
কথাকাহিনি ৭৪ ।। এপ্রিল ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র
এপ্রিল ০১, ২০২৫
প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষের স্মৃতিচারণমূলক লেখা থেকে পূর্ব বাংলার বা বর্তমান বাংলাদেশের 'ছেড়ে আসা গ্রামের ' কথা পড়ে এক অনাবিল মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হচ্ছি। বরিশাল , মামার বাড়ি চাঁদপুরের কথা, যেখানে কবির জন্ম সেই শৈশব স্মৃতির কথা কবির লেখনীতে সজীব হয়ে উঠেছে। অবিভক্ত ওপার বাংলার স্মৃতিচারণ কবির লেখনীতে পড়তে পড়তে আমারও স্মৃতিতে উঠে এলো শৈশবে শোনা ওপারের গ্রাম বাংলার নানা গল্পগাঁথা। আমার পূর্ব পুরুষদের জন্মভিটে ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত কোটালিপাড়া পিঞ্জরী গ্রামে। আমার মা আর ঠাকুমার দেশের বা গ্রামের বাড়ি ছিল বরিশালে। ঠাকুরদা বড় যৌথ পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে পিঞ্জরী গ্রামের জমিদারি সেরেস্তায় তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। বাবার স্কুল জীবনের গল্প, গ্রাম বাংলার মুক্ত প্রকৃতির কোলে বড় হয়ে ওঠার গল্প আজও স্মৃতির পাতায় সজীব।আর ছিল বরিশাল আর ফরিদপুরের মানুষের স্বভাবগত ভালো- মন্দ নিয়ে ঠাকুরদা - ঠাকুমার কপট কাজিয়া । যাতে অনবরত ইন্ধন যোগাতাম আমরা সব ভাই-বোনেরা। আমাদের ঠাকুরদা, বাবা - কাকারা দেশভাগের পর চলে এলেন এপার বাংলা বা পশ্চিমবঙ্গে। আমাদের ভাই-বোনেদের জন্ম এপারেই। পঞ্চাশের দশকে কলকাতা শহর সংলগ্ন উদ্বাস্তু কলোনী অধ্যূষিত দমদম অঞ্চলে আমাদের বড় হয়ে ওঠা। খুব ছোটবেলায় হুগলি জেলার আরামবাগ সংলগ্ন চাঁপাডাঙগা নামে এক গ্রামে নিকট আত্বীয়ের বাড়িতে গিয়ে এপারের গ্রাম বাংলার রূপ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বিস্তীর্ণ ধানজমি , আলপথ, ধানের গোলা , গ্রামের বড় পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা দেখা আজও স্মৃতির পাতায় সজীব। আবার আশির দশকে বর্ধমান জেলার মেমারি ষ্টেশনে নেমে বাসযাত্রার পর আবার ছই লাগানো গরুর গাড়িতে চেপে গুলটৈ নামক এক গ্রামে পৌঁছেছিলাম এক বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে। গ্রাম বাংলায় গিয়ে বিয়ে দেখার অনাবিল আনন্দের অনুষঙ্গে মিশে ছিল সেখানকার মানুষের সহজ সরল আনন্দময় জীবনযাপন। ওপারের ছেড়ে আসা গ্রামের স্মৃতি বিজড়িত নানা গল্পের সঙ্গে এপারের গ্রাম বাংলা দেখার আনন্দময় স্মৃতিটুকুও ভাগ করে নিলাম।
========================
মানস কুমার সেনগুপ্ত
১৭/৮ আনন্দ মোহন বসু রোড, দমদম , কলকাতা ৭০০০৭৪. মোঃ ৮৯০২২১৭৭৮০.