Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। শুভজিত কুণ্ডু


অলংকৃতা 


আশ্বিনর আকাশে মেঘের ভ্রুকুটি, অফিস থেকে ফিরে Fresh হতে যাবে এমন সময় তার ফোনে একটি কল্ আসে। মহুয়া তার মাকে ফোনটা ধরার কথা বললে, মা আসতে না আসতেই ফোন টা কেটে যায়। দ্বিতীয়বার যখন আবার ফোনটা আসে তখন হন্তদন্ত হয়ে মহুয়া নিজেই ফোনটা রিসিভ করে - 
মহুয়া - কে? 
আমি দিগন্ত, আচ্ছা অমরেশ বাবু আছেন, ওনার সাথে আমার একটু দরকার ছিল বৈকি। মানে ঐ নীল পৃথিবী, আর নীল পৃথিবীর মাঝে ফুটে ওঠা নীলপদ্ম। মানে... 
মহুয়া - ইয়ে মানে মানে করে আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছি না। আর যাইহোক আপনাকে আমি চিনি না আর আপনি ভুল করে এখানে ফোন করে ফেলেছেন। আসলে অমরেশ বাবু বলে এখানে কেউ থাকেন না। 
ও আচ্ছা দুঃখিত, কিছু মনে করবেন না, মানে আমি ঠিক.... 
খানিকক্ষণ পরেই আকাশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত, বারান্দায় দাঁড়িয়ে মহুয়া ঠিক তার কফির কাপটা মুখে তুলতে যাবে আবার ফোন..... এবারও মহুয়া দৌড়ে গিয়ে ফোনটা ধরতেই - আচ্ছা অমরেশ বাবু আছেন? 
মহুয়া - আবারও আপনি, আপনার কি কোন কাজ নেই। আমি তো আপনাকে বললাম অমরেশ বাবু বলে এখানে কেউ থাকেন না। 
রাগের মাথায় ফোনটা ছেড়ে মহুয়া বৃষ্টিভেজা বারান্দায় এসে দাঁড়ালে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অচেনা মানুষটির ফোন কলের কথা। কি যেন বলছিলেন উনি, কি নীল পৃথিবী আর তার মাঝে নীল পদ্ম। এই সমস্ত মনে করতে করতে ফিক ফিক করে হাসতে থাকে মহুয়া। ভাবতে থাকে এই শহরে এরকম পাগল লোক না থাকার কিছুই নয়। কিন্তু অমরেশ বাবুর নাম মহুয়া কোথাও শুনেছে। প্রথমে অনুধাবন করতে না পারলেও পরে বুঝেছিল অমরেশ বাবু নামে একজন ভদ্রলোক এই শহরেই একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। নাম ডাক আছে ওনার বেশ। অফিসেও আলোচনা হয়েছে মাঝে মধ্যেই ওনার পত্রিকা কা নিয়ে। কিন্তু এই শহরে কত শত অমরেশ বাবু আছেন না জানি। নীল পৃথিবীর কথা বারে বারে মনে আসাতেই মহুয়া সাত - পাঁচ ভাবনা ছেড়ে এবার নিজেই অচেনা মানুষটিকে ফোন করে বসে... 
হ্যালো, আমি কি দিগন্ত বাবুর সাথে কথা বলছি.. 
হ্যাঁ কিন্তু আপনি 
আমি মহুয়া, আপনি এই কিছুক্ষণ আগে যার ফোনে ফোন করেছিলেন। তবে আমি অমরেশ বাবুকে ঠিক চিনি না। আর দেখুন উনি আমার কেউ হন না।কিন্তু আপনার বলা নীল পৃথিবী কথাটা শুনে মানে ঐ একটু ভাবতে ভাবতে কেন জানি না আপনার সাথে পরিচয় করতে ইচ্ছা হলো। 
দিগন্তবাবু - নীল পৃথিবী, নিজের নিজের মনের জানালা খুলে দেখ অমাবস্যা রাতের অন্ধকারে জোনাকিরা তাদের রং এর ছন্দ ধরেছে। পৃথিবীর যত প্রেমিক -প্রেমিকা একে অপরের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কারো মনে অপার প্রেম, কারো মধ্যে বিরহ যন্ত্রণা, রাধা আজও যেমন যমুনা তীরে কৃষ্ণের জন্য অপেক্ষারত। আজও কত শত প্রেমিকা নীল নীলাম্বরী নীল আকাশের তলে নীল পদ্ম হাতে দাঁড়ায়ে। কোথাও আছে বিশ্বাস আবার কোথাও আছে ছলনা.. যাইহোক বলুন..... 
এইভাবে কথা বলতে বলতে দুজনের পরিচয় বেড়ে ওঠে। মাস তিনেক পর মহুয়া হঠাৎ করেই দিগন্ত বাবুর সাথে দেখা করতে চায়। এই তিন মাসেই দুজনেই জেনে নিয়েছে একে অপরের পছন্দসই জিনিসগুলির কথা। 
রবিবার সকাল থেকেই মহুয়া একটু খোশমেজাজে। ঘড়িতে চারটে বাজার অপেক্ষায়। আর চারটে না বাজতে বাজতেই ঘর থেকে বেরিয়ে কোনরকমে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা রবীন্দ্রসদন। 
ট্যাক্সি থেকে নেমে মহুয়া ফোন করতে যাবে এমন সময় দিগন্ত বাবুর করা ফোন.. 
আচ্ছা এ ভাবে আর কতক্ষণ, আমাকে আপনি বসিয়ে রাখবেন বলতে পারেন... 
মহুয়া - এই তো এসে গেছি কিন্তু কোথায় আপনি আর আমাকে আপনি চিনতে পারবেন তো? 
দিগন্ত বাবু - হ্যাঁ যদি আপনি আমাকে চিনতে পারেন তাহলে... 
মহুয়া - কোথায় আপনি? 
দিগন্ত বাবু - গেট ধরে সোজা এসে বাঁ দিকে একটা গাছের তলায় বসে... 
ফোন রেখে এগিয়ে আসতে আসতে বাঁ দিকে রাস্তা ঘুরতে সামনে একটা অশ্বত্থ গাছের তলায় কলাপাতা রং এর পাঞ্জাবী পড়া মুখে হালকা দাঁড়ি কাঁধে একটা ঝোলানো ব্যাগ চোখে একটা কালো চশমা আর হাতে স্টিক ধরা ভদ্রলোক টিকে দেখে অবাক হয়ে এগিয়ে এসে আচ্ছা আপনি কি তাহলে দিগন্ত বাবু আর আমি যা দেখছি তাকিয়ে সত্য। 
দিগন্তবাবু - হ্যাঁ লোকাবার তো কিছু নেই। আমি আপনাকে আমার অন্ধকার জগতের কথা অনেক বার বলেছি কিন্তু আপনি তা ঠিক বুঝতে পারেন নি। তাই আজ ফেলে আপনার কাছে আসা যাতে সত্যটা বুঝতে পারেন আর আমার থেকে দূরে সরে যান। অমরেশ বাবুর খুব প্রিয় পাত্র আমি। উনি এই শহরের ই আলাপ পত্রিকার সম্পাদক। আমার অনেক লেখায় ওনার হাত ধরে। হ্যাঁ আমি চোখে দেখতে পায় না ঠিক কিন্তু আমার চিন্তা আমার ভাবনা আমার চারদিকে কোন আলো থাকতে পারে না। অন্ধকারের মধ্যে আমার বড় হয়ে ওঠা। তাই ভুল বুঝবেন না আপনি ফিরে যান আর আমি ফিরে যাব। 
এই বলে যখন হাতে থাকা স্টিকের উপর ভর করে দাঁড়াতে যাবে এমন সময় মহুয়া চোখের জল ফেলতে ফেলতে মহুয়া বলে ওঠে - 
ছেড়ে যাবেন না আমায় দিগন্তবাবু। সাথে নিন আমায়। আজ আপনার জন্যই আমার ছুটে আসা। কিছু চায় না আমি শুধু একটা কথা আমাকে একা ফেলে যাবেন না। আজ থেকে আমার চোখ দিয়ে এই অন্ধকারের মধ্যে আলোকে দেখবেন। আমি আমার ভালোবাসার চোখ দিয়ে সারাজীবন আপনাকে দেখাতে চায় অন্ধকার জীবনের নীল পৃথিবীর নীল আলোয় ফুটে ওঠা নীল পদ্মটিকে।

=======০০০=======

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.