ধারাবাহিক গল্প ।। নাটকীয় বায়বীয় ঘটনা ( প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল
নাটকীয় বায়বীয় ঘটনা
দীপক পাল
এই শতাব্দীর শুরুর বছরে অর্থাৎ 2001, June-এর প্রায় শেষে, আপ চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ঘন্টাখানেক লেট করে সকাল আটটায় বরাভূম পৌঁছল। স্টেশনের নাম বরাভূম হলেও জায়গাটার নাম বলরামপুর। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়াল সুদীপ কর্মকার। সে সদ্য কল্যাণী কৃষি বিদ্যালয় থেকে বোটানিতে ডক্টরেট করেছে। রেজাল্ট বেরোবার আগেই এপ্লাই করেছিল। পরে ইন্টারভিউ দেয়। কন্সেন্ট লেটারেও সই করে পাঠিয়ে দেয়। পরে আসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, সাথে বলরামপুর অফিসে নীতিশ সামন্তর কাছে রিপোর্ট করা। সুদীপ নীতিশ বাবুর সাথে ফোনে কথাবার্তা বলে নেয়। এবং তিনি সুদীপের নামে অফিসের কাছাকাছি একটা হোটেল বুক করিয়ে রাখেন। সুদীপ কোন কালবিলম্ব না করে একটা রিক্সা করে সোজা হোটেলে উঠে নিজের নাম বলায় রিসেপশনে বসা ছেলেটি বোর্ড থেকে একটা চাবি উঠিয়ে সুদীপের ট্রাভেল ব্যাগটা নিয়ে নিজেই ' আসুন ' বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা ঘরের তালা খুলে দিয়ে বললো,
- 'এই ঘরটা আপনার নামে বুক করা আছে। আজ সকালে ঘর বাথরুম পরিস্কার করিয়ে সব বিছানাপত্র পাল্টে দিয়েছি। জলও দিয়ে রেখেছি। কিছু দরকার হলে ইন্টারকমে জানাবেন।' বলে সে আবার তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। সুদীপ নীতিশ সামন্তকে ওর হোটেলে ওঠা জানিয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে অফিসে জয়েন করবে বলে জানালো। তিনি ঠিক আছে বললেন।
সুদীপ বাথরুম থেকে টাওয়েল এনে জামা প্যান্ট গেন্জী বার করে বাথরুমে রাখলো। বিছানায় একটু শুয়ে দশ মিনিট পরেই উঠে টাওয়েলটা পড়ে নিয়ে, পড়া জামা প্যান্ট আলমারিতে ঝুলিয়ে স্নানঘরে ঢুকলো। স্নান সেরে নতুন জামা প্যান্ট পড়ে, চুল আঁচড়ে, একেবারে রেডি হয়ে বেরোল। ভেজা অন্তর্বাসগুলো মেলে দিয়ে, হাতে একটা ফাইল নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে বেরোল। একটা খাবারের দোকানে গিয়ে দেখলো রান্না বিশ বাঁও জলে। তাই দুটো বাটার টোস্ট ও ডাবল ডিমের মামলেটের অর্ডার দিলো। খাওয়ার মাঝপথে স্পেশাল চায়ের অর্ডার দিল। খেয়ে দাম মিটিয়ে নীতিশ সামন্তর বর্ণনা মতো এগিয়ে যেতে যেতে অবশেষে তার বাড়ীতে পৌঁছে গেল। কলিং বেল টিপতেই সম্ভবত নীতিশ সামন্ত নিজেই গ্রীল গেটের তালা খুলে আসতে বললেন।
বারান্দায় একটা মোটর বাইক আর একটা স্কুটার দাঁড় করানো। ঘরে ঢুকে দেয়াল ঘড়িতে দেখলো, সাড়ে দশটা । তারপর ফাইল খুলে এপয়েন্টমেন্ট আর একটা কাগজ বার করে খস্ খস্ করে জয়েনিং লেটার লিখে নীতিশ বাবুর হাতে দিল। এর আগে অবশ্য পরিচয় পর্ব সারা হয়েছিল। নীতিশবাবু সবটা পড়ে নিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা ফিরিয়ে দিল। তারপর জয়েনিং লেটারটা একটা ফাইল খুলে যত্ন করে রেখে দিল। ভেতর থেকে একজন মহিলা বেরিয়ে এসে সুদীপকে দেখে বললো,
- 'ও আপনি এসে গেছেন, জয়েন করেছেন?'
সুদীপ দাঁড়িয়ে উঠে বললো, হ্যাঁ।' সুদীপের মনে পড়লো বাইরে নেম প্লেটে নাম দেখেছিলো দিপালী সামন্ত। ইনিই তাহলে তিনি। নীতিশবাবু এবার কাজ ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
- 'এই ঘরটাই আমাদের অফিস। আর আমরা সবাই একটা পরিবারের মতো। আমাদের এই পুরুলিয়ায় দুশো আড়াইশো একর জুড়ে যেমন মরসুমি ফুল ও ফল গাছের চাষ হয়, তেমনি আলু চাষ হয়। এরকম এই জেলায় অনেক বাগান আছে। জাতীয় কৃষি দপ্তর থেকে আমরা সাহায্য পাই, যা আসে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মাধ্যমে। এবারে দিল্লির পরামর্শে আমাদের এই পুরুলিয়ার জন্য দুজন এন্টোমলজিস্ট নিয়োগ করা হলো। একজন এখনও যোগ দেয় নি। আমরা সবাই এক পরিবারভুক্ত। তাই আমাকে তুমি সুদীপদা বলবে তেমনি ওকে দীপালি দি বলতে পার। কারণ দীপালি একজন বিশ্বস্ত স্টাফ। এবার আমরা তিনজনে একসাথে বেরোব কাজে। কি দীপালি রেডি তো?'
তিনি বললেন, 'এখুনি রেডি হচ্ছি, কিন্তু আপনি খেয়ে এসেছেন তো?' কথাটা সুদীপকে উদ্দেশ্য করে বলতে সে বলে, 'হ্যাঁ খেয়ে এসেছি আমি রেডি।'
-'তাহলে একটু বসুন আমরা চটপট রেডি হয়েনি।' ওরা ভেতরে গেল। দশ মিনিট পরে ফিরে এসে বললো, 'চলুন এবার বেরোন যাক।' বাইক আর স্কুটার দুজনে বার করে গ্রীলে তালা দিল। দুজনেই গাড়িতে স্টার্ট দিল। নীতিশ সুদীপকে বাইকের পিছনে উঠতে বলে দীপালির উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো, 'দীপালি, আর একজন যদি জয়েন করতে আসে তবে তাকে বলবো তিনটার পরে আসতে।' ' ঠিক আছে ' বলে সে এগিয়ে গেল। নীতিশ ও গাড়ি ছাড়লো।
জুনের শেষ। কদিন বেশ ভাল বৃষ্টি হওয়ার পরে দুদিন আবার বৃষ্টি নেই। তাই আকাশ বেশ পরিস্কার এবং নীল। বৃষ্টির ধারায় কদিন খুব স্নান করে গাছেরা তাদের গোটা শরীরের। ধূলোবালি ধুয়ে ফেলে একেবারে সবুজ আর তাজা হয়ে হাসছে যেন। হাওয়ায় ডালপালা দুলিয়ে তাই যেন আনন্দে প্রকাশ করতে চায়। সুদীপের মনেও যেন সেই আনন্দের আবেশ ছড়িয়ে গেল। বেশ একটা ভাল লাগা নিয়ে সে নতুন কাজের জায়গায় পৌঁছে গেল।
বেশ বড়ো লোহার গেট। গেটের বাইরে বগলে এক মজবুত লাঠি নিয়ে বেশ মজবুত চেহারার দারোয়ান ছোট একটা বেঞ্চে বসেছিল। নীতশদাকে দেখে একটা স্যালুট ঠুকলো। তারপর অল্প খোলা গেটটা আরও একটু খুলে দিল। নীতিশ সুদীপকে নিয়ে বাগানে ঢুকলো। বাগান দেখে সুদীপের চক্ষু চড়কগাছ। অবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। কত আম গাছে কত আম ঝুলছে, লিচু গাছে লিচু ঝুলছে। এতগুলো সব গাছ, সব লাইন দিয়ে দাঁড়ান। কত ফুল গাছে দেশী বিদেশী ফুল গাছ সব লাইন দিয়ে বিশাল জায়গা জুড়ে চাষ করা হয়েছে। সত্যি অবাক হতে হয়। এরপর আছে আলুর ফলন। এটাও বিশাল জায়গা জুড়ে। হঠাৎ পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইল বার করে দেখে বাবার ফোন। বাবা সদ্য রিটায়ার করেছেন। গত একত্রিশে ডিসেম্বর তিনি অবসর নিয়েছেন।
-'কিরে তোর কি খবর, কাজে জয়েন করেছিস?'
-'হ্যাঁ বাবা জয়েন করেছি। এখানকার কাজের পরিবেশ বেশ ভাল মনে হচ্ছে। এখন আমি কাজের জায়গায় আছি। এক বিশাল বাগান। হোটেলে ফিরে সব জানাব। মাকে কোনও চিন্তা করতে না করো। রাখছি এখন।' ফোন কেটে দিল সুদীপ।
-'কি সুদীপ, কেমন দেখলে বাগান?'
-'অপূর্ব লাগছে নীতিশদা। এতো বিশাল ব্যাপার। ভাবাই যায় না।'
-'এরকম দু তিনটে বাগান নিয়ে তোমাকে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হবে। আর একজন জয়েন করতে এসেছে। তার নাম বিমল দাস। আমি তাকে সাড়ে তিনটের পরে আসতে বলেছি। আমরা এই সময়ের মধ্যে কিছু আলোচনা করে ফিরে যাবো।' তারপর হাঁকডাক করে সবাইকে ডেকে আনলেন। সে এক অদ্ভুত ব্যপার। কাঁধে কোদাল, কুড়ুল, হেসুয়া ও কাস্তে ইত্যাদি নিয়ে জনা কুড়ি চাষী এসে উপস্থিত।' কি বলছেন নীতিশদা? 'সবারই মুখে হাসি। সুদীপ অবাক হলো শুনে যে ওরাও সবাই নীতিশদা বলে সম্বোধন করছে।
-'শোন ইনি হচ্ছেন গাছপালা নিয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে, এখানে জয়েন করেছেন। নাম ডক্টর সুদীপ কর্মকার। '
- ' ও বুঝেছি সুদীপদা গাছেদের ডাকতার। তাই না?' মাতব্বর গোছের একজন বলে।
-'ঠিক তাই। তবে আজ আমরা এখন বেরিয়ে যাব একটা কাজে। কাল উনি আসবেন।'
ওরা সবাই সমস্বরে বলে,' নমস্কার নিবেন সুদীপদা, আমরা সবাই আপনার কথা শুনে চলবো। কাল আবার দেখা হবে। সুদীপ অভিভূত হয়ে হাত নাড়ালো।
ওরা যখন নীতিশদার বাড়ি পৌঁছলো তখন পৌনে চারটে বাজে। তালা খুলে ঘরে গিয়ে বসতে বসতেই ডক্টর বিমল দাস এসে উপস্থিত। বললো, 'আসতে পারি?'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন বসুন।' বসতে বসতে কাঁধ থেকে ব্যাগটা কোলের ওপর রেখে ব্যাগটা খুলে ভেতরে আর একটা পকেটের চেন খুলে সন্তর্পনে এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা বার করে বিমল নীতিশদার হাতে দিল। নীতিশদা সেটা দেখে একটা কাগজ দিয়ে তার ওপরে জয়েনিং লেটারটা লিখতে বললো। সেটা লিখে নীতিশদা সেটা পড়ে ফাইল বন্দি করে রাখলো। এতক্ষণ বসে বিমলের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল সুদীপ এবার চোখাচোখি হতে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। বিমল বললো, 'সেই আবার আমরা একসাথে। ভারী মজা হলো তো।' নীতিশ অবাক হলো, 'আরে তোমরা পরস্পরকে চেনো নাকি?'
-'হ্যাঁ,আমরা একসাথে কল্যানীতে পড়েছিতো নীতিশদা। আপনি যখন বললেন ওর জয়েনিং এর কথা তখন আমি ভাবলাম এই বিমল দাস নয় তো। অন লাইনে ইন্টারভিউ হওয়াতে ঠিক বুঝতে পারিনি। এখন বুঝলাম।'
-'খুব ভাল হলো। তুমি আমাদের অফিসের পরিবেশ সম্বন্ধে এবং আজকে তোমার কাজের অভিজ্ঞতা বিমলের সাথে শেয়ার করতে পার। আজকে আর তোমাদের কোন কাজ নেই। কিন্তু আমার কাজ আছে এখন। তোমাদের আজ জয়েনিং এর ব্যাপারটা দিল্লী অফিসে ডিটেইলসে পাঠাতে হবে। তোমরা বরং হোটেলে গিয়ে একটু রেস্ট করো।'
ওরা নমস্কার করে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। একসাথে হাঁটতে হাঁটতে বিমল বলে, - 'তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমরা তো মাত্র দুদিনের জন্য হোটেলে আছি, এর পরে কোথায় থাকবে ঠিক করেছো?'
- ' সেটাই ভাবছিলাম। ভাবছিলাম আজ সন্ধে থেকেই খোঁজ করবো। তাড়াতাড়ি যখন ছুটি হয়ে গেল তখন চলো আজকে থেকেই ঘর খোঁজা শুরু করি।'
-'দাঁড়াও দাঁড়াও, এই যে আমরা ঠিক জায়গায় এসে পড়েছি। চল ঐ চায়ের দোকানে গিয়ে একটু চা খাই। চা খেতে খেতে তোমাকে একটা ঘরের খবর দেব।'
-'সত্যি পেয়েছ?'
-'সত্যি, কিন্তু তোমার পছন্দ হবে কিনা জানিনা। তবে কোথায় আর খুঁজবো। কতদিন লাগবে কে জানে। তোমাকে পেয়ে মনে সাহস পেলাম।' দোকানে ঢুকে দোকানিকে সে জিজ্ঞেস করলো, ' এসেছিল?' ' না এখনও আসেনি।' ' গরম গরম কি পাওয়া যাবে?'
-'গরম সিঙারা পাবেন। এইমাত্র এলো। দেবো?'
-'হ্যাঁ দুটো করে দিন আর দুটো বড়ো করে চা বানান।' তারপর সুদীপের দিকে ঘুরে বলে,
-'আমি তো বাঁকুড়া শহরে থাকি। সেখান থেকে বাসে করে যখন নীতিশবাবুর বাড়ীতে এলাম তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। তোমরা তখন বেরিয়ে গেছ। আমার ধারণা ছিল এটা একটা অফিস খোলা থাকবে। হতাশ হয়ে ওনাকে ফোন করলাম। উনি বললেন সাড়ে তিনটের পরে আসতে আর জয়েনিং ফোরনুনেই ধরা হবে। নিশ্চিন্ত হয়ে হোটেল যেতে গিয়ে খুব খিদে পাওয়ায় এই দোকানে ঢুকে পড়লাম। খেতে খেতে ওনাকে বাড়ি ভাড়ার কথা বলতে উনি বললেন একটা বাড়ির সন্ধান উনি দিতে পারেন, পুরানো একতলা বাড়ী দুটো ঘর আর বাথরুম, রান্নাঘর। পুরোটা নিতে হবে। আগে বাড়ীয়ালা থাকত পরে তিনি খুব কাছেই আর একটা বাড়ি করে চলে গেছেন এবং একটা ফেমেলিকে ভাড়া বসিয়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এক মাস থেকে চলে যায়। পরে আর এক ফেমেলি আসে, তারাও এক মাস থেকে চলে যায়। তারপর থেকে আর কেউ আসেনি।'
-'কি কারণ বলতে পারেন কিছু?'
-'এ বাড়িতে থাকতে ওনার বড় ছেলে মারা যায় বি ভাইরাসে। তারপরে তিনিও চলে যান নতুন বাড়ীতে। তারপর থেকে নাকি বাড়ির বারান্দায় আর বাড়ির ছাদে কারো হাঁটা চলার শব্দ শোনা যায়। বিশ্বনাথ বাবু তাই ঠিক করেছেন, এটা এবার থেকে উনি মেস করে ভাড়া দেবেন। আমার মতো কাউকে কাউকে বলেছেন লোক পেলে খবর দিতে। ঐতো দেখছি বিশ্বনাথ বাবু আসছেন।' বিশ্বনাথ বাবু ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন, 'এসেছে?'
- 'এইতো বসে আছে কথা বলে নিন।' ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আপনারা নেবেন?'
-'হ্যাঁ, ইচ্ছে তো আছে। আগে বাড়ী দেখেনি।'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন, যেতে যেতে কথা হবে।' দোকানিকে টাকা দিয়ে ওরা বাড়ি দেখতে গেল।
মিনিট তিনেক হাঁটার পর বাম দিকে একটা চওড়া গলি পরলো। গলির দুপাশে একদিকে পানের দোকান আর একদিকে সেলুন। গলিটা চওড়া, কিন্তু দৈর্ঘ্যে ছোট আর শেষের বাড়িটাই বিশ্বনাথ বাবুর। বাড়িটা গলিমুখো। সামনে তিন ফুটিয়া বারান্দা, কিন্তু কোন পাঁচিল নেই। বারান্দায় ধুলোবালিতে ভর্তি। তালা খুলে বিশ্বনাথ বাবু ভেতরে ঢুকে ওদের আসতে বললেন। মাঝখানে সরু প্যাসেজ দুপাশে দুটো ঘর। এইটার পরে একটু ছোট মতো জায়গা, তার একদিকে রান্নাঘর আর একদিকে বাথরুম। কিন্তু সব কেমন নোংরা তাছাড়া কেমন একটা অচেনা দুর্গন্ধ নাকে লাগছে। এর দু হাজার টাকা ভাড়া।
সুদীপ ও বিমল দুজনে নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করলো এই বাড়ীর শোনা দোষ নিয়ে আর তার সাথে ওই অচেনা দুর্গন্ধ নিয়ে। তারপর ঠিক করলো আপাতত এখন বাড়িওয়ালাকেএক হাজার টাকা দিয়ে পুরো বাড়ীটা পরিস্কার করিয়ে ও যাতে কোন দুর্গন্ধ ভেতরে আর না থাকে সেটা দেখে আমরা ঠিক করবো আমরা ভাড়া নেব কিনা। সেভাবেই বিশ্বনাথ বাবুকে বলতে তিনি রাজী হলেন। বললেন,
-'কোন চিন্তা করবেন না। সব খুব ভালো মতো পরিস্কার করিয়ে একেবারে স্প্রে করিয়ে এমন ভাবে রাখবো একটা লোক লাগিয়ে যে আপনাদের ঠিক মন মতো হবে। তবে বলি একটা কথা এক হাজার টাকা তো দিচ্ছেন ঠিক কিন্তু খুব ভাল ভাবে পরিস্কার করতে হলে শত পাঁচেক টাকা লাগে। আপনারা কাল বিকেলে এসে যখন দেখবেন যদি পছন্দ হয় এবং যদি ভাড়া নেন তবে বাকি এক হাজারের সাথে আরো দুশো টাকা দেবেন এই পরিস্কার করার জন্য। আর যদি না নেন তবে আপনার দেওয়া এক হাজার টাকা থেকে পাঁচশো টাকা কেটে পাঁচশো টাকা পাবেন। মনে কিছু করবেন না।'
-'ঠিক আছে আমরা রাজী। কাল সন্ধ্যায় আমরা এসে দেখবো। তখন সব দেখে আমরা ঠিক করবো ভাড়া নেব কি না নেব। তাহলে এখন আমরা এখন আসি।' বলে বিমল।
-'হ্যাঁ আপনারা আসুন। আমি একটা ভাল লোকের খোঁজে বেরবো এখন কাল সকালের জন্য। সারাদিন কাজ করে লেবারদের অনেকেই হারুর দোকানে চা খেতে আসে। ওখানে যোগাযোগ করে একজন ঠিক পেয়ে যাব। আচ্ছা নমস্কার।'
ওরা গলি থেকে বেরিয়ে হোটেলের পথ ধরলো। যেতে যেতে সুদীপ বললো, - ' টাকা দিয়ে বুক তো করলে আমিও তোমার সাথে সাহস করে এগিয়ে গেলাম এরপর যে কি আছে কপালে কে জানে।'
-'আরে বন্ধু আমরা তো পারমানেন্টলি নিচ্ছি না, আপাতত এখানে থেকে খোঁজ করবো মনের মত একটা আস্তানা। এছাড়া একরকম অভিজ্ঞতাও হবে ভূতের সাথে রাত কাটানো। তুমি কি বল? তোমার কি ভয় করছে?'
- ' না তা ঠিক নয়। এটাও তো ঠিক হোটেলে থাকা কতদিন সম্ভব। দেখা যাক কি হয়।'
হোটেলে ওরা ফিরে কিছু সলা পরামর্শ করলো সিরিয়াসলি। পরের দিন ডিউটি সেরে দুজনে ছটার সময় ঐ বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত। এসে দেখলো বিশ্বনাথ বাবু চুপচাপ বারান্দায় বসে আছেন। ওদের দেখে একগাল হেসে বললেন,
-'আসুন দেখুন। বারান্দা থেকে দেখে আসুন।' তারপর ওদের নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলেন,
-'দেখুন ভালো করে দেখুন এবার।'
ওরা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলো। সত্যি খুব ভাল পরিষ্কার হয়েছে। একটা হালকা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্দিকে। কিছু বলার নেই। বিমল বললো,
-'ঠিক আছে। তুমি কি বল সুদীপ?'
-'হ্যাঁ, ঠিকই তো আছে। তবে আমি টাকাটা দিয়ে দি। কালকে তুমি দিয়েছ।' সুদীপ এক হাজার দুশো টাকা বিশ্বনাথ বাবুকে দিলেন। তিনি খুশী হয়ে বলেন,
-'এই নিন বাড়ীর চাবি, আপনারা আজকে থেকেই থাকতে পারেন। যদিও পয়লা তারিখ পড়তে এখনও দুদিন বাকি, তাতে কি চাবিতো আমি দিয়েই দিলাম।' সুদীপ বলে,
-'না, আজকে থাকবো না। আজকে হোটেলে টাকা দেওয়া আছে। কাল রবিবার, কাল আসতে পারি। ভেতরে সব দেওয়া আছে তো?'
-'হ্যাঁ সব দেওয়া হয়েছে। এবার তবে আমি আসি?' বিমল বলে,
-'চলুন, আমরাও এখন হোটেলে ফিরবো।'