Click the image to explore all Offers

গল্প ।। প্রদ্যুম্ন - মায়াবতীর প্রেমকথা ।। মিঠুন মুখার্জী

 


প্রদ্যুম্ন - মায়াবতীর প্রেমকথা

   মিঠুন মুখার্জী 


আজ কলিযুগে দাঁড়িয়ে দ্বাপর যুগের এক ভালোবাসার কাহিনী শোনাব, যা অনেকেরই অজানা। কলিযুগের ভালোবাসার সঙ্গে দ্বাপর যুগের ভালোবাসার অনেক পার্থক্য আছে। এখনকার ভালোবাসা আর দ্বাপর যুগের ভালোবাসার মধ্যে দিনরাত্রের পার্থক্য। তখন ভালবাসায় ত্যাগ ছিল আর এখন ভোগ। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কথা সকলেই জানে। কিন্তু আজ যাদের প্রেমের কথা ব্যক্ত করব তাদের প্রেমের কাহিনী সর্বজনবিদিত নয়। কৃষ্ণ পুত্র প্রদ্যুম্ন ও সম্বর অসুরের পত্নী মায়াবতী। পূর্বজন্মে এরা ছিলেন কামদেব ও তার পত্নী রতি। দুজনেরই কিছু মনে ছিল না। 
       পূর্ব নির্ধারিত হিসাবে কৃষ্ণ ও রুক্মিণীর পুত্র প্রদ্যুম্ন সম্বর অসুরের বংশ ধ্বংস করবে বলে দেবতারা ঘোষণা করেছিলেন। অসুর সম্বর সেটি জানতেন। তাই প্রদ্যুম্ন জন্মের পর অসুর সম্বর তাকে অপহরণ করে একটি সমুদ্রে ফেলে দেন। শিশু প্রদ্যুম্নকে একটি রুইমাছ ভক্ষণ করে। সেই মাছটি জালে ধরা পড়ে এবং খাবার জন্য সেই অসুরের বাড়িতেই আনা হয়। মাছটি কাটতে গিয়ে সম্বরের পত্নী মায়াবতী মাছের পেটের ভিতরে একটি পুত্র শিশুকে দেখতে পান। তার কোনো সন্তান ছিল না। তাই সেই শিশুটিকে সে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক চেষ্টা করে সম্বর অসুরকে  তিনি রাজি করান। তবে সম্বর অসুরের একটি শর্ত ছিল তার কাছে। ওই শিশুটিকে সে যেন কোনো দিন তার সামনে নিয়ে না আসে। তাতেই মায়াবতী রাজি হলেন। 
      এদিকে কৃষ্ণ পত্নী রুক্মিণী সন্তানকে না দেখতে পেয়ে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন। তিনি প্রচন্ড কান্না করতে থাকেন। শ্রীকৃষ্ণকে তার সন্তানকে ফিরিয়ে এনে দিতে বলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও দ্বারকাতে প্রদ্যুম্নকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দিব্যদৃষ্টি দিয়ে প্রদ্যুম্নের অবস্থান দেখতে পান। তিনি রুক্মিণীকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন--- " আমরা সকলেই তো প্রদ্যুম্নকে খুঁজছি, খুব তাড়াতাড়ি তাকে খুঁজে পেয়ে যাব। তুমি কান্না করো না। নারীদের কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। তাছাড়া বলরাম দাদা তো আমাদের সঙ্গে আছেন। না পাওয়া গেলে আমরা দুজন মিলে ঠিক প্রদ্যুম্নকে খুঁজে বের করবই।"
        কিন্তু সময় জলের মতো বয়ে যায়। প্রদ্যুম্নকে কোথাও পাওয়া যায় না। সমগ্ৰ দ্বারকায় একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে। নগরবাসীর সকলের কাছে এই খবর পৌঁছে যায়। রুক্মিণী বিছানা নেন। কেঁদে কেঁদে তার চোখের জল যেন ফুরিয়ে যায়। সে একেবারে পাথরের মতো হয়ে যায়। কারো সাথে কোনো কথা বলেন না, ঠিকঠাক খাবার খান না। দ্বারকার রাজপ্রাসাদে রাজবৈদ্যের আবির্ভাব ঘটে। তিনি রুক্মিণীকে ভালো ভাবে দেখে ঔষধ দেন এবং শ্রীকৃষ্ণ - বলরামকে বলেন--- " উনি সন্তান হারানোর জন্য মনে খুব আঘাত পেয়েছেন। স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। সবথেকে ভালো হতো উনার সন্তানকে যদি উনার কোলে ফিরিয়ে দেওয়া যেত।" রাজ বৈদ্যর কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম চুপ করে থাকেন। তারা দুজনেই জানতেন প্রদ্যুম্ন সম্বর অসুরকে বধ করার জন্যই জন্ম নিয়েছেন। তাই যতদিন না সেটা পূরণ হচ্ছে ততদিন  প্রদ্যুম্ন দ্বারকায় ফিরবে না। সব জেনেও  বলেন --" আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করছি না। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি  প্রদ্যুম্নকে ফিরে পাওয়া যাবে। আর যে ওকে নিয়ে গেছে তাকে চরম শাস্তি দেব আমরা।"
     এদিকে মায়াবতী নিজের সন্তান জ্ঞানে পূর্ব জন্মের স্বামীর লালন - পালন করতে থাকেন। ধীরে ধীরে সে বড় হয়ে উঠতে থাকে। খেলাধুলা থেকে শুরু করে লালন-পালনকারী মায়ের সঙ্গে খুনসুঁটি করে সে। এক মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন মায়াবতী। সম্বর অসুর মনে করেন তিনি তার বংশের ধ্বংসকারীকে হত্যা করেছেন। তিনি নিশ্চিন্তে থাকেন। কিন্তু তার পরিবারেই যে তার ধ্বংসকারী বেড়ে উঠছিল সেটা সে কোনোভাবেই টের পান নি। মায়াবতীও সন্তানবৎ ভালোবাসা দিতে থাকেন। কিন্তু এই সম্পর্ক যে কীভাবে অন্যপথে ঘুরে যাবে তা প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতী কেউই টের পায় নি।
     সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন সুপুরুষ যুবকে পরিনত হন প্রদ্যুম্ন। তার প্রতি মায়াবতীর মাতৃপ্রেম জেগে ওঠে যেমনি, তেমনি কোনো এক মুহূর্তে প্রদ্যুম্নের প্রেমে পড়ে যান তিনি। কিন্তু এই পাপ কাজ থেকে তিনি বিরত থাকেন। সন্তানসম প্রদ্যুম্নের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেন না। পাপবোধে ভোগেন। তিনি ভাবেন --- " মা হয়ে এমন চিন্তা ভয়ানক পাপ। আমি কিভাবে এমন নোংরা চিন্তা করছি তা বুঝতে পারছি না। হে প্রভু আপনি আমায় এই সমস্যা সমাধানের পথ বলে দিন।" এই পাপ চিন্তার জন্য মায়াবতী আত্মহত্যার পথ খুঁজে নেন। এমন সময় মায়াবতীর সামনে এসে হাজির হন নারদ মুনি। তিনি মায়াবতীকে তার জন্মের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করান। তিনি বলেন --- " হে মায়াবতী, তোমার আত্মহত্যার কোনো প্রয়োজন নেই। যে চিন্তা তোমাকে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে বাধ্য করেছে, সে চিন্তা পাপ মনে হলেও তোমার ক্ষেত্রে অন্যায় নয়। তুমি তোমার ও প্রদ্যুম্নের পূর্ব জন্মের সম্পর্কে অবগত নও। তাই এমন পাপবোধে ভুগছো। প্রদ্যুম্ন ছিলেন গত জন্মের কামদেব ও তুমি ছিলে তার পত্নী রতি। মহাদেবের ধ্যানে তোমরা দুজন বিঘ্ন ঘটিয়েছিলে। তাই তার রোষে তোমার স্বামী মদন দেব ভস্মীভূত হয়েছিলেন। তোমরা জন্মগ্ৰহণ করেছ সম্বর অসুরকে বধ করার জন্য।" নারদ মুনির কাছ থেকে মায়াবতী তার ও প্রদ্যুম্নের প্রকৃত পরিচয় জানার পর প্রদ্যুম্নের প্রতি তার ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। এরপর থেকে প্রদ্যুম্নের প্রতি প্রেমের দৃষ্টি দিয়ে মায়াবতী সর্বদা তাকাতেন। তাকে স্পর্শের মধ্যে মাতৃসুলভ ভাবের পরিবর্তে প্রেমিকার ভাব বেশি লক্ষ করা যেত। প্রদ্যুম্নও তার পালিত মায়ের স্পর্শের মধ্যে একটু অন্যরকম অনুভূতি উপলব্ধি করতে লাগে। মায়াবতীর সঙ্গে প্রদ্যুম্নের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। মায়াবতী প্রদ্যুম্নের কাছে তার প্রেম নিবেদন করেন। প্রদ্যুম্ন বিষয়টি ভালোভাবে নেন না। তখন মায়াবতী বুঝতে পারেন প্রদ্যুম্ন যেহেতু তাদের প্রকৃত পরিচয় কিছুই জানে না, সেহেতু এই প্রেম নিবেদন তার কাছে একটি বিরাট ধাক্কা হয়ে উঠেছে। তাই ওকে নারদ মুনির বলা পূর্ব জন্মের কথা ও এই জন্মে তাদের জন্মানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনি অবগত করা প্রয়োজন। তারপর সে প্রদ্যুম্নকে তাদের প্রকৃত পরিচয় ও এই জন্মে পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্য জানান। প্রদ্যুম্ন যখন জানতে পারেন তিনি কামদেব ও তার পালিত মা মায়াবতী রতি এবং তার জন্ম সম্বর অসুরকে বিনাশ করার জন্য, তখন সম্পর্কের জটিলতার সমস্ত সংশয় তার কেটে যায়। প্রদ্যুম্নও মায়াবতীর অসাধারণ রূপের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেম নিবেদন করেন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তাদের দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখনও সম্বর অসুর কিছুই জানতে পারেন না।
এদিকে একযুগ অতিক্রম হওয়ায় দ্বারকাতে একটা শোকের ছায়া নেমে আসে। রুক্মিণী প্রতিনিয়ত পুত্র হারানোর শোক অনুভব করেন। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে তিনি বলেন --- " হে স্বামী, আমি যে আর এই পুত্র হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। এ কেমন ভাগ্য আমার। আপনি তো পরম পুরুষ। এ জগতের সব কিছুই আপনার জানা। আমার এই শোক নিবারণের কি কোনো উপায় নেই?" রুক্মিণীর দুঃখ শ্রীকৃষ্ণ আর সহ্য করতে পারেন না। তিনি তার কাছে প্রদ্যুম্নের এই মর্ত্যে আবির্ভাবের কারণ জানিয়ে দেন। তিনি বলেন --- " প্রিয় রুক্মিণী, আমাদের সন্তান প্রদ্যুম্ন যেখানে আছে খুব ভালো আছে। সেই ছোট্ট ছেলেটি আজ এক সুন্দর যুবকে পরিনত হয়েছে। তার এখানে আসার উদ্দেশ্য প্রায় সমাপনের কাছে। তার উদ্দেশ্য সফল হলেই সে দ্বারকাতে ফিরে আসবে।" এরপর তিনি রুক্মিণীকে দিব্যদৃষ্টি দান করেন। রুক্মিণী তার নাড়ি ছেঁড়া ধন প্রদ্যুম্নকে দেখতে পান। তিনি দেখেন-- "প্রদ্যুম্ন একটি উপবনে মায়াবতীর সঙ্গে বসে আছে। দুজনেই খুব হাসছে। দুজনের মধ্যে প্রেমালাপ চলছে। মাঝে মাঝে দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করছে। অপরুপ সুন্দর তার পুত্র। তাদের এই আচরণ দেখে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বলেন-- " হে স্বামী, আমার পুত্রকে বারংবার আলিঙ্গন করছে এই নারীটি কে?  আমার পুত্রের থেকে এ যে অনেক প্রবীন। তাছাড়া তার আলিঙ্গনের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকাসুলভ আভাস পাচ্ছি আমি। ও কোনো ভ্রমের মধ্যে পতিত হয় নি তো!" মায়ের মন, সন্তানের জন্য এমনটি হওয়া স্বাভাবিক। শ্রীকৃষ্ণ এই সময় বলেন --- "ও প্রদ্যুম্নের পালিত মাতা। তবে পূর্ব জন্মে প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতী স্বামী - স্ত্রী ছিলেন। তোমার পুত্র ছিলেন কামদেব ও এ জন্মের পালিত মাতা মায়াবতী ছিলেন তার পত্নী রতি। এরা দুজন এখন এদের পূর্ব জন্মের ইতিহাস জানে এবং এজন্মের উদ্দেশ্যে সম্পর্কেও অবগত। তাই দুজন প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। একে অপরকে ছাড়া একেবারে অপূর্ণ। তোমার পুত্রবধূ হয়ে ওই মায়াবতী এখানে আসবে ভবিষ্যতে।" পুত্রকে বহু বছর পর দেখতে পাওয়ায় আনন্দে দুচোখে অশ্রু নেমে আসে রুক্মিণীর। পুত্র প্রদ্যুম্নকে কাছে পাওয়ার জন্য এক মুহুর্ত বিলম্ব করতে চাইছিল না তার মন। কিন্তু সময়ের কাছে আমরা সকলে বাঁধা পড়ে আছি। সময়ের আগে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। কিছু সময় পর রুক্মিণী সব ভুলে যান। অর্থাৎ বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ সব ভুলিয়ে দেন। রুক্মিণী পুনরায় পুত্র শোকে বিভোর হয়ে থাকেন। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ তাকে সব ভুলিয়ে দিয়েছিলেন এই কারণে যে, সে পুত্রের থেকে দূরে থাকতে পারবেন না। তাছাড়া তখনও সম্বর অসুরের নিধনের কিছুটা সময় বাকি ছিল।
এদিকে প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতীর সম্পর্ককে সম্বর অসুর সন্দেহের চোখে দেখতে থাকেন। তিনি প্রথমে তাঁদেরকে কিছুই বলেন নি। প্রথমে নিজের চোখের ভুল বলে মনে করেছিলেন তিনি। তিনি ভেবেছিলেন -- " মায়ের সঙ্গে কেউ খারাপ কোন সম্পর্ক গড়ে না। মায়াবতীর প্রদ্যুম্নের প্রতি প্রবল স্নেহ থাকায় হয়ত‌ সন্তান জ্ঞানে আলিঙ্গন করেছেন। এই ব্যাপারে বেশি কিছু ভাবার কারণ নেই। কিন্তু তবু যেন সম্বর অসুরের মনে কু ডাকতে থাকে।  তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের দুজনকে লক্ষ করেন। একদিন মায়াবতী ও প্রদ্যুম্নকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখে নেন সম্বরাসুর। তিনি যাদু শক্তিতে খুবই পারদর্শী ছিলেন। প্রদ্যুম্নের ও মায়াবতীর পূর্বজন্মের প্রকৃত পরিচয় তিনি তার যাদুশক্তির দ্বারা জানতে পারেন। তিনি প্রচন্ড রেগে যান যখন বুঝতে পারেন তার মৃত্যুর দূত মরে নি, বেঁচে আছে। এরপর প্রদ্যুম্নকে তিনি হালকা ভাবে নেন নি। তাকে হত্যা করার জন্য গভীর পরিকল্পনা করেন। এদিকে প্রদ্যুম্ন আর বিলম্ব না করে সম্বর অসুরকে বধ করার উদ্যোগ নেয়। তাকে এই বিষয়ে সাহায্য করেন মায়াবতী। মায়াবতীও সম্বর অসুরের কাছ থেকে একসময় যাদুবিদ্যা শিখেছিলেন। প্রদ্যুম্নের সঙ্গে সম্বর অসুরের যুদ্ধ শুরু হলে মায়াবতী সম্বর অসুরের কাছ থেকে শেখা যাদুবিদ্যা তার উপরই প্রয়োগ করেছিলেন। প্রদ্যুম্ন ওরফে কামদেব তার দৈবিক ক্ষমতা  একের পর এক প্রয়োগ করতে থাকে অসুরের ওপর। এক মহাযুদ্ধ হয় দুজনের মধ্যে । শেষমেষ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্বর অসুরকে প্রদ্যুম্ন বধ করে। আকাশ থেকে দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করেন। কামদেব ও রতির এই জন্মে প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতী রূপে জন্মগ্ৰহণের উদ্দেশ্য সফল হয়।
সম্বর অসুরকে বধ করার ফলে তার রাজ্য ও পত্নী মায়াবতী প্রদ্যুম্নের হয়। সে সেই পাপের নগরী ত্যাগ করে মায়াবতীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের রাজ্যে অর্থাৎ দ্বারকা নগরীতে ফিরে আসে। যদিও জ্ঞান হওয়ার পর  থেকে সে জানত সম্বর অসুর তার পিতা ও মায়াবতী তার মা। কিন্তু মায়াবতী যখন তাদের প্রকৃত পরিচয়ের কথা প্রদ্যুম্নকে জানিয়েছিলেন তখন তাকে বলেন তিনি কার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। ফলে তার প্রকৃত পিতা - মাতার পরিচয় সে জানত। সে মায়াবতীকে সঙ্গে নিয়ে দ্বারকায় ফিরে আসে। 
দ্বারকায় যেদিন প্রদ্যুম্ন মায়াবতীকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসে সেদিন সকালে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর প্রথম পত্নী রুক্মিণীকে বলেন ---- " আজ তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। তোমার ছেলে প্রদ্যুম্ন তার হবু পত্নী মায়াবতীকে সঙ্গে নিয়ে আজই দ্বারকায় আসছে। তোমার ছেলে তার জীবনের উদ্দেশ্যে সফল হয়ে এতোবছর পর বাড়ি ফিরছে। তাকে বরণ করার জন্য তোমরা বরণডালা সাজাও। " স্বামীর মুখ থেকে এই সুসংবাদ পেয়ে রুক্মিণী আনন্দে কি বলবেন আর কী করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। সারা বাড়িতে একটা আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয়। মা রুক্মিণী সকলকে জানিয়ে দেন তার পুত্র প্রদ্যুম্ন এতদিন পর দ্বারকায় ফিরছে। তার দুচোখে আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ে। বলরাম সমগ্ৰ দ্বারকায় ঢোল পিটিয়ে জানিয়েদেন ---- "আজ আমার ভাই শ্রীকৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন দীর্ঘদিন বাদে দ্বারকায় ফিরে আসছে। তার আসার উপলক্ষে আগামী দিন এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে সমস্ত দ্বারকাবাসীর মিলিত হওয়ার ও মধ্যাহ্নভোজনের জন্য স্বয়ং দ্বারকাদেশ আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আশা করব আপনারা সকলে আগামীকাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমণ্ডিত করবেন।"
সকাল এগারোটায় প্রদ্যুম্ন অর্থাৎ কামদেব ও মায়াবতী ওরফে রতি দ্বারকায় এসে উপস্থিত হন। রুক্মিণী ও আরো কয়েকজন নারী মিলে তাদের দুজনকে বরণডালা নিয়ে বরণ করেন। তারা দুজন এই সমস্ত আয়োজন দেখে অবাক হয়ে যায়। এতদিন পর সন্তানকে কাছে পেয়ে মা রুক্মিণী জড়িয়ে ধরেন। দুচোখে তার জল। এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম তাকে জড়িয়ে ধরেন। প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতী সমস্ত গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করেন। পরদিন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মহাজাকজমকভাবে একটি অনুষ্ঠান হয়। দ্বারকার সমস্ত সাধারণ মানুষেরা পেটভরে দুপুরের খাবার খান। শ্রীকৃষ্ণ তার দৈবিক শক্তির দ্বারা মায়াবতীকে নবযৌবনায় পরিণত করেন। মায়াবতী তার অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যান। 
এই অনুষ্ঠানের মাস দুয়েক পর শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্মিণী প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতীর চারহাত এক করে দেন। সমস্ত দ্বারকাবাসী দুচোখ দিয়ে তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হন। প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতীর ভালোবাসা আরও গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে ওঠে। তাদের এই বিরল ভালোবাসার গল্প শুনে অনেক নিন্দুক নিন্দা করেন। তাতে তাঁদের দুজনের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। কারণ তারা দুজনই তাঁদের প্রকৃত পরিচয় ও এই জন্মের কারণ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাছাড়া প্রেম কখনো বয়স দেখে না, দেখে না সম্পর্ক। ভালোবাসাটাই সবার উপরে। যুগে যুগে সব বাঁধাকে পিছনে ফেলে একে অপরকে ভালোবেসে গেছেন প্রেমিক - প্রেমিকেরা। প্রদ্যুম্ন ও মায়াবতী এমন প্রেমই করেছিল।

====================

মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.