মননে দেশভক্তি, মরণে আত্মশুদ্ধি
একটি মুরগি প্রতিদিন ডিম পাড়তো।আর মালিক বিক্রি করে দিত। একদিন তার মালিক বদল হলো। সেই মালিক তাকে বললো- "তুমি আমার খুব প্রিয় মুরগি।আর দেশের স্বার্থে তোমার ডিমের ভীষণ প্রয়োজন। তোমাকে সোনার ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। তুমি লাগাতার ডিম পেড়ে যাও।এতোদিন শুধু ডিম পেড়ে গেলে, বলো কি পেয়েছো, বিনিময়ে? যেখানে যেখানে ছিলে, সব মনিব তোমাকে ঠকিয়ে গেছে। বিশ্বাস করো, আমিই বানিয়ে দেবো, তোমার সোনার ঘর।"মুরগি খুশি হয়ে গেলো, *দেশভক্তি* বলে কথা, দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগা, ভীষণ সৌভাগ্যের ব্যাপার।পরের দিন থেকে মুরগি দুটো করে ডিম দিতে লাগলো।দেশের জন্য এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।
মালিক খুশি হয়ে গেলো। ইনকাম ডাবল। বেশি লাভের লোভে মালিক মুরগির খাদ্যের পরিমাণ কম করে দিলো।
মুরগি অবাক হয়ে মালিককে জিজ্ঞেস করলো - "আজকে আমার খাবার কমিয়ে দেওয়া হলো কেন? কোনো সমস্যা আছে নাকি? "মালিক বললো - "দেশ আজ সঙ্কটে, বহু মুরগি খেতে পাচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য হলো, প্রত্যেক মুরগির মুখে আহার তুলে দেওয়া। যতদিন না সব মুরগি খেতে পাচ্ছে, একটু কম খেয়েই তোমাকে থাকতে হবে।
দেশের জন্য, দেশকে ভালোবাসার জন্য, এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।"
মুরগি খুশি হয়ে গেলো। *দেশভক্তি* বলে কথা, কোনো আপস চলবে না। আধপেটা খেয়ে মুরগি ডিম দিতে লাগলো। এদিকে মালিক ডিম বিক্রির মুনাফা নিয়ে, নিজের অট্টালিকা বানিয়ে নিলো।মুরগির সোনার ঘর তো দুরের কথা, যে ঘরটা ছিলো, সেটাও মেরামত করা হলো না।মালিক তখন মুনাফার নেশায় বুঁদ।
বর্ষাকাল এসে গেছে, মুরগির ঝড়জলে ভেজা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।তবুও অসুবিধা নেই, *দেশভক্তি* বলে কথা।এভাবে আধপেটা খেয়ে, ডবল ডিম দিয়ে, জলে ভিজে, একদিন মুরগি জ্বরে পড়ে গেলো। মালিককে বললো - "আমার পরিশ্রম ডবল করিয়ে দেওয়া হলো, খাদ্য অর্ধেক করিয়ে দেওয়া হলো, সোনার ঘর বানিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো, সেটাও দেওয়া হলো না। এখন এই বর্ষায় ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। অন্তত আমার ভাঙা ঘরটা মেরামত করে দেওয়া হোক। মালিক সহানুভূতি-র সুরে বললো - "জানো, এই দেশে বহু মুরগি রয়েছে, যাদের মাথায় ছাদ-টুকুও নেই, কতো মুরগি সারারাত অসহায়ের মতো ফুটপাতে ঘুমিয়ে পড়ে, সরারাত কতো মুরগি বহুকষ্টে কাটিয়ে থাকে!তোমার শুধু নিজের চিন্তা, একটু দেশের কথা ভাবলে না?" মুরগি চুপ করে গেলো। *দেশভক্তি* বলে কথা।
লাগাতার অমানবিক পরিশ্রম, অপুষ্টি এবং জ্বরের কারণে মুরগি দূর্বল হয়ে পড়লো। মুরগির মনে বিদ্রোহ দেখা দিলো, মাঝে মাঝে ভাবতো, মালিকের কাছে জবাব চাইতে হবে - ডিম বিক্রি করে এতো মুনাফা করলেন, আপনি দামি কাপড় পরলেন, দামি খাবার খেলেন, এদিক সেদিক ভ্রমণ করলেন।আমার না হলো সোনার ঘর, না পেলাম পর্যাপ্ত আহার। কিন্তু ততোদিনে মুরগি মালিকের অন্ধভক্ত হয়ে গেছে। প্রশ্ন করার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। অন্য কোনো মুরগি প্রশ্ন তুললেই, তাকে দেশদ্রোহী বলে দেওয়া হয়েছে।
মুরগির ডিম পাড়ার শক্তি নেই।মালিক এসে বললো - "মেরে পিয়ারে মুরগি, দেশ এখন বলিদান চাইছে, বহু মুরগির জীবন রক্ষা করার জন্য, তোমাকে প্রাণ দিতে হবে। তুমি রেডি হয়ে যাও।"মুরগির ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। সে ভাবলো একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক।মুরগি বললো - "কিন্তু মালিক, আমিতো দেশের জন্য এতো কিছু করলাম, বিনিময়ে কি পেলাম? আপনি তো আমাকে কিছুই দিলেন না! মালিক হেসে বললো - "অনেক করেছো, আমি অস্বীকার করছি না"। এবার তোমাকে দেশের জন্য "ক্বোরবানি" হতে হবে।যেমন কথা তেমন কাজ, মালিক মুরগিকে বাজারে বিক্রি করে আরো একবার মুনাফা করে নিলো।
মুরগি দেশের জন্য শহীদ হয়ে গেলো। মুরগির আত্মশুদ্ধি হলো।
🌹🌹🌹
✍মাওলানা মহবুবুর রহমান,
পূর্ব-কানিশাইল,করিমগঞ্জ।
আসাম।