অণুগল্প ।। কাজের মাসী ।। আশীষকুমার চক্রবর্ত্তী
0
September 01, 2025
কাজের মাসী
আশীষকুমার চক্রবর্ত্তী
আমাদের কাজের মাসীটার এক দোষ। কাজ করতে করতে একটানা বকে চলে, বিরামহীন। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই , আজ না আমাদের পাশের বাড়ির বৌ-টা আত্মহত্যা করেছে। কি জানি কি কারন। এমনিতে বেশ মিলমিশ ছিল স্বামী স্ত্রীর , কিন্তু কদিন ধরে রোজ খিচিমিচি। কি যে হয়েছিল ওদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। পুলিশ এসেছিল। কিংবা অমুকের স্বামীটা রোজ মদ খেয়ে এসে বৌকে পেটায়। বাচ্চাটা অসুস্থ,তার কিছু ভালো মন্দ খাওয়ার দরকার তা না সেই টাকা ওকে দিতে হবে মদ খাওয়ার জন্য।
সাধারণত আমি এসব কথায় কান দিইনা।
কিন্তু আজ হঠাৎ কানটা চলে গেল। আমার বৌকে উদ্দেশ্য করে বলল, বলো,ছোট বেলাটাই ভালো ছিলো। কত মজার ছিল। জানো আমাদের বাড়িতে না অনেক আমগাছ ছিল। কত রকমের আর কি মিষ্টি তার স্বাদ। ঝড় হলে আমরা ভাই বোনেরা ঐ বাগানে গিয়ে আম কুড়োতাম। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে তুমুল ঝোড়ো হাওয়া। গাছগুলো এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে সঙ্গে বিদ্যুৎ চমক। দুপুর বেলাটাকে মনে হচ্ছে সন্ধে হয়ে গেছে। মা চিৎকার করে গালাগালি দিচ্ছে, দস্যি মেয়ে , ধিঙ্গি মেয়ে ছেলেদের সঙ্গে দস্যিপনা করে বেড়াচ্ছে। কেউ ওকে বিয়ে করবেনা।সঙ্গে থাকতো দাদার এক বন্ধু অমলেশদা। ভীষন ডানপিটে ছিল।
জানো সেবার না একটা মজার কান্ড হয়েছিল। বড়দার বিয়ের সময় বাড়িতে ভিয়েন বসেছিল। ভিয়েন বসানো মিষ্টি খাটের তলায় রাখা ছিল। হঠাৎ ওখান থেকে রস গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে আসছিল।
মাসী কাকে যেন বলল,দেখ মিষ্টির টিন টা নিশ্চই ফুঁটো,রস গড়িয়ে পড়ছে।ময়রা বেটা দেখেনি নাকি। ওমা ভেতরে উঁকি মেরে দেখে আমার ছোট ভাইটা একটা বাটিতে পান্তুয়া নিয়ে আপন মনে খাচ্ছে আর ওর হাতের কব্জি বেয়ে রস গড়িয়ে পড়তে পড়তে মেঝে ভাসিয়ে বাইরে চলে এসেছে।
একটা নির্মল বিষন্ন হাসি ভেঙে যাওয়া মুখটাকে ঘিরে বিদ্যুতের ঝিলিক দিয়ে উঠলো।
বড়ো মজার দিন ছিল সে সব। তারপর একদিন আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল। দেখতে সুন্দর ছিলাম।ছেলেও দেখতে ভালো ব্যাঙ্কে কাজ করে। ব্যাস হুট করে বিয়ে হয়ে গেল।
বিয়ের কদিন পর থেকেই আসল রূপ প্রকাশ পেল। অষ্টমঙ্গলা না পেরোতেই রান্না ঘরে। তারপর গায়ে হাত। গালাগালি।একবছর বাদে জানলাম ওর আরেকটা গোপন স্ত্রী আছে। আমায় আমার ছ মাসের বাচ্চা নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পাড়ার লোকের মধ্যস্থতায় নিচের একটা ছোট ঘরে থাকতে দেয়। লেখাপড়া ক্লাস টু অবধি কি করবো। সেই থেকে লোকের বাড়ি ঝি গিরি করে মেয়েটাকে মানুষ করি। আমার কপাল তো, সেও নিজের ইচ্ছেয় পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে একটা ছেলের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ে। বছর গড়াতে না গড়াতেই তিন তিনটে বাচ্চার মা।তারপর একদিন ওর স্বামী এক রক্ষাকালী পূজো র বিতর্কের মধ্যে খুন হয়ে যায়। তখন ওর বড়ো ছেলের বয়স চার ছোটটা একবছর। সেই থেকে আমি আবার ঐ পেশাদার ঝি। ভোর ছটায় বাড়ি থেকে বেরোই রাত দশটায় ফিরি।
কি সুন্দর জীবন। সংসার দুটো তো বাঁচাতে হবে।
কেন যে বড়ো হলাম।ছোট ছিলাম, থাকতাম। কি ক্ষতি হতো। মা বাবা ভাই বোন সবাই মিলে একসঙ্গে।ছোটবেলার মতো।
ওনার দুচোখ বেয়ে জলের ধারা।
আমি আজ আর বিরক্ত হলাম না। বললাম তারপর.....।
**********************
আশীষকুমার চক্রবর্ত্তী
২০৫ বি জি ঘোষ সরণী
ধাড়সা কাঁটাপুকুর (পশ্চিম )
জগাছা, সাঁতরাগাছি ,
হাওড়া -৭১১১১২