বন্ধু
তুষার মেয়ে কে স্কুলে ভর্তি করতে এসে বড় ম্যাডামের রুমে, কলেজ বান্ধবী মৌসুমীকে দেখে অবাক।
-- কিরে তুই এই স্কুলে, তোকে কত দিন পরে দেখলাম ।
-- আমিও ভাবিনি, তোর সাথে আবার এই ভাবে দেখা হবে, প্রায় ৮ বছর পর।
-- সেই কলেজের রেজাল্ট এর দিন শেষ কথা হয়েছিল, আর তার পর পথে ঘাটে ও কোনো দিন দেখা হয়নি।
-- তার পর বল কেমন আছিস, তোর সাথে ওটা কে।
-- আমার মেয়ে তৃষা, ওকেই স্কুলে ভর্তি করতে এসেছি।
-- ওর বয়স কত।
-- এই চার বছর পূর্ন হয়েছে।
-- ডোকমেন্ট গুলো দেখি, তৃষা তুমি কি কবিতা শিখেছ আমাকে বলো।
-- তৃষা তুমি আন্টিকে একটা কবিতা বলে শোনাও।
তৃষা খুব সুন্দর একটা কবিতা বলল, সাথে নাম, ঠিকানা সব বলল।
-- তোর মেয়ে তো খুব চটপটে।
-- হ্যাঁ, ও ছোট থেকেই এই রকম।
-- আজ বড় ম্যাডাম আসেনি, তাই আমি সব দেখছি, কোনো অসুবিধা হবেনা আমি ভর্তি সব ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি,
আমার ছেলে ও এই স্কুলে আছে, ওর মতোই। তুই একটু বস আমি তৃষা সাথে সবার পরিচয় করার জন্য অন্য ম্যাডাম কে বলছি। মৌসুমী তৃষা কে নিয়ে বাইরে এসে তনুশ্রী ম্যাডাম কে বলল, তৃষা কে সব বাচ্চাদের সাথে পরিচয় করে দাও, এবার থেকে তৃষা আমাদের স্কুলে পড়বে। তৃষা তুমি মিসের সাথে চলে যাও, তোমার বাবা এখানেই আছে।
মৌসুমী অফিস রুমে ফিরে এসে,
-- এবার বল তো খবর। এখন কি করছিস।
-- ওই আছি, বাবা ব্যবসা দেখছি।
তুই এখানে আসিস, অথচ আমাদের বাড়ি তে একদিন ও যাসনি।
-- আমি ১ বছর হল, এই স্কুলে আসেছি, তোর সাথে কতদিন কোনো যোগাযোগ নেই,তাছাড়া এখন তোর বৌ কি ভাববে, তাই যাওয়া হয় না।
-- জানিস আমার মা এখনও তোদেকে মিস করে,তোর কথা মাঝে মাঝে বলে।
-- হ্যাঁ, কাকিমা আমাদের খুব ভালো বাসে,আমাকে ছেলের বৌ করবে বলেছিল , তার জন্য সবাই আমাকে কেমন রাগাত বল।
-- চল তাহলে আজকে আমার বাড়ি, বৌমা নাই বা হলি, বন্ধু হয়েই যাবি, দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যাবি, মাও খুব খুশি হবে, আর তোর সাথে গল্প ও করা যাবে।
-- কিন্তু বাড়িতে শাশুড়ি মা আছে, আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে।
-- তুই ফোন করে মাসিমাকে জানিয়ে দে,যে তুই বন্ধু বাড়ি যাবি, বিকেলে ফিরবি ।তোর শাশুড়ি কিছু মনে করবে না তো।
-- না না আমার শাশুড়ী কিছু ভাববে না।
-- তাহলে আমি অপেক্ষা করছি, স্কুল ছুটি হলে আমার সাথে যাবি।
-- আচ্ছা, তুই বাইরে বস, আমি কাজ গুলো সেরে আসছি।
মৌসুমীকে ওদের সাথে দেখে তুষার মা খুব খুশি , পরিচিত মানুষের সাথে অনেক দিন পরে দেখছে।
- মা তুই কত দিন পরে এসেছিস, শেষ বার বাবুর জন্ম দিনে এসেছিলি, তার পর আর আসিস নি,আমি তোকে বৌমা বলেছিলাম বলে রাগ করেছিলি। দুই একটা ছেলে আসে মাঝে মাঝে, তাদের কাছে তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওরা বলল তোর খবর কেউ জানে না।
-- হ্যাঁ কাকিমা আমার ও আর কারো সাথে যোগাযোগ নেই, স্কুলে তুষারের সাথে দেখা, তাই চলে এলাম।
-- তা খুব ভালো করেছিস, আমার দাদুভাই কিন্তু খুব সুন্দর হয়েছে । তোরা কথা বল, আমি খাবার ব্যাবস্থা করছি ।
--- না কাকিমা তোমাকে কিছু করতে হবে না।
-- তা বললে হয়, কত দিন পরে এসেছিস একটু করতেই হবে।
-- সৌম্য কোথায় গেল।
-- সৌম্য, তৃষার সাথে খেলছে, তৃষা খেলার সাথী পায় না, একাই খেলে, আজ সঙ্গী পেয়েছে, কিছুতেই ছাড়ছে না।
-- তোর বৌকে দেখছি না।
-- সব বলব, আগে তোর কথা বল।
--কলেজ জীবনে আমি একটা ছেলে কে ভালবাসতাম, তোদের কে বলেছিলাম।
-- হ্যাঁ মনে আছে, তার জন্য তো আমাকে না করে ছিলি।তুই আমার স্কুল লাইফের friends ,তাই তোকে বলেছিলাম। যদি আগে জানতাম যে তুই কাউকে ভালবাসিস, তাহলে তোকে বলতাম না,
-- আসলে ভুলটা তোর ছিল না। আমার আগেই উচিত ছিল তোদের কে সুরজিৎ এর ব্যাপারে বলা। সুরজিৎ কে আমি 2nd year থেকে ভালো বাসতাম।তোকে সবদিন ভালো বন্ধু ভেবেছি, তাই কোনো দিন মনে হয়নি তোর সাথে অন্য সম্পর্ক হতে পারে।
-- আমি তোকে সবদিন বন্ধুই ভেবে এসেছি, কিন্তু কেন জানি না মনে হয় এই বন্ধুর সম্পর্কে অন্য ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এখন আর ওসব ভেবে কাজ নেই, বাদদে ,তোর জীবনের কথা বল।
-- হ্যাঁ বলছি। সুরজিৎ আমাদের আগের ব্যাচ পড়ত। সুরজিৎ কলেজ পাস করে কম্পিউটার স্কোর করে নেয়, একটা ভালো কোম্পানি তে চাকরী পেয়ে যায়। সুরজিৎ মা আছে, বাবা অনেক দিন আগেই মারা গেছে। ওর বোন বা ভাই নেই ও একাই। দুই বাড়ির সম্মতিতে আমরা বিয়ে করি। সুরজিৎ, আমি আর ওর মা, আমাদের ছোট সংসার ।১বছরের মাথায় সৌম্য এসে আমাদের জীবনে আলোয় ভরিয়ে দেয়। সবাই খুব খুশি, খুব আনন্দে দিন গুলো কাটছিল। কিন্তু সৌম্য যখন দু বছরের তখন সুরজিৎ এর একটা বড় Accident হয়, অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। আমাদের জীবনে অন্ধকার নেমেএল ,সেই সময় আমার বাপের বাড়ি লোক আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই চেয়ে ছিল আমি আবার বিয়ে করে নতুন করে জীবন শুরু করি। আমার শাশুড়ী মাও বলেছি, বৌমা তুমি আমার মেয়ের মতো, তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারো। কিন্তু আমি মনে হয়নি আবার বিয়ে করি, আমার একটাই কথা মনে হয়েছে সৌম্যকে মানুষ করতে হবে। তার জন্য আবার বিয়ে না করলেও হবে, আমি একাই ওকে মানুষ করতে পারবো। তাছাড়া সুরজিৎ এর মাকে কে দেখবে, তার একমাত্র ছেলে শেষ অবলম্বন, চলে গেছে । এখন আছে একমাত্র নাতি তাকেও যদি তার কাছে থাকে কেড়ে নেই,তাহলে অন্যায় হবে। তাই আর বিয়ে নিয়ে ভাবি না, বাকীটা জীবন ওদের নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারব। তার পর স্কুলের চাকরী টা পেয়ে গেলাম, স্কুল টা সুরজিৎ এর এক বন্ধুর পরিচিতের , তাই কাজটা পেতে কোনো অসুবিধা হল না । আমাদের তিনজনের সংসারে কোনো অসুবিধা নেই, আমরা এখন ভালোই আছি। জীবনে দুঃখ আসে আর যায়, সময় সাথে সব পরিবর্তন হয়ে যায়, আমাদের ও পরিবর্তন হয়েছে। সব দুঃখ ভুলে এগিয়ে চলেছি।
এই হল আমার জীবনের কাহিনী। এবার তোর কথা বল।
-- আমি ও কলেজ শেষ করা পর ভেবেছিলাম আরো পড়ি কিন্তু ইচ্ছে হল না, কিছুদিন বাড়িতে বসে কাটালাম , এই ভাবে সময় নষ্ট করছি দেখে বাবা বলল তার ব্যবসায় সাহায্য করতে মাও জোর করল তাই রাজি হয়ে গেলাম, বাবার কাজের একটা নিয়ম আছে প্রথমে কারখানায় কাজ শিখতে হবে, নিজেকে মালিক ভাবলে চলবে না। সেই মত আমি কাজ শিখি এবং কারখানার কাজ দেখা শোনা করি। বাবা অফিস দেখেন ,টাকা পয়সা সবটাই বাবার হাতে। তার পর বিয়ের জন্য চাপ দেয়, আমি একমাত্র ছেলে, বাড়ি ফাকা ফাকা লাগছে ,তাই বৌমা আনতে হবে, মায়ের কথায় রাজি হয়ে গেলাম বাবা - মা এর পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করলাম। দিন গুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিল তার পর তৃষা আমাদের জীবনে আসে। নাতনি কে পেয়ে বাবা মা খুব খুশি, আমি ও খুশি হয়েছি, তৃষা আমাদের নয়নের মনি। কিন্তু তৃষা যখন এক বছরের তখন বাবা ব্রেন্ড-ডেথ হয়। হঠাৎ করে এসব হয়ে যাওয়ায় ব্যবসার কিছুই আমাকে বলে যেতে পারলো না । এদিকে ব্যবসার Financial দিক বাবাই দেখতো, আমি কোনদিন মাথা ঘামাই নি। কিন্তু Financial condition খুব খারাপ অবস্থায়, কয়েক বছর আগে ব্যবসায় লশ হয়েছিল, তখন মহাজন দের কাছে টাকা ধার করত, হয়েছিল সেই টাকা বাবা শোধ করতে পারেনি। বাবা এত পেসার সামলাতে না পেরে অকালে চলে গেল । বাবার মৃত্যু পর মহাজনেরা টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে। আমি বাধ্য হয়ে জমি বাড়ি সব জমা রেখে ব্যাঙ্কে থেকে লোন নিয়ে সব দেনা শোধ করি।পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়, এই নিয়ে আমার স্ত্রীর আমার সাথে অশান্তি শুরু , এই অবস্থার জন্য আমাকেই দোষী করে। বাবা আমাদের একে বারে পথে বসিয়েছ,এই সব নানান কথা। এক দিকে ব্যবসা এমন অবস্থা অন্য দিকে ফ্যামিলির অশান্তি ভালো লাগছিল না, দিন রাত অফিসেই থাকতাম বাড়ি ফিরতাম কম। এতেই হয় বিপত্তি, তৃষা যখন ২ বছরের তখন ওর মা সোনা গয়না নিয়ে, বাবার এক বন্ধুর ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। তৃষার মামা বাড়ি তে খোঁজ নিয়ে ছিলাম, ওরা বলল ওরাও কিছু জানে না। তার পর আর কোন খোঁজার চেষ্টা করিনি। বাড়ির কাজের জন্য একটা মেয়ে আছে সে কাজ করে দিয়ে যায় ।আর তৃষার দেখা শোনা মা করে, তাছাড়া আমি আছি, কোনো অসুবিধা হয় না।
-- আর বিয়ে করিলি না কেন?
তুষারের মা - আমিও অনেক করে বলে ছিলাম, তৃষার জন্য নতুন মা আনতে, কিন্তু কে শোনে কার কথা, বলেই দিয়েছে আর বিয়ে করবে না।তৃষার জন্য তুমি আছো আমি আছি, আর কাউকে লাগবে না।
-- এই তো বেশ আছি জীবনে আর নতুন করে অশান্তি চাই না।
-- অশান্তি কেন বলছিস, ভালো ও তো হতে পারে।
-- না আর বিয়ে করবো না, এখন ব্যবসাটা ভালো করে দেখতে হবে, এখন এমন পরিস্থিতিতে আছি কবে আবার ভালো হবে কে জানে।
-- সব ঠিক হয়ে যাবে, একটু সময় দে, দেখবি ব্যবসা আবার আগের মতো দাঁড়িয়ে গেছে।
-- তাই যেন হয়।
তুষারের মা- সব রান্না হয়ে গেছে তোরা খেয়ে নিবি চল ।
---হ্যাঁ হ্যাঁ চল অনেক বেলা হয়ে গেল। বাচ্চা গুলো কোথায় ডাকো।
খাওয়া দাওয়া পর সারা দুপুর মৌসুমি আর তুষারের মা বিমলা দেবী জমিয়ে গল্প করল। বিকেলে তুষার ওদের কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। তৃষা কিছুতেই ছাড়তে চায়না নতুন বন্ধুকে। সামনে তৃষার জন্ম দিন আসছে, তাই মৌসুমীর শাশুড়ি কে নিমন্ত্রণ করে বলে আসে ওদের কে সঙ্গে নিয়ে তুষার দের বাড়ি আসার জন্য।
তৃষার জন্ম দিনে, মৌসুমী ছেলে এবং শাশুড়িকে নিয়ে আসে। তুষারের মা বিমলা দেবী ওদের কে দেখে খুব খুশি হয়। মৌসুমীর শাশুড়ি আর বিমলা দেবীর কি গল্প , বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নেমে আসে, তবু দুজনের কথা শেষ হয় না, যেন কতদিনের পরিচিত। আসলে বিমলা দেবী গল্প করতে একটু বেশিই ভালোবাসে যাকে পায় তাকে আর ছাড়তে চায়না, তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সাথে গল্প করে যান। ওই দিন আর ওদের কে বাড়ি ফিরে যেতে দিল না, রাতে রেখে দিল ,পরের দিন রবিবার স্কুল ছুটি সৌম্য ও যেতে চাইল না। শাশুড়ি একটু না না করছিল, কিন্তু বিমলা দেবীর কথায় আর না করতে পারেনি।
এই ভাবে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। মৌসুমী সকালে অতো দূর থেকে স্কুলে আসতে অসুবিধে হয়, তাই স্কুলের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া নেয়। তুষারের মা বলেছিল ওদের বাড়িতে রুম খালি আছে, এখানে এসে থাকার জন্য, কিন্তু মৌসুমী রাজি হয় না । মৌসুমীরা কাছে চলে আসায় দুই বুড়ির খুব সুবিধা হয়েছে, বিকেলের দিকে তৃষাকে নিয়ে বিমলা দেবী চলে আসে ওদের বাড়ি গল্প করতে।একদিন কথায় কথায় মৌসুমীর শাশুড়ি রাধারানী বলে
-- আচ্ছা তোমার ছেলে আর আমার বৌমার বিয়ে দিলে হয় না। দুজনে ভালো বন্ধু ছোট অনেক দিন থেকে দুজন দুজনকে জানে , দুজনে নতুন করে যদি সংসার বসায়, তাহলে ছেলে মেয়ে দুটো ও মা বাবা পেয়ে যাবে।
-- আমার ছেলে চায় না মৌসুমীর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিতে, সে জানে মৌসুমী খুব আত্ম অভিমানী, তাছাড়া একবার যখন না বলে দিয়েছে আবার যদি ওই বিষয়ে কথা বলে হয়তো রাগ করতে পারে সেই জন্য ও কখনোই বলবে না বা আমাকে বলতে দেবে না ।তুষার চায় মৌসুমীর বন্ধু হয়ে থাকতে।
-- তখন পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল, এখন অন্য রকম। তবে আমি বৌমাকে বলে দেখতে পারি।
-- দেখো মৌসুমী কি বলে। আমরা আর কদিন, ওদের এখনো বাকী জীবন পরে আছে।
-- বৌমা কিছু যদি মনে কর একটা কথা বলবো।
-- হ্যাঁ, বল, কি কথা।
-- বলছি তুমি যদি তুষার কে বিয়ে করো, তাহলে তৃষা একটা মা পাবে আর সৌম্য ও বাবা পাবে।
-- না মা তা কখনোই সম্ভব না, এই ভাবে মিথ্যে বলে আমি আবার জীবন শুরু করতে চাই না ।
--সব বুঝতে পারছি , কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে ।
-- ভবিষ্যৎ আমার সৌম্য কে নিয়ে, ওকে আমি ভালো ভাবে মানুষ করতে চাই। তাছাড়া তুষার আমার ভালো বন্ধু, এই বন্ধুত্ব আমি কোনো ভাবেই নষ্ট করতে চাই না। তুষার তো বলেছে সব সময় আমাদের পাশে থেকে সাহায্য করবে, তার জন্য নতুন কোনো সম্পর্কের দরকার নেই।
-- ঠিক আছে তোমরা ভালো থাকলেই আমাদের ভালো থাকা। এই বিষয়ে আর কিছু বলবো না।
--- না মা, এই বিষয় নিয়ে আর কোনো দিন আলোচনা করবে না। ওরা আমাদের বাড়ি আসে, আমরা ওদের বাড়ি যাই, এই রকমই ঠিক আছে।
এই ভাবে দিন গুলো এগিয়ে চলে, বছর ঘুরে নতুন বছর আসে।তুষার ব্যবসা এখন ভালো চলছে ,কয়েক বছরে ব্যবসা আগের থেকে বড় করে হয়েছে। এদিকে সৌম্য মাধ্যমিকে 95% নাম্বার নিয়ে পাস করেছে। মৌসুমী খুব খুশি, তাই একটা ছোট করে দুপুরে খাওয়ার আয়োজন করেছে। ওর স্কুলের কয়েকটা ম্যাডাম আর তুষারের পরিবার এসেছে। খাওয়া দাওয়া পর ম্যাডামরা সৌম্য কে আশীর্বাদ করে চলে যায়। ওরা গল্প করতে বসে, সৌম্য রেজাল্ট ভালো করায় সবাই খুব খুশি।
মৌসুমী - আমার খুব ইচ্ছে সৌম্য ডাক্তারী লাইনে পড়ুক কিন্তু পড়ানো খরচ অনেক। এতে টাকা আমি জোগাড় করতে পারবো না।
তুষার- তবে তো ভালোই হবে, আমরা একটা ডাক্তার পেয়ে যাব, আর টাকার ব্যাপার ওটা আমি দেবো।
মৌসুমী- কিন্তু তোর কাছ থেকে এত টাকা নিতে আমার কিন্তু বোধ হচ্ছে।
তুষার - সৌম্য ডাক্তার হলে না হয় ফেরত দিবি।
মৌসুমী- আমার যা গয়না আছে সেগুলো দিয়ে দেব আর যতটা পারি চেষ্টা করবো।
তুষার- তোকে গয়না দিতে হবে না, ওগুলো তোর কাছে রেখে দে, পরে কাজে লাগবে। আর তোর যদি সত্যি আত্ম সম্মানে লাগে তাহলে তুই তৃষার পড়াশোনা দায়িত্ব নে । তৃষা একদম পড়তে চায় না, তুই পারবি ওকে ঠিক করতে।
মৌসুমী- আমার কোন অসুবিধা নেই, আমি তৃষার পড়ার দায়িত্ব নেব।
বিমলা দেবী- ছেলে মেয়ে দু'টো মানুষ হয়ে যাবে, আর কারো আত্মসম্মানে লাগবে না।
তৃষা- আন্টি আমি কিন্তু সৌম্যদার মতো সব সময় পড়তে পারবো না।
সৌম্য- তা কেন পাবি, তুই শুধু সব সময় TV দেখবি, আর খেয়ে খেয়ে মোটা হবি।
তৃষা- তুমি আমাকে মোটা বলবে না।
মৌসুমী- তোরা দুজনেই চুপ কর, যত বড় হচ্ছে ততো অসভ্য হচ্ছে, শুধু ঝগড়া করবে।
সৌম্য- তুমি সব সময় ওকেই সাপট করো।
তুষার - আমি তো তোকে সাপট করি, তাই না।
বিমলা দেবী - আচ্ছা বাবা হয়েছে। ওদের এখন ই তো ঝগড়া করার সময়, দুদিন পর যে যার পড়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলে, আর কারো সাথে দেখাই হবে না।
তৃষার মাধ্যমিক কে রেজাল্ট খুব ভালো হয়নি 65% পেয়েছে। তৃষা আটসে ভর্তি হয়েছে। এদিকে সৌম্য পড়াশোনা খুব মন দিয়ে করছে। এখন থেকেই জয়েন্টের জন্য পড়ছে। তুষার সব সময় সাহায্য করছে।
সৌম্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এবং জয়েন্ট চানস পেয়ে যায়। সৌম্য ডাক্তারী পড়তে চলে যায়। মৌসুমী খুব খুশি, আজ ওদের স্বপ্ন পুরণ হওয়ার খুব কাছাকাছি এসে গেছে। তুষার ওদের জন্য অনেক সাহায্য করেছে। বন্ধুর কাছে এতো সাহায্য পাবে আসা করে নি। মৌসুমী তৃষার পড়ার দিকটা দেখে, কিন্ত তৃষা কিছুতেই পড়তে চায় না বড় হয়েছে কিন্তু বুঝতে চায় না ,কোনো রকমে একটু পড়েই সব হয়েছে বলে। ওকে সব সময় বোঝায় ভালো করে না পড়াশোনা করলে এই সময় কিছুই হবে না। কে শোনে কার কথা।
সৌম্যর ডাক্তারী পড়া Complete হতে আর ৬ মাস বাকী কিন্তু তার ই মাঝে হঠাৎ মৌসুমীর খুব শরীর খারাপ হয়, হাসপাতালে ভর্তি করে কিন্তু কিছু বোঝার আগেই সব শেষে হয়ে যায়, কোনো ভাবেই বাঁচানো গেল না। সবাই কে ছেড়ে মৌসুমী এই ভাবে চলে যাবে কেউ ভাবতে পারেনি। সৌম্য খুব ভেঙে পরছে, ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে আবার মা ও এই ভাবে চলে গেল, যেন মেনে নিতে পারছে না। রাধারানী ছেলে কে ভুলে ,বৌমা আর নাতি ছিল তার অবলম্বন ,কিন্তু বৌমা ও চলে গেল এখন কে দেখবে, সৌম্য ও সাবালক হয়নি ,কিভাবে চলবে কে জানে।
তুষার ওদের পাসে ছায়ার মতো আছে, নিজে খুব দুঃখ পেয়েছে,মৌসুমী এই ভাবে মারা যাবে কখনো ভাবেনি, তবে নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় না। এই পরিস্থিতিতে সৌম্য ও মাসিমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। সৌম্যকে বুঝিয়েছে, এই ভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে, ডাক্তার হতেই হবে। অন্য দিকে মৌসুমী তৃষাকে ও নিজের মতো টিচার করতে চেয়েছিল, তৃষাকে ইংরেজি নিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়েছে। কিন্তু মৌসুমী কোন স্বপ্ন সত্যি হওয়া দেখে যেতে পারলো না।
সৌম্য হোস্টেলে ফিরে গেলে রাধারানী একে হয়ে যাবে সেই জন্য তুষার মা বলেছে ওই ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিয়ে রাধারানী ও সৌম্য কে এই বাড়িতে থাকতে। তাই সৌম্য হোস্টেলে যাওয়ার আগে আগের বাড়ি থেকে সমস্ত জিনিস পত্র নিয়ে আসার জন্য ওদের সাথে তুষার ও যায়, মৌসুমীর রুম থেকে জিনিস পত্র নিতে গিয়ে, তুষার বই এর থাকে একে বারে পিছনে একটা ডাইরি দেখতে পায়। কাউকে কিছু না বলে লুকিয়ে নেয়, তার পর ওদের সব কিছু গাড়িতে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। ওরা এখন থেকে তুষাদের গেস্ট রুমে থাকবে। দুই বুড়িতো থাকবে ভালোই গল্প করে সময় কাটিয়ে দেবে।
তুষার মৌসুমীর রুমে যে ডাইরি পেয়ে ছিল, তার কথা কাউকে বলেনি, নিজের কাছে রেখে দেয়। ডাইরি পাতা উল্টে দেখে একজায়গায় লেখা আছে,
আজ ৭ বছর পরে তুষারের সাথে হঠাৎ দেখা ,ওর বাড়িতে গেলাম ওর সাথে অনেক কথা বললাম।,মাসিমা আগের মতোই ভালোবাসে, তুষার এখনো ভালোবাসে কিনা জানিনা। তবে কে আজ এতগুলো মিথ্যে বলাম, নিজের মধ্যে খুব গিল্টি ফিল করছি। যে আমি কোনো দিন মিথ্যে পচ্ছন্দ করতাম না, সে আজ সুরজিৎ এর নিয়ে এত মিথ্যে বললাম। আসলে আমি চাই না তুষার সুরজিৎ এর ব্যাপারে সত্যিটা জেনে আমায় নিচু চোখে দেখুক। তুষার আমাকে প্রপোজ করেছিল কিন্তু আমি সুরজিৎ কে ভালো বাসতাম বলে ওকে না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার জীবনে এমন হবে আমি ভাবিনি, আমার ভালোবাসা আমাকে এই ভাবে ধোকা দেবে বুঝতে পারিনি।
সুরজিৎ এর সমন্ধে আর তেমন লেখা নেই। আর একটা জায়গায় লেখা আছে, সৌম্য মাধ্যমিক ভালো রেজাল্ট করছে, আমি চাই ও ভালো ভাবো মানুষ হোক, সুরজিৎ এর ছায়া ওর জীবনে কখনোই পড়তে দেবো না। ডাইরি তো আর তেমন কিছু লেখা নেই, বাকী পাতায় শুধু হিসাব তোলা, কোথায় কত খরচ করছে, কত বাকী আছে, এই সব। এটা ঠিক জীবনের ডাইরি নয়, হিসেবের খাতায় মাঝে মাঝে মনের দুঃখের কথা লিখেছে।
এই আধা আধুরা কথার অর্থ তুষার কিছুই বুঝতে পারছে না। একবার ভাবল মাসিমাকে জিঞ্জাসা করি, আবার ভাবল ওরা যখন নিজের থেকে কিছু বলেনি, সে কথা জিজ্ঞাসা না করাই ভালো। কিন্তু তুষার কিছুতোই মনকে শান্ত করতে পারছে না, শেষে মৌসুমী শাশুড়িকে বলল, মাসীমা আপনার সাথে একটু কথা আছে সময় পেলে আমার রুমে আসবেন।
তুষার কেনো ডেকেছে রাধারানী বুঝতে পাছে না, কার বিষয়ে কথা বলতে চায়।রাধারানী মনে সংশয় নিয়ে তুষারের যায়,
রাধারানী - বল বাবা কি কথা বলতে চাও।
তুষার- কিছু মনে করবেন না, আমি মৌসুমীর একটা ডাইরি পেয়েছি, সেখানে সুরজিৎ এর ব্যাপারে কিছু লেখা আছে, আমি কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছি না।
আপনি কি সুরজিৎ এর বিষয়ে কিছু বলবেন।
রাধারানী - বৌমা সুরজিৎ এর বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে বারন করেছিল, কিন্তুএখন তো বৌমা আর বেঁচে নেই। বলল তুমি কি জানতে চাও।
তুষার - সুরজিৎ কি এখনও জীবিত আছে।
রাধারানী- তা জানি না, তার সাথে আমাদের অনেক বছর কোনো যোগাযোগ নেই।
তুষার - মৌসুমী কেন আপনাকে নিয়ে এখানে চলে এসেছিল।
রাধারানী - তাহলে শোন,
সুরজিৎ এর বাবা মারা যাওয়ার পর ওকে আমি লেখা পড়া শেখায়, ও চাকরি পাওয়ার পর অফিসের কাছে বাড়ি ভাড়ায় নেয়, ওর কাছে চলে যাই। তার পর মৌসুমী কে বিয়ে করে, ওদের বিয়েতে মৌসুমীর বাপের বাড়ির মত ছিল না। তার পর ভালোই কেটে যাচ্ছিল আমাদের ছোট সংসার।এর পর সৌম্য আসে, সবার খুব আনন্দ, কিন্তু সুরজিৎ এত খুশি হয়েছে বোঝাগেল না। দিন দিন সুরজিৎ এর ব্যবহার বদলে যেতে লাগল। সৌম্য যখন এক বছরের তখন সুরজিৎ ব্যাঙ্গালোর বদলি নিয়ে চলে যায়। সেখান থেকে প্রথম প্রথম টাকা পাঠাত, কয়েক মাস পরে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়, কোনো রকমে সংসার চলে, বাড়ি ভাড়া ও অনেক দিন বাকী হয়েছে, বাড়ির মালিক তাড়া দিতে থাকে। সেই সময় সুরজিৎ এর একটা চিঠি আসে, তাতে লেখা ছিল,মা আমি এখানে বিয়ে করেছি, মৌসুমী কে বলো যেন বাপের বাড়ি ফিরে যায়, আর আমি একটা বৃদ্ধা আশ্রমের ঠিকানা দিলাম, তুই ওখানে চলে যাবে আমার বন্ধু সব ব্যবস্থা করে দেবে। এই চিঠি দেখে মৌসুমী খুব দুঃখ পায়, বাপের বাড়ি লোকের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিল। কিন্তু এমন হবে ভাবতে পারেনি। আমি অনেক করে বলেছিলাম বাপের বাড়ি ফিরে যেতে, কিন্তু বৌমা কিছুতেই রাজি হলনা। বলল, আমি পড়াশোনা করেছি কোনো একটা কাজ নিয়ে একাই সৌম্য কে মানুষ করতে পারবো আর তোমাকে বৃদ্ধা আশ্রমে যেতে হবে না, তুমি আমাদের সাথেই থাকবে। এর পর আমি আর কিছু বলিনি। আমরা ওখান থেকে গ্রামের বাড়ি চলে আসি।ব্যাঙ্কের জমানো টাকায় কিছুদিন চলল ,তার পর সুরজিৎ এর বাবার বন্ধু ওই স্কুলের কাজটা জোড়ার করে দেয়, আমরা এখানে চলে আসি। বৌমা আর কোনো দিন বাপের বাড়ি যায়নি বা তারাও খোঁজ নেয় নি।
তুষার - আর সুরজিৎ, তার পর কোনো চিঠি বা ফোন আসে নি।
রাধারানী - সুরজিৎ আমাদের আমাদের ঠিকানা যানে না। যে ছেলে মা-কে, বৌ-কে পথে বসিয়ে অন্যের সাথে ঘর বাঁধতে পারে সে আমাদের কাছে মৃত।
তুষার - সৌম্য এই ব্যাপারে কিছু জানে।
রাধারানী- বৌমা চায়নি, সৌম্য ওর বাবার সমন্ধে জেনে কষ্ট পাক, তাই ওকে কিছু জানানো হয় নি।
তুষার - ঠিক আছে মাসীমা, আমি এই ব্যপারটা এখানেই চাপা দিয়ে দেব, কেউ জানতে পারবে না।
রাধারানী- তাই যেন হয় বাবা।আর একটা কথা বৌমা চেয়ে ছিল, তৃষা বড় হয়ে যদি রাজি থাকে, তাহলে যে সৌম্যর সাথে বিয়ে টা দাও।
তুষার - যদি ওরা চায় তাহলে হবে। এখানে আমার কিছু করার নেই।
রাধারানী- তুমি নিজের ছেলে না হয়েও আমাদের জন্য যা করেছো, তা আমরা কোনো দিন ভুলতে পারবো না।
তুষার - আমি বন্ধু হিসেবে মৌসুমীর পাসে দাড়িয়েছি।
সৌম্য ডাক্তারী পাস করেছে, আজ সবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে খুব ভালো লাগছে কিন্তু আজ সৌম্যর নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে, ওর মাকে খুব মিস করছে। বাবাকে তো ভালো করে দেখেই নি, তার কোথা কিছুই মনে নেই। মা খুব কষ্ট করেছে ওর জন্য, কিন্তু তার আর দেখে যাওয়া হল না সৌম্য কে ডাক্তারী পোশাকে।আর তুষার আঙ্কেল জন্যই আজ ডাক্তার হতে পরেছে। তার অবদান কখনোই ভোলার নয়। সৌম্য চায় বাকী জীবন তুষার আঙ্কেল পাসে থাকতে।সৌম্য এখন মন দিয়ে প্যাকটিস করছে, ভালো ডাক্তার হতে হবে এটাই এখন লক্ষ্য।
তৃষা BA পড়া শেষ করে বাড়িতে ফিরে এসেছি। তৃষা হোস্টেল থেকে পড়া শোনা করেছে ।বাড়িতে এখন সবাই আছে, অনেক দিন পর আবার সবাই একসাথে খুব আনন্দ করছে, কিন্ত একজনকে সবাই মিস করছে, তবুও কেউ মুখে বলছে না। তৃষা কলেজে কোন বান্ধবী কেমন তার গল্প শোনাছে।
রাধারানী- এবার তাহলে কি করবে, আবার পড়বে।
তৃষা -ধূর আর পড়বো না। পড়তে ভালো লাগে না। শুধু বই মুখস্ত করো।
তুষার - তাহলে কি করবি, আমার ব্যবসা দেখবি।
তৃষা - হ্যাঁ তাই করবো।
বিমলা- পড়বি না যখন তাহলে বিয়ে টা কর।
তৃষা - বিয়ে আমি এখন করবো না, জীবনে একটু আনন্দ করি, তার পর।
বিমলা- পাত্র তো বাড়িতেই আছে, শুধু তো মতের অপেক্ষা।
তৃষা - ওই ডাক্তার কে আমি বিয়ে করবো না,কথায় কথায় ইনজেকশন ভয় দেখাবে।
সৌম্য - তোকে তো ইনজেকশন দিলে হবে না, তোকে কাটতো হবে।
তৃষা - বাজে কথা বলবে না।
সৌম্য - আগে আমি বলেছি না তুই বলেছিস।
বিমলা- তোরা এখনও বড় হলি না, সেই ছোটদের মতো ঝগড়া করছিস। আমরা ওদের বিয়ের কথা বলছি আর ওরা বাচ্চাদের মতো লড়ছে। বলি তোরা বিয়ের পর ও এই ভাবে ঝগড়া করবি।
রাধারানী- ওদের এই ঝগড়া একজন থামাতে পারতো, কিন্ত সে আর নেই। তবে তোরা তার ইচ্ছেটা পূরন করতে পারিস।
দুজনে এক সাথে বলে - কি ইচ্ছে।
বিমলা- তোদের বিয়ে। দাদুভাই তোমার কি মত।
সৌম্য - আমি আর কি বলব, আঙ্কেল যেটা বলবে।
তুষার - তোমরা বড় হয়েছো, তোমরা যেটা ঠিক করবে আমরা পালন করবো।
সৌম্য - আমি রাজি আছি, কিন্ত তৃষা কি চায়, ওকে জিঞ্জাসা করো।
বিমলা- দিদিভাই তুই বল।
তৃষা - একটু লজ্জা পেয়ে, হুম।
রাধারানী- তাহলে একটা ভালো দিন দেখে শুভ কাজটা সম্পূর্ণ করা যাক।
বিমলা- তুমি ছেলে পক্ষ, তুমি ঠিক কর।
রাধারানী- আমি দুই পক্ষের, এখানে আর কোনো পক্ষ নেই, সবাই এক।
সৌম্য - খুব বড় করে অনুষ্ঠান করতে হবে না।
তৃষা - না, একবার বিয়ে করবো একটু ভালো করে না হলে হয়।
তুষার - একটাই মেয়ে ভালো ভাবেই অনুষ্ঠান হবে।
আজ তৃষা আর সৌম্যর বিয়ে। তুষার বিয়ের ভালোই বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, বন্ধু বান্ধব আত্মীয়দের বলেছে। দুই বুড়ি খুব খুশি। তৃষা আর সৌম্য ও খুশি হয়েছে। তবে তুষার খুশি কি না নিজেই জানেনা।মৌসুমীকে খুব মিস করছে, মৌসুমী চেয়েছিল, ওরা দুজনে দাড়িয়ে থেকে বিয়ে দেবে, কিন্ত মৌসুমীর তা পূরন হল না, নিজে যেই ভুলটা করেছিল, সেই ভূল ছেলেকে দিয়ে সুধরে নিতে চেয়ে ছিল।মৌসুমী যে বন্ধুকে রিজেক্ট করেছিল, বিপদে সেই বন্ধুই পাসে থাকেছে,তাই তার মেয়েকে নিজের ছেলের বৌ করে কিছুটা অপরাধ বোধ কমাতে চেয়ে ছিল। । যদিও এ সব নিজের চোখে দেখে যেতে পারলো না। এটা খুবই দুঃখে বিষয় তুষারের কাছে।আকাশে দিকে তাকিয়ে তুষার মনে মনে বলল, বন্ধু তুই ভালো থাকিস, তোর আসা আমি পূরন করতে পরেছি, আজ আমার নিজেকে হাল্কা মনে হচ্ছে। তুই আশীর্বাদ কর ওরা যেন সুখী হয়।
================
Sampa Maji
Vill- Soyla
P. O-Sonakhali
P. S- Daspur
Dist- Paschim Medinipur
PIN- 721146