গল্প ।। ক্ষুদ্রতার ভয়ে ।। দীপক পাল
0
মে ০১, ২০২৫
ক্ষুদ্রতার ভয়ে
দীপক পাল
আজ থেকে প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগে আমি আর আমার অফিসের বন্ধু সমরদা ঠিক করলাম কাশ্মীরে বেড়াতে যাব। সমরদা ছিল mountaring institute এর একজন সদস্য। আজ আর সে বেঁচে নেই। আমরা সেই সময় ঠিক করেছিলাম যে যদি সুযোগ হয় তবে অমরনাথ ঘুরে আসব। সেইভাবে মোটামুটি তৈরী হয়ে গিয়েছিলাম। তখন থাকতাম আমি দুর্গাপুর। অক্টোবরের তিন তারিখ ছিলোদুর্গা ষষ্ঠই। দুপুর একটায় বেরিয়ে পড়লাম jammu tawai ধরতে। ট্রেন jammu পৌঁছুতে দেরি করায় আমরা প্রথম রাত পথে batoti-তে এক হোটেলে রাত কাটিয়ে ওই বাসেই সকাল ছটায় রওনা হলাম smrinagar -এর উদ্দেশ্যে। রাস্তার দুপাশে পাহাড়ের সারি পুরোপুরি দৃশ্যমান না হলেও নয়নাভিরাম বটে। একটু পরে সূর্য উঠলে তার কিরণ যখন ওই পাহাড় সারিতে পড়লো তখন পাহাড়ের মাথাগুলো ঝলমল করতে লাগলো। এই দৃশ্য যেনো রাজকীয় মনে হলো আমার। দুপুর বারোটার আগেই শ্রীনগর পৌঁছে গেলাম আমরা। আর তখন মনে পড়লো আজ কলকাতায় নবরাত্রি শুরু। আজ 6th Oct।
একটা হাউসবোট ভাড়া করলাম jhhilam-এ।
হাউসবোট-এর মালিক আব্দুল আর মুস্তাফার এত ভালো ব্যবহার এবং দেখতে এতো সুন্দর যে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তারাই বললো পহেল গ্রাম থেকে গেলে শিবলিঙ্গ দেখে ফিরতে পাঁচ ছ দিন লাগবে আর সোনমারগ দিয়ে গেলে তিন দিনের ব্যাপার। কিন্তু এও বললো মন্দির বন্ধ হয়ে গেছে 31st আগস্ট। তাই এখন যাওয়া খুব কঠিন ও ঝুঁকি পূর্ণ। আমরা স্থির করেছিলাম একবার ওই সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে একটু হেঁটে আসি ও দেখেও আসি।
হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য্য যে একবার মনপ্রাণদিয়ে উপভোগ করেছে সে হিমালয়ের আকর্ষণে বার বার ছুটে যাবেই। কখনো কখনো এই সৌন্দর্য্য ভয়ঙ্কর লাগে। আমি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলছিনা। এ এক অদ্ভুত ভয় যার কোনো ব্যখ্যা নেই। এই অকারণ ভয় আমি একবার পেয়েছিলাম কাশ্মীরে সোনমার্গ ভ্রমণে। গাইড বলেছিল ঐ স্পটে
গেলে আপনারা বরফ দেখতে পাবেন। কিন্তু আমি আর সমরদা ওই পথে না গিয়ে বাম দিকের লে সরক ধরে হাঁটতে থাকলাম। প্ল্যান ছিল শারবাল বালতাল হয়ে অমরনাথ যাওয়ার চেষ্টা করা। সেই মতো একটু আগে থেকে দেখে নেওয়া পথটা। তাই আমরা লে সড়ক ধরে শারবাল ক্রস করে এগোতে দেখি ইতস্তত মিলিটারি পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার ধারগুলো বেশ উঁচু। আমরা রাস্তার ধারে সেই উঁচু এক জায়গায় গিয়ে বসে পড়লাম।
আমাদের ঠিক পেছনে একজন মিলিটারি স্ট্যাচু হয়ে পাথরের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেনো একটু ভয় করে। কাঁধের ঝোলানো ব্যাগ থেকে আমরা আপেল আর কয়েকটা আখরোট খেয়ে ফিরে চললাম। ঠিক সেই সময় তলদেশে একটা চাপ অনুভব করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা একটু বেড়ে গেলো। লে সড়কের গায়েই একটুখানি আড়ালে খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ের গাবেয়ে জল পড়ে একটা ছোট্ট বহমান জলাশয় সৃস্টি করেছে। সেটা রাস্তা দিয়ে দেখা যায়না। সম্পূর্ণ আড়ালে। জলের উপর বড় বড় পাথর। একদম নিস্তব্ধ নিরিবিলি। চারিদিকে উঁচু উঁচু পাহাড় যেন আকাশ ছুঁয়ে আছে। সমরদা আমাকে ওই দিকটা দেখিয়ে দিতে আমি সেখানে গিয়ে ঢুকলাম। কি ভয়ঙ্কর নির্জন। পাহাড়ের গা বেয়ে জল পড়ার মৃদু আওয়াজ এটুকু জায়গার নিস্তব্ধতা যেনো বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা উঁচু পাথরে বসলাম। জানি সমরদা আমার খুব কাছেই আছে কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। আমার চোখ বারেবারে পাহাড়ের চুড়াগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে। তারা যেন চারিদিক দিয়ে আমায় গিলে খাবে বলে মনে হলো। এই বিশালত্বের মাঝে নিজেকে অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে হলো। ওপরে এক টুকরো আকাশ দেখে যেন আরও ভয় ঢুকল প্রাণে। প্রচণ্ড ভয় পেলাম। নেমে গেলাম পাথর থেকে। বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। সড়কে উঠতেই সমরদা বললো, ' কি কাজ হয়েছে?' বললাম, ' না।' 'কেন?' বললাম, 'জানিনা '।
আমরা যখন নির্দিষ্ট জায়গায় বাস ধরার জন্য পৌঁছে ছিলাম তখন দেখি সব যাত্রী ফিরে সিটে বসে আছে আর ড্রাইভার হেল্পার ও গাইড আধ ঘন্টা ধরে চিন্তিত হয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা মাফ চেয়ে নিয়ে বাসে উঠলাম।
এই পর্বে বলতে কোনও বাধা নেই যে আমাদের কিন্তু আর কোনোদিন অমরনাথ যাওয়া হয়নি।
_____________
Address :-
---------
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights
Block-8, Flat-1B,
D.H.H. Road. Kol-700104,
Mb: 9007139853
হাউসবোট-এর মালিক আব্দুল আর মুস্তাফার এত ভালো ব্যবহার এবং দেখতে এতো সুন্দর যে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তারাই বললো পহেল গ্রাম থেকে গেলে শিবলিঙ্গ দেখে ফিরতে পাঁচ ছ দিন লাগবে আর সোনমারগ দিয়ে গেলে তিন দিনের ব্যাপার। কিন্তু এও বললো মন্দির বন্ধ হয়ে গেছে 31st আগস্ট। তাই এখন যাওয়া খুব কঠিন ও ঝুঁকি পূর্ণ। আমরা স্থির করেছিলাম একবার ওই সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে একটু হেঁটে আসি ও দেখেও আসি।
হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য্য যে একবার মনপ্রাণদিয়ে উপভোগ করেছে সে হিমালয়ের আকর্ষণে বার বার ছুটে যাবেই। কখনো কখনো এই সৌন্দর্য্য ভয়ঙ্কর লাগে। আমি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলছিনা। এ এক অদ্ভুত ভয় যার কোনো ব্যখ্যা নেই। এই অকারণ ভয় আমি একবার পেয়েছিলাম কাশ্মীরে সোনমার্গ ভ্রমণে। গাইড বলেছিল ঐ স্পটে
গেলে আপনারা বরফ দেখতে পাবেন। কিন্তু আমি আর সমরদা ওই পথে না গিয়ে বাম দিকের লে সরক ধরে হাঁটতে থাকলাম। প্ল্যান ছিল শারবাল বালতাল হয়ে অমরনাথ যাওয়ার চেষ্টা করা। সেই মতো একটু আগে থেকে দেখে নেওয়া পথটা। তাই আমরা লে সড়ক ধরে শারবাল ক্রস করে এগোতে দেখি ইতস্তত মিলিটারি পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার ধারগুলো বেশ উঁচু। আমরা রাস্তার ধারে সেই উঁচু এক জায়গায় গিয়ে বসে পড়লাম।
আমাদের ঠিক পেছনে একজন মিলিটারি স্ট্যাচু হয়ে পাথরের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেনো একটু ভয় করে। কাঁধের ঝোলানো ব্যাগ থেকে আমরা আপেল আর কয়েকটা আখরোট খেয়ে ফিরে চললাম। ঠিক সেই সময় তলদেশে একটা চাপ অনুভব করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা একটু বেড়ে গেলো। লে সড়কের গায়েই একটুখানি আড়ালে খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ের গাবেয়ে জল পড়ে একটা ছোট্ট বহমান জলাশয় সৃস্টি করেছে। সেটা রাস্তা দিয়ে দেখা যায়না। সম্পূর্ণ আড়ালে। জলের উপর বড় বড় পাথর। একদম নিস্তব্ধ নিরিবিলি। চারিদিকে উঁচু উঁচু পাহাড় যেন আকাশ ছুঁয়ে আছে। সমরদা আমাকে ওই দিকটা দেখিয়ে দিতে আমি সেখানে গিয়ে ঢুকলাম। কি ভয়ঙ্কর নির্জন। পাহাড়ের গা বেয়ে জল পড়ার মৃদু আওয়াজ এটুকু জায়গার নিস্তব্ধতা যেনো বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা উঁচু পাথরে বসলাম। জানি সমরদা আমার খুব কাছেই আছে কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। আমার চোখ বারেবারে পাহাড়ের চুড়াগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে। তারা যেন চারিদিক দিয়ে আমায় গিলে খাবে বলে মনে হলো। এই বিশালত্বের মাঝে নিজেকে অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে হলো। ওপরে এক টুকরো আকাশ দেখে যেন আরও ভয় ঢুকল প্রাণে। প্রচণ্ড ভয় পেলাম। নেমে গেলাম পাথর থেকে। বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। সড়কে উঠতেই সমরদা বললো, ' কি কাজ হয়েছে?' বললাম, ' না।' 'কেন?' বললাম, 'জানিনা '।
আমরা যখন নির্দিষ্ট জায়গায় বাস ধরার জন্য পৌঁছে ছিলাম তখন দেখি সব যাত্রী ফিরে সিটে বসে আছে আর ড্রাইভার হেল্পার ও গাইড আধ ঘন্টা ধরে চিন্তিত হয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা মাফ চেয়ে নিয়ে বাসে উঠলাম।
এই পর্বে বলতে কোনও বাধা নেই যে আমাদের কিন্তু আর কোনোদিন অমরনাথ যাওয়া হয়নি।
_____________
Address :-
---------
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights
Block-8, Flat-1B,
D.H.H. Road. Kol-700104,
Mb: 9007139853