Click the image to explore all Offers

কল্পবিজ্ঞান ।। মহাকাশে নতুন গ্রহে অভিযান ।। অঞ্জনা মজুমদার

 

মহাকাশে নতুন গ্রহে অভিযান 

অঞ্জনা মজুমদার 


রুদ্র আজ ভারতের প্রতিনিধি হয়ে আকাশরথের সারথি হয়ে মহাকাশে যাচ্ছে। সাথে যাচ্ছে বন্ধু পার্থ আর মিলি। ওরা একসাথে ট্রেনিং নিয়েছে মহাকাশ যাত্রার। ভারতের জন্য এটি একটি বিশাল বড় পদক্ষেপ। এই যাত্রায় রুদ্ররা যে যে এক্সপেরিমেন্ট করবে তাতে মানব সভ্যতা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পৃথিবীতে জনসংখ্যা অনেক দিন একই আছে কিন্তু চাষযোগ্য জমি কমে আসছে। যদি সৌরজগতের অন্য কোনও গ্রহকে মানুষের বাসযোগ্য করা যায় অথবা অন্য কোনও গ্রহে টাটকা ফসল উৎপাদন করা যায় তবে পৃথিবীর উপকার হবে। 
রুদ্রর সাথে তার প্রিয় পোষ্য পুপুও যাচ্ছে। ওকেও মহাকাশ যাত্রার ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। আকাশরথে পুপু আনন্দে নাচানাচি করছে। জিরো গ্রাভিটির সাথে অ্যাডজাস্ট করতে পুপুরও একটা বিশেষ পোশাক পরা আছে। 
পৃথিবী থেকে রওনা হবার প্রায় চল্লিশ ঘন্টা পরে আকাশরথ সৌরজগতের ঠিক পরেই এক নতুন গ্রহে এসে নামল। এখন অন্য গ্রহে যাওয়া আসা মানুষের পক্ষে খুবই সহজ। নামা সহজ হল কিন্তু নামা মাত্র পুপু অদ্ভুত আচরণ করতে লাগল। পুপুর এ আচরণ রুদ্রর খুব চেনা। পুপু যখন কোনও বিপদ সামনে বোঝে তখন এমন ব্যবহার করে। এদিক ওদিক ছুটছে, কিছু শোঁকার চেষ্টা করছে, কিন্তু এ গ্রহের বাতাস খুব হালকা সেখানে কোনও গন্ধ পাচ্ছে না পুপু। তাই আরও অস্থির হয়ে পড়ছে। রুদ্র পুপুকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইছে। পার্থ আর মিলি অ্যালার্ট হয়ে গেল। পুপুর এ ব্যবহার ওদেরও চেনা। 
গ্রহটির নাম দিয়েছে রথবন। এখানে কোনও বড় গাছ নেই।  আসলে কোনও গাছই নেই। আছে খালি বড় বড় পাথরের চাঁই। এখানে আট ঘন্টা দিন আর ষোল ঘন্টা রাত্রি। সূর্যের তেজ এখানে পৃথিবীর তুলনায় অর্ধেক। জল নেই কিন্তু বরফের ছোট ছোট টিলা আছে। তাই এখানে চাষ করা যেতেও পারে। 
কিন্তু পুপুর আচরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে এখানে অন্য কোনও মানুষ আছে। আর সে মোটেও বন্ধু নয়। রুদ্র দূরবীন দিয়ে চারপাশে দেখে নিল। কিন্তু পাথরের চাঁই গুলোর জন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। সাবধানে ওরা পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি নিয়ে এগিয়ে চললো। প্রথম দুটো বড় পাথরের চাঁই পার হলেই একঝাঁক আগুনের তীর ছুটে এল। সতর্ক থাকায় ওদের  আঘাত তেমন লাগলো না। ওরা একটা বড় পাথরের আড়াল থেকে নজর রাখল। খানিক পরে দুজন লোক পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। হাতে ওদের এমন বন্দুক যেটা থেকে আগুনের তীর বেরোয়। 
রুদ্ররা অবাক হলো না। এখন অনেক মহাকাশযান পৃথিবী থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দেয়। অনেক দুষ্কৃতি এসব যান ব্যবহার করছে সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে। এরা সেরকমই দুজন লোক। এরা এখান থেকে মূল্যবান আকরিক চুরি করে অন্য কোনও দেশে বিক্রি করে দেয়। নিজের দেশের শত্রু এরা মানুষের জন্যও শত্রু। কিন্তু ওদের হাতে ভয়ানক অস্ত্র। 
রুদ্র বলল, ওদের হাতে ওই বন্দুক থাকলে ওদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে না। বুদ্ধি করে কাজ করতে হবে। 
পার্থ আর মিলি মাথা নাড়লো। পুপুও মাথা নাড়লো। 
রুদ্র বলল, আমাদের আকাশরথে পৌঁছাতে হবে লুকিয়ে। ওখান থেকে প্রিপারেশন নিয়ে ফিরব। 
পুপু আগে আগে আর তিনজন আকাশরথের পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকল। পৃথিবীতে যোগাযোগ করে বিপদের কথা বুঝিয়ে বলতে চিফ বললেন, সাবধান!  আমরা তো তোমাদের অস্ত্র দিয়ে পাঠাইনি। তবে তোমাদের মধ্যে দুজনের জন্য দুটো পোশাক রাখা আছে আকাশরথে। যেটা তোমাদের ওই বন্দুক থেকে প্রোটেক্ট করবে। এবার তোমাদেরই নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে। 
ঠিক আছে চিফ। আমরা ব্যবস্থা করব দুষ্ট লোকদের। 
চিফ বললেন, ও কে! তোমাদের ওপর আমাদের ভরসা আছে। 
থ্যাঙ্ক ইউ চিফ।
রুদ্র আর পার্থ আকাশরথের চেম্বার থেকে দুটো পোশাক পরে আবার পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে এল। গুন্ডাদুটো আকাশরথের দিকে এগিয়ে আসছে। তিন চারটি পাথরের চাঁই পার হয়ে গুন্ডাদের যানটি দেখা গেল। যানটি ছোট্ট কিন্তু আধুনিক, দরজা বন্ধ। রিমোট দিয়ে চেষ্টা করে খোলা গেল। এদের সুরক্ষা তত ভালো নয়। পার্থ বাইরে রইল, রুদ্র ভিতরে ঢুকে পড়ল। বেশি কিছু নেই ভেতরে, একটু খাবার ছাড়া। তাহলে অস্ত্র ওদের সাথেই আছে। 
দুজনে বাইরে বেরিয়ে এল খাবারের প্যাকেটগুলো নিয়ে। এবার ফিরে চলল আকাশরথের দিকে। লোকদুটো ফিরে আসছে। বলছে, ওঃ! এদের কি করে কব্জা করবো। এদের বড্ড বুদ্ধি। চল্ আগে খেয়ে নিই। খেলে বুদ্ধি বাড়ে।
ওদের যানের কাছে গিয়ে দরজা কিছুতেই খুলতে পারল না। 
কি করি খুব খিদে পেয়েছে। খাবার কোথায় পাই? একজন বলল।
ওদের দিকে বন্দুক ছুঁড়েছি। ওরা আমাদের খাবার দেবে না, অন্যজন বলল। হতাশ হয়ে মাটিতে বসে দুজন একটু বাদে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এত গভীর ঘুম যে হাতের থেকে বন্দুক দুটো কেড়ে নিলেও ঘুম ভাঙলো না। 
রুদ্র ঠেলে ঘুম ভাঙালো। চমকে উঠে দুজন ভয়ে রুদ্রর পায়ে পড়ে গেল। আমাদের বাঁচাও।
কে তোমরা?  কেন আমাদের মারতে এসেছো? 
তোমরা যে কাজ করতে এসেছো তা যেন কমপ্লিট করতে না পারো তাই জন্য আমাদের পাঠিয়েছে। তোমাদের মেরে ফেলতে পারলে আমাদের অনেক টাকা দেবে। কিন্তু আমরা তো পারলাম না। এখন বড্ড খিদে পেয়েছে। কিছু খেতে দেবে?  নাকি আমাদের মেরে ফেলবে? 
রুদ্র মনে মনে বলল,  এখনও মানুষ খাবার জন্য কষ্ট পায়! মুখে বলল, যদি খেতে দিই, তাহলে আর খারাপ কাজ করবে না? 
সাধে কি করি?  মারামারি ছাড়া আর কোনও কাজ জানি না। তবে এই গ্রহের কোথায় কি আছে আমরা সব জানি। তোমাদের কাজে লাগলে আমরা সব দেখিয়ে দেব আর তোমাদের হেল্প করবো। আমাদের মেরে ফেলবে না তো? 
পার্থ বলল, তাই হোক তোমরা আমাদের সাথে কাজ করো। ভালো করে কাজ করলে পৃথিবীতে ফিরে তোমাদের ভালো কাজ দেব। 
লোকদুটো, বিল্টু আর শান্টু মাথা নাড়লো। মিলি তাদের খেতে দিল। ওদের বন্দুক আকাশরথের গোপন চেম্বারে রেখে দিয়ে ওরা কাজে লেগে গেল। তিনজন এর জায়গায় পাঁচজনে তাড়াতাড়ি যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট শেষ করে ফেলল। 
সাতদিন এর জায়গায় পাঁচদিনে কাজ শেষ করে আকাশরথ পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। 
রুদ্র চিফকে ভিডিও কলে সমস্ত ব্যাপার বলতে চিফ খুশি। ভারতের মাটিতে আকাশরথ নামতেই বিশাল সাংবাদিক সম্মেলনে সবাই ওদের বরণ করে নিলেন। 
বিল্টু আর শান্টুর অতীতের খারাপ কাজ জজসাহেব ক্ষমা করে দিয়েছেন। ওরা পালা করে রুদ্র, পার্থ আর মিলির ড্রাইভারি করে।আবারও কোনও ভালো মিশনে চিফ ওদের সঙ্গে নেবেন। পুপু কিন্তু সবসময় ওদের পাঁচজনের সঙ্গে আছে। ওরা পরবর্তী মিশনে অংশ নেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে সবসময়। জয় হোক বিজ্ঞানের, জয় হোক মানবতার। 
 
ছবিঋণ - ইন্টারনেট 
========================
 
অঞ্জনা মজুমদার 
এলোমেলো বাড়ি 
চাঁদপুর পল্লী বাগান 
পোঃ  রাজবাড়ি কলোনী 
কলকাতা    ৭০০০৮১


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.