Click the image to explore all Offers

গল্প ।। তপুর তারাগোনা ।। তপন মাইতি

stars

 তপুর তারাগোনা 

 তপন মাইতি


তপু বলল "আমি একসাথে তারা গুনেছি বহুবার"...আমি বললাম কীভাবে? আমাদের একটু আধটু বল্? নয়তো বুঝব কি করে? তুই কতবার কার সাথে তারা গুনেছিস? বললেই হল? তপু বলল তুই আমাকে এত বড় কথা বলতে পারলি? তোকে বিশ্বাস করে আমার জীবনের কী কথা বলিনি বলতে পারিস? তবে শোন্ ছোট্ট বেলায় আমার ঠিক ততটা মনে নেই। অনেক দিনের কথা তো তবু বলবার চেষ্টা করছি। শৈশবকালে মায়ের কোলে আদর স্নেহ ভালবেসে "টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার" আরও যখন ছোট 'আয় আয় চাঁদ মামা টিক দিয়ে যা চাঁদের গায়েতে চাঁদ ভালবেসে যা...যখন তারাখসা পড়ত মায়ের স্নেহমাখা আদুরে হাত চোখে চাপা দিয়ে বলতেন ওসব দেখতে নেই বাবা...
বড় হয়ে সেলিব্রেটিদের তারা হিসেবে জেনেছি। মামা দাদার পুলিশের চাকরিতে যতবার প্রমোশন হয়েছে ততবার একটি করে তারা বেড়েছে। তখনও তারা গুনেছি। অনেক পরে জেনেছি কোন প্রিয়জন ছেড়ে চলে গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায় মানে তারার দেশে চলে যায়। 
সেই যাই হোক তারাদের 
ওই ছড়া-কবিতাটি পড়বার সময় গ্রীষ্মকালীন সন্ধ্যায় মাটির উঠোনে মাদুর পেতে ছড়া কাটতে কাটতে আমার ডান হাতের তর্জনী ধরে মায়ের সাথে তারা গুনেছিলাম আমার স্পষ্ট মনে আছে। তখন শৈশব কাল। প্রবল জানবার আকাঙ্খা। প্রবল দেখবার বাসনা। সামনে চেনা মানুষ পেলে প্রশ্নে জর্জরিত করবার বয়স। আরেকবার পেদানি খাওয়ার পর একসাথে তারা গুনবার কথা মনে আছে। সে কি আমার আড়ি যাকে বলে বাহানা। আমার বাটি ভর্তি সবচেয়ে বড় কাঁকড়া ও তার দাঁড়া। পাতে সবচেয়ে বড় পারশে মাছের ভাজা। আরও দিতে হবে। সে আর কে শোনে! বাহানার জোরে মায়ের বাটি। বাবার বাটি। কাকার বাটি। কাকিমার বাটি। ঠাকুরদা ও ঠাকুরমার বাটি। আমার থালার চারপাশে রাখা সত্ত্বেও কান্না থামছে না। না আমার সেই কাঁকড়াটি লাগবে...কোনকিছুতেই সামাল দিতে না পারায় সামনে উনুনের পোড়া কাঠ দিয়ে দিল দুঘা। ব্যাশ সব শেষ। খাওয়া দাওয়াত ষষ্ঠী পুজো হয়ে গেল। কাঁই কাঁই অ্যাঁ....বিকট শব্দ কাঁদতে লাগলাম। ঠাকুরমা এসে গালে একটি চুমু খেয়ে বলেছিল 'এরকম করে না সোনা' ওই দ্যাখ 'আয় আয় চৈ চৈ কুড়ো খাবি আয় পড়েছি আমার নাতির পাল্লায়। খেতে দিলে বড়ো মাছের মুড়ো দেব। মাংস হলে মুরগীর ঠ্যাং দেব। হাট বাজারে গেলে দুহাত ভরে মিষ্টি দানাদার দেব। বাহানার গড়াগড়িতে মাটি মাখা আমাকে তুলে নিয়ে তারা গুনালো 'ওই দ্যাখ তপু তারাগুলো কি সুন্দর মিটমিট করে জ্বলছে, ওই জ্বলজ্বল তারাটি আমার না তোর? চুপ করে শুনে যেতাম এটি সপ্তর্ষিমণ্ডল, ওটি ক্যাসিওপিয়া, সেটি কালপুরুষ, ওই সবচেয়ে এক স্থির তারাটি তোর মতো। ওর নাম কি জানিস? ওর নাম হচ্ছেকে ধ্রুবতারা। সবসময় উত্তর আকাশেতে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম ভাবে জ্বলে। এসব শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে কখন যে লুকিয়ে মা খাবারের থালা ঠাকুরমার বসিয়ে চলে গেল। শীল নড়া দিয়ে ভেঙে একটুকরো করে মুখে ভাত দিচ্ছে খেয়ে নিলাম। এরকম পাঠশালার মাস্টার, দিদিমণি, টিউটর ও তারা গুনিয়েছেন। আর একবার গুনেছি বলব না থাক।গোপন করছিস কেন? বলবি না? না বলে দিবি? এরকম করবার মানে কি আছে? আর প্রেম ট্রেম কথা বলছিস হয়তো? আজকালকার ছেলেমেয়েদের হামেশাই হচ্ছে এবং আছেও। আমরা ভাবব তপুবাবু ব্যাকসাইডে একটা খারাপ কিছু গোপন করতে চাইছে আরে না রে না তোর কাছে সব কথা বলি। বলতে বড় ভালো লাগে। তোর মতো এমন শ্রোতা আমি পাইনি। তোকে আমার মনের কথা বলা ছাড়া আর কাকে বলব? ইচ্ছে থাকলে উপায় নেই। এই কথাটি কাউকে বলিনি। তোকে বিশ্বাস করে বলছি। আমি থামিয়ে বলছি। নিশ্চয় কোন চব্ব আছে? নয়তো এমন তো করিনি তো আমার কাছে? এত ভূমিকা করিস না তো আমার কাছে? কি ইন্টু পিন্টু ব্যাপার স্যাপার নাকি রে? হ্যাঁ! কথাটি কাউকে বলবি না বলে দিলাম।  তোকে বিশ্বাস করে বলছি কিন্তু...
সানি বলে একটি মেয়েকে ভালবাসতাম। দক্ষিণ পাড়ায় সবসময় পড়ে থাকতাম ওকে একটু চোখের দেখা দেখব বলে। সাইকেলে চক্কর মারতাম। লোকের হাতে চিঠি পাঠিয়ে অনেক কষ্টে সে হ্যাঁ বলেছিল। সরস্বতী পুজোয় বাংলার মোড়ে যাত্রা দেখতে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখেছিলাম। তাকে আমি চাঁদের উপমা দিয়ে তুলনা করতে লজ্জায় রাঙা হয়ে দুটি তারা দেখিয়েছিল আকাশে। আজও সেই দুটি তারা দেখি দুটি তারার চোখে...
==================== 

নামঃ তপন মাইতি
ঠিকানাঃ গ্রামঃ পশ্চিম দেবীপুর; পোঃ দেবীপুর; থানাঃ মৈপীঠ কোস্টাল; জেলাঃ দঃ২৪ পরগণা; পিন-743383; পশ্চিমবঙ্গ। ভারতবর্ষ। যোগাযোগঃ 9679159597

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.