গল্প।। হারাধনবাবুর ঢেউ নেওয়া ।। কাজল আচার্য
হারাধনবাবুর ঢেউ নেওয়া
কাজল আচার্য
হারাধনবাবুকে চৌধুরীপাড়ার সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজেকর্মে আর কাউকে পাওয়া না গেলেও হারাধনবাবুকে ঠিক পাওয়া যাবে। ইদানিং তিনি খুব চাপে আছেন কেননা চব্বিশের পুজোর আগে ট্রেনে একটি ছেলের সাথে খুব চেনাজানা হয়। ছেলেটা ওর বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুব দুঃখ করে বলেছিল ওর বৌ পিকো আর ফলস পাড় বসানো কাজ করে আর ওর সামান্য ইনকাম এই দিয়েই সংসার চলে। জানেন দাদা মাঝে মাঝে চোখে জল এসে যায়। হারাধনবাবুর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। একদিন বৌকে না বলে দুটো শাড়ি পিকো আর ফলস্ পাড় বসানোর জন্য ছেলেটাকে দিয়ে দিলেন কিন্তু অনেকদিন হয়ে।গেলো সে ছেলে আর ট্রেনেই আসে না। ট্রেনের কয়েকজনকে জিজ্ঞেসা করেও ওর কোনো ঠিকানা পাওয়া গেল না। এমন অবস্থা হল রাতে চোরার কিলের মত না বলতে পারে না সইতে পারে। ঘটনা শুনে সুস্মিতা অর্থাৎ হারাধনবাবু বৌ কান্নাকাটি করে একসা, আমার পছন্দের শাড়ি দুটো তুমি...
একসময় কথায় কথায় বলতেন আমি একনজরে মানুষ চিনি বুঝেছো। এখন সে সংলাপ ট্রাঙ্কে তুলে রাখার মতো অবস্থা।
কাজেই ট্রেনে খুব কথা বলেন না জয়ন্ত নামে একটা ছেলে হেল্থ ডিপার্টমেন্টে কাজ করে ওর সাথেই
গত পাঁচ বছর যা একটু আধটু কথা বলেন। ভোটের ডিউটি আসার পর জয়ন্ত বললো ভোটের ডিউটিতে যাচ্ছেন আমি অনেক আগে এপ্লাই করে দিয়েছি এবার আমার ডিউটি তাই আসেনি।
পরেরদিন জয়ন্ত বলে দাদা আপনি তো টিচার আমাকে ক্লাস নাইনের একটা বই একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। হারাধনবাবু সাফ বলে দিলেন ওটা স্কুলের ছেলে মেয়েদের আমরা দেই। মনে মনে বলেন আর কাউকে উপকার নয়।
এর ঠিক দশদিন পরে ট্রেনে গিয়ে হারাধনবাবু শুনলেন জয়ন্ত
খুব অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি ছিল দু'দিন হল বাড়ি ফিরেছে। ট্রেনের আর একটা ছেলে নিরুপমকে
বুঝিয়ে সুঝিয়ে আন্দজ মতো ওর পাড়ার ঠিকানা দিয়ে এক রোববার পাঠানো হল।
সোমবার এসে সে ছেলে বললো জানেন হারাধনদা
আমি জিজ্ঞেসা করেছি তার পরের বাড়িটাই ওর। হেল্থে কাজ করে জয়ন্তর বাড়িটা কোথায় বলতে পারেন ঠিক সেই সময় বাইরে এসে আমাকে দেখে ঘরে ঢুকে গেলো
ওই ভদ্রলোক বললেন উনি তো শাড়ির দোকানে কাজ করে। অবস্থা বুঝেছেন গত পাঁচ বছর যাবৎ
আমাদের... হারাধনবাবু মনে মনে ভাবেন আর কত ঢেউ নিতে হবে কে জানে।
Kajal Acharaya
Elson Sapphire, A-4, Bl-1
Rabindrapally (Near Chandi Mondir)
P.O- Nabapally
P.S- Barasat
Dist- North 24 Parganas