ছোটগল্প ।। সুমন্ত কুন্ডু
দুশ্চরিত্রা
'ওই দ্যাখো তোমাদের পাড়ার সানি লিয়নি আসছে !'
রাস্তা দিয়ে আগত এক যুবতীর দিকে তির্যক ইশারা করে কথাটা বলল খোকন । নিবিষ্ট মনে রেড ঘুটিটায় তাক করছিল বিক্রম । খোকনের কথা শুনে মুখ তুলে তাকাল । মেয়েটার দিকে চোখ বুলিয়ে ঠোঁটের গোড়ায় একটা রসালো ইশারা এনে বলল 'আজ বোধহয় প্রোগ্রাম আছে বুঝলি । সাজ পোশাকের বহর দেখেছিস । আর কদিন পর তো একদম খুলে ঘুরবে । সানি লিয়নও হার মানবে রে ।'
কথাটা শুনে খ্যাখ্যা করে হেসে উঠল খোকন । পাশে দাঁড়ানো বাকি ছেলেগুলোও চোখের লোলুপ দৃষ্টিতে মেয়েটার গোটা শরীরটা চাটতে চাটতে আরও কিছু নোংরা কমেন্টস ভাসিয়ে দিল । এটা এলাকার উঠতি যুবকদের আড্ডার জায়গা । তাস, ক্যারাম আর গুলতানির সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের টোন টিটিকিরি মারাটা ওদের অলিখিত গণতান্ত্রিক অধিকার ।
মেয়েটিকে ওদের পাশ দিয়েই হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয় । নোংরা কথাগুলো কানে এলেও সেভাবে গায়ে মাখল না । পথেঘাটে এরকম হাজার কথা, বাঁকা চাউনি প্রতিদিন সহ্য করতে করতে চামড়া মোটা হয়ে গেছে তাই ওদের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করেই বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলে গেল ।
তবে ছেলেগুলো শান্ত হয় না । বিশেষত বিক্রম । নির্দিষ্ট এই মেয়েটির সম্পর্কে নানারকম অকথা কুকথা রটিয়ে আনন্দ পায় ও । মেয়েটির স্বভাব খারাপ, অনেকের সাথে রিলেশান আছে, হোটেলে লজে গিয়েও ফুর্তি করে বেড়ায় । ক্লাবচত্বরে কান পাতলে বিক্রমের মুখে এসব রসালো গল্প রোজই শোনা যায় । এর কতোটা সত্য এবং কতোটা বানানো তা বিচার করতে কেউ যায় না, কিন্তু বিশ্বাস করে সবাই । বিক্রম এলাকায় ভালো ছেলে নামে পরিচিত । পড়াশোনায় ভালো, পরিবারেরও মান মর্যাদা আছে সেই সুবাদে এলাকায় একটা সুনামও আছে । কাজেই বিক্রম যখন বলছে তখন নিশ্চয়ই সত্যিই বলছে, এ সমীকরণ সবাই সহজেই বিশ্বাস করে । এবং মেয়েটি যে দুশ্চরিত্রা একথা শুধু প্রমাণই নয় প্রতিষ্ঠিতও হয়ে যায় ।
যে মেয়েটিকে নিয়ে এতো কথা তার নাম পাপিয়া । বয়েস উনিশ, কলেজে পড়ে । বিক্রমের চেয়ে বছর সাতেকের ছোট । যথেষ্ট সুন্দরী এবং সপ্রতিভ । সাধারণত মফস্বলের মেয়েদের মধ্যে যে একটা জড়তা থাকে পাপিয়ার মধ্যে তার কিছুমাত্র নেই ।
মেয়েটির বাড়ি বিক্রমের পাড়াতেই । জ্ঞাতি না হলেও প্রতিবেশী । দুই বাড়ির মধ্যে সুসম্পর্ক আছে । বিক্রম পাপিয়ার দাদা স্থানীয় । পাপিয়ার বাবা-মাও বিক্রমকে বেশ স্নেহ করেন । মেয়ের পড়াশোনার অনেককিছু বিষয় ওর সঙ্গে আলোচনা করে । এলাকার অনেক অবিভাবকই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে 'এক্সপার্ট এডভাইস' নিতে বিক্রমের কাছে আসে । বিক্রমের কাছে অনেকে টিউশানিও পড়ে, এসময় পাপিয়াও পড়ত ।
পাপিয়ার বাবাই একদিন বিক্রমের কাছে এসে বলেছিল 'মেয়েটা সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে । একটা কোচিঙে পড়ছে বটে কিন্তু তুমি যদি একটু সায়েন্সের সাবজেক্টগুলো দেখিয়ে দাও তো খুব ভালো হয়'
বিক্রম আপত্তি করেনি । বলেছিল 'আচ্ছা সন্ধ্যের দিকে আসতে বলবেন । দু'চারজনকে নিয়ে আমি একটা ব্যাচ পড়াই, ওকেও না হয় পড়াবো । আসলে সামনে আমার জয়েন্ট আছে তো, নিজের পড়াশোনার চাপ খুব । সপ্তায় দু'তিন দিনের বেশি পারবো না কিন্তু'
বিক্রমের সেই আশ্বাসেই পাপিয়ার বাবা কৃতার্থ হয়েছিল । সেই থেকেই বিক্রমদার কাছে পাপিয়ার টিউশানি নেওয়া ।
পাপিয়ারও বিক্রমদাকে ভালো লাগত । শুধু ভালো লাগত বললে কম বলা হবে এই বিক্রমদার প্রতিই জন্মেছিল অনুরাগ । অনুরাগটির প্রকৃত নাম যে ভালোবাসা সেটাও বুঝতে বাকি ছিল না পাপিয়ার । সদ্য যৌবনে পা দেওয়া নারীহৃদয় 'বিক্রম' নামক সুদর্শন ছেলেটির উপস্থিতিতে চমকে চমকে উঠত । একদিন একান্ত নির্জনে বিক্রমকে মনের কথা বলেওছিল । বিপদ হল সেটাই ।
বিক্রম ভীষণ রেগে গিয়েছিল । নানারকম ভর্তসনা করে উড়িয়ে দিয়েছিল প্রায় । আসলে বিক্রম স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল একটা বাচ্ছা মেয়ের সাহস দেখে ! মেয়েরা 'বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না' শ্রেণীর জীব ! সেই মেয়েরই এতো বড় দুসাহস ! তাছাড়া সেসময় বিক্রমের বাজারদর ছিল আকাশছোঁয়া । অনেক লাস্যময়ী ললনাই তখন ওর প্রতি অনুরক্ত । তানিয়া নামক এক ত্বনির সঙ্গে তো সেসময় ফাটিয়ে প্রেমও করত । এমন সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে পাপিয়ার মতো 'বাচ্ছা' একটা মেয়ের প্রেম নিবেদনে সাড়া না দেওয়াটাই স্বাভাবিক । পাপিয়াকে তাই বেশ ধমক দিয়েছিল সেদিন । পাপিয়া ঘরে এসে কতোটা রাত অব্দি কেঁদেছিল জানা নেই তবে তারপর থেকে আর বিক্রমদার কাছে পড়তে যাওয়া হয়নি ওর ।
সে ঘটনাও আজ চার বছরের ইতিহাস হয়ে গেছে । এর মাঝে সময়ের সাথে মানুষ এবং পরিস্থিতি দুটোই বদলেছে । আবর্তন গতির অমোঘ নিয়মে যেমন সবুজ গাছেরও পাতা ঝরে ফ্যকাসে হয়ে যায়, মৃতপ্রায় নদীর চরও জলরাশির বিপুল উচ্ছলতায় ঢাকা পড়ে যায় তেমনই পাল্টে গেছে বিক্রম আর পাপিয়ার নিজ নিজ অবস্থানটাও । সেই 'বাচ্ছা মেয়ে' পাপিয়া এখন বসন্তের জোয়ারে পূর্ণ যুবতী । পথেঘাটে অনেক পুরুষেরই বুক কাঁপে পাপিয়াকে দেখে । উল্টোদিকে বিক্রমের সুসময় এখন পরতির দিকে । পড়াশোনায় ভালো হওয়া স্বত্বেও সেভাবে কোন জুতের চাকরি জুটিয়ে উঠতে পারেনি । বেকার হয়ে ফ্যাফ্যা করে ঘুরে বেড়ায় । বেশীরভাগ সময় ক্লাবেই আড্ডা দেয় । ক্রমাগত চাকরীর জায়গায় ঠোক্কর খেতে খেতে পুরনো উদ্যম হারিয়েছে । প্রাইভেট পড়ানোটাও বন্ধ করে দিয়েছে নিদারুণ নিরুৎসাহে । 'ভালো ছেলে' তকমাটা একেবারে মুছে না গেলেও অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে । ওর সে তানিয়াও এখন নেই । কেটে পরেছে অন্যকারোর হাত ধরে । একসময়ের ভালো ছেলে, সুপুরুষ বিক্রম এখন অনেকটাই ব্রাত্য ।
পরিবর্তে পাপিয়া এখন জনপ্রিয়তায় অনেকটা এগিয়ে গেছে । পাপিয়া এমনিতেই বেশ সুন্দরী তার উপরে ভরা যৌবনের ছোঁয়ায় পূর্ণ বিকশিত পদ্মের মতো মনোলোভা । মানুষের চোখে মেয়েদের রুপটাই আগে পড়ে । পাপিয়া রূপবতী । সবাইকে আপন করে নিতে পারার সহজাত ক্ষমতা আছে ওর, তাই সবার ঘরেই সাদর আমন্ত্রণ পায় । সাজগোজের ব্যপারে ওর আলাদা উৎসাহ আছে । একটা বিউটিসিয়ানের কোর্সও করেছে । পাড়ার মেয়েবউরা তাই প্রসাধনের দুর্নিবার প্রয়োজনে পাপিয়াকে কাছে ডাকে । রূপচর্চার যেকোনো ব্যাপারে ওর পরামর্শ নেয়, 'এক্সপার্ট অ্যাডভাইস'। পাপিয়াও নিদারুণ উৎসাহে সকলকেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসে । বিক্রমদের বাড়িতেও ওর অবাধ বিচরণ । বিক্রমের সদ্য বিবাহিতা বউদির প্রসাধন সজ্জায় প্রায়ই ডাক পরে পাপিয়ার । পাপিয়া আসে, বাড়ির সবার সমাদরও পায় । বিক্রমের মা পাপিয়াকে একটু বেশিই স্নেহ করেন । পাপিয়াকে ছেলের বউ করে ঘরে নিয়ে আসার একটা সুপ্ত বাসনাও যে মনে মনে লালন-পালন করেন সেকথা মাঝেমধ্যে প্রকাশ হয়ে পরে । পাপিয়াও যে একদম বোঝে না তা নয় ।
কিন্তু বিক্রমের বুকে পিন ফোটে । একদিন যাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, একদিন যাকে তুচ্ছ বলে অবজ্ঞা করেছিল আজ হটাতই সে বৃহৎ হয়ে উঠলে মানুষের মনে অবধারিত এক প্রদাহ সৃষ্টি হয় । বিক্রম সেই আগুনেই সর্বক্ষণ জ্বলে । পাপিয়ার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার একটা তীব্র ইচ্ছা জেগে ওঠে ।
বাড়িতে বা পাড়ায় পাপিয়াকে সেভাবে হেনস্থা করতে না পারলেও রাস্তাঘাটে পাপিয়ার নামে একধিক কুৎসা রটিয়ে কিছুটা প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করে । প্রতিদিনই চলেতে থাকে পাপিয়ার নামে নানা খারাপ কথার ফুলঝুরি । মনগড়া কথা রটতে রটতে মহাকাব্য হয়ে যায় । লোকজন বিশ্বাসও করে । ওর পোশাক আশাকে একটু আধুনিকতার ছোঁয়া আছে তাই সবাই ধরেই নেয় ওর চরিত্র খারাপ । মেয়েদের চরিত্রের শুদ্ধতা নির্ভর করে পুরুষের কল্পনায় । বিক্রম নিজে দায়িত্ব নিয়ে মনগড়া রসালো গুজব রটিয়ে এই কল্পনাবৃক্ষের গড়ায় নিয়মিত জলসিঞ্চন করতে থাকে । ক্রমে ক্রমে সে বৃক্ষ বড় হয় । এলাকার সবাই বিশ্বাস করে যে পাপিয়া দুশ্চরিত্রা ।
তবে পাপিয়া বেশি কান দেয় না । হাজার কুৎসার উপর দিয়ে বেশ সাবলীল গতিতেই হেঁটে যায় । বুকের কোথাও কি ওর ব্যাথা বাজে না । এই বিক্রমকেই একদিন ভালবেসেছিল । সে উপেক্ষা করলেও পাপিয়া তো প্রত্যাঘাত করেনি, তবু বিক্রমদার কিসের এত রাগ ? পাপিয়া কারণ খুজতে যায়নি । কুতসার জবাবে শুধু মৌনতার শক্ত একটা প্রাচীর তুলে দিয়েছে । এতে বিক্রমের গায়ের জ্বালা আরও বাড়ে । মাথার মধ্যে একটা ভয়ানক রাগ ফুঁসে ওঠে ।
লোভ ! লোভও জন্মায় না কি ? জন্মায় বোধহয় । পাপিয়ার শরীর মাঝে মাঝে কেমন যেন আগুন হয়ে মনকে ঝলসে দেয় ।
দিন এভাবেই কাটছিল । কিন্তু বিক্রম আর পাপিয়ার অঘোষিত লড়াইটা যে এমন একটা বাঁকের মুখে এসে দাঁড়াবে তা বিক্রম কখনও স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি । ও নিজেই যে এমন কোন ঘটনা ঘটাতে পারে তার বিন্দুমাত্র কোন আগাম আভাস ছিল না । তবু ঘটল ।
দিনটা রবিবার । ছুটির মেজাজ । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে অলসতা মেখে । পাপিয়া ক্লাবের পাশের রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছিল । আজ ক্লাবঘরটা তালাবন্ধ । কেন কে জানে ? রাস্তাটাও বেশ নির্জন । সন্ধ্যের অন্ধকারে কিছু গাছপালা শুধু ভূতের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে । কোনোদিকে না তাকিয়ে পাপিয়া একমনে হাঁটতে থাকে । বেশ অনেকটাই চলে এসেছে এমন সময়, অন্ধকার ফুঁড়ে হটাতই বিক্রম সামনে এসে দাঁড়াল । পাপিয়া ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে । স্থাণুর মত দাঁড়িয়েই রইল । বিক্রমদা কখনও এভাবে পথ আটকে দাঁড়ায়নি । আজ হটাত কেন ? কিছু বলবে নাকি ? পাপিয়া নিজেকে যতটা সম্ভব স্থির করে দাঁড়িয়ে রইল । বিক্রম একদম ওর সামনে এগিয়ে এল । চোখে চোখ পড়ল দুজনের । কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল দুজনেই । তারপর একদম আচমকাই ওকে সজোরে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দিল বিক্রম । পাপিয়া কিছু বলার আগেই বিক্রম ওর শরীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । ওর ওড়না ছুঁড়ে ফেলে দিল । হুক খুলে একটানে নামিয়ে দিল চুড়িদারটা । বাধা দেওয়ার মৃদু চেষ্টা পাপিয়া করল বটে কিন্তু বিক্রমের শক্ত হাতের বেষ্টনী ছাড়াতে পারল না । চিৎকার করে হয়ত লোক জড়ো করতে পারত কিন্তু কি মনে হয়, সেটাও করল না । দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ওর শরীরের ওপর পাশবিক উন্মত্ততায় ধ্বস্তাধস্তি শুরু করল বিক্রম । পুরুষালী দম্ভে হিসহিসিয়ে ওঠেছে শরীর । পাপিয়া একরকম বিনা বাধাতেই বিক্রমকে সুযোগ করে দিল কাঙ্ক্ষিত নারী শরীর ধামসানোর ।
প্রেম নয়, ভালোবাসা নয়, মায়া নয়, মমত্ব নয়, দক্ষতা নয়, ক্ষমতা নয় একজন নারীর কাছ থেকে একজন পুরুষ শুধুমাত্র 'শরীর' চায় । আপন মনেই একটু হাসি পেল পাপিয়ার ।
একদিন এই ছেলেটাকেই শরীর মনের সবকিছু সঁপে দিতে চেয়েছিল । অহংকারে অন্ধ পুরুষ সেদিন নেয়নি । সেদিন তার উপেক্ষা করার মতো দম্ভ ছিল । আজ চার বছরে সব অহংকার ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে । এমন ব্যর্থ পুরুষকে একটু করুণা করতে পারে পাপিয়া । তাই চুপ করে থাকে । ইচ্ছেমত বিক্রম ওর শরীরে দাপাদাপি করতে থাকে । পুরুষালি শক্ত পেশীতে চেপে ধরে পাপিয়ার নরম দেহ । চোট লাগে ওর । কাঁটাঝোপে ছিঁড়ে যায় হাত পা । রক্ত ঝরে । টনটনে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায় । তবু কিছু বলে না । মেয়েরা তো 'বুক ফাটে তবু মুখ ফোটেনা' গোত্রের জীব ।
উত্তেজনায় অবশ বিক্রম এসবকিছু খেয়াল করে না । শুধু কামতাড়িত একটা পুরুষ শরীর ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলতে থাকে এক নারী শরীরকে ।
এমনটা যে ও করতে পারে অতিবড় দুস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি । কি থেকে যে কি হয়ে গেলো । একাকী রাস্তায় পাপিয়াকে দেখেই হটাতই মনের ভেতর কেমন যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল । বাকিটা আর ওর নিয়ন্ত্রণে ছিল না । এলাকার মানুষ যদি একথা জানতে পারে তাহলে কি হবে ? 'ভালো ছেলে' বিক্রমের মুখোশটা একটানে ছিঁড়ে যাবে, প্রকাশ পেয়ে যাবে এক ধর্ষকের মুখ । ছি ছি ছি !
কয়েক মিনিট দুরন্ত ধস্তাধস্তির পর শান্ত হল বিক্রমের দেহ । উত্তেজনার আগুন স্তিমিয়ে পড়ার পরই একটা প্রবল অপরাধবোধ জেগে উঠল । সাময়িক উত্তেজনার বশে বিরাট বড় একটা পাপ করে ফেলেছে । প্রবল গ্লানি ঘিরে ধরে বিক্রমকে । বিধ্বস্ত ভাবে বসে থাকে মাটিতে । মাথা তোলার ক্ষমতাটুকুও নেই ।
পাপিয়া উঠে দাঁড়াল । ওকে ফিরতে হবে । সব সতীত্ব বুকে চেপে রেখে সমাজের সামনে দাঁড়াতে হবে । বিক্রমের দিকে তাকাল একবার । কিছু বলবে ? চারবছর আগে বলা সেই ভালবাসার কথাটাই কি ? না, বলল না, আর বলতে চায় না । শরীরের যন্ত্রণা ভুলে পোশাক ঠিক করে নিলো । যন্ত্রণায় শরীর ছিঁড়ে যাচ্ছে । কেটেছিঁড়ে যাওয়া হাঁটু থেকে চুইয়ে পড়ছে রক্ত । খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনমতে পা টেনে টেনে পাপিয়া চলে গেল ।
লজ্জায় বিক্রম মুখ তুলে তাকাতে পারল না । তাকালে দেখতে পেতো এক সদ্য ধর্ষিতা যুবতি কি নিদারুণ উদাসীনতায় পথ হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছে । না অভিযোগ নেই । বিক্রমের এই পাপকর্ম সবাইকে জানিয়ে দেবে এ অভিপ্রায়ও নেই । থাকলে অনেক আগেই চিৎকার করত । প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে বিক্রমের মতো পুরুষেরা চোখ, কান, নাক, জিভ সবকিছু দিয়ে পাপিয়াদের ধর্ষণ করে । সে যন্ত্রণা বুকে চেপে যে পাপিয়াদের চলাফেরা করতে হয় তাদের কাছে একদিনের সামান্য 'আক্ষরিক' ধর্ষণ কি আর বড় ব্যপার !
মেয়েদের প্রতিদিন ধর্ষণ হয়, প্রতি রাস্তার মোড়ে হয় ।'ভালো ছেলের' সম্মান রক্ষার্থে এইটুকু কষ্ট সয়ে নিতে পারবে পাপিয়া । শুধু বিক্রমরা পারবে কি আবার কখনও আয়নার সামনে মুখ তুলে তাকাতে ! অন্য কাউকে দুশ্চরিত্রা অপবাদ দিতে ?
______
খুব সুন্দর একটা গল্প।
উত্তরমুছুন