Click the image to explore all Offers

গল্পাখ্যান ।। ঋভু চট্টোপাধ্যায়


কাঁচা বাঁশের লাঠি

                                                    

প্ল্যাটফর্মে উঠেই সতু ঘাড়টা একবার বাঁদিক থেকে ডাকদিক ঘুরিয়ে নিললাঠিটা এবার ফেলতে হবেকবে থেকে পাড়ার কানাইকে একটা লাঠি করে দেবার জন্য বলছেকথাই শুনছে নাআজ একটু দেরিও হয়ে গেছে কয়েকদিন থেকেই জ্বরবেরোতেও পারেনি মা, ওষুধ এনে দিয়েছিল তাও শরীরে এখনো জোর নাই, আজ বেরোতে বারণও করেছিল, কিন্তু না বেরোলে চলবে কেন,ওষুধেও অনেকগুলো টাকা গেল।মা কথা বললেও শোনেনা, কিছু বললেই বলে,'দাঁড়া, তোর একটা ছেলে মেয়ে হোক, তখন বুঝবি।' এই কথাগুলো শুনলেই মনের মধ্যে একটা ছোট্ট প্রদীপ হঠাৎ জ্বলতে আরম্ভ করেঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে, আর তখনই একটা লম্বা শ্বাস বেরিয়ে যায়। কিভাবে বিয়ে হবে, ভগবান যার চারদিকটা অন্ধ করে দিয়েছে তার কি আর বিয়ে হয়? পাড়ার একটা মেয়ের সাথে মা কথা বলেছিল, পাখিমেয়েটারও মা, বাবা নেইকাকু কাকিমার কাছে থাকে, লোকের বাড়ি কাজ করে।সব ঠিক আছে কিন্তু বিয়ের কথা শুনেই ওর কাকিমা বলে ওঠে, 'অন্ধ ছেলে, ওর সাথে বিয়ে দেওয়া মানে তো গলায় পাথর বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া।'

মা ঘরে কথাগুলো আলোচনা করতে আরম্ভ করতেই সতু থামিয়ে দিয়ে বলে, 'মা, থাক ওর কথা আর বলতে হবে না।' তবে সেদিন স্টেশনে এসে সতুরও মনটা খারাপ হয়ে ছিল।ডান হাতে পয়সায় তাল দিতে দিতে, 'আমার হৃদয়..... তোমার আপন হাতের দোলে....।' গানটা গাওয়ার সময়ে কে যেন গলাটা চেপে ধরছিল।একজন ডেলি প্যাসেঞ্জার দাদাতো বলেই দিলেন,'কি রে আজতো গানে প্রাণ পাচ্ছি না, কি হয়েছে?' সতু দাদাটার গলা চেনে।প্রায়ই ডেকে পয়সা দেয়।উত্তরে সেদিন 'ঐ শরীরটা ভালো নেই।' বলে বেরিয়ে এলেও প্ল্যাটফর্মে নেমে একটা বেঞ্চে অনেক ক্ষণ বসে ছিল।

পাখি বিয়ের আগে প্রায়ই সতুদের বাড়িতে আসত।সতুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিত, মাথার চুলের ভিতর হাত চালিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে বলত, 'যদি তোমার কাছে থাকতে পারি বেশ হয় বল, তুমি আমার কাঁধে হাত রেখে হাঁটবে, গান গাইবে।'

এক দিন,সতুকে বলেছিল,'আমাকে গান শেখাবে?'

-কি গান শিখবে, আমি তো এই একটা গানই জানি।

কথাগুলো শেষ করবার আগেই পাখি হেসে উঠে আবার সতুর চুলে হাত চালিয়ে এলোমেলো করে দিয়েছিল।   সতুর শরীরটা কিরকম যেন জেগে উঠেছিল।পাখির কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল

 পাখি মাঝে মাঝে সতুকে ধরে স্টেশনের কাছ পর্যন্ত ছেড়েও আসত।একদিন রাস্তাতেই সতু পাখির গালে, মুখে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিল।রাতে বাড়ি ফিরে চুপ করে বসে থাকলেই মা বার বার জিজ্ঞেস করত,'কিরে পাখির কথা ভাবছিস?'

 মাকে কোন উত্তর না দিলেও নিজের মনেই পাখির কথা ভেবে যেত।মা মুখে কিছু না বললেও ঠিক বুঝত,তারপর একটা লম্বা শ্বাসের সাথে বলত,'সবই আমার কপাল, না হলে ভগবান কতদিন পর তোকে দিল কিন্তু তোর চোখেই কোন আলো দিল না, তার পর কোন ছোটতে তোর বাবা চলে গেল, আর কাকে দোষ দেব?'

সতুর বাবাকে মনে পড়ে না।জ্ঞান হবার পর থেকে মায়ের মুখে শুনে আসছে বাবা চলে গেছে। কোথায় গেছে কেও জানে না।তাও মা লোকের বাড়ি কাজ করে সতুকে বড় করবার চেষ্টা করছিল।সতু তখন একটা স্কুলে পড়তেও যেত, হাত তালি দিয়ে পড়ত, গান শিখত।টাকা পয়সা, থেকে আরম্ভ করে সব জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে বুঝতে শিখত। তারপর একদিন হঠাৎ মা.......

                                    ২

 

-কি গো মাস্টার আজ কোনটা ধরবে ষোল ডাউন না উনিশ আপ?

–কে সুবলদা, বুঝতে পারছি না গো ? তুমি কোনটা ধরবে ?

-দেখি ডাউনটাই ধরবার কথা ভাবছি, বাজার ভালো না, অন্যদিন শালা এই সময় কত মুড়ি খায়, আজ ফসকা

–আর কেও আছে ? আমাকে তো একটু ধরতে হবে।

-আছে আছে, গগন আছে, শম্ভু আছে।চা কফির ঐ নতুন ছেলেটার কি যেন নাম?

-কে প্রভাতদা?

-ঐ যে একদিন কোন মেয়েছেলের গায়ে ছেলে ভেবে হাত দিয়ে দিয়েছিল।

-প্রভাতদা, আছে নাকি?

–হ্যাঁ ঐ তো বসে।

–বা, তাহলে আমার ভালোই হল, এই প্ল্যাটফর্মগুলো ভেঙে দিয়ে উঠতে খুব অসুবিধা হয় গো।

–আমাদেরই হয়, বেশি করে রানিংএ নামতে।শুনেছিস তো রামকাকা কাটা পড়ছে।

–কোন রামকাকা, বাদাম না সিঙ্গারা?

-সিঙ্গারা।

–না গো আমি তো কয়েকদিন বেরোতে পারিনি, শরীর খারাপ ছিল।

 সুবলদা যাবার সময় 'ট্রেন লেট আছে।' বলে চলে গেল।সতু প্ল্যাটফর্মের ওপর বসে থাকল।শরীরটা এক্কেবারে ঠিক নেই।একটু হাঁটলেও হাঁপিয়ে যাচ্ছে।কিছুতো করবার নেই গতকালই মা জানিয়ে দিয়েছে,'চাল দুদিন হবে।'  সতু বোঝে সব, মা  খোঁড়া পা নিয়ে আর পারে না।যখন ঠিক ছিল সতুকে কিছু করতে হয় নিনিজের যতই কষ্ট হোক ঠিক কাজ করে গেছে।

'মেঘ করেছে রে।' সুবলদা আরেকবার এসে কথাগুলো বলে লাইনটা পার করিয়ে দিয়ে তিন আর চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে বলল,'তোর গায়ে এখনো জ্বর আছে রে সতু, আজ আর ট্রেনে না ঘুরে এখানেই বোস, যা পাবি আজকে চালা।' সতু কিছু উত্তর না দিলেও সব শুনল।বাইরে হাল্কা হাওয়া দিচ্ছে।বসে থাকতে থাকতে সতুর ঘাড়ে মাথায় একটা কিছুর হাল্কা ছোঁয়া লাগল।চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যেতেই পাখির গন্ধ নাকে এল।সতু সারাটা শরীর ছুঁয়ে দেখতে লাগল।হঠাৎ কে যেন নাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল,'এই তুই অন্ধ ভিখারি, আর এগোস না, আর এগোস না।' চমকে উঠল সতু।পাশ থেকে বাদামের ভজন ভাইয়ার কথা শুনল,'কিয়ারে ভাইয়া শো গেয়েথে, ওর এক গাড়ি তো .....'

–আমাকে ডাকলে না কেও?

–ও সুবল ভাইয়া বোলে, তুমহারা তবিয়ত আচ্ছা নেহি হ্যা।'

-তুমি কোন গাড়ি ধরবে?

-ডাউনকা।

                                            

                                         ৩

 

এক কামরার ছিটে বেড়ার ঘর, ভিতর থেকে সতুর মায়ের চোখে চাঁদ সূর্য়ের আলো এসে পড়েসতু আলো না দেখতে পেলেও গায়ে বৃষ্টির ঝাট লাগেসেই সঙ্গে একটা শূন্যতা আঁকড়ে ধরে সারাটা শরীরপাখি এই সময়টাতেই  আসতমাঝে মাঝে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে তরকারি করে দিতকতদিন খেয়েও গেছেমা প্রায় বলত,'তোর মত একটা মেয়ে এলে বেশ হয়আসবি আমার ঘরে?' পাখি হেসে ফেলতকোন দিন আবার বলে উঠত,'আনো কে বারণ করছে?' সতু কিছু উত্তর না দিলেও চোখ বন্ধ করে বসে থাকততখনই ঘন ঘন  চোখের পাতা পড়তসারাটা শরীরে পাখির ছোঁয়া অনুভব করতে পারততার পরের জায়গায় আরো একটা অন্ধকার নেমে আসত

এমনি ভাবে কয়েকটা মাস পেরিয়ে গেলসতুর মা একজনকে দিয়ে পাখির কাকার কাছে সতুর সাথে বিয়ের কথা বলতে পাঠালোকিন্তু কাকা কাকিমা কেউ রাজি হল নাউল্টে তারপর দিন থেকে পাখির সতুদের বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিল

 কয়েকটা দিন পরেই সতু বাড়ি ফিরে শুনল পাখির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছেমা বলল, 'শুনলাম দিল্লী না কোথায় যেন বিয়ে হচ্ছেওখানেই চলে যাবেসবাই বলছে ওকে নাকি বেচে দিলদুটো ইয়া চেহারার লোক আর একটা বউ এসেছিল অনেক টাকাও দিয়ে গেছে'

কথাগুলো শুনতে শুনতেই সতুর অন্ধকার চোখে জল নেমে আসেপাখির গায়ের গন্ধটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে,  সতুও কিছু উত্তর দিত নামনে মনে গুন গুন করে গাইত,'আমার হৃদয়তোমার আপন হাতের…'

আস্তে আস্তে মা পাখির ব্যাপারে কথা বলা বন্ধ করে দিলসতু বাড়ি ফিরলেই এ'পাড়া বা ওপাড়াতে  কোথায় কোন মেয়ের খোঁজ পেয়েছে সে কথাই শুধু আলোচনা করতসতুর ভালো লাগত নানাকের ভিতরে একটা গন্ধ বাসা বেঁধে আছেহাতে একটা ছোঁয়ার দাগতাকে ছেড়ে নতুন আবার গন্ধ খোঁজাটা খুব কষ্টেরকে জানে মা এটা বোঝে কিনা?হয়ত বোঝেনা হলে বাবা চলে যাবার পরেই ঠিক আরেকটা বিয়ে করে নিতযেটা এপাড়ার বাকি সবাই করে সতুর এখন মায়ের জন্যেও খুব কষ্ট হয়বাড়ি ফিরে প্রায় দিন মায়ের একটা পায়ের কোলেই শুয়ে শুয়ে আরেকটা পায়ের শূন্যতাতে হাত রেখে  নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করে

দিন মাস হু হু করে পেরিয়ে যায়।সতু প্রতিদিনই ট্রেনে চাপে, গান করে ভিক্ষা করে।বস্তি থেকে একা একাই প্ল্যাটফর্মে যায়, একাই ফেরে।বাড়ি ফিরেও বসে থাকেপাখির গন্ধটা আস্তে আস্তে কেমন যেন হারিয়েই যাচ্ছে। ট্রেনে চেপেও সেই মনের জোরটা পায় না।বস্তিতেও আর কোন মেয়ে সতুদের ঘরে আসে না।আর কারোর সাথে বিয়ের কোন কথাও হয় না। 

আরো কয়েকটা মাস পেরিয়ে যায়এক সন্ধায় সতু ট্রেন থেকে ফিরে এসে দেখে ঘরটা বাইরে থেকে বন্ধ করা। একটু অবাক হয় সতু।এই সময় তো মা কোথাও যায় না।পাশের ঘরের দরজার কাছে গিয়ে বৌদি বলে ডাক দিতেই একটা গলা শুনতে পায়, 'তুমি এসে গেছ, দাঁড়াও আমি জানলা খুলে দিচ্ছি, কাকিমা পাখিদির বাড়ি গেছে।' একটু অবাক হয় সতু জিজ্ঞেস করে, 'কেন?'

-পাখিদি তো ফিরে এসেছেকিন্তু বিকেল থেকে ওর কাকিমাটা পেটাচ্ছে।

-পেটাচ্ছে! কেন?

-ওকে তো বিক্রি করে দিয়েছিল,পাখিদি পালিয়ে এসেছে, এটাই রাগ।

সতু আর কথা না বাড়িয়ে ঘরের ভিতর ঢোকে।হাত মুখ ধুয়ে তক্তার ওপর বসতেই সারাটা ঘর একটা গন্ধে ভরে যায়।চমকে ওঠে সতু।এ গন্ধতো চেনাতার মানে কি পাখি আবার ঘরে এসেছে।এমন সময় একসাথে অনেকের গলাও আওয়াজ পায়, ঘরের দিকেই ঢুকছে।কিছুক্ষণ পরে মায়ের লাঠির আওয়াজও পায়।মা ঘরে ঢুকে সতুকে দেখতে পেয়েই বলে ওঠে, 'ও তুই এসে গেছিস, এই দ্যাখ, এবার এক্কেবারে নিয়ে চলে এলাম।পাখি এবার থেকে আমাদের ঘরেই থাকবে।'

সতুর বিশ্বাস হয় না কিন্তু আবার সেই গন্ধ ঘরের ভিতরটাতেও ছড়িয়ে পড়ে।সতু কিছু বলবার আগেই মা বলে, 'এবার থেকে পাখি আমাদের বাড়িতেই থাকবে, ওর কাকা কাকিমা বেচারিকে বিক্রি করে দিয়েছিল।ও পালিয়ে এসেছে, তাই ওর কাকিমা মারছে। সবার সাথে কথা বলেছি, কয়েকদিন পরেই তোর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করব।' সতু কিছু বলতে না পারলেও মনের ভিতরটা কেমন যেন গেয়ে উঠল,'আমার হৃদয়, তোমার আপন হাতের দোলে....'

আস্তে আস্তে ঘরটাও ফাঁকা হল।সন্ধে ছাড়িয়ে রাত নামার মুহূর্তেই আবার দরজার বাইরে কয়েকজনের গলায় পাখির নাম ধরে ডাক শুনেই আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠল সতু।কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই চারপাঁচ জন ঘরে ঢুকে সতুর মায়ের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করতে আরম্ভ করল। তাদের দেখেই পাখি একটা কোণে গুটিয়ে গেল। আরো চিৎকার আরম্ভ হল।ঘরের বাইরে আরো লোক জড়ো হল।পাখির কাকা পাখিকে জোর করে ঘরে ফেরৎ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই বাকি সবাই আটকে দিতেই আরো ঝামেলা বাড়ল।কিন্তু বস্তির নিজেদের ঝামেলাতে কেও পুলিশ ডাকেনা।পাখির কাকা হঠাৎ বলে উঠল,'বেশ ও তোমাদের ঘরেই থাকুক, কিন্তু আমাকে চল্লিশ হাজার টাকা দিতে হবে'

চল্লিশ হাজার! কোথায় পাবো?এই ঘরটা ছাড়া আর কিছুই নেই।সতুর মা খুব কষ্ট করে দশ হাজার টাকা দিয়ে এই ঘরটার ব্যবস্থা করেছিল।কথাগুলো বলতেই পাখির কাকা বলে ওঠে,'ঠিক আছে, তাহলে ঘরটাই দিয়ে দাও।' চমকে ওঠে সবাই'না, না' বলে একসাথে চিৎকার আরম্ভ করতেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে সতুর মা বলে উঠল,       'তাতে যদি মেয়েটা শান্তি পায় তাই হোক, আমি কালকেই ঘর ছেড়ে দেব।'

তারপর পাখির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,'কি রে আকাশের নিচে থাকতে পারবি?'কিছু সময় পরে পাখির গলায় 'হ্যাঁশব্দটা কানে আসেতারপরেই এক্কেবারে শান্তি

কয়েকটা মাস শেষ হয়।তিনজন প্ল্যাটফর্মে থাকতে আরম্ভ করেছেসতু এখন নতুন একটা গান তুলেছে।তবে ট্রেনে ট্রেনে ঘোরবার সময় এখন আর হাতে কোন লাঠি রাখে না, কারোর জন্যে অপেক্ষাও করতে হয় না।শুধু হাতটা পাখির কাঁধে রেখে দুজন একসাথেই গায়, 'আমারও পরাণও যাহা চাই, তুমি তাই, তাই গো।'

      

**********************************




ঋভু চট্টোপাধ্যায়
Sougata Chatterjee
B1-85/1, V.K.Nagar
M.A.M.C
Durgapur-713210
Paschim Bardhaman, West Bengal, India
Phno-9832214848/9732381127




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.