অচল পয়সা
রাণা চ্যাটার্জী
না চাই না,এ ই নাকি তোর শুদ্ধ ভালোবাসার নমুনা ছিল।?! তখন প্রতিদিন আবেগে কান্না ভেজা গলায় সকাল-রাত্রি-ভোর কখনো বাকি ছিল না! আমি বেশ বুঝেছিলাম তুই হচ্ছিস আসলে অন্য ধাঁচের। এ ডাল ,সেডাল ঘুরে শুধু পরখ করার ইচ্ছা, ছি ছি এই কিনা ছিল তোর বন্ধুত্ব রে রাই!!
কথা গুলো বলে রীতিমতো কাঁপছিল অমিয়।
নাম অমিয় উপাধ্যায়,স্বভাবে ভীষণ প্রতিবাদী চরিত্রের,এক ঝলক দেখলেই ভদ্রলোকের রুচি শিক্ষার আঁচ পাওয়া যায়।এমনকি নারীদের নিয়ে কেউ মিথ্যা কটাক্ষ করুক কিংবা ছুঁক ছুঁক করা পুরুষ মানুষগুলোর কিছু একটা বাজে মন্তব্য ঠিক আগে গিয়ে প্রতিবাদ করে আসা চাইই চাই।আজ কিনা তার অন্যতম প্রিয় বান্ধবীকেই এমন ভাবে রাগ প্রকাশ করতে হচ্ছে তাকে যা সত্যিই তার নিজেরও অবাক লাগছে।চ্যাট এর অন্যপ্রান্তে গ্রিন লাইট সো হলেও আর তো মুখ ফুটবে না রাইয়েই-সে তো বেশ বুঝে ফেলেছে ছয় মাস ধরে প্রেম ভালোবাসার নাটক শেষ করে এবার তার উড়ে যাওয়ার পালা।অলরেডি অন্য সরল সাদাসিধে কাউকে বড়শী দিয়ে তোলার কাজে সে আবার সফল। রাইয়ের এটা খুব বাজে নেশা আর অমিয় সেটা ধরে ফেলেছে বলেই কথা গুলো বেশ তেঁতো লাগছে তবু জবাব দেওয়ার কি আর থাকতে পারে রাইয়ের ।তবু চুপ করে ম্যাসেজ বক্সে তাকিয়ে যদি অমিয় আর কিছু লেখে। না ওকে আর ছোবল মারবে না রাই,একটা বিষয় তার কাছে সত্যি পরিষ্কার ও ভালোলাগার যে যতবার অমিয় কে শুরুর দিকে সিডিউস করে আবেগ মথিত ম্যাসেজ ও ফোন করেছিল ততবার প্রেমে গলে না গিয়ে একদম অনুভব দিয়ে সে বলতো "দেখ রাই, এসব করার তোর বা আমার বয়স নেই রে, ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে, সংসার আছে আর আমি তো কলেজ জীবনেও বহু প্রস্তাব ফিরিয়েছি, এসব প্রেম ন্যাকামি আমার রাস্তা নয়, কোনোদিনই ছিল না।সুতরাং ভালো বন্ধুত্ব হোক আমাদের পরিচয়"। সেই মুহূর্তে নিজেকে খুব ছোট লেগেছিল রাইয়ের-তাকে কিনা পাওয়ার জন্য পুরুষগুলো লালায়িত থাকে, রাস্তা ঘাটে একটু ছোঁয়া পেতে উদগ্রীব আর অমিয় কিনা সরাসরি প্রত্যাখান করছে! এ অপমান রাই অন্তরে নিতে পারেনি ততো আষ্টেপৃষ্টে বাঁধতে চেয়েছে অমিয়কে।সেও বাধা দেয় নি কিন্তু লিমিট রেখেছে এটাই সবথেকে বিরক্তির লেগেছে বলা যায় রাইয়ের। অমিয়র কাছে যেন সে সহজ লভ্য হয়ে উঠেছিল, তাই হঠাৎ সব কিছু ছিন্ন করে খুব বাজে বাজে ভাষায় বর্শা ফলক শব্দবাণ ছুঁড়ে ব্লক।
অমিয় খোলা মনে সম্পর্ককে দেখতেই বেশি পছন্দ করে তাই রাইয়ের পরিবারের সাথে মানে তার হাজব্যান্ড,মেয়ে ,ছোট ছেলে সবার সাথে নিজের স্ত্রী অঞ্জলী ও মেয়ের ঘরোয়া সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।মনে মনে খুব উপলব্ধি করতো যাক ব্যস্ততার নাগপাশে পারিবারিক বন্ধু খুব দরকার,বিপদে আপদে যেকোন ভালো উপদেশ পেতে হাত বাড়ালেই যেন বন্ধু হতে পারি। যতবার পরিবার নিয়ে রাইয়ের পরিবারের সাথে মিলেছে কত সুন্দর হাসিখুসির মেল বন্ধন,বাচ্চাগুলো হৈ হৈ করে কাটিয়েছে। যেই আবার দূরে বাড়ি ফিরেছে কেবল মোবাইল চ্যাট আর ফোনে রাইয়ের অন্য গলা,কান্না কাটি ,তার নিজের স্বামীর মাতলামি,অত্যাচারের দিনলিপি বলে অমিয়কে ভালোবাসার ডালি উপহার।অমিয়র ও খারাপ লাগতো ইস আহারে রাইয়ের এত কষ্ট, এত স্ট্রাগল জীবন এসব শুনেও আবার সংযত থাকতো আর এখানেই রাগ হতো রাইয়ের। "তো আমি কি করবো কি, এত অস্থিরতা কেন, এই বয়সে এত আবেগ ঠিক নয়"-রাগের মাথায় কতবার বলেছে আর ব্লক খেয়েছে রাইয়ের।তখন থেকেই অমিয় বুঝছিলো তাকে নিয়ে রাইয়ের ইচ্ছাপূরণ সম্ভব নয় , নিশ্চয়ই হঠাৎ থামিয়ে দেবে বন্ধুত্ব।পুরুষদের বাইরে থেকে কর্কশ,কাঠিন্য ভরা মনে হলেও যখন কেউ তাদের উৎসাহ দেয়,ভালোবাসে তারা খুশিতে ডগমগ হয়ে ওঠে।পাগলের মতো এমন শিশুসুলভ আচরণ করে যে বাড়ির লোক জানে অমিয় ঠিক কেমন।এমনকি পুঁচকে মেয়েই তো সারাদিন কতবার এলার্ট করে, দূর বাবা সত্যি তুমি কি পাগল হয়েছো যে এমন করে বাচ্চাদের মতো কথা বলো!
আসলে এটা অমিয়র নিজের মতো নিজের মনের মধ্যে নিজেকে ফুরিয়ে না দিতে চাওয়ার জগৎ।যেখানে টোটকা হলো হাসি খুশি ,অন্যের জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি।কিন্তু এই যে সব কিছু থেকে ছিন্ন করে সরে যাওয়া, পরোক্ষে অমিয় ও রাইয়ের কমন বন্ধুদের কাছে নিন্দা এসব তাকে সত্যি কষ্ট দিয়েছে আর এটাই বারেবারে অবাক করেছে তাকে যে কি আশ্চর্য্য না, সব মানুষ ভালো বন্ধুত্ব রাখতে জানে না, বন্ধুত্ব তো স্বার্থহীন সম্পর্ক হয়তো অনেকের কাছে অচল পয়সা।