Click the image to explore all Offers

প্রতিবেদন ।। রাশিবিজ্ঞান ও প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।। পাভেল আমান


 

রাশিবিজ্ঞান ও প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ

পাভেল আমান    

 
বাঙালি তথা ভারতীয়রা যে কজন বিজ্ঞান সাধক ও গবেষককে নিয়ে বিশ্বের বিজ্ঞান দরবারে গর্বিত আনন্দিত তাদের মধ্যে অন্যতম প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ। আমৃত্যু চেয়েছিলেন বাঙ্গালীদের বিজ্ঞানমনস্ক চেতনা ভাবনা অনুরাগ গড়ে তুলতে। সর্বোপরি বিজ্ঞানকে সহজ সরল ভাবে যুক্তি ও ব্যাখ্যার মিশেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র বিজ্ঞান চর্চাতেই সমাজ দেশ ও রাষ্ট্রের প্রগতি উত্তরণ ও সমৃদ্ধি। তিনি জন্মান কলকাতায় ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে ২৯ জুন তারিখে। পিতা প্রবোধ চন্দ্র ছিলেন একজন চিত্রকর ও মাতা নিরোদবাসিনী যিনি স্যার নীলরতন সরকারের ছোট বোন। বরাবর মেধাবী ছাত্র বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি ।১৯০৮ সালে কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন ও ১৯১২ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক হন। ইংলণ্ডে যান উচ্চশিক্ষার জন্য। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে ট্রাইপস লাভ করে বিখ্যাত ক্যাভেনডিশ ল্যাবরীটরিতে গবেষণা করার সুযোগ পান পদার্থ বিজ্ঞানে। সেই সময় ক্যাভেনডিশ ল্যাবরীটরিতে ছিলেন দুই বিশাল মাপের বিজ্ঞানী-জে জে টমসন ও সি টি আর উইলসন। গবেষণায় যোগ দেবার আগে কিছু দিনের জন্য যখন দেশে আসছেন বাবা-মা-র সঙ্গে দেখা করতে, তখন কিংস কলেজের পাঠাগারের হাতে এল বায়োমেট্রিকার কয়েকটি পত্রিকা-কার্ল পিয়ার্সন সম্পাদিত। কিনে ফেললেন কিছু পত্রিকা এবং জাহাজেই পড়ে ফেললেন পত্রিকাগুলো। এতই মুগ্ধ হলেন যে, গবেষণার বিষয় পাল্টে ফেললেন – স্ট্যাটিস্টিক্স বা রাশিবিজ্ঞানে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বৃহত্তর ক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞান মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তার প্রচেষ্টায় আই-এস-আই-এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের নানা শহরে। । দেশ-বিদেশের জ্ঞানীগুণীরা আসতে লাগলেন আই-এস-আই-তে।ভারতের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু তাঁকে আহ্বান করলেন দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া রুপায়ণে। পরিকল্পনা এবং অর্থনীতিতে রাশিবিজ্ঞান প্রবেশ করল। ১৯৫৫ সালে ভারতীয় যোজনা কমিশনের সদস্য হলেন। এই সময়েই প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বিখ্যাত বই 'দ্য অ্যাপ্রোচ্‌ টু অপারেশনাল রিসার্চ টু প্ল্যানিং ইন ইণ্ডিয়া'। জীবনের নানা বিষয় আর সমস্যা থেকেই গড়ে ওঠে তাঁর রাশিবিজ্ঞানের ধারণা, তত্ত্ব, এবং ব্যবহার। নৃতত্ত্ব, ভাষা চর্চা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বড় নমুনা জরিপ, প্ল্যানিং, কৃষি, জাতীয় আয়, তথ্যপ্রযুক্তি, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, সমাজবিদ্যা, জেনেটিক্স-- কী নয়! রাশিবিজ্ঞান তাঁর কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো এক প্রয়োগবিদ্যা, যা গণিত থেকে তত্ত্ব ধার করেও হয়ে ওঠে এক স্বতন্ত্র বিজ্ঞান।মহলানবিশকে পদ্মভূষণ দেওয়া হয়েছিল ১৯৬৮-তে, 'বিজ্ঞান এবং দেশের সেবায় অবদানের জন্যে'। বিজ্ঞান-সাধনা আর দেশসেবা বোধ করি সম্পৃক্ত হয়েছিল মহলানবিশের জীবনব্যাপী প্রয়াসের মধ্যে। দুইয়ের দশকে রাশিবিজ্ঞানের সাহায্যে উড়িষ্যার বন্যার কারণ নির্ণয় কিংবা তিনের দশকে বাংলার পাটশস্যের পরিমাণ নিরূপণে যার সূত্রপাত, ভারতে এক পরিণত রাশিবিজ্ঞানের কালচার তৈরি করার মধ্যে তার চূড়ান্ত পরিণতি। মানবকল্যাণে এবং জাতির পরিকল্পনা নির্দেশনে যা সাহায্য করে যেতে পারবে যুগের পর যুগ ধরে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিলেন- বছর দশেক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সচিব ছিলেন। অজস্র সম্মান পুরস্কার ও খেতাব পেয়েছেন জীবনে। প্রশান্তচন্দ্র উনিশ শতকের বাংলার রেনেসাঁরই ফসল।  এই মনীষীর মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৭২ সালে, ৭৯ বছর বয়সে।তাঁর বিপুল কর্মকান্ডের কথা মাথায় রেখে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০০৬ সালে তাঁর জন্মদিন ২৯ জুনকে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস হিসাবে পালনের মাধ্যমে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে বিশেষ স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। নানা কীর্তির স্বাক্ষর বহনকারী এই কর্মবীরের বিজ্ঞান চেতনা চর্চা দর্শন সর্বোপরি রাশি বিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান আরো বেশি অনুসৃত হোক আগামী প্রজন্মের মধ্যে ভারতের সার্বিক বিকাশে। 
 
চিত্রঋণ- ইন্টারনেট।  
==========================
রচনা পাভেল আমান হরিহরপাড়া মুর্শিদাবাদ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.