অণুগল্পঃ বিষ ।। বৈদূর্য্য সরকার
বিষ
বৈদূর্য্য সরকার
কাজের খাতিরে নানা জায়গায় ঘোরে পর্বত । এই আসানসোল তো সেই আসাম, উলুবেড়ে থেকে শিলং, কেওনঝাড় থেকে হলদিয়া, আবার কখনও হেড অফিসে নয়ডা । ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ও অটোমেটেড ইন্সট্রুমেন্ট সার্ভিস করে । শুনেছি সেসব বেশ নামীদামী যন্ত্রপাতি । আর বিভিন্ন প্ল্যান্টগুলো বেশ দূরেই হয় শহর থেকে ।
এলাকায় থাকলে পানশালা বা রকে তার দেখা দেশবিদেশের গল্প শোনায় আমাদের । সেসব ঠিক সাধারণ ট্যুরিস্টের মতো দেখা নয় । একেবারে মাঠঘাটে থাকা মানুষের কথাবার্তা । সেসবের খবর যদিও খবরের কাগজ বা প্রবন্ধ ছাপা পত্রিকায় ওঠে না ।
সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার যেটা – সেসব জায়গায় অস্থানে কুস্থানে অকুতোভয়ে সে ঘোরাফেরা করে । একবার পেটোবাজির মধ্যে পড়েছিল । দুএকবার নারীঘটিত ঝামেলায় যে পড়েনি তা নয় । তবে বয়সজনিত মোহের কারণে এসব থেকে বিশেষ দূরেও থাকতে পারে না ।
তবে ওর কথাবার্তার ভঙ্গি থেকে বুঝতে পারতাম – একেবারে প্রান্তিক মানুষদের ব্যাপারে ওর বিশেষ দুর্বলতা আছে । যদিও সেটার প্রকাশভঙ্গি সবসময় ঠিকঠাক ছিল না ।
কন্ট্রাডিকশান সে একদম নিতে পারে না – তার কমন বক্তব্য, বাকীরা যা বলে তা বই পড়ে । আর ও যা জানে সেসব জায়গায় ফিল্ড ওয়ার্ক করে । আমি অবশ্য সেসবের বদলে মাইথোলজি ঘেঁষা ইতিহাস পড়তে বেশি পছন্দ করি ।
পুজোর এক্সটেণ্ডেড ছুটিতে বিষকন্যাদের নিয়ে নানা কাহিনী পড়ে আমিও বেশ উত্তেজিত হয়ে আছি । এর মধ্যে, পর্বত কিছুদিনের জন্য নর্থইস্টে গেছে । যোগাযোগ কম হচ্ছে ।
এমন এক সময়ে সে কার্তিকের রাতে উত্তেজিত হয়ে জুলির কথা শুনিয়েছিল । সে নাকি নর্থ ইস্টের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে, এখন একটা নাগা রেস্টোরেন্টে কাজ নিয়ে এসেছে । এদের কাছে গুয়াহাটিই বড় শহর । সেখানে এসে আছড়ে পড়ে প্রান্তিক অঞ্চলের দ্রোহ ।
সেসব ভুলিয়ে পাঁচশো টাকা ভাড়ায় এখান থেকে কলকাতায় যাওয়ার প্রলোভন দেখাতে জানতো পর্বত ।
ক'মাস পরে তার শরীরে বাসা বাঁধা ছোঁয়াচে রোগের কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল – বিষকন্যার মানে অনেকরকম হতে পারে ।
===============================