বাদল দিনে দ্বিতীয় কদম ফুল ভালোবাসার স্নিগ্ধ অথচ বিষণ্ন প্রতীক
রিভিউঃ মুনমুন পারভীন
বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক হুমায়ূন আহমেদ ওনার সাহিত্যকর্মে বারবার মানবমনের সূক্ষ্ম অনুভূতি ও প্রকৃতির অনবদ্য রূপকে একসূত্রে গেঁথেছেন। বাদল দিনে দ্বিতীয় কদম ফুল সেই সৃজনসম্ভারেরই এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি মানুষের মনের গভীর অনুভূতি, সহজ-সরল প্রেম, প্রকৃতির অন্তহীন সৌন্দর্য এবং জীবনের অপ্রকাশিত বেদনাকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা একদিকে পাঠককে আপন করে নেয়, অন্যদিকে চিন্তার খোরাক জোগায়। ওনার বাদল দিনে দ্বিতীয় কদম ফুল এই রচনাশৈলীর এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
এখানে "বাদল দিন" কেবল বর্ষার এক ঋতুচিত্র নয়। বরং এটি প্রতীকী—মানুষের অন্তর্জীবনের বিষণ্নতা, অস্থিরতা এবং নরম আবেগের এক শিল্পিত প্রকাশ। যেমন বর্ষার দিনে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে, তেমনি মানুষের মনে জমে থাকে অস্পষ্ট বেদনার আবরণ। আর "কদম ফুল"—এর সাদা, নরম প্রস্ফুটন—প্রতীক হয়ে ওঠে ভালোবাসার নির্মলতা ও হৃদয়ের চিরন্তন সৌন্দর্যের।
উপন্যাসটির প্রতিটি বাঁকে পাঠক উপলব্ধি করেন ভালোবাসার দ্বৈত রূপ—একদিকে এর স্নিগ্ধ আনন্দ, অন্যদিকে অপ্রাপ্তির বেদনাময় ছায়া। হুমায়ূন আহমেদের কলমে প্রেম কোনো কেবলমাত্র রোম্যান্টিক আবেগ নয়; বরং তা জীবনের গভীর সত্য। মানুষ হয়তো ভালোবাসার মানুষকে হারায়, সম্পর্ক ভেঙে যায়, সময় বদলে যায়—কিন্তু ভালোবাসার স্মৃতি, তার সৌরভ ও রঙিন ছায়া হৃদয়ে অমর হয়ে থাকে। যেমন কদম ফুল ফোটে ক্ষণিকের জন্য, কিন্তু তার সৌন্দর্য আমাদের মনে দীর্ঘকাল জাগরূক থাকে।
এই কাহিনির ভেতরে লুকিয়ে আছে প্রকৃতি ও জীবনের অনন্য মেলবন্ধন। বর্ষার দিন, কদম ফুল, স্নিগ্ধ বৃষ্টি—সবকিছু মিলেমিশে মানুষের আবেগকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। পাঠক যখন এই উপন্যাস পড়েন, তখন তিনি কেবল চরিত্র বা কাহিনি অনুসরণ করেন না, বরং নিজের ভেতরের স্মৃতি ও অনুভূতির সাথে গল্পটিকে মিশিয়ে ফেলেন। সেই কারণেই এই রচনার আবেদন চিরকালীন।
উপসংহার:
হুমায়ূন আহমেদের বাদল দিনে দ্বিতীয় কদম ফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতি ও মানুষ আসলে অবিচ্ছেদ্য। বর্ষার মেঘ, ঝরঝরে বৃষ্টি আর কদম ফুলের কোমল সৌরভের ভেতরেই লুকিয়ে আছে জীবনের গভীর আবেগ। প্রেম ক্ষণস্থায়ী হতে পারে, কিন্তু তার স্মৃতি চিরন্তন—যা মানুষের অন্তরে অমলিন রয়ে যায়। তাই এই রচনার মূল আবেদন হলো, ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, বরং প্রকৃতি ও স্মৃতির মাধ্যমে নতুন আকারে চিরকাল বেঁচে থাকে।
==================
মুনমুন পারভীন
ঠিকানা: দূর্গাপুর, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ