ধারাবাহিক উপন্যাস ।। মাধব ও মালতি (সাত) ।। সমীরণ সরকার
0
জুন ০১, ২০২৫
ছবিঋণ - ইন্টারনেট
মাধব ও মালতি
সমীরণ সরকার
(পূর্বকথা: রাজপুর একটি প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম। ওই গ্রামের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডার। ওই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা হরপ্রসাদ সরকার আর তাঁর স্ত্রী পদ্মাবতী প্রায় পনেরো বছর আগে তারকেশ্বরে পুজো দিতে গিয়ে অনাথ ব্রাহ্মণ বালকের দেখা পেয়েছিলেন। তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন রাজপুরে। বালকটির হাতে উল্কি দিয়ে নাম লেখা ছিল 'মাধব'। মাধব এখন ২২ বছরের যুবক। সে এখন মিষ্টির দোকানটি দেখাশোনা করে।
বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে দশ বিঘা জায়গার উপরে 'চৌধুরী ভিলা' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রতাপ নারায়ণ চৌধুরী।
প্রতাপ নারায়ণের পুত্র বিত্তশালী ও রাজনীতিবিদ কনক নারায়ণের একমাত্র সন্তান মানবেন্দ্র নারায়ণ মাত্র আঠারো বছর বয়সে 'চৌধুরী ভিলার' পুরনো রাঁধুনি আশালতার বাল বিধবা সুন্দরী কন্যা কুড়ি বছরের পূর্ণিমার প্রেমে পড়লো। যদিও তার আগেই কনক নারায়ণের মা বিধুমুখী, তাঁর পৌত্র মানবেন্দ্র নারায়ণের সঙ্গে তাঁর সইয়ের নাতনি চোদ্দ বছরের হৈমন্তীর বিয়ে দিয়েছিলেন।
পূর্ণিমার সঙ্গে মানবেন্দ্র নারায়ণের সম্পর্কের কথা জানার পরেই অবস্থা সামাল দিতে বিধুমুখী তাঁর পৌত্র মানবেন্দ্র নারায়ণ কে সঙ্গে নিয়ে পিত্রালয় গড়বেতায় গেলেন, তাঁর মাকে দেখার অজুহাতে।)
পর্ব - সাত
হঠাৎ বিধুমুখী সেখানে যাওয়ায় তাঁর পিত্রালয়ের সবাই বিস্মিত হলেও মুখ ফুটে বিধুমুখী কে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেননি করে শুয়ে আছিস।
বিধুমুখী দেবীর বড় দাদা তারাপ্রসাদ ভট্টাচার্য গড়বেতার সুবিখ্যাত সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর পালি অনুযায়ী ওই মন্দিরের পূজোর কাজকর্ম সামলাতেন তিনি। ওই কাজের অবসরে প্রায় বারোমাস তিনি গড়বেতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন পূজায় পুরোহিতের কাজ করতেন। কাজেই সারাদিনের মধ্যে তাঁর অবসর ছিল খুব কম। বিধুমুখী দেবীর মেজ ভাই শংকরী প্রসাদ পারিবারিক জমি চাষাবাদ এর কাজ দেখাশোনা করতেন বলে তিনিও সময় পেতেন খুব কম। সেই তুলনায় বিধুমুখী দেবীর কনিষ্ঠ ভাই অম্বিকা প্রসাদ তাঁর পাঠশালা চালানোর ফাঁকে গ্রামে সাংস্কৃতিক কাজকর্ম করতেন। বিধুমুখী এই ভাইটিকে বুদ্ধিমান মনে করতেন এবং তাঁকে ভরসা করতেন।
কোন উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়া হঠাৎ বিধুমুখীর পিত্রালয়ে আগমনের প্রকৃত কারণ জানার জন্য তাঁর ভ্রাতৃজায়ারা মনে মনে প্রচন্ড কৌতুহলী হলেও বাইরে মনের ভাব প্রকাশ করতে সাহসী হননি। তাঁরা কিন্তু বিষয়টি নিজ নিজ স্বামীর কানে তুলতে ভুল করলেন না । তারাপ্রসাদ সব কথা শুনে তাঁর স্ত্রী মৃন্ময়ীকে বললেন, শুনলে না বিধুমুখী বলল , মায়ের জন্য তার মন খারাপ করছিল বলে মাকে দেখতে এসেছে। আর নাতিকে ছেড়ে থাকতে পারে না বলে তাকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। যাইহোক বাপু, বিধুমুখী যে কারণেই এখানে আসুক না কেন, ওদের যথাযথ যত্নের যেন কোন ত্রুটি না হয়। আর এ সংসারের বড়বৌ হিসাবে সেটা দেখা তোমার কর্তব্য। মৃন্ময়ী চুপ করে গেলেন।
মেজ বউ সত্যবতী তার স্বামী শংকরী প্রসাদের কানে কথাটা তুলতে গিয়ে তিরস্কৃত হলেন। কারণ শংকরীপ্রসাদ ছিলেন খুব সহজ সরল মানুষ। পরনিন্দা পরচর্চা বা ওই ধরনের আলোচনা তার একেবারে পছন্দ নয়।
ছোট বউ লাবণ্যপ্রভা খুব কৌশলে তার স্বামী অম্বিকা প্রসাদের কানে কথাটা তুললেন।
বিষয়টি অম্বিকাপ্রসাদের মনে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল। এখন স্ত্রীর মুখে একই কথা শুনে তাঁর কৌতুহল তীব্র হলো।
এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পরে একদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর অম্বিকা প্রসাদ সোজাসুজি তাঁর দিদিকে জিজ্ঞাসা করলেন, একটা কথা বলবো দিদি?
-----হ্যাঁ ,বল ভাই।
-----কথাটা তুমি অন্যভাবে নিও না দিদি!
-----অতো কিন্তু না করে তুই বলনা ,কী বলবি।
-----আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আমাদের নাতি মানবেন্দ্র নারায়ণ ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।
-----কেন তোর এরকম মনে হচ্ছে কেন?
-----দেখো দিদি, তুমি জানো যে আমাদের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো নয়।
তবু তার মধ্যেই আমাদের বৌদিরা মানবেন্দ্র নারায়ণের জন্য যথাসাধ্য ভালো পদ রান্না করার চেষ্টা করে। মেজদা মাঠে যাওয়ার আগে সকালবেলায় জেলে পাড়ায় নিয়ে বড় মাছ নিয়ে আসে মানবের জন্য।। হ্যাঁ, আমি মানছি যে,
চৌধুরী ভিলায় মানবেন্দ্র নারায়ণ বা তোমাদের জন্য হয়তো অনেক ভালো ভালো রান্না হয়, যেটা জোগাড় করার সাধ থাকলেও আমাদের সে
সাধ্যি নেই। তবুও.....!
-----তুই কি বলতে চাইছিস ঠিক, সোজাসুজি বলতো ভাই।
------আমি জানতে চাইছি যে, কোন কারণে কি মানবেন্দ্র নারায়ণের মনটা ভালো নেই? ভাতের থালার সামনে নিয়ে চুপ করে বসে থাকে ও। জলখাবার খাওয়ার সময়ও ঠিক তাই করে। ভালো করে কোন খাবারটাই মুখে তোলে না ও।
এরকম করলে তো ওর শরীর খারাপ হয়ে যাবে। মনে হয় সব সময় কী যেন ভাবছে ও। তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে দিদি, তো আমাকে সবটা খুলে বল।
আমি ওকে গ্রামে খেলাধুলা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে ওর মনটা হালকা করার চেষ্টা করব। আচ্ছা দিদি, তুমি নাতিকে নিয়ে এলে এখানে , নাতবৌকে অনলে না .কেন?
-----ও এখন বাপের বাড়িতে আছে।
-----আচ্ছা! তার জন্য আমাদের নাতিবাবুর মন খারাপ হয়নি তো?
----না না, ওসব কারণ নয়।
------তাহলে?
----ব্যাপারটা একান্ত গোপনীয়।
অম্বিকা প্রসাদ রহস্যের গন্ধ পেয়ে বললেন, তোমার যদি বলতে ইচ্ছে না করে তো বোলো না আমাকে। আমি সেসব শুনেই বা কি করবো বলো?
-----বেশ তাহলে শোন। তবে আমি যা তোকে বলবো তুই কিন্তু কাউকে বলতে পারবি না ভাই ।আমার মাথার দিব্যি রইল।
------তুমি বারণ করলে আমি কাউকে কিছু বলবো না, নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।
বিধুমুখী দেবী ভাইকে সব কথা খুলে বললেন।
সমস্ত শুনে অম্বিকা প্রসাদ চমকে উঠে বললেন, ছি ছি! এটা তো খুব সাংঘাতিক ব্যাপার!
কনক নারায়ণ সব কি জানে?
-----না, ওকে কিছু বলিনি।
-----কেন?
-----ও খুব কড়া ধাতের মানুষ! ছেলের চরিত্র সম্পর্কে এরকম কথা শুনলে সহ্য করতে পারবেনা! তাই আমি ওকে গোপন করে মানবেন্দ্রকে এখানে নিয়ে এসেছি এই কারণে যে, ওই মেয়েটার সঙ্গে দেখা না হলে বা দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলে দাদুভাই হয়তো ওই মেয়েটাকে ভুলে যাবে।
-----সেটা ওদের সম্পর্কের গভীরতার উপরে
নির্ভর করছে দিদি।
-----সেটা তুই ঠিকই বলেছিস। তোকে একটা কথা বলি ভাই ,তুই একটু চোখে চোখে রাখিস দাদুভাইকে।
সেদিন রাতে শয়ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে লাবণ্যপ্রভা স্বামীর কাছে জানতে চাইলেন যে, বিধুমুখীর সঙ্গে তার কী কথাবার্তা হলো এবং বিধুমুখীর পিত্রালয়ে আগমনের প্রকৃত কারণ কী? অম্বিকাপ্রসাদ দিদির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে প্রকৃত কারণ কিছুতেই জানাতে চাইলেন না। ওদিকে লাবণ্য প্রভাও না জেনে কিছুতেই ছাড়বেন না। শেষে অম্বিকা প্রসাদ বললেন,
মানবেন্দ্র নারায়ণ কে নিয়ে দিদি খুব বড় সমস্যায় পড়েছেন। তাই বাঁকুড়া থেকে গড়বেতায় এসেছেন কয়েকটা দিন নাতিকে নিয়ে এখানে থাকতে।
----কী ধরনের বিপদ?
-----এর বেশি তোমাকে আর বলতে পারব না।
পরে সময় সুযোগ বুঝে বলবো। তবে একটা কথা বলি তোমাকে, মন দিয়ে শোনো।
---কী?
-----মানবেন্দ্র নারায়ন কে চোখে চোখে রেখো। আর ওকে একা বাইরে যেতে দিও না। আমাদের ঘরের ছেলেগুলোকে বলে রেখো ,মানবেন্দ্র নারায়ণকে যেন কোন কারণে একা বাইরে যেতে দেওয়া না হয়। ওর সঙ্গে যেন কেউ না কেউ থাকে।
--------ঠিক আছে বলে দেবো। কিন্তু আসল কারণটা আমাকে অন্তত জানাও।
-----না, আমি আমার দিদির ক্ষতি চাই না।
লাবণ্য প্রভা পরদিন সকালেই মৃন্ময়ী এবং সত্যবতীকে সমস্ত কথা খুলে বললেন। তাঁরাও প্রকৃত কারণ জানার জন্য খুব উৎসুক হয়ে উঠলেন।যাই হোক, অম্বিকা প্রসাদের নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন সকাল থেকে তারাপ্রসাদের
মেজ ছেলে অমরেন্দ্র আর শংকরী প্রসাদের বড় ছেলে অশোক মানবেন্দ্র নারায়ণের সর্ব সময়ের সঙ্গী হল।
ওদের সঙ্গে মানবেন্দ্র নারায়ণ গড়বেতা ও তার পাশাপাশি এলাকার দর্শনীয় স্থান ,শিলাবতী নদীর তীরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করল। কিন্তু কিছুতেই মন বসতে পারছিল না। আবার কবে বাড়ি ফিরে যাবে কবে দেখা হবে পূর্ণিমার সঙ্গে, এই চিন্তা সবসময় ঘুরছিল তার মাথায়।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন তার দুই সব সময়ের সঙ্গী অমরেন্দ্র আর অশোক তাকে
সঙ্গে করে নিয়ে গেল কৃষ্ণপুরের বিখ্যাত জমিদার বাড়ি 'শিলাই ভিলা'দেখাতে।
বিশাল জমিদার বাড়ি। বিস্মিত মানবেন্দ্র নারায়ণ অবাক হয়ে দেখলো এটা তাদের বাড়ি চৌধুরী ভিলার থেকে অনেক গুণ বড়। বাড়ি সংলগ্ন ফুলের বাগান, ফলের বাগান ইত্যাদি দেখার জন্য অনেক লোক কাজ করে 'শিলাই ভিলাতে'। কিন্তু মানবেন্দ্র নারায়ণ তার সঙ্গীদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো যে, অত বড় জমিদার বাড়িতে কাজের লোক, দাস-দাসী, রাঁধুনি ,মালি ইত্যাদি অনেক থাকলেও 'শিলাই ভিলাতে' মালিকপক্ষের লোকজন বেশি নেই।
অত বড় জমিদার বাড়িতে বাস করেন রায় পরিবারের শেষ পুরুষ কৃষ্ণ কমল রায় ও তার মাত্র বোন বাল বিধবা হরিপ্রিয়া।
জমিদার বাড়ির লোকেরা অমরেন্দ্র এবং অশোক কে খুব ভালোভাবে চিনত। শুধু তাই নয় অমরেন্দ্রের বাবা তারা প্রসাদ জমিদার বাড়িতে বিভিন্ন পুজোর সময় পুরোহিতের কাজ করতেন। সেই সূত্রেও একটা পরিচয় ছিল।
মানবেন্দ্র নারায়ণ তার দুই সঙ্গীর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে জমিদার বাড়ির আস্তাবলের কাছে এলো। আস্তাবলের ভিতরে চারটি ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকটি ঘোড়া বেশ স্বাস্থ্যবান। ঘোড়া
মানবেন্দ্র নারায়নের পছন্দের জীব। তাঁদের বাড়িতে একটা ঘোড়া আছে। সেই ঘোড়া নিয়ে কনক নারায়ণ মাঝে মাঝে এদিক সেদিক যান।
মানবেন্দ্র মা ও ঠাকুমার মারফত বাবাকে আবেদন জানিয়ে মাঝে মাঝে সেই ঘোড়ায় চড়ার অনুমতি পায়। কিন্তু তাতে তার মন ভরে না। সে বহুবার তার নিজের জন্য একটা ঘোড়া কিনতে চেয়েছে। মা ও ঠাকুমা মারফত সে কথা বাবার কানে পৌঁছে দিয়েও তার আবেদন অনুমোদিত হয়নি। মানবেন্দ্র নারায়ণের এই ঘোড়ায় চড়ার শখ অনেকটাই পূরণ হয় যখন সে তার মামাবাড়ি পুরুলিয়ার মানবাজার জমিদার বাড়িতে বেড়াতে যায়।
খুব মনোযোগ দিয়ে ঘোড়াগুলোকে নিরীক্ষণ করছিল মানবেন্দ্র নারায়ণ। হঠাৎ কাঁধে ভারী হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে দেখে একজন দশাসই চেহারার প্রৌঢ় ব্যক্তি তার কাঁধে হাত রেখেছেন। অশোক মানবেন্দ্র নারায়ণের কানে ফিসফিস করে বলল, জমিদার কৃষ্ণ কমল রায়। প্রৌঢ় সেদিকে কান না দিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ কে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি অত তন্ময় হয়ে আমার আস্তাবলের ঘোড়া দেখছিলে কেন?
মানবেন্দ্র একটুও না ঘাবড়িয়ে উত্তর দিল, আমি ঘোড়া ভালোবাসি তাই। আপনার আস্তাবলের ঘোড়াগুলো খুব সুন্দর।
-----হুম। তুমি কোত্থেকে এসেছ?
----বাঁকুড়া থেকে।
------এখানে কোথায়?
----গড়বেতায় আমার ঠাকুমার পিত্রালয়। আমি ঠাকুরমার সঙ্গে সেখানে বেড়াতে এসেছি।
-----আচ্ছা। তুমি ঘোড়া চেনো?
----অল্পস্বল্প।
-----বলতো, আমার আস্তাবলের চারটি ঘোড়ার মধ্যে কোনটি সবচেয়ে তেজী?
-----আমাকে একটু সময় দিন। আমি ভালো করে চারটা ঘোড়াকে দেখি।
------বেশ বেশ, তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা তুমি দেখো, তারপর আমাকে জানাও , আমার আস্তাবলের
চারটি ঘোড়ার মধ্যে কোনটি সবচাইতে তেজী?
মানবেন্দ্র নারায়ন এক মনে অনেকক্ষণ ঘোড়াগুলোকে নিরীক্ষণ করার পরে বলল, ওই ধবধবে সাদা ঘোড়াটা সবচেয়ে তেজী।
কৃষ্ণ কমল হাততালি দিয়ে বললেন, বাহ ! একদম ঠিক বলেছ তুমি। সত্যিই ঘোড়া চেনো তুমি। ওর নাম 'চেতক'। ও আমার সবচেয়ে প্রিয় ঘোড়া।
-----বুঝেছি।
হঠাৎ কৃষ্ণ কমল বললেন,একটা কাজ করতে পারবে তুমি?
-----কী?
-----ভয় পাবে না তো?
---না, কী করতে হবে বলুন।
-----আমার বাড়ির সামনে যে বড় মাঠটা দেখছো,
ওই মাঠের শেষ প্রান্তে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। ওই গাছটা এখন ফুলে ভরে আছে। তুমি এই সাদা ঘোড়াটার পিঠে চেপে একদম নিচে না নেমে ওই কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে
ফুল সমেত একটা ডাল ভেঙে আমাকে এনে দিতে পারবে,?
মানবেন্দ্র নারায়ণ কিছু সময় চিন্তা করে বলল, হ্যাঁ ,পারব।
অমরেন্দ্র এবং অশোক মানবেন্দ্রের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। তারা চিৎকার করে বললো,
নারে মানব, যাসনা। ওই সাদা ঘোড়াটা খুব তেজী। শুনেছি, জমিদার বাবু ছাড়া আর কেউ ওই ঘোড়ার পিঠে চাপতে সাহস পায় না।
----আমি চাপবো।
------না, তুই চাপবি না। তোর কিছু হয়ে গেলে বাড়িতে ফিরে আমরা কী উত্তর দেব ?
-----আমার কিচ্ছু হবে না। তবে আমি একটা কথা বলতে চাই।
কৃষ্ণ কমল বললেন, বল ,কী বলতে চাও।
মানবেন্দ্র বললেন, আমি যদি আপনার শর্ত পূরণ করতে পারি, তাহলে আপনি আমাকে কী দেবেন?
-----তোমার কী চাই বল,?
------আমার ওই সাদা ঘোড়াটা চাই।
------কী বলছো তুমি?
কৃষ্ণ কমল একটু থমকে গেলেন। এই সাদা ঘোড়াটা তাঁর খুব প্রিয়। বছরখানেক আগে
কোচবিহার থেকে এই ঘোড়াটা কিনে এনেছেন তিনি। এই ছোকরা যদি সত্যি সত্যি তার শর্ত পূরণ করে? তাহলে তো তার এই প্রিয় ঘোড়াটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিই কি ছোকরা
তাঁর শর্তপূরণ করতে পারবে? না, সেটা প্রায় অসম্ভব। চেতকের পিঠে ও বসতেই পারবে না।
কৃষ্ণ কমল কে চুপ করে থাকতে দেখে মানবেন্দ্র নারায়ণ বিদ্রুপাত্মক কন্ঠে বলল, কী আপনি আমার শর্ত মানতে ভয় পাচ্ছেন?
জমিদার কৃষ্ণ কমল রায় হা হা করে উচ্চকন্ঠে হেসে উঠলেন।
----হাসছেন কেন আপনি?
-----তোমার মত একটা দুধের বালক আমার চেতকের পিঠে চেপে যদি পড়ে যাও, সেই আশঙ্কায় চুপ করে ছিলাম, কোন ভয়ে নয়।
কৃষ্ণ কমল অমরেন্দ্র ও অশোককে সাক্ষী মেনে বললেন, তোমরা সাক্ষী হইলে, আমি কিন্তু ওকে ঘোড়ার পিঠে চাপতে বাধ্য করছি না।
কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমাকে যেন দায়ী না করা হয়।
অমরেন্দ্র ও অশোক উত্তর দেওয়ার আগেই
মানবেন্দ্র বললো, আমি যা করছি, স্বেচ্ছায় করছি, এতে আপনার কোন দায় নেই। তবে আমি যদি আপনার দেওয়া শর্ত পূরণ করতে পারি তাহলে আমাকে ঘোড়াটা দেবেন তো?
-----অবশ্যই দেব।
------কথা দিচ্ছেন?
-------দিচ্ছি,দিচ্ছি --দিচ্ছি।
-----তাহলে এই কথাটা আপনি পাঁচ জনের সামনে বলতে পারবেন ?
------অবশ্যই পারব।
-----তাহলে ডাকুন এই গ্রামের লোকজনদের।
-----কেন?
-----ওদের সামনে আপনি কথা দেবেন যে, আপনার শর্ত পূরণ করতে পারলে আপনি আমার ঘোড়াটা দেবেন।
----কোন প্রয়োজন নেই। এই 'শিলাই ভিলাতে' ছাব্বিশ জন লোক কাজ করে। পাঁচজন বাদ দিয়ে সবাই এখন কাজ করছে এই বাড়িতে। ওদের ডাকলেই তো হবে।
-----না, হবে না। ওরা আপনার বেতনভুক কর্মচারী। ওরা আপনার কথার প্রতিবাদ করতে পারবে না।সত্যি কথাটা বলতে ভয় পাবে ওরা।
আপনি এই গ্রামের লোকজনদের ডাকুন।
-----বেশ ,তাই হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই 'শিলাই ভিলা' বাড়ির সামনে কৃষ্ণপুর গ্রামের লোকজন উপস্থিত হল।
(চলবে)
***********************************"**
From:- Samiran Sarkar,
Khelaghar,Lautore,
Sainthia, Birbhum
W.B. 731234
Mob--8509258727