অণুগল্প ।। ইচ্ছে পূরণ ।। পাভেল আমান
0
September 01, 2025
পাভেল আমান
শিক্ষকরায় মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম সৃজনশীল চিন্তাভাবনা নিবেদিত প্রাণ মানসিকতা সর্বোপরি যথার্থ পাঠ দানের মধ্যে দিয়ে তারা নিজেদের এই মহান পেশায় ব্রত রেখেছেন। তারা তো বাগানের মালির মত পরিচর্যা করে কত গাছকে ফুলেফলে ভরিয়ে তুলল। তারাই তো যুগ যুগ ধরে এই শিক্ষকতা সামাজিক দায়ীবদ্ধ থাকে গুরুত্ব সহকারে পালন করে আসছে। প্রকৃত শিক্ষাদানের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে মনুষ্যত্বের বিকাশে দেশের নাগরিক রূপে গড়ে তোলে। বাবা মায়ের পরেই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে শিক্ষকেরাই সব থেকে শ্রদ্ধেয় ও সম্মানীয়। সপ্তম শ্রেণীর আজিজ প্রথম থেকেই তার মনে শিক্ষক হাওয়ার ইচ্ছেটা পুষে রেখেছিল। তার বাবা মাকে সে প্রায়সই বলতো-" তোমরা যতই আমাকে নিয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের স্বপ্ন দেখো না কেন আমি কিন্তু শিক্ষক হতে চাই। শিক্ষক হয়ে আমিও যথার্থ পাঠ দানের মধ্যে দিয়ে সমাজ গড়ার একজন রূপকার হব। " ছেলের গুরু গম্ভীর বলিষ্ঠ কথাবার্তা শুনে তার বাবা-মা তাকে উপদেশ বার্তায় বলে-" বাবা তুই আগে ঠিকঠাক পড়াশোনাটা করে ভালো রেজাল্টের পরে
মনের ইচ্ছেটাকে পূরণ কর। " বাবা মায়ের আশ্বাস বাণীতে আজিজ মনে মনে তার ইস্কুলের বিশ্বজিৎ স্যারের কথার সঙ্গে অনেকটাই মিল খুঁজে পাই। তিনিও ক্লাসে বলেছিলেন-" তোমরা যে যার জীবনে যা কিছু হও না কেন তার নেপথ্যে তোমাদের পড়াশোনায় প্রধান সাফল্যের চাবিকাঠি"। স্যারের এই মূল্যবান ও মোড় ঘোরানো কথাগুলো আজিজের অবচেতন মননকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। সেই প্রায়শই নিবিষ্টচিত্তে যাবর কাটতো শিক্ষকের এই মূল্যবান কথাগুলোকে নিয়ে। এভাবেই প্রতিটি ক্ষণে আজিজ সে একটি স্বপ্নকেই লালন করত-" আমি একদিন যোগ্যতার সাথে আপন কৃতিত্বে বিশ্বজিৎ স্যারের মতো নিজেকে সম গোত্রের করে তুলতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ প্রদানের মধ্যে দিয়ে আমার ভিতরের শিক্ষকতার সঠিক পরিচর্যা জল হাওয়াতে বীজ টিকে গাছে পরিণত করব ।তারপর থেকেই তার মনের ইচ্ছেটাকে লালন করে সে পড়াশোনাকেই পাখির চোখ করে তার ভবিষ্যৎ জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের নেশায় পরিণত করে। চলমানতার এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই চক্ষু নিমেষে পরিবর্তন হয় সেই পরিবর্তনশীলতাকে আঁকড়ে ধরেই মানুষ বেঁচে থাকার আগ্রহ ও রসদ খুঁজতে থাকে। তবুও কিছু মানুষ ব্যতিক্রমী চেতনার জাগরণে নতুন কিছু সৃষ্টির তাগিদে প্রতিটি ক্ষণে ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে দিয়ে নিজেকে নতুন করে গড়তে শেখে। একটু একটু করে জমে থাকা আসা ভাবনা স্বপ্নগুলো যেন ইচ্ছেতে পরিবর্তন হয় সেখান থেকেই পূর্ণতা হাতছানি। আজিজ এভাবেই বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত বাধা বিঘ্নতা প্রতিকূলতা কে পাশ কাটিয়ে আত্মস্থ করে নিজেকে গড়ে তুলেছে শিক্ষক হবার প্রচেষ্টায়। যতই চারিদিকে দুর্নীতি অস্থিরতা রাজনৈতিক টানা পড়েন সামাজিক অবক্ষয় ঘটুক না কেন সে তার লক্ষ্যে অবিচলিত।সে উপলব্ধি করেছে আগামী জীবনে ইচ্ছা স্বপ্নকে পূরণ করতে গেলে পড়াশোনাটাই সবথেকে জরুরী। পড়াশোনার সোপান বেয়ে সাফল্য প্রাপ্ত হয়। তুমি থেমে থাকলে চলবে না লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে স্বপ্নকে সম্পূর্ণ করতে সর্বোপরি ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত করতে হলে এখনো গুটিগুটি পায়ে মনবলকে সাঙ্গ করে আজিজকে এগিয়ে যেতে হবে সম্মুখের পথ ধরে।
=============
রচনা -পাভেল আমান- হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ