অণুগল্প: শিয়রে শূন্যতা ।। সুদর্শন মণ্ডল
শিয়রে শূন্যতা
এক ভাবে হাঁটতে হাঁটতে পা ধরে আসে মিতার। এই বয়সেই সে অনেকটা পরিণত। যে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেখানে পরিণত তো হতেই হবে তাকে। জন্মের তিন বছর বয়সেই মা চলে গেল। বাবাকে কাজের জন্য সারাদিন ঘুরে বেড়াতে হয়। প্রতিবেশী সোনু দিদার কাছেই বড় হতে থাকে মিতা ।
বেশি ধূপকাঠি বিক্রি হল না আজ। গ্ৰীষ্ম কালের রোদ সহ্যকরা সহজ নয়। পেটের টানে বাইরে বেরোতেই হয় মিতাকে। ছোট বেলায় মিড-ডে-মিল খেয়েই সারাদিন কেটে যেত কিন্তু ও যে এখন বড় ক্লাস, মানে নাইনে উঠেছে তাই মিড ডে মিল পাবে না। আর কিছু দিন যদি মিড-ডে-মিল পেত, তবে এই ভাবে পথে পথে ঘুরতে হত না তাকে ।
বাড়িতে আজ ঢুকতে পারবে কিনা জানে না মিতা। মা মারা যাবার এক বছরের মধ্যে ওই ঘর দখল নিয়েছে অন্য মা। প্রতিদিন নতুন মায়ের হাতে পঞ্চাশ টাকা না দিলে যে ঘরে ঢোকার পথ বন্ধ ।
আজ খুব মায়ের কথা মনে পড়ছে। ভালবাসার ছোট একটা আকাশ পেতে চাই সে। মায়ের আঁচলে শুয়ে জালনা দিয়ে নীল আকাশ পেরিয়ে রূপকথার দেশে সে যেন ভেসে যাচ্ছে। ওখানেই তার বাড়ি ,ওটাই তার ঘর । গাছ তলাই বসে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে কে জানে। এক মায়াবি স্বপ্নের মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে তার মন। কে যেন সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনটা খুশিতে ভরে উঠছে। পেটের খিদে এক নিমেষে কোথাই যেন উবে গেলো তার। কতক্ষণ চোখ বুজে ছিল তা সে জানে না। কোলে একটা পাকা আম পড়ার শব্দে চোখ মেলল মিতা। উপরের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে পাখির বাচ্চারা কিছিরমিছির আওয়াজ করে মায়ের ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে মহা আনন্দে খাবার খাচ্ছে।
====================
সুদর্শন মণ্ডল
মদনপুর, নদিয়া
ফোন.-8293195177/9333121851