কিস্তিমাত
"স্টপ,এই খেলার মাঠে তোমারা কেউ ঢুকবে না, কলকাতা ক্লাবে ভারতীয় খেলোয়াড়দের ঢোকার পারমিশন নাই ইহা তোমারা জানো না ব্লাডি ইন্ডিয়ান । এখনি এই স্থান ছাড়িয়া চলিয়া যাও, নচেৎ আমি রুলস ভাঙিবার জন্য উপযুক্ত স্টেপ নিতে বাধ্য হইবো।"- বিট্রিশ ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ক্ষমতার জোরে তাড়িয়ে দিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার ফুটবল খেলোয়াড়দের।
ভারতীয় খেলোয়াড়ের একজন বললেন,এতো অপমান আর কতদিন সহ্য করবো আমরা ক্যাপ্টেন? এবার অন্তত একটা বিহিত হওয়া উচিৎ । হ্যাঁ ঠিকই, এবার এইটার একটা বিহিত না হলে চলবে না, দলের সকলেই সহমত পোষণ করলেন। আমাদের দেশ 1947 সালে স্বাধীন হয়েছে, এখন সাল 1967 ....এই কুড়ি বছর ধরে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেও খেলার মাঠে পরাধীন। সত্যিই এই পরাধীনতার গ্লানি সহ্য হচ্ছে না এবার আমাদের আন্দোলনের ঝড় তুলতেই হবে।
ভারতীয় বায়ুসেনায় প্রথম ফুটবল খেলা প্রচলিত হলে দক্ষতা হিসাবে খেলোয়াড়দের "এ ডিভিশন " ও "বি ডিভিশন" এই দুই দলে বিভক্ত করা হয় । সারা দেশ জুড়ে বায়ুসেনায় মোট চারটে গোষ্ঠী তৈরি হয় ফুটবলে মোটামুটি সক্ষম খেলোয়াড়দের নিয়ে । কিন্তু "কলকাতা ক্লাব" ব্রিটিশদের তৈরি করা। বিট্রিশের ফুটবলাররা অনেক বেশি পটু আমাদের ফুটবলারদের থেকে। তাই তারা "এ ডিভিশনে" অন্তর্ভূক্ত হয় । আর আমরা বায়ুসেনা গোষ্ঠী "বি ডিভিশনে"। বিট্রিশরা স্বাধীনতার পরে ভারত ছেড়ে চলে গেলেও "কলকাতা ক্লাব " ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানেই থেকে যায়। আজ পর্যন্ত বায়ুসেনা গোষ্ঠী শক্তিশালী ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের ফুটবলে পরাজিত করতে সক্ষম হয়নি । সে কারনে "কলকাতা ক্লাবে" ঢোকার অনুমতি আমরা ভারতীয় খেলোয়াড়রা কোনদিন পাইনি , কথা গুলো ক্যাপ্টেন বিমল দলের সবাই কে বলে ভীষণ ভাবে বিষন্ন হলেন।
কিন্তু এখন কি উপায় ক্যাপ্টেন? টিমের সকলেরই একটাই প্রশ্ন । বিট্রিশ টিম এতটাই দক্ষ তাদের হারানো অসম্ভব । সেক্ষেত্রে উপায় কি? ভারতীয় টিম কি তাহলে কলকাতা ক্লাবে ঢোকার অনুমতি বা ফুটবলার হিসেবে খেলার স্বীকৃতি কখনোই পাবে না ?
টিমের একজন খেলোয়াড় অমরেশ বললো আমরা আন্দোলন করবো। আমাদের নিজেদের মাটিতে আমরা খেলবো সাথে সন্মানও অর্জন করবো ।
শুরু হলো আন্দোলন , বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত পাঠানো হলো। দুই বছর টানা লড়াই, আন্দলোনের পরে "কলকাতা ক্লাবের" প্রেসিডেন্ট নিজেদের মতামত জানালেন ।
সাল-1969 একটা টুর্নামেন্ট ঘোষণা হলো। শর্ত ছিল শক্তিশালী এ ডিভিশন কে যদি বি ডিভিশন খেলাতে হারাতে পারে তাহলেই বি ডিভিশনের খেলোয়াড়রা "কলকাতা ক্লাবে" খেলার অনুমতি পাবে।
কিন্তু এ ডিভিশন কে হারানো কোন মতেই সম্ভব নয় এইটা বুঝতে পেরেছিল বায়ুসেনার ক্যাপ্টেন বিমল । তাই কাউকে না জানিয়ে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনের কাছে যে অনুরোধ করেন আপনার দল যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে হেরে যায় তাহলে ভারতীয় দল জয়ী হতে পারবে । যদি আপনি এই অনুরোধটা রাখেন তাহলে আমি এবং আমার ভারতীয় দল ওনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে ।
ব্ল্যাডি ইন্ডিয়ান তুমি ভাবিলে কি করিয়া তোমাদের জয়ী করিবার জন্য আমি নিজের দলকে হারিয়ে দেব। তোমাদের যদি ক্ষমতা থাকে এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে আমাদের পরাজিত করে নিজেদের জয়ী করিয়া দেখাও। আর আমি challenge করিয়া বলিতে পারি তোমারা আমাদের কোনদিন পরাজিত করতে পারিবে না। এই বলে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন বিদ্রুপের হাসি হেসে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিল ক্যাপ্টেন বিমলকে। বিমল ও challenge করে বিট্রিশ ক্যাপ্টেন কে বললেন আমরা জয় লাভ করবোই খেলার মাঠে। সেদিন ভারতীয়দের কতটা ক্ষমতা দেখতে পাবেন।
ক্যাপ্টেন ফিরে দলের সবাই কে সব অপমানের কথা জানালেন। সব কথা শোনার পরে জয়ী হওয়ার জেদ চেপে গেল সমস্ত ফুটবলারদের মধ্যে । দিন রাত এক করে শুরু হলো প্র্যাকটিস ।
খেলার মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই । জোটবদ্ধ হয়ে বায়ুসেনার ফুটবলাররা শক্তিশালী বিপক্ষকে দুই-শূন্য গোলে হারিয়ে কিস্তিমাত করলো।
"কলকাতা ক্লাব" জিতে স্বাধীনতা লাভ করলো ভারতীয় বায়ুসেনার ফুটবলাররা । এই পরাজয়ের কিছু দিন পরে ব্রিটিশ ফুটবলাররা সম্পূর্ণ ভাবে "কলকাতা ক্লাব" ছেড়ে ব্রিটেনে ফিরে গেছিল ।
==================
পারমিতা রাহা হালদার (বিজয়া)
কলকাতা