
কুনজর
পার্থ প্রতিম দাস
রাত যত ছোটো হচ্ছে গরমটা ততোই বাড়ছে।রুমের মধ্যে ফুল স্পিডে ফ্যানটা ঘুরছে। তবুও গরমটা কমছেই না। রাত গভীর হতেই বাইরে গাড়ির শব্দ কমে এসেছে। প্রতুল, খোলা জানালা দিয়ে দেখলো, আকাশটা কোথাও নেই। বড় বড় বিল্ডিংএর ঝাঁ চকচকে আলোয় রাত্রি ছুটি নিয়েছে। রাস্তার ওপারে খোলা জানালার পর্দাটা হাওয়ায় উড়ছে। প্রতুলের ইচ্ছে হলো জানালার ওপারে কি আছে, তাই জানতে!
বাড়ির মধ্যে থাকা দূরবীন দিয়ে দেখতে লাগলো। দেখে ওই বাড়ির স্বামী স্ত্রী এখনো জেগে আছে।সোফায় বসে বসে গল্প করছে আর মাঝে মাঝে হাসছে।
প্রতুল দূরবীনটা নামিয়ে রাখে।
ওই পারে ভরপুর প্রেম আর এপারে প্রেমহীণ প্রতুল। প্রতুলের মনে মনে খুব হিংসে হলো। প্রতুল বলল, "সবার জীবনে প্রেম চলছে, যদি একাই থাকতে হবে তাহলে ভরা যৌবন দেওয়ার দরকার ছিল? শৈশবটাই ভালো ছিল।"
সকালে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে প্রতুলের ঘুম ভেঙে যায়। রাত্রে যে রাস্তাটা মায়াবী লাগছিল। এখন সেই রাস্তাটা লোক গিজগিজ করছে। প্রতুল রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। প্রতুলের বাবা বলল, "কোথায় যাচ্ছিস? ফ্যানটা অফ করে দিয়ে যা।"
প্রতুল ফ্যান অফ না করে বেরিয়ে যায়।
প্রতুল দেখল, ওই দম্পতিকে ঘিরে আছে সবাই। স্ত্রীর মৃতদেহ কোলে নিয়ে স্বামী ভীষণ কাঁদছে আর বলছে, "এভাবে ঘুমের মধ্যে ছেড়ে চলে যাবে বুঝতেও পারলাম না। তোমার শরীর ধড়ফড় করছিল। আর একটু জেগে থাকলে ভালো হতো।"
প্রতুল ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরলো।
প্রতুল বাড়ি ফিরে শুনল তার মা বাবার কথা। প্রতুলের বাবা বলছে, "কার কুনজর পড়ল কে জানে? ওদের অমন সোনার সংসার ভেসে গেল।"
প্রতুলের মা বলল, "ঠিক বলেছ। বৌটার মধ্যে এতটুকু রাগ হিংসা ছিল না। ভালো মানুষরাই আগে চলে যায়।"
প্রতুল রুমের মধ্যে ঢুকে ফ্যানটা অফ করে। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চোখ দেখতে থাকে। ততক্ষণে প্রতুলের চোখ লাল লাল ফুলে উঠেছে।
===========================
পার্থ প্রতিম দাস
আকন্দা, বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর