াতে গেছিও।
আপনি রোজের কে?
মাসতুতো দাদা ।
আচ্ছা। কথা প্রসঙ্গে শুনেছি সম্ভবত রোজের মুখে ।আপনি নাম বলার সেটা মনে পড়ল। মৃদুস্মিতা হলো বনন্যা। আপনার নাম টা সুন্দর ।
রুদ্র বলল আচ্ছা। আর আপনার নাম তো খুব আনকমন ! অর্থ কি?
দেবী কালীর এক নাম ।
আরে বাপরে ! মানে আপনি ভয়ংকরী?
সব সময় না তবে ক্ষেত্র বিশেষে হতে হয় ।
গুড ।
টং করে একটা এসএমএস ঢুকলো ।রুদ্র দেখলো সুজন লেখেছে চালিয়ে যাও গুরু ।
পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলো ,দুটোতে পলাশের মাঝে শুয়ে বসে । হাত নাড়লো রুদ্র । এদিকে আয়? কি করছিস ? ওরাও পাল্টা হাত নাড়ল ।
ওনারা আপনার বন্ধু ? বনন্যা জিজ্ঞাসা করলো।
হ্যাঁ একজন কলেজের আরেকজন পূর্ব কলিগ ।কিন্তু এখনো বন্ধুত্ত্ব অম্লান ।
বাহ! বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ।
চারদিকে যেনো সুন্দর এক বনবহ্নি। এই বহ্নি তে পতঙ্গের মতো ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে করবে যে কারো ! বনন্যা চশমা খুলে হাতে নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল সামনের দিকে ।
পলাশ ফুল নিয়ে হিন্দু ধর্মে পৌরাণিক কাহিনী জানেন? রুদ্র বলে
না ।কি?
অগ্নি দেবতা নাকি একবার ফুল হয়ে পৃথিবীতে জন্মেছিলেন সেই ফুল এই পলাশ । উপনয়নের সময়
নতুন ব্রাহ্মণ ব্রহ্মচারী কে পলাশের দণ্ড ধারণ করতে হয় তাতে পলাশ বা বেলের কথা আছে যদিও এখন পলাশ দণ্ড এত না পাওয়াতে বেল দিয়ে কাজ চালানো হয় । আমার পৈতে তে অবশ্য পলাশ দণ্ড ই এনেছিল খুঁজে বাড়ি থেকে ।
জানতাম না ।আপনিও তো তাহলে ভয়ঙ্কর ?
কেনো?
রুদ্র শিব । আবার পলাশ বলছেন অগ্নি দেবতা ।
ভীষণ রাগী বুঝি ।
আরে না! রুদ্রপলাশ তো রবীন্দ্রনাথের দেওয়া ফুলের নাম।
আমাদের মাসতুতো ভাই বোন দের সব ফুলের নাম। আর র অক্ষর দিয়ে সেই থেকে মা রুদ্রপলাশ রেখেছিল ।
আচ্ছা বুঝলাম ।হাসলো বনন্যা ।
এখানে ভেটি গ্রাম আছে চলুন যাওয়া যাক সবাই কে বলি । মেঠো পথ দুধারে শুধুই পলাশের সারি।
সকাল সন্ধ্যে কাটিয়ে দেবার মত ভালো আর ঠিকানা নেই বোধায় !
সারাদিন হৈ হৈ ঘোরাঘুরির মাঝে লাঞ্চ সেরে এখন
বেলা গড়িয়ে নীল হ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে ওরা, শীতল বাতাস, মহুয়া পাতার গুঞ্জন, এবং চারপাশের সবুজ উপভোগ করতে থাকে সবাই । বড়ন্তি লেকে যেমন সুর্যোদয়ের সময় ছোট জেলে নৌকাগুলিকে উদীয়মান সূর্যের পটভূমিতে শান্ত সুন্দর দেখায়। তেমনই এখন হ্রদটি সূর্যাস্তের সময় লাল রঙের একটি মনোরম দৃশ্য তৈরি করেছে সাথে জলের উপর বড়ন্তি পাহাড়ের প্রতিফলন ঘোর এক মায়া জাল ,মন্ত্র ভাব করছে যেনো ।
অপরূপ সে দৃশ্য সকলের মন ছুঁয়ে গেলো ।
হাইকার ট্রেকার দের কাছে খুব আকর্ষণীয় এই লেক,ছবির মতই সুন্দর চারদিকের পাহাড় গ্রাম ।
রুদ্র সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে দেখলো দল থেকে একটু সরে একটা পাথরের ওপরে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে বনন্যা। দৃশ্যটি অপার্থিব লাগলো ।হাতের ফোন ক্লিক করলো নিঃশব্দে!
হোটেলের রুমে সান্ধ্যকালীন আড্ডা চলছে । একটা ঘরে মেয়েদের আর একটা তে পুরুষদের । অনিন্দ্য ওদের ডাকলো আরে একসাথে এসেছি যখন তখন হোক গল্প গুজব।সেই তো আবার বোরিং লাইফ।
একটু ড্রিংকস ও চলছে তার সাথে । প্লেটে রাখা চিকেন পকোড়া,স্যালাড ।
রুদ্র স্মোক করলেও ড্রিঙ্ক সে করে না । আগামী কাল অধিবাসী একটু নৃত্য গীতের স্বাদ গ্রহণের ব্যবস্থা করে রুদ্র ওদের সাথে যোগ দিলো।
দেবরাজ একটা পকোড়া মুখে দিয়ে বললো টেষ্ট টা দারুন কিন্তু । আচ্ছা দীপন দা আমার একটা জিজ্ঞাসা এত ইন্ডিয়ান স্টুডেন্ট দার বিদেশ চলে যাওয়ার পিছনে কি কারণ ? আপনিও তো থাকেন ।ভালো জব করেন ।
দীপন পানীয় তে চুমুক দিতে দিতে বলল ,দেখুন
তফাৎ একটু আছে কেনো কি ভালো ইউনিভার্সিটি তে পড়তে এখানে যেমন টাফ কম্পিটিশন ওখানে সেটা নেই । লোক সংখ্যা অনেক কম ,১/২ কোটি। সিট খালি পড়ে থাকে তার পর এন্ট্রান্স এক্সাম দিতে হয় না । অ্যাকাডেমিক স্কোরে তেই চান্স পাওয়া যায়। ভারতে এন্ট্রান্স হয় লোক সংখ্যার জন্য । বাইরে যাও বা দু একটা আছে সেগুলো তে ইন্ডিয়ার মতো এত রুলস নেই ।
এসব কোটা সিস্টেমের ব্যাপার নেই । মেধা ভিত্তিক। তার পর ধরো ওদের পড়ানোর সিস্টেম টা আলাদা ম্যাথের সাথে সাইকোলজি, হিস্ট্রি এসব নিতে পারো।আলাদা করে সায়েন্স ,কমার্স , আর্টস ভাগ টা নেই ।এখানে যেমন চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে । সায়েন্সে কে বরাবর ধরা হয় মেধাবী দের জন্য ।কমার্স কে মাঝারি আর আর্টস কে দেখানো হয়ে তাদের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল তাদের জন্য । এখানে সায়েন্সের স্টুডেন্ট রা হীন চোখে দেখে আর্টস দের এটা ফ্যাক্ট ।
উচ্চ মাধ্যমিকে কেউ অঙ্কে ৪০ পেলো অথচ কেউ আর্টস থেকে ইতিহাসে ৯২ পেলো তবু শুনতে হবে ও তো আর্টস এর ।যেনো খুব সোজা ইতিহাস পড়া!
সায়েন্সে কেউ ৪২% নিয়ে পাস করলেও সে মেধাবী কিন্তু আর্টস থেকে কেউ ৬০% পেলেও তাকে কম মেধাবী ধরা হয় ইন্ডিয়ান এডুকেশন সিস্টেমে।
এখন ভারতে চালু হতে যাচ্ছে বিদেশী এডুকেশন সিস্টেম কিন্তু সেটা কতটা গৃহীত হবে ,বা ঠিক ভাবে চালু হতে সময় লাগবে । কারণ ভারত কে চলতে হয় অনেক রাজ্যের মত নিয়ে, ওই সামলাতে সামলাতে শাসনের মেয়াদ শেষ ! তার পর অন্য দল আসে তার চিন্তা নিয়ে সেটাও এই রকমই এক পর্যায়ের টাইম নেয় ।
তার পর কি বিদেশে ক্রিটিকাল জিনিস গুলোর ওপরে প্র্যাকটিসে জোর দেওয়া হয় সেটা এখানে এড়িয়ে যায় । মুখস্ত তে জোর যেন বেশি ।যেন তেন প্রকারে প্রকারে খাতায় উগরে দিতে পারলেই হচ্ছে। ডিগ্রি থাকে স্কিল নেই ।যেটা বিদেশে কি ...
স্কিলের ওপরে জোর দেয় ।
দীপন থামলো । সিগারেট এর ছাই ফেলার জন্য অ্যাস্ট্রে টা খুঁজলো। হাতের কাছে না পেয়ে চায়ের কাগজের কাপে ফেললো। অনিন্দ্য বললো এখানে তো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট গুলো হয় ই না ।
হলেও হয়তো দেখা যাবে সেই সব কলেজ ইউনিভার্সিটির বাজেট ভালো আছে । টেকনিক্যাল কোর্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপোজার জিরো। বড়ো ডিগ্রি আছে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির এক্সপেরিয়েন্স নেই । কারিকুলাম আউটডেটেড। ফ্যাকাল্টি ইনএক্সপেরিয়েন্স।
রুদ্র বলল একটা পরিসংখ্যানে দেখছিলাম ভারতে বিশ্বের সেকেন্ড লার্জেস্ট MBA গ্র্যাজুয়েট। কিন্তু তার ওয়ান ফোর্থ মাত্র এমপ্লয়ী।
হ্যাঁ ওই স্কিলের ওপরে জোর নেই এটাই মেন সমস্যা ।
ওখানে এডুকেশন কোয়ালিটি হাই থাকে ,রিসার্চ প্র্যাকটিসের ওপরে জোর ।
হাইটেক ক্লাস , স্টুডেন্ট কে ক্লাসেই রিসার্চ পেপার লেখানো ।তাই ফিজ বেশি লাগলেও যাচ্ছে । আবার ভালো স্টুডেন্ট দের স্কলারশিপ ব্যবস্থা আছে তাতে পড়া ফ্রী হয়ে যাচ্ছে ।
একটা ড্রিম সেল হয়েছে ওখানে সব ফেয়ার মিলবে । ওখানে যদি কেউ গ্র্যাজুয়েশন ,পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে ,জব পাওয়ার একটা সিকিউরিটি থাকে।।আর সেটা সহজেই কিন্তু এখানে সেটা ইজি হচ্ছে না । টাফ কম্পিটিশন।
এখানে সেই জব ই এখান কার প্রতিষ্ঠান থেকে এডুকেশন কমপ্লিট করে বেরিয়ে পেলে ,যা পায় ইউএসএ এর প্যাকেজে স্যালারি বেশি । এই গুলো টানে মানুষ কে ।
সুজন বললো তার পর বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে এলে বা জব করলে এখানে পরে জব করলে তার একটা সুযোগ সুবিধা ও বেশি ।
অনিন্দ্য বললো হ্যাঁ ।আর এই সমস্যা গুলো দূরীকরণে নিউ এজ ম্যানেজমেন্ট কলেজ ,স্কেলার স্কুল অফ বিজনেস অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। ডিগ্রির থেকে স্কিলের উপরে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে ।বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটা ফলো করলে আরো অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে ভবিষ্যতে।
ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছে আর এটা ইন্ডাস্ট্রির লিডার রা ডিজাইন করেছে ।
রুদ্র বলে হ্যাঁ আবার অনেক দেশে লোক সংখ্যা কমে গেলে বাইরের লোক দের আহ্বান করা হচ্ছে সেখানে কাজ করতে , জাপান এটা করছে এখন ইন্ডিয়ান দের ।এমনিতে ইন্ডিয়ান দের মেধা বেশি । সেটাকেও টোপ দিচ্ছে নানা ভাবে ড্রিম দেখিয়ে এটাও একটা ব্যাপার কিন্তু ।
দীপন বলে অবশ্যই ।আমি নিজে থাকি তো জানি ।
অনেক ইন্ডিয়ান বিশেষ করে বাঙালি আছে ফিরতে চায় না দেশে তার কারণ কি জানো? দেশে এলে তাদের স্টেটাস কমে যাবে । এই যে বিদেশে থাকে একটা সবার কাছে সমীহ ভাব এবং এটাও আছে ওরা চায় না ইন্ডিয়া উঠুক বিশ্বে ,এই রকম ইউএস এ কি চিন এর মত হোক । তাহলে তারা কমা হয়ে যাবে ভাবনা । এবং এরা ওখান থেকে বিভিন্ন সময়ে অনেক উল্টোপাল্টা প্রতিবেদন লেখে যেগুলোতে ভারতের নেগেটিভ দিক গুলো তোলা থাকে ।এটা কিন্তু ইচ্ছাকৃত একটা চাল ।
এখন কিন্তু সেই পশ্চিমা দেশ গুলো নিয়ে একটা সময় মিথ কাজ করত ওগুলো এবার ডাউন ফল হয়েছে । সেই সব নেই । ভারত কে ইচ্ছাকৃত ভাবে স্বাধীনতার পর অনেক দিকে উঠতে দেওয়া হয়নি সেগুলো থেকে কিন্তু আসতে আসতে ভারত বেরোতে পারছে । বিশ্বের কাছে একসময় প্রচার ছিল ভারত গরীব দেশ সেটা কিন্তু নেই এখন ,আর এটা নেই বলে অনেকের খুব প্রবলেম হচ্ছে ।আমি বলছিনা যে একেবারে পুরো সব কিছু ক্লিন হয়ে গেছে ।একদম সোনার দেশ হয়ে গেছে সেটা না, কিন্তু মধ্যযুগ থেকে ইংরেজ যুগ তার পর স্বাধীনতার পরে যা ছিল সেই দশা থেকে কাটাতে পারছে ! চেষ্টা করছে ।অনেক ষড়যন্ত্র চলছে দেশীয় আর বিদেশিয় স্তরে।
দেবরাজ বলে , হ্যাঁ এখানে চাকরির প্রচুর কম্পিটিশন তবে এই এই যে সরকারি শিক্ষক দের আন্দোলন নিয়ে একটা কথা সরকার চাকরি টা যে জন্য দেবে সেই স্কুলেই তো ছাত্র নেই তাহলে তারা চাকরি পেয়ে বসে বসে মাইনে পাবে তো!আর চাকরি পেলেই আগে নিজেদের ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করবে তাহলে সরকারি স্কুল গুলোতে ঠিকঠাক ব্যবস্থা টা করতে হবে পঠন পাঠনের। তবে গার্জেন দের ও একটা চিন্তা দূর হয় । বিদেশে তো সরকারি স্কুল গুলোতেই পড়ানো হয় ।টিচার রাও দেখেছি মাইনে বাড়ানো ,স্কেল বাড়ানো এসব নিয়ে আন্দোলনে নামে কিন্তু সরকারি স্কুলের পঠন পাঠন ব্যবস্থা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকে।
সরকারি কর্মী দের অনেকের ভালো মাইনে সত্ত্বেও এদিকে DA বাড়ছে আর অন্যদিকে হাজার হাজার বেকার ।সেখানে অন্য জায়গায় একটু টাকা খরচ করে সহজে যদি বেশি ভালো সুযোগ পায় যাবেই ! পুরো সিস্টেম টাই যেনো নড়বড়ে।
আর তার ওপরে তো বাইরে আরো আরাম সুন্দর জীবনের একটা প্রলোভন।
রুদ্র বলে কিন্তু আমার মনে হয় এই ভাবে মেধা বাইরে চলে যাচ্ছে এর জন্য সরকার কে অবশ্যই কিছু করতে হবে । বাইরে থেকে স্কিল শিখে আসো।দরকার হলে জব করে আসো কয়েক বছর সেই দক্ষতা পদ্ধতি নিয়ে এখানে পদক্ষেপ নিক ।অন্যদের শেখাক। টাকা বিজনেস হোক বা অন্য কিছুতে ইনভেস্ট করুক । যেটা নিজের ও ফায়দা দেশের ও। এর জন্য অবশ্যই সরকার কেও সাহায্য করতে হবে । আর বিদেশ যাও বেড়াতে , জব করতে , পড়তে কিন্তু পরে দেশে ফেরো ।দেশ কে এগোতে হেল্প করো।
তার পর সেই সব দেশে যাওয়া ভালো যেখানে সাথে ইন্ডিয়ার জিও পলিটিক্যাল সম্পর্ক ভালো ।কারণ বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু দেশে ইন্ডিয়া নিয়ে বর্ণ জাতি বিদ্বেষ চলছে । ইন্ডিয়ান রা এসে ওদের জব কেড়ে নিচ্ছে বা অন্য কিছু এই নিয়ে একটা নেগেটিভ থট । অনেক ভারতীয় এই কারণে খুন হচ্ছে ।
দীপন বলল হ্যাঁ। আমারও পরে এইদেশে আবার চলে আসার প্ল্যান আছে । কিছু করার একটা ইচ্ছা আছে ।জানিনা কতদূর পারবো ।আর কি জানো ভাই যতই বেশি আরাম স্বচ্ছন্দে থাকো বড়ো একাকী জীবন । আর মনে হয় পরের দেশে আছি পড়ে! আর কেউ যদি এখানে ভালো জব করে তার শুধু শুধু বাইরে গিয়ে শূন্য থেকে শুরু করার মানে হয়না। হ্যাঁ জানার শেষ নেই সেই হিসাবে জানতে ,জ্ঞান আহরণ করতে বা দক্ষতা শিখতে বা জব করতেও যাও পরে আবার ফেরো এই খানে এই মাটির টানে।
এটা ওটা কথা গড়াতে গড়াতে প্রায় সাড়ে নয় ।দরজা ঠক ঠক। দেবরাজ দরজা খুলে দিল। অনিন্দ্য বাবুর স্ত্রী। বললেন বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাচ্ছে । খাইয়ে নিয়ে আসি ।
রুদ্র বলল হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন আমি যাচ্ছি সাথে ।
দীপন বলল কি কস্তুরী ম্যাডাম ওদিকে কেমন আসর বসেছে ।ভালই ।গানের কবিতার আসর সাথে এটা ওটা গল্প । মিতালীর বন্ধু বনন্যা খুব সুন্দর একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়লো। চুমকি ও একটা কবিতা বললো । খুব সুন্দর ।এখনও যে ধরে রেখেছে অনেক এটা ।
ওহ্ মিস করলাম সবাই আমরা । হ্যাঁ অস্ট্রেলিয়া তে পুজোর অনুষ্ঠানে চুমকি আবৃত্তি করে ।
কাল সন্ধ্যায় আদবাসী নাচ আছে ওখানেও আমরা সবাই একটু গীত নৃত্য করবো।
রুদ্র কস্তুরী কে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ।
পরদিন আবার পাহাড় অরণ্য ঘোরাঘুরির পর সন্ধ্যার নির্জনতায় স্থানীয় এক আদিবাসী গ্রামে আদিবাসী নাচ গানের আসরে নিয়ে এসেছে রুদ্র তার দল কে । এখানে অনেক ট্যুরিস্ট রাই আসে টাকার বিনিময়ে নাচ গান দেখতে ।কিছুক্ষন এর জন্য মহুয়া মাদলে মন নেশাতুর করে তারা ।
রুদ্র দেখলো চুমকি বৌদি দীপন দা কে বলছে এই ওই সব মহুয়া খেও না তো তার পর নেশা হয় যদি অনেক ।কাল ফেরা আছে ।
দূর ভেবো না তো,কিছু হবে না একটু টেস্ট করতে দাও ।দীপন দা এগিয়ে গেল সামনে ।
সুন্দর দ্রিমি দ্রিমি শব্দে মাদল বাজছে । সেই তালে তাল দিয়ে নেচে উঠছে আদিবাসী কিছু নারী পুরুষ ।
মুখে তাদের ভাষায় গান । রুদ্র বাদে পুরুষ দল একটু মহুয়ার স্বাদ নিতে গেলো । কস্তুরী বললেন আমার বিয়ার চলে কিন্তু মহুয়া জানিনা কেমন ! ভাবছি তার পর দুজনেরই নেশা হলে টুবলুকে কে সামলাবে !থাক বাবা দরকার নেই । চুমকি বলল হুম ! আমি অবশ্য বিদেশে গিয়েও রপ্ত করতে পারলাম না আজও এসব।কেমন গন্ধ লাগে যেনো ! কলকাতায় তো এখন মহিলারা এইসবে পুরুষ দের মতোই পারদর্শী । আমি গ্রামের মেয়ে ।
কিন্তু আমি নিজে খাইনা বলে আমার ছুতমার্গও নেই তবে দীপন ইদানিং একটু বেশি ড্রিঙ্ক করছে নোটিশ করি ।
কস্তুরী বৌদি বলে, হতে পারে অফিসের চাপ। জানিনা গো চুমকি বলে ,সব বলে না তো আমায় খুলে ।
মিতালী দি বলে আমি আর বনন্যা অবশ্য এতে নেই আমরা ঝালমুড়ি, চপ মুড়ি রোল, ফুচকা, পাপড়ি চাট মোমো চাউমিন, বিরিয়ানি তে খুশি।
রুদ্র দেখলো বনন্যা একটু সরে বসে নাচ দেখছে ।লাল রঙের একটা চুড়িদার পড়েছে আজ । সুন্দর লাগছে ।
রুদ্র কাছে গেলো কাল আপনার গান মিস করলাম ।আজ হয়ে যাক এখানে ।
দূর! কি যে বলেন ! তেমন গাই না ,ওই আর কি! আর এখানে আদিবাদী পরিবেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত মানাবে না । হাসলো একটু বনন্যা।
বেশ ! কেমন লাগছে ? রুদ্র জিজ্ঞাসা করলো ।
খুব সুন্দর পরিবেশ ।ভালো ।
রুদ্র ওর একটা কার্ড এগিয়ে দেয় ।এটা রাখুন কখনই দরকার পড়লে ফোন করবেন ।
বনন্যা নিলো । আচ্ছা ।
আপনার নাম্বার টা কি পাওয়া যাবে ?.
কি করবেন আমার নাম্বার নিয়ে ?বনন্যা বলে ওর দিকে না তাকিয়েই ।
কিছু না ,কথা বলতাম মাঝে মাঝে। বন্ধুত্বে আপত্তি আছে ? রুদ্র সোজা তাকায় ওর দিকে।
ভীষণ!
কেনো? আমি কি খারাপ কিছু করেছি আপনার সাথে?
না তা না ।কি হবে বলে কথা ! কিছুদিন কথা তার পর যখন একজন আসতে আসতে একজন কে ভরসা করতে যাবে তখনই কথা সব শেষ তার পর দেখা যাবে মন অন্যের প্রতি !
পুরো know মানেই তো পুরোনো তাই না? কম দেখলাম না তো অনেকের জীবনে! এবার রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল বনন্যা।
রুদ্র আহত হলো আপনি আমায় এমন ভাবলেন ।কষ্ট পেলাম ।
এমন সব ছেলেরাই বলে । আপনিও তো পুরুষ ।
সব পুরুষ কি এক ? বিশ্বাস নেই? দোষ দিচ্ছিনা ।দুদিনের পরিচয়ে কি ই বা জানা যায় সবার ! রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল !
আবার বললো একদিন দেখা করবেন ? যেখানে বলবেন । তবে চাঁদে কি মঙ্গল গ্রহে বলবেন না ।জীবনেও পারবো না ।বিদেশেও আপাতত পারবো না । আমার কিছু বলার আছে শুধু । কথা দিচ্ছি আপনাকে ভালো ভাবে সসম্মানে বাড়ি পৌঁছে দেবার দায়িত্ব আমার থাকবে ।বিশ্বাস করুন আমায় ।রুদ্রর গলায় এক সরলতা মেশানো আকুলতা ।
চশমা খুলে ফেললো বনন্যা। রুদ্রর দিকে চোখ তুলে তাকালো,আস্তে করে বললো, বিশ্বাস করলাম ।
রুদ্রর মনে হলো "পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন "!
আদিবাসী মহিলারা ডাক দিলো বনন্যা দের ওদের সাথে নাচের জন্য ।
বনন্যা কে টেনে নিয়ে গেলো মিতালী । আদিবাসী আর শহুরে মেয়েদের পা মেলানো ছন্দ মন্দ লাগছিল না কারো!
একটু নাচের পর সবাই একসাথে বসলো মেয়েরা ওদের কাছেই ।
দীপন বলল এই যে একটা টান মাটির এর কারণেই ফিরতে চাই ।কলকাতায় আমাদের বড়ো বাড়ি কিন্তু দাদারা ভাবে আমি তো বাইরে থাকি আমার অনেক টাকা তাই বাড়ির ভাগ না নিলেও চলে! কিন্তু বাড়িতে যে আমার কত স্মৃতি। ওই বাড়িতেই বাবা চলে গেছিল আমার বিদেশ যাবার আগে। মিস করি বাবাকে। আমার ছোট পিসি সুসাইড করেছিল ওই বাড়িতেই।আমার ছোটবেলা, বড়ো বেলা, একাকীত্ব ,মন খারাপ খুশি কত কিছু বেড়ে উঠেছে গেটের মাধবীলতার ঝাড়ের মতো, সেই গুলো কেউ বোঝে না !সবাই ভাবে আমি স্বার্থপর। এত টাকা রোজগার করেও বাড়ির ভাগ নিয়ে ঝামেলা করি ! মা ও ভুল বোঝে ।চুমকিও বোঝে না ।ওই বাড়িতে আসতে চায়না ।ওর ইচ্ছা বিদেশে ই থাকবো ।
চুমকি বললো বোকো না ,আমি আসতে চাইনা তার কারণ তোমার মা বৌদিরা বার বার তোমার প্রথম স্ত্রীর সাথে তুলনা করে ।সে ধনী , রূপসী ।তোমার প্রথম মেয়ে টিঙ্কা মায়ের মতই সুন্দরী । আর আমি ,গ্রামের গরীব মেয়ে আমার স্টেটাস নেই আমি সুন্দরী না ।আমার মেয়ে আমার মতই অসুন্দর ।তোমার মত সুন্দর হলেও হতো ,এইসব বার বার বলে , কিন্তু বলে না সে কত বড়ো চিট করেছে তোমার সাথে । আর কত বৃহৎ পরিমাণ টাকা নিয়েছে খোরপোষ হিসাবে । মেয়েও তোমায় পাত্তা দেয়না শুধু টাকা চেনে এগুলো বলে না । সে চিট করেও দেবী আর তোমার কষ্টে আমি যে সাথ দিয়েছিলাম সেগুলো তুমি স্বীকার করো না ।
দীপন বললো হ্যাঁ দিয়েছ কিন্তু তোমার মনেও কি বিদেশে যাবার প্রলোভন কাজ করেনি ? বিয়ে হলে তুমি একটা ধনী পরিবারের বউ হবে ।ছিল না মনে?
না কখনও না । তোমার ভুল ধারণা ।তোমার প্রথম স্ত্রী খারাপ ছিল বলে আমাকেও বিশ্বাস করতে পারো না । চুমকি চেঁচিয়ে উঠলো !
সবাই বলল আরে ছাড়ো না ওসব ! দুদিনের জন্য এসেছ আনন্দ করো।
অনিন্দ্য বললো তোকে বাড়িতে ভাবে বাইরে থাকে,ওর অনেক টাকা ।কি দরকার বাড়ির ভাগ নেবার !
আর আমরা আগে গ্রামে থাকতাম সেখানে বাবা সব দেখাশোনা করত আর কাকারা ভাবতো বাবা সব দখল করছে ।বেশি ভোগ করছে আর বাবা যে বুক দিয়ে সব আগলে রাখতো । ঢাল হয়ে সংসারে থাকতো সে গুলো নজরে পড়তো না । তুচ্ছ দু চার পয়সার জন্য বাবা কে দুঃখ দিয়ে ঝগড়া করেছে অথচ তারা বড়ো অফিসার । বাবা গ্রামের বাড়িতেই চলে গেলো আমার কলকাতার ফ্ল্যাট দেখে যেতে পারেনি ।
কস্তুরী বলল আর কোলকাতায় আসার জন্য আমায় গ্রামে প্যারা টিচারের চাকরি টা ছাড়তে হলো ।
ওখানে মা ,বাবা পিসী মা এদের কাছে টুবলু কে রেখে যেতে পারতাম । এখানে অন্য প্রাইভেট স্কুলে ও তুমি করতে দিলে না আর বললে টুবলু কে দেখবে! তোমার মা আসতে পারবেন না ।থাকতে পারবেন না । কি করবে চাকরি করে এত? আমি তো এনাফ রোজগার করি। সংসারে তো একজন কেও অন্তত সামলাতে হবে! অনিন্দ্য গ্লাসে চুমুক দিল ।
খাওয়া পড়া টাই কি সব ? কস্তুরীর গলায় অভিমানের সুর !
দেবরাজ বলল কেউ স্ত্রীর কাছে কেউ প্রেমিকার কাছে ঠকেছে।
পাপিয়ার জন্য আমি কি করিনি ! তার কেরিয়ার গড়ার পিছনে সব আমার অবদান । কত টাকা পয়সা খরচ করেছি ওর জন্য, শেষে কি জানলাম আমায় ইউজ করেছিল ।এবং আরো অনেক কে ও এই ভাবেই ফাঁসাতো। আমার বাইরেও তার কিছু সম্পর্ক ছিল ! দেবরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেললো!
কস্তুরী বলল তোমাদের কাছে বসাটাই ভুল দেখছি সেই থেকে মেয়েরা ওই মেয়েরা এই আর ছেলেরা যেন ধোয়া তুলসী পাতা? ছেলেদের কি দোষ নেই?.দোষ আছে বলেই আইন এত!
মিতালী বলল আপনার সাথে যা ঘটেছে সেই একই জিনিস আমার সাথেও । বিয়েই আর করলাম না।বিশ্বাসী আর কাউকে পেলাম না ।কিন্তু তাতে দুঃখ নেই ঠিক আছি আমি নিজের মতো।
সুজন বললো আমার এসব প্রেমিকা স্ত্রী সমস্যা নেই ।
বাউন্ডুলে মানুষ । এনজিও তে আছি। ছোট বেলায় মা বাবা কে হারিয়েছি । জেঠু কাকারা বাড়ির থেকে একটু দূরে সিক্স থেকে আশ্রমের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল ।সেখানেই হোস্টেলে থাকতাম । উচ্চ মাধ্যমিক ওখানেই । পড়ে টিউশন করে কলেজের খরচ চালাই ।তবে জেঠু কাকারা সম্পত্তি থেকে ঠকায়নি আমায় ।আছে কিছু বাবার সম্পত্তি।
বিয়ে নিয়ে ভাবনা নেই । এনজিওর কাজ নিয়েই কাটিয়ে দেবো জীবন ।
রুদ্র দেখলো মানুষ চেনা জন দের থেকে অচেনা জন দের কাছে বোধহয় বেশি সহজ হয়ে যায় ,
মনের অনেক জমানো কথা বলাতে ! সবাই এটা ওটা বলতে লাগলো শুধু একজনকে রুদ্র দেখলো সে একটু চুপ চাপ থাকলো । হয়তো সে স্বভাব শান্ত কিংবা খুব সহজে সবার কাছে নিজেকে প্রকাশ করে না । রুদ্রর মনে হলো দীপন দার একটু নেশা চড়েছে। অনেক বলাতেও রুদ্র মহুয়া ছুঁলো না । সে কাজে এসেছে নিছক বেড়াতে না । এড়িয়ে গেলো সে ।
নাচ গান মহুয়া মাদলে কথপোকথনে কেটে গেলো বেলা । রিসর্টে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে সাড়ে সাত টা হয়ে গেলো ।
বৈশাখী এক বিকাল । মৃদু হাওয়া দিচ্ছে । বাইকটা একটা জায়গা দেখে একদিকে রাখলো রুদ্র । হেলমেট টা খুলে ঝুলিয়ে দিলো হ্যান্ডেলে। দামোদর নদীতে পানাগড়ের রন্ডিয়া ড্যাম। মন্দ লাগছিল না চারদিক রুদ্রর। শীত কালে এটা এখন পিকনিক স্পট হয়ে গেছে । খ্যাপলা জালে মাছ ধরছে জেলে কজন ।
কলকল ধ্বনি ভেসে আসছে জলপ্রবাহের। রুদ্র ঘড়ি দেখল । ৫ টা বেজে গেছে । নাহ !কালবৈশাখীর চিহ্ন নেই । গরমই।তবে একটু কম ।খুবই হালকা নীল শার্ট আর একটা ডীপ ব্লু জিন্স পড়েছে সে । অনেকেই বলে নীল রঙে তাকে খুবই ভালো লাগে ।
কেউ কেউ তাকে লক্ষ্য করছিল রুদ্রর নজর এড়ালো না সেটা ।
এতক্ষণ তো চলে আসার কথা ! অদূরে একটা টোটো এসে দাঁড়ালো । বনন্যা নামলো ।নীল রঙের একটা শাড়ি পরণে। ম্যাচিং গয়না । শ্যামলা মুখে এই হালকা সাজে ভারি মিষ্টি লাগছে ।
একটা ছায়া ঘেরা নির্জন জায়গা দেখে বসলো তারা। আশে পাশে এদিক ওদিক চিলতে রোদ পড়ে আছে ।
কেমন আছো? রুদ্র জিজ্ঞাসা করলো ।
ভালো । তুমি বলো তুমি ঠিক আছো? বাড়ির খবর ভালো সব?
হ্যাঁ।
বনন্যা শাড়ির আঁচলের প্রান্ত ভাঁজ করতে করতে একটু ইতস্তত হয়ে বললো কি বলবে তুমি রুদ্রপলাশ?
এই বছরের ফাল্গুনে আমায় বিয়ে করবে?রুদ্র সোজা তাকায়।
মানে?
বলো!
কি বলবো!
হ্যাঁ কি না?
জানিনা । বনন্যা রুমালে ঘাম মুছলো ।
পারফিউম আর পাউডারের একটা মিষ্টি সুবাস আসছে ওর শরীর থেকে ।
রুদ্র তুমি আমার অতীত সম্পর্কে কিছুই জানো না ।
কি জানবো? যে অতীতে আমার কোনো স্মৃতি নেই তা আমার জানার ইচ্ছা নেই ।আর কি জানবো !
বলবে তো অতীতে একজন প্রেমিক ছিল । চিট করেছিল তোমায় ,তাকে খুব ভালোবাসতে ।এখনও ভুলতে পারোনি। পুরুষ দের প্রতি বিশ্বাস নেই তাই!
রুদ্র এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো ।
অতীত থাক , বর্তমান তো নেই !
না সেসব বলবো না ।
তবে? রুদ্রর জিজ্ঞাসা তে বনন্যা ওর দিকে তাকালো ।শুনে ঘৃণা হবে হয়তো!
বলো শুনবো ।
একটু চুপ করে থাকলো বনন্যা। তার পর বলল নিস্তব্ধতা ভেঙে আমার তেরো বছর বয়সে আমি রেপড হয়েছিলাম ।
রুদ্র চমকে গেলো ।তাকালো ।আর কি বলে বনন্যা অপেক্ষা করতে লাগলো ।
এবং শুধু রেপড না তার জেরে আমায় ওই বয়সে প্রথম মাসেই অ্যাবর্শন করাতে হয় । আমার জীবনের বড়ো ভয়ঙ্কর অতীত।
আমারই এক বান্ধবীর কাকা ছিল ।
ওই ঘটনার পর আমরা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে চলে আসি পানাগড়ে। অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল বাবাকে বদলি নিতে , নতুন করে সব শুরু করতে !বাবা প্রাইমারি স্কুলের হেড স্যার ।
রুদ্র চুপ থাকে । তোমরা এর বিরুদ্ধে কিছু স্টেপ নাও নি?
নাহ ! সমাজের ভয় মানুষের ভয় পেয়েছিল বাবা মা ।রুদ্র একটা মেয়ে ধর্ষিতা হবার পর আবারো ধর্ষিতা হয় । মরে গেলেও হয় ।আদালতে হয় । মর্গে হয় । পুলিশের কাছে হয় ,সাংবাদিক দের কাছে হয় বার বার হয় । তার কোনো প্রাইভেসি থাকে না
মারা গেলেও তার যে একটা সম্মান থাকে ,দিতে হয় সেটা বোঝে না কেউ ।সব প্রাইভেসি ওপেন করে দেওয়া হয় বিচারের নামে ,আর পাবলিক সেগুলো চর্চা করে ।ভাবে না সে গুলো পড়ে তার মা বাবার মনের অবস্থা কি হয়! তাই চুপ থেকেছিল।
সেই ব্যক্তি আজও ঘুরছে তো ভালো মানুষ সেজে?
দেড় বছরের মাথায় মারা যায় একটা অ্যাক্সিডেন্টে । ঈশ্বর ই তাকে শাস্তি দিয়েছেন । গ্রামের সাথে যোগাযোগ নেই আর । যাই না ।অনেক কষ্ট নিয়ে ছেড়েছিলাম । গেলে ওই অতীত টা মন খারাপ করাবে !
ক্যারাটে শিখেছিলাম এই জন্যই ! বনন্যা থামলো ।
বাতাস যেন কেমন ভারী হয়ে উঠল । একটু দূরে কিছু মানুষ জন বিকালের ভ্রমণে রত। কেউ হাঁটছে ।বসে গল্প করছে কেউ কেউ । জলের এক গভীর শব্দ উঠে আসছে ড্যাম থেকে।
ঘৃণা হচ্ছে তো?
না ।কষ্ট হচ্ছে শুনে আমার !
এগুলো আর মনে এনো না বনি।
না আনতে চায়লেও আসে ।কিছু জখম থেকেই যায় । ভরে না।
আমায় বিয়ে করতে চেও না রুদ্র ।
কেনো ? পুরুষ কে ভয়?
পুরুষ তবু সয়ে গেছে ।পুরুষ নারী নিয়েই সমাজ সংসার । আমার বাবাও তো পুরুষই।
কিন্তু..
কি?
শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় ভয় !
আমায় ভয় পেও না বনি । সাথে আছি ।থাকবো। আর এই অতীত আমি জানলাম আজ ।এর পর এটা নিয়ে আর কথা হবে না কোথাও । কারো কাছে আর না ।
মানুষ এর পাস্ট দেখে বিচার আমি করিনা । কারো খারাপ সময় থাকে কিছু হয়ে যায় দুর্ঘটনা ! কেউ ভুল করে ।শুধরে নেয় ।শিক্ষা নেয় । শেখে।
জীবনের আরেক নাম শুধু জল না শিক্ষাও!
একটু থেমে রুদ্র বলে ,আমারও একটা অতীত আছে আজও তাড়া করে । নিজেকে কেমন অপরাধী লাগে
মাঝে মাঝে ডিপ্রেশন আসে ।
বনন্যা ওর দিকে পড়ে আসা রোদের মতো তাকায় ।
আমি তখন গাড়ি চালানো শিখছিলাম । লাইসেন্স তখনও হয়নি এমনি একদিন ড্রাইভার কে পাশে নিয়ে চালাচ্ছি । অল্প বয়স তখন ,কলেজে পড়ি। হঠাৎ একটা বাইক চলে আসে। কার দোষ জানিনা ।দুম করে এক শব্দ ।আমরাও আহত, কাঁচ ফুটে রক্তারক্তি আর বাইক আরোহী কে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।বাঁচানো যায়নি । বাবার ওপর মহলে একটু চেনা জানা থাকতে আর পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আত্মীয় থাকাতে আমার বিরুদ্ধে কেস হয়নি আর কিন্তু এক গ্লানি তে ভুগি আজও ।মনে হয় আমি কোনো মা বাবার লাঠি কেড়ে নিয়েছি । কোনো সন্তানের বট গাছ কোনো মহিলার সিঁথির সিঁদুর র মুছে দিয়েছি । তাদের সামনে দাঁড়াতে পারিনা । তবু আমি আজও যখনই বাড়ি আসি তাদের বাড়ির জন্য কিছু জিনিস কিনে নিয়ে যাই।
কখনও বাজার পত্র। সাংসারিক এটা ওটা । পুজোয় একটু জামা কাপড় ।
অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠায় মাসে মাসে পাঁচ হাজার করে । আমার শখ বাদ রাখি অনেক কিছুতে ।সেটা ওতে খরচ করি । তাঁর বৃদ্ধ বাবা মা আমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন ।নিয়তি মেনে নিয়েছেন তাঁরা ।বলেন কষ্ট পেও না বাবা। এইসব নিয়তি ।তুমি তো উপলক্ষ্য মাত্র ।আর তুমি যে ইচ্ছা করে করোনি আমরা বুঝেছি সেটা । তাঁদের সেই কথা গুলো আমার শক্তি ।শান্তি , স্বস্তি
সেই সময় বাবা এক লাখ টাকা দিয়েছিল পার্সোনাল।
বাবা ফুড ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে।
লোকটির কাপড়ের ছোট দোকান ছিল ।ওনার স্ত্রী যাঁকে আমি দিদি বলে ডাকি তিনি চালান কিন্তু সেই ভাবে কি পারেন স্বামীর মতো ! জানিনা । ওনাদের এক ছেলে আছে । তার পড়ার জন্য আমি ওই টাকা টা পাঠাই।
বনন্যা রুদ্রর দিকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকালো
আজ আমি এক নতুন মানুষ কে আবিষ্কার করলাম ।
নিজেকে অপরাধী ভেবো না রুদ্র ।শুধুই একটা দুর্ঘটনা মাত্র ।তুমি তো ইচ্ছা করে করোনি।
কথায় কথায় বিকাল গড়ালো ..
কমলা রং ছড়িয়ে সূর্য তার সেদিনের কাজ শেষের সংকেত দিতে লাগলো। একটু দূরে নৌকা বাঁধা আছে । পাখির ঝাঁক দল করে ফিরছিল বাসায় ।
সেই দিকে তাকিয়ে রইলো রুদ্র আর বনন্যা। চুপ করেছিল দুজনেই কিন্তু অন্তরে পরস্পরকে অনুভব করছিল ওরা ।
রাত্রে দুর্গাপুরে রজনী দির বাড়ির ওপরে একটা সুন্দর ঘরে শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে আসা ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে রাজীব কে এসএমএস করছিল রুদ্র । এই ঘরে এসি নেই কিন্তু তাতে অসুবিধা হচ্ছিল না ।ভালো লাগছিল রুদ্রর প্রাকৃতিক বাতাস ।
বাড়িতে রজনী দি,জামাইবাবু আর রজনীদির শাশুড়ি মা। রজনীদির ছেলে প্রীতম বাঁকুড়া তে মেডিক্যাল পড়ছে । তাই এখন নেই ।
রাজীব দা,তোর ওই ব্যাপার কতদূর এগোলো?
রজনী দিকে সব বললাম । আমি , রজনী দি,জামাইবাবু , রঞ্জনা দি ,মৈনাক দা , রঙ্গন দা উর্মি বৌদি ,রোজ সবাই আছি তো! তোর টা ম্যানেজ করে দেবো । মাসি মেসোমশাই কে রাজি করাবোই। রজনী দি যখন বিশেষ করে দায়িত্ব নিয়েছে ।
রাজীব লিখলো স্বাগতা অনেকটা নরম হয়েছে। তবে একেবারে খোলাখুলি কিছু জানায় নি কিন্তু ওর মা বাবা রাজি । তাঁরা আমায় স্নেহ করেন ।বলেছেন আমরা তো থাকবো না চিরকাল মেয়েটাকে আর নাতনি কে দেখো তুমি ।পাশে থেকো ।
তোদের ওপরে ভরসা আছে । যেসব ইস্যু আছে বিধবা ,এক সন্তানের মা , অ ব্রাহ্মণ তার ওপর বয়সে দু বছরের বড় সব গুলোই আর প্রবলেম লাগছে না।
বেশ রাজীব লিখলো এবার আমার টা মাসীকে বল মা বাবা মা বলতে !
কে সে?
তোর বাতিল করা মেয়েটি?
আরে। ডুবে ডুবে জল তাহলে খেলি! কিভাবে কি বল। না সেই ছবি দেখে ই পছন্দ !আলাপ হয়েছে ?
কোন পর্যায়ে প্রেম এখন?
"তারে আমি চোখে দেখিনি তার অনেক গল্প শুনেছি আর গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালোবেসেছি ।" রাজীব সুর ভাঁজলো।
রুদ্র হাসলো ।
ফোন করি রুদ্র তোকে এখন?
কাল করবো তোকে। আমি দুর্গাপুরে আছি রজনী দির বাড়ীতে। আজ পানাগড় গেছিলাম।
দাঁড়া বনি মেসেজ করছে ।
ওরে...
রুদ্র বনন্যার এসএমএস দেখলো ।
একটা সুন্দর সময় উপহার দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ । ফেরার সময় খাওয়া চাউমিন টার খুব টেস্ট ছিল
আইস ক্রিম টাও। এবং বাড়ি পৌঁছে দেবার জন্য কৃতজ্ঞতা । যদিও আমার চেনা রাস্তা এবং বাড়ি থেকে ঘড়ি ধরে মিনিট ২০ /২৫ তাও ...
তবে যে ডিসিশন নিতে যাচ্ছ আরেকটু ভেবো ।
আবেগ দিয়ে না বাস্তবতা বুঝে !
কারণ পরে আঘাত পেলে আমি কষ্টই পাবো ।
পুরুষ মানুষ কে বুঝিনা এত। যা দেখি খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতা নেই আমার । পুরুষ চিরকালই নারীদের মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ায় ।শরীরের ,মুখের ।সেটা তে ঘাটতি থাকলে বড়ো নিষ্ঠুরের মতো অন্য দিকে এগোয় ।আরেকজনের মন বোঝেনা ।তার ভালোবাসা যত্ন দেখেনা তখন । তাই ভেবো ভালো করে ।
টাইম নাও।
রুদ্র লিখলো যা ভাবার ভাবা হয়ে গেছে আমার ।মন চেঞ্জ করছিনা । আর সব পুরুষ কে এক ক্যাটাগরি তে ফেলো না । পুরুষ ও যত্ন চায় ।ভালোবাসা চায় ।সব পুরুষ নারীদের শরীর, মুখ দেখে ছোটে না । অন্য অনেক কিছুকে শ্রদ্ধা করে ।ভালোবাসে । রূপে খুব সুন্দরী অথচ ব্যবহার বাজে , অন্তর নেই মন নেই ব্যক্তিত্ব নেই বুদ্ধি নেই আসল বিদ্যা কি প্রকৃত শিক্ষা নেই নেই এদের কে দেখে গলে যায়না সব পুরুষের মন। কিছু জন আলাদাও হয় ।
আমি তোমায় শ্রদ্ধা করি ।সম্মান করি। তোমায় ভালবাসি বনি।
ও প্রান্ত চুপ ।মেসেজ সিন করেও নো রিপ্লাই
ভোর বেলা ঘুম ভেঙে গেলে ফোন টা হাতে নিলো রুদ্র।বনি উত্তর দিয়েছে ।
বেশ!ফাল্গুনে রাজি ।
এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস নিয়ে রুদ্রর কাছে ভালবাসা এলো খুব ভোরে।
----------------------------------------------
ঠিকানা - পাল্লারোড , পূর্ব বর্ধমান।