অনুপের দোকানে
প্রতীক মিত্র
বিক্রি তেমন নেই। একঘেয়েমি আছে।তবু বাবা-দাদুর তৈরি সাধের দোকান খুলে রাখে অনুপ। আর তো কিছু ওর করারও নেই। পড়াশোনাও সে খুব একটা করেনি।গুটি কয়েক চেনা খদ্দের আছে।তারা টুকটাক জিনিস নেয়। নিলে দোকান চলে। নইলে ওই বসে থাকা। দোকানে বিক্রি নেই তো কী, দোকানের কলেবর বেশ বড়।সামনে সারি দিয়ে চেয়ার রাখা। চেয়ার ফাঁকা থাকে না। লোকজন জড়ো হয়েই যায়।কেউ বাড়িতে ছেলে আর পুত্রবধূর বদনাম করে তো কেউ খুশি হয় রাজনৈতিক আলোচনা সেরে। কেউ দু-এক লাইন গান গুনগুন করে গায় তো কেউ কেউ সন্তুষ্ট থাকে চুপ করে অন্যের কথা শুনে। বউ নিতা আগে অনেকভাবে অনুপকে জাগানোর চেষ্টা করেছিল যাতে সে একটু ভাবে কিভাবে উপার্জন আর একটু বাড়ানো যায়। এখন সে বুঝে গেছে অনুপকে জাগানো অসম্ভব। মেয়ে শ্রীময়ী বাবাকে তার মতন করে বলে কেন কিছু অদল-বদল জরুরি। অনুপ অবশ্য দোকান নিয়ে বা বলা ভালো দোকানে থাকা আড্ডাবাজদের নিয়েই মশগুল। সেই দলে একজন অন্য কিসিমের মানুষও থাকে। সে ব্যাটা ওই চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যেও বই পড়ে। গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা হরেক রকমের। বাকি আড্ডাবাজদের চোখেও এটা পড়ে। এক সময় যখন তারা ছোট ছিল বইতো সকলেই কমবেশি পড়তো।বইপড়িয়ে লোকটার বয়স ওদের থেকে কমই হবে। অনুপের মতন বাকিরাও বইপড়ার যাদুতে ক্রমে ডুবে যেতে চায়। পরনিন্দা পরচর্চা অনেকতো হল। বইএর জগত অন্য জগত। সেখানে ঢুকলে এইসব সস্তা রদ্দি কথাগুলো আর মাথার মধ্যে ভীড় করে না।ক্রমে এই দলে লোক আরো বাড়তে থাকে। অনুপকে ঘর থেকে আরো ক'টা চেয়ার আনতে হয়।যারা চেয়ার পায়না, মেঝেতে বসে। মফস্বলে কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অমুক মুদিখানায় পাঠচক্রের আসর বসে। নেতারা সন্দেহের চোখে দেখে। পড়াশোনার রেওয়াজ তো কোনকালেই উঠে গেছে। তাহলে এরা কারা? বাইরের? বহিরাগত?অন্য দলের? নেতারাই সব নয়। সাধারণ মানুষ বেশ আগ্রহী। অনুপের দোকানে ভীড় বাড়তে থাকে। বই পড়তে তো বেশ ভালো লাগে তাও যদি সেটা এমন একসাথে পড়া যায়। ভীড় বাড়লে লোকের কেনাকাটাও বাড়ে। অনুপের মনে যে একঘেয়েমিটা ছিল সেটা কেটে গেছে।
------------------
To Know More Deals & Offers : CLICK HERE


