গল্প ।। সীমারেখা ।। এস.আজাদ
ছবিঋণ - ইন্টারনেট
সীমারেখা
এস.আজাদ
কাঞ্চন মাস্টার। বছর চল্লিশের সুদর্শন যুবক। দর্শন শাস্ত্রে অনার্স মাস্টার ডিগ্রি এবং বি.এড। জীবনের একমাত্র শখ ও স্বপ্ন স্কুল মাস্টারি। বারো বছর নেহাত কম সময় নয় একটা স্বপ্ন পূরণ করতে। তার বি.এড রেজাল্ট হাতে আসার পর এস.এস.সি. পরীক্ষায় দুবার ইন্টারভিউয়ের সুযোগ পেলেও কোনো অজ্ঞাত কারণে ফাইনাল প্যানেলে নাম আসেনি। ভালো একাডেমিক স্কোর, লিখিত পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে কিন্তু তার দুর্ভাগ্য সে তার সময়ের থেকে পরে জন্মেছে।
নিজের ব্যার্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজের থেকে পারিপার্শিকতাকেই দায়ী করা কাঞ্চন মাস্টার শুধু টিউশন পড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নামের শেষে চৌধুরীর বদলে মাস্টার শব্দটা স্থায়ী ভাবে জুড়ে ফেলেছেন। একদম ফেবিকলের জোড়ার মতো।
বাবা মারা গেছে কোন ছোটোবেলায়। ছবিতে না দেখলে বাবার জাগতিক অস্তিত্ব তার স্মরণে থাকার কথা নয়। গ্রামের সামান্য জমি, আর বুদ্ধি খাটিয়ে আশির দশকের স্কুল ফাইনাল পাস কাঞ্চন মাস্টারের মা চামেলী বেগম আচার বড়ির ব্যবসা ফেঁদে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, ছেলের সব প্রয়োজনের খেয়াল রেখেছেন, পুরনো ভদ্রাসন মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা বাড়ি করেছেন।
শহরের উপকন্ঠে থাকায়, হাঙ্গরের খিদে নিয়ে বাড়তে থাকা শহর দখল করে নিয়েছে তাদের গ্রাম জীবনের সরলতা আর গোপনীয়তা। শহর থেকে অনতিদূরে অবস্থিত গ্রামগুলোর অবস্থা অনেকটা সুকুমার রায়ের হাঁসজারুর মত। না আছে শহুরে জীবনের বৈভব না আছে গ্রাম জীবনের সরলতা। জন্ম থেকে গ্রামে থাকতে থাকতেই তারাও ধরা পড়ে গেল শহরের সীমানার মধ্যে। তাতে আর কার কি হয়েছে জানি না, তবে চামেলি বেগমের একটা সুবিধা হয়েছে, তার ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। কর্মচারী বাড়াতে হয়েছে, আয় এবং ব্যবসার আয়তন দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে পাল্লা দিয়ে।
শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আচমকাই ২০২৪ সালে ২০১৬ সালের প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষার সুত্র ধরে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা চাকরি পেয়ে গেলেন কাঞ্চন মাস্টার। মা কে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল। কিন্তু কথায় বলে সুখ সবার কপালে সয়না।
কাঞ্চন মাস্টারের মায়ের শখ হল ছেলেকে সংসারী দেখবেন। কোন মা-বাবা ই না চায় ছেলে সংসারী হোক। নাতি নাতনির হাসি কান্নার ঐশ্বর্যে উপছে উঠুক ঘরদোর। শুরু হলো মেয়ে খোঁজা। এলাকা জুড়ে যত ঘটক আছে কাউকেই তলব করতে বাদ দিলেন না চামেলী বেগম। দূর দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনদেরও মেয়ে দেখার তাগিদ দিতে থাকলেন বার বার। কাঞ্চনের চুলে সামান্য পাক ধরেছে বটে, সেটা না হয় রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া যাবে। কিন্তু বয়সটা! তাকে তো আর কমানো যাবে না। ছেলে সরকারি চাকরি করে তাই বয়সটা কোন বাধাই হলো না। একের পর এক ১৮ থেকে ৩৮ বয়সি মেয়ের সন্ধান আসতে থাকল। মেয়ে আহামরি সুন্দরী না হলেও তার সুদর্শন ছেলের সঙ্গে মানানসই তো হতে হবে। আবার পরিবারকেও হতে হবে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার মত। মা ও ছেলে মিলে দেখতে থাকলেন অগ্র পশ্চাৎ ডান বাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। পরিবারের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও তাদের অনুসন্ধানের অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। তিন-চার মাস ধরে প্রায় প্রতিটা রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন বিভিন্ন জায়গায় শহরে ও গ্রামে অনুসন্ধান করে শেষ পর্যন্ত ঠিক করে ফেললেন বিয়ের দিনক্ষণ।
নির্দিষ্ট দিনে ধুমধাম করে ব্যান্ড পার্টি সহযোগে কলকাতা থেকে আনা ঘোড়ায় টানা রাজকীয় রথে চেপে কাঞ্চন মাস্টার চললেন বিয়ে করতে। সেই দেখে নেমন্তন্ন না পাওয়া দু চারজন কুচুটে মাতব্বর ফুটকাটে, আদিখ্যেতা দেখে আর বাঁচি নে বাপু, বুড়ো ছেলের বিয়েতেই এত! কচি খোকা হলে কি করত কে জানে?
কচি খোকা হলে কি করত জানে না চামেলি বেগম, কিন্তু সিনেমা সিরিয়ালে দেখা বিয়ের মত মফস্বল শহরে একটা নজির সৃষ্টি করার জন্য কোন আয়োজনই তিনি বাদ দেননি। নবদ্বীপ থেকে লাইট প্যান্ডেল আনিয়েছেন, কলকাতার রথ, বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানা, পরানের পান্তুয়া, মিষ্টিমুখের রসগোল্লা, পাণ্ডুয়ার রাঁধুনি কোন কিছুই বাদ দেননি। একমাত্র ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাজার থেকে সেরার সেরা জিনিসগুলো কিনেছেন নিজে পরখ করে।
বাড়ির সামনে ফাঁকা জমিতে প্যান্ডেল বেঁধে তিন চারদিন ধরে চলল খানাপিনা নাচাগানা হইহুল্লোড়, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা মিটে গেলে আত্মীয় কুটুম্বরা ফিরে গেল যে যার বাড়িতে। কাঞ্চন মাস্টার বউ নিয়ে চললেন হানিমুনে। প্রায় দিন ১৫ সমুদ্রের নোনা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ফর্সা রঙে তামাটে ছোপ ধরিয়ে ফিরে এলো ঘরে। মনের মধ্যে উড়ু উড়ু ঘোর লাগা ভাব। মনে হয় বৌকে বুকে জড়িয়ে রাখে সারা দিন, তবে চক্ষু লজ্জার মাথা সবটা খেতে পারে নি এখনো।
তাও যতটা পারে চোখে রাখছে। ও দিকে, সদ্য কলেজ পাস বউ সারাদিন ব্যস্ত ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে। খাওয়া শোয়া বেড়ানো ঘুমানো প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে বিলিয়ে দিচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। ভেসে যাচ্ছে ভার্চুয়াল জগতের প্রশংসা আর কটুক্তির বন্যায়। কারো কারো কটুক্তির জবাব দিতে নিয়ে ফেলছে কড়া সাহসী (অশ্লীল) পদক্ষেপ ছাড়াচ্ছে শ্লীলতার মাত্রা। স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও তার এই কদর্য রূপগুলো সম্পর্কে বিশেষ ওয়াকিবহল ছিলেন না কাঞ্চন মাস্টার। তার বেশিরভাগ বন্ধুর ছেলে মেয়েরাই ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ে। তাদের কাছে শোনা নানান অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ কাঞ্চনমাস্টার প্রথমদিকে বউয়ের ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশেষ হস্তক্ষেপ করতে চাননি। তাই তার ভালো লাগা মন্দ লাগা গুলোকে নিজের ভালো লাগুক না লাগুক প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন।
বাপের বাড়িতে মায়ের কড়া নজরদারিতে তার ভার্চুয়াল স্বপ্নগুলো বাধা প্রাপ্ত হত বারবার। এখানে শ্বশুরবাড়িতে সে অসুবিধা নেই। শাশুড়ি নিজের ব্যবসা দেখেন। ঝাঁট পাট, ধোয়া মোছা ও রান্নার আলাদা আলাদা লোক আছে। স্বামী সারাদিন স্কুল টিউশন নিয়ে ব্যস্ত। তার মত সুখী আর কে আছে জীবনে গাইতে গাইতে একটার পর একটা রিল তাকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করছে রিয়েল লাইফ থেকে ঠেলে দিচ্ছে ভার্চুয়াল রিল লাইফে। মোবাইলে চার্জ না থাকলে তার পাগল পাগল লাগে নেশাগ্রস্থ মানুষের মত অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে কখনো কখনো। ছেলের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করতে চাইলেও সবকিছুই তিনি নজর রাখেন। একদিন ছেলেকে ডেকে বললেন, — বাবা কাঞ্চন বৌমার আচার ব্যবহার সব সময় আমার যেন ঠিক স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। দু মাস প্রায় হয়ে গেল তুমি কিছু বুঝতে পারোনি?
মা কি বলতে চাইছে তার সবটা না বুঝলেও সেও যে কিছু কিছু অসঙ্গতি দেখেছে সেটা মায়ের কাছে আড়াল করার জন্য সে বলে, — কই নাতো। তেমন কিছুতে চোখে পড়েনি, ছেলেমানুষ বয়স কম সবকিছু গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে বৈকি।
ছেলের চোখের দিকে চেয়ে মায়ের অভিজ্ঞ চোখ সবই বুঝে যায়, তাই কথা না বাড়িয়ে বলে, — না এমনি নতুন জায়গা নতুন মানুষজন কত রকম সমস্যা হতে পারে। বলে চামেলী বেগম আর ছেলের সামনে না দাঁড়িয়ে নিজের কাজে চলে যান।
স্বামী স্ত্রীর বয়সের বিস্তর ব্যবধান যুগ মানসিকতার মত শুধু শরীরে নয় তাদের মনেও ছাপ ফেলেছিল। কাঞ্চন মাস্টার ঠিক যেমন করে স্ত্রীকে কাছে পেতে চাইছিলেন স্ত্রীর ভার্চুয়াল জগত বারবার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল তার চাওয়ায়।
বন্ধুদের কাছে বেশি বয়সের পুরুষের তরুণী বউ নিয়ে অনেক গাল গল্প ইতিমধ্যেই সে শুনেছে। গল্পগুলোর সত্য মিথ্যা যাচাই না করলেও একটা অজানা আতঙ্ক তাকে ঘিরে রয়েছে সেই বিয়ের দিন থেকেই। তাই ধীর পদক্ষেপে এগোতে চাইছিল সে। মায়ের মনে সন্দেহের উদ্রেক দেখে তারও একটু ভয় হয়। সে বউকে আরেকটু নিজের নিয়ন্ত্রণে আনবার জন্য উদ্যোগী হয়। রবিবার ছুটির দিন ঘুম থেকে উঠবার তাড়া নেই যদিও টিউশনের ব্যাচ আছে তাতে একটু দেরি হলে অসুবিধা নেই। তাই শনিবার রাত্রে বউয়ের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গিয়ে বউয়ের হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বউকে কাছে টানতেই এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে বউ যা বলল তা শোনবার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না কাঞ্চন মাস্টার। বউ বলল, — যেমন আছেন তেমনি থাকুন বেশি স্বামী গিরি ফলাতে আসবেন না। চুল পাকা তোবড়ানো বুড়ো! তার আবার শখ কত। নেভানোর ক্ষমতা নেই আগুন জ্বালানোর জন্য ছটফটানি।
'স্বামীগিরি' — এ আবার কেমন শব্দ। এ শব্দ আগে কোথাও শুনেছে বলে মনে করতে পারে না কাঞ্চন মাস্টার। 'দাদাগিরি' শুনেছে, 'দিদিগিরি' শুনেছে তাই বলে 'স্বামীগিরি'!
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, চোখের সামনে শুধুই সরষে ফুল। মনে হয় মাথা ঘুরে পড়েই যাবে। সৌখিন পুরুষ বলে বন্ধু মহলে তার খ্যাতি আছে। পড়াশোনা আর মায়ের কাজে টুকটাক সাহায্য করতে গিয়ে কলেজ জীবনে প্রেম ট্রেম করা তার হয়ে ওঠেনি ঠিকই। তাই বলে এইরকম অভিযোগ। সবে মাত্র দু মাস বিয়ে হয়েছে। খুব বেশি হলে তারা ৭-৮ বার মিলেছে। তাতেই বউ তাকে এরকম একটা জঘন্য পারফরমেন্সের সার্টিফিকেট দেবে সে ভাবতেও পারেনি।
কাঞ্চন মাস্টার ভাবে তখন অরুনের কথাটা মেনে নিলেই বোধহয় ভালো হতো। বিয়ের আগেই অরুণ বলেছিল কিছু ওষুধ পত্রের কথা। নিজের ক্ষমতার ওপর আত্মবিশ্বাসী কাঞ্চন সেদিন পাত্তাই দেয়নি অরুনকে।
একবার ভাবে রাত তো বেশি হয়নি, সবে দশটা অরুণ কে ফোন করে ওষুধের নামটা জেনে নিয়ে এক্ষুনি ফার্মেসি থেকে নিয়ে চলে আসে। আবার ভাবে না থাক। তারও তো একটা আত্ম সম্মানবোধ আছে। বউয়ের কাছে ওই কথা শোনার পর ওষুধ খেয়েই হোক আর না খেয়েই হোক এক্ষুনি এক্ষুনি তার ধারে পাশে যাওয়াটা ঠিক হবে না। তাই ফোনের ডায়াল প্যাডে অরুণের নাম্বারটা বের করে ও ফোনটা সরিয়ে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে। ঘুম কি আর সহজে আসে। বউয়ের মোবাইলের নীল আলো মাঝে মাঝে তার চোখেও এসে পড়ে।
সকালবেলা ঘুম ভাঙতে কাঞ্চন মাস্টার জীবনে প্রথমবার মর্নিং ওয়াকে বেরোয়। সে পড়েছে নিয়মিত স্বাস্থ্য চর্চা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার শরীরের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। সে ঠিক করে এই অপমানের শোধ সে যেমন করেই হোক একদিন নেবেই। প্রতিদিন সকালে হাঁটা, হালকা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ড্রাই ফ্রুট, ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া এবং তেল চর্বি কম খাওয়া শুরু করলেন। আর একটা জিনিস করলেন যেটা তার জীবনে এরকম ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা কল্পনা করেনি মোটেও।
বউয়ের গতিবিধি নজর রাখার জন্য ফেসবুকে ডুব দিলেন। পুরোনো একটা ফেসবুক আইডি ছিল সেটা বাদ দিয়ে নাম ও বয়স ভাঁড়িয়ে নতুন আইডি খুললেন বউকে পাঠালেন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। বউয়ের গতিবিধি নজর রাখতে রাখতেই নজর গেল বিজ্ঞাপনে। বউয়ের কাছে রাতারাতি হিরো হবার শখে, একটু একটু করে ঢুকতে থাকলেন বিজ্ঞাপনের ভিতরে। হাজার হাজার পুরুষ কিনেছে এবং ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে। সে রকমই একটি বিজ্ঞাপনে হাজার খানেকের উপর নারী-পুরুষের ইতিবাচক মতামত তাকে প্রলুব্ধ করে। সে নিশ্চিত জানে এগুলো বিজ্ঞাপনের চমক ছাড়া আর কিছু নয়। তবুও মন মানে না। বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। তেমনি স্ত্রীর অপমানের জ্বালা থেকে নিজের পৌরুষকে বাঁচাতে দ্রুত কার্যকরী কিছু একটা তার চাই। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
বৈবাহিক জীবনের চরম সুখ আস্বাদনের নেশায় ফেসবুকের বিজ্ঞাপন দেখে কিনে ফেলে তিন মাসের কম্বো প্যাক মালিশ তেল ও ক্যাপসুল। ব্যক্তিগত চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে শুরু করেন ব্যবহার। ব্যবহারের তিন সপ্তাহের মাথায় ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ হয়। বুঝতে পারেন ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তার শরীরে। স্বাভাবিকতা হারিয়ে তিনি ক্রমশ যৌন বার্ধক্যের শিকার হয়ে পড়ছেন।
দু তিনজন বন্ধুকে বিষয়টা বলাতে তারা শুধু জুতো মারতে বাকি রেখেছিল। যে অরুন তাকে বিয়ের আগে ওষুধের পরামর্শ দিয়েছিল সে তো কথা বলাই বন্ধ করে দিল। সব শুনে বন্ধু আবার হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আব্দুলের পরামর্শে যেতে হল যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে। ডক্টর সেন এর কাছে শুনে শিউরে উঠলো কাঞ্চন মাস্টার স্থায়ী অফিস, নির্দিষ্ট ঠিকানা বা কারখানা বিহীন শুধুমাত্র ভার্চুয়াল এই বিদেশী কোম্পানিগুলোর ওষুধ বিক্রির এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কথা। ডক্টর সেন আরো বলেছেন আপনার কপাল ভালো যে মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যে আপনি বুঝতে পেরেছেন এবং ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করেছেন। না হলে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতেন। সবকিছুর মধ্যে আসার কথা এই যে খুব শিগগিরই ওই ওষুধগুলোর প্রতিক্রিয়া কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
এরই মাঝে কাঞ্চন মাস্টার কোম্পানির দেওয়া কাস্টমার সার্ভিস নম্বরে ফোন করে প্রোডাক্ট এর গুনাগুন ও নিম্নমান নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল প্রত্যুত্তরে কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছিল টাকা ফেরত দেবে। শুধু কোম্পানীর পাঠানো নির্দিষ্ট লিংকে ব্যাংক ডিটেলস জমা করতে হবে। অনলাইনে ব্যাংক ডিটেলস জমা করতে করতে একটা ও টি পি আসে সেটাও নির্দিষ্ট বক্সে জমা করে কাঞ্চন মাস্টার। ও টি পি জমা করার পর থেকে একটার পর একটা মেসেজে নাজেহাল তার ব্যাঙ্ক একাউন্ট। তিন লক্ষ ছাপান্ন হাজার তিনশো টাকা গায়েব। যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বার ছেড়ে এখন সাইবার ক্রাইম থানার বারান্দায় ব্রিটিশ আমলের তৈরী শাল কাঠের কেদারায় বসে বিভিন্ন ধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক ও শালীন-অশালীন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ৪০ বছর ধরে সন্তর্পনে শালীনতার সঙ্গে জীবন যাপন করা কাঞ্চন মাস্টার।
___________________