মাথা গোজার ঠাঁই
পাভেল আমান
প্রতিটা মানুষেরই একটি শখ থাকে মাথা গোজার ঠাই। অনেক আশা ইচ্ছে কষ্ট যাতনাকে আঁকড়ে ধরে তিলে তিলে তিলে কষ্টার্জিত অর্থের দ্বারা একটা ভালোবাসার বাড়ি বানানো। যেখানে সে স্বপ্ন দেখে একটু সুখ প্রশান্তি ও ভালোলাগাকে আঁকড়ে ধরে জীবনটাকে কাটানোর। সেটা কারো কাছে হতে পারে দালানকোঠা প্রাসাদ আবার কারুর কাছে দু কামরা ঘর বিশিষ্ট অতি সাধারণ মাথা গোজার ঠাই। পৃথিবীতে সবাই চাই একটি সাধের অনেক স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে একটা বাড়ি বানানোর। যার প্রত্যেকটি ইঁটে নিহিত আছে পরিশ্রম লড়াই সংগ্রামের ঘনঘাটার জীবনচরিত। তবুও মানুষ আশা ভরসা কে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার রসদ খোঁজে। দিনযাপনের মাঝে দগ্ধতা যাতনা ঘাট প্রতিঘাতকে অনায়াসে বরণ করে লক্ষ পূরণের অঙ্গীকারে গুটি গুটি পায়ে সম্মুখে চলতে থাকে জীবনাভিযানের আরও একটা ইতিহাস রচনাতে।
কিছুদিন আগেও হালিমের নব নির্মিত তিনঘর বিশিষ্ট
একতলা বাড়িতে আপন অস্তিত্ব জানান দিয়ে বহাল তবিয়তে আরো কয়েকটা বাড়ির সঙ্গে বিরাজিত ছিল। অনেক কষ্টে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাজমিস্ত্রি কাজ করে টাকা সঞ্চয়ে এক বছরের মধ্যে বাড়িটা তৈরি করেছিল। অনেক স্বপ্ন আশা আকাঙ্ক্ষা ভাবনার বাস্তবায়নে হালিম তার মাথা গোজার সুখের নীড় তৈরি করেছিল মুর্শিদাবাদের লালগোলার সীমান্তবর্তী তারানগর গ্রামে। পাশ দিয়ে চলে গেছে পদ্মা নদী। কিন্তু তার সুখটা যেন দীর্ঘস্থায়ী হলো না। এ বছর বৃষ্টির জলে টইটুম্বুর পদ্মার বিধ্বংসী আগ্রাসী ভাঙ্গনে চোখের সামনে তুলিয়ে গেল তার সাজানো গোছানো শান্তির বাসস্থান একতলা বাড়িটি। বর্ষার বৃষ্টিতে পদ্মা যেন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে মুহূর্তেই সীমান্তে তারানগর গ্রামের সাধারণ ছাপোষা মানুষদের তিলে তিলে বিনির্মিত স্বপ্নের আশ্রয়স্থল গুলোকে তার গর্ভে গ্রাস করে নিল। একেবারে নির্বাক নিশ্চুপ পাথরের মত দাঁড়িয়ে হালিম দেখতে থাকলো তার বহু কষ্টের সঞ্চয়ের বাড়িটা কে পদ্মার গর্ভে বিলীন হতে। এই ধ্বংসাত্ব দৃশ্য তার বুকের পাঁজরটা যেন চুরমার করে দিল। এভাবেই কত নিরীহ অসহায় মানুষের বাঁচার ঠাই টুকু পদ্মাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। আশা-ভরসা ভাষা হারিয়ে হালিমার যেন মূক ও বধির হয়ে গেছে। সে এখন গৃহহীন হয়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছে সরকারি ত্রাণ শিবিরে। সে কূলকিনারা হারিয়ে দিশেহারা। কিভাবে আবার নতুন করে আরো একটা মাথা গোজার ছাদ তৈরি করবে। মানুষের সহযোগিতা সরকারি ত্রাণই তার এখন একমাত্র সম্বল ও আশা-ভরসা। তবুও মানুষ বাচার প্রত্যাশাতেই নতুন স্বপ্ন দেখে। হয়তোবা একদিন বিপর্যয়ের অবসানে স্বাভাবিকতায় ফিরে পাবে তার ভিটেমাটি। আবারো মাথার উপরে ছাদ বানাবে। এই সুপ্ত ভাবনা ইচ্ছে গুলো নিয়েই হার না মানা মানসিকতায় হালিম পুনরায় বাচার অবলম্বন খুঁজতে থাকে। এরকম হালিমের মতো অসহায়তা নৈরাশ্যকে প্রতিনিয়ত বুকের ভেতর পুষে রেখে বেঁচে আছি কত মানুষ। সমাজ রাষ্ট্র প্রশাসন আরো একটু প্রসারিত দৃষ্টিতে মানবিকতার সাথে আন্তরিকভাবে হালিমদের মতো গৃহহীন সম্বলহীন মানুষদের পাশে দাঁড়াক। তাদের নিঃসঙ্গতার সাথী হয়ে সাধারণ মানুষেরাও তাদের প্রতি সমব্যথী সহানুভূতিশীল ও মানবিক হয়ে উঠুক।
-------------------------------
রচনা- পাভেল আমান -হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ
